৩০ এপ্রিল, ২০২৪ | ১৭ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২০ শাওয়াল, ১৪৪৫


শিরোনাম
  ●  দুর্নীতির মডেল উখিয়া পল্লীবিদ্যুৎ! ডিজিএম বললেন- ‘ভেতরের খবর’ আপনাকে দিবো কেন?   ●  মরিচ্যা পালং উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে মনজুর মেম্বার প্যানেলের চমক   ●  সাংবাদিক মাহিকে কেন ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না, জানতে চেয়ে হাইকোর্টের রুল    ●  মোটর সাইকেল প্রতীকের প্রার্থী নুরুল আবছারের ব্যাপক গনসংযোগ   ●  কক্সবাজার পৌরসভার উদ্যোগে বিশুদ্ধ পানি বিতরণ অব্যাহত   ●  ঈদগাঁওতে সোহেল, ইসলামাবাদে রাজ্জাক, ইসলামপুরে দেলোয়ার, জালালাবাদে জনি ও পোকখালীতে রফিক বিজ়য়   ●  মুক্তিযোদ্ধা এম. আবদুল হাই’র ১০তম মৃত্যুবার্ষিকী ২৯ এপ্রিল   ●  হোয়াইক্ষ্যং হাইওয়ে পুলিশের অভিযানে গুলিসহ দু’জন গ্রেফতার   ●  তীব্র তাপদাহে মানুষের পাশে মেয়র মাহাবুব   ●  টেকনাফে অপহরণ চক্রের দুই সদস্য গ্রেফতার

রোহিঙ্গাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ স্থানীয়রা তাদেরকেও সাহয্য দেয়ার দরকার

আব্দুল আলীম নোবেল: সাম্প্রতিক সময়ে ৩ লক্ষাধিকসহ এ পর্যন্ত আশ্রিত সাত লাখ রোহিঙ্গার কারণে ব্যাপক ঝুঁকিতে আছে কক্সবাজারের মানুষ। পরিবেশ ও সামাজিক অবস্থার এক করুণ চিত্র। এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রতিদিনের ভোগান্তি। ইতোমধ্যে কয়েক হাজার একর রোহিঙ্গাদের কারণে আবাদি অনবাদি জমি তাদের দখলে চলে গেছে। এতে ক্ষক্ষিগ্রস্থ হয়েছে এলাকাবাসী। এছাড়াও তাদের কারণেও যানবাহন,নিত্যদিনের বাজার ব্যবস্থায় চরম প্রভাব পড়ছে। এক কথায় রোহিঙ্গাদের কারণে এলাকার মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি এই কথা কেউ বলতে পারবে না। স্থানীয়রা যে সবাই স্বচ্ছল পরিবার তাও নয় বেশির ভাগ পরিবার গরিব বললেও অস্বিকার করা হবে না। বর্তমানে যে পরিস্থিতি চলছে সরজমিনে গেলেই বুঝা যায়। যদি রোহিঙ্গাদের জন্য এত দেশবিদেশী সাহয্য সহযোহিতা আসতে পারলেও কেন তাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার মানুষের জন্য সহযোগিতা দেয়া হবে না এমন প্রশ্ন এলাকার সচেতন মানুষের। সূত্রে জানা যায়,১৯৯২ ও ৯৩ সালে জাতিসংঘ থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য ৫শ কোটি টাকা সাহয্য দেয়া হলেও তৎকালিন ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাবাসীর জন্য ৭শ কোটি সাহয্য দেয়া হয়েছিল। এই বারেরও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর জন্য এমন দাবী তুলেছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই দাবী নিয়ে অনেক লেখা লেখি হচ্ছে। এই ব্যপারে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও দেশবিদেশী বিভিন্ন সাহয্যকারী সংস্থাদের নজর বাড়ানো দরকার। আমাদের দেশের এমপি মন্ত্রীরা শুধু দফায় দফায় রোহিঙ্গাদের কথা বলে গেলেও স্থানীয়দের জন্য একটি বারও তাদের কথা বলা হয়ে ওঠেনি। সত্যি এটি খবুই দুঃখজনক। রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রকল্প/কর্মসুচি ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে স্থানীয় দরিদ্র শ্রমিক ও শিক্ষিত যোগ্যতা সম্পন্ন লোকদের কর্মস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। রোহিঙ্গা কর্তৃক স্থানীয়দের সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির অংশিদারীত্ব বনায়ন,বাসা ভাড়ি,দোকানসহ বিভিন্ন অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপন পূর্বক যথযথা ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। চলমান রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঢলে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে।
বিপুল সংখ্যক শরণার্থীদের শৃঙ্খলায় আনতে হিমসিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিরা।যত্রতত্র রান্নাবান্না, মলমূত্রত্যাগ, খোড়াখুড়ি, আগুন জালানো ইত্যাদি কারণে ব্যাপক বিপর্যয়ের মুখে পরিবেশত ভারসাম্য। এদিকে কড়া নজরদারী না থাকায় স্থানীয় সুবিধাবাদী ও টাউট-বাটপারদের মাধ্যমে অনেক রোহিঙ্গা মিশে যাচ্ছে সাধারণ জন স্রোত। ফলে বেড়ে যাচ্ছে সামাজিক অপরাধ বৃদ্ধির আশংকা। বন ধ্বংস, পাহাড়কাটাসহ ব্যাপক পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকাও রয়েছে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা।
কক্সবাজারের টেকনাফের মৌচনি, লেদা, উখিয়া, উপজেলার কুতুপালংসহ জেলার জুড়ে বন বিভাগের জমিতে প্রতিদিন অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গরাও পাহাড়ি জমি দখল করে কোন না কোন জায়গায় বসতি গড়ে তুলছে। কয়েক বছরের ব্যবধানে এই রোহিঙ্গা শিবিরের আশে পাশে আরও কয়েক হাজার একর সংরক্ষিত পাহাড় দখল করে অবৈধ বসতি করছে কয়েক লাখ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা। এখন তাদের নিয়ন্ত্রন না করলে এই জেলায় তাদের কারণে স্থানীয়রা বসবাস করাও অনেকটা দুর্বিসহ হয়ে ওঠবে।
এসব রোহিঙ্গা সরকারি বন-জঙ্গল উজাড়ের পাশাপাশি আয়-রোজগারের জন্য হামলে পড়ছে শহরের এদিক- সেদিক। অনেকে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধকর্মে জড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন জেলার ২৪ লাখ মানুষ।

নতুন করে বাংলাদেশে প্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের অধিকাংশই কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন বন ও পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের কেউ কেউ ঝুঁকিপূর্ণ হলেও পাহাড়ে বিভিন্ন স্থান থেকে বাঁশ এনে পলিথিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি করছেন টং ঘর। বনবিভাগের যেসব জায়গায় স্থানীয়দের তেমন যাতায়াত নেই, সেসব জায়গাতেই তারা গড়ে তুলছেন এসব বসতি। উখিয়ার বিভিন্ন এলাকায় বনবিভাগের সামাজিক বনায়নের আওতাধীন এলাকা ও পাহাড় কেটে রোহিঙ্গাদের ঘর তৈরি করতে দেখা গেছে। তাদের জন্য ঘর তৈরি করে দেয়া কথা হলেও এই কার্যক্রম চলচে ধীর গতিতে।

বনকর্মীদের যোগসাজসে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের টেকনাফ শামলাপুর পয়েন্টে উচ্ছেদ করা ঝাউবাগানেহাজার হাজার গাছকে কেটে সবাড় করা হয়েছে। ২০০২ ও ২০০৩ সালে উপকূলীয় জনগণের স¤পদ রক্ষায় শামলাপুর থেকে শাহপরীরদ্বীপ পর্যন্ত ৭‘শ একর বালুচরে দশ লাখের মতো ঝাউগাছ রোপন করা হয় যা এখন নিধনের পথে। এদিকে সম্প্রতি শামলাপুরের দেড় কিলোমিটার ঝাউবাগানে প্রায় ৩ হাজার রোহিঙ্গা পরিবার বসতি শুরু করে।
কক্সবাজার থেকে উখিয়া হয়ে টেকনাফ যাওয়ার পথে দুচোখ যেদিকে যায় সবদিকে এখন রোহিঙ্গাদের অবস্থান। রাস্তার পাশে যেমন তারা রয়েছেন তেমন বন জঙ্গলেও অবস্থান নিয়েছেন রোহিঙ্গারা। পাশাপাশি রাস্তার দুপাশে বনবিভাগের পাহাড় টিলাগুলোতে রোহিঙ্গারা নতুন করে বসতি স্থাপন শুরু করেছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির খুঁজতে এখন আর বেশি দূর যেতে হয় না। কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া এখন অলিখিত ভাবে রোহিঙ্গা শিবিরে পরিণত হয়েছে।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।