১৬ মে, ২০২৪ | ২ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ৭ জিলকদ, ১৪৪৫


শিরোনাম
  ●  রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হেড মাঝিকে  তুলে নিয়ে   গুলি করে হত্যা   ●  যুগান্তর কক্সবাজার প্রতিনিধি জসিমের পিতৃবিয়োগ   ●  জোয়ারিয়ানালায় কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত রামু কলেজের অফিস সহায়ক   ●  রামুর বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে পুলিশের সহযোগিতায়  আসছে চোরাই গরু   ●  রামুতে ওসির আশকারায় এসআই আল আমিনের নেতৃত্বে ‘সিভিল টিম’   ●  ড. সজীবের সমর্থনে বারবাকিয়ায় পথসভা   ●  কক্সবাজারে শ্রেষ্ঠ ট্রাফিক সার্জেন্ট রোবায়েত    ●  উখিয়ায় রোহিঙ্গা যুবককে গলা কেটে হত্যা   ●  বাহারছরা পুলিশের অভিযানে হত্যা চেষ্টা মামলার তিন আসামি গ্রেফতার   ●  নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে কচ্ছপিয়ার নোমান চেয়ারম্যানের হুমকি

নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলার প্রথম ইউপি নির্বাচন

ঈদগাঁওতে সোহেল, ইসলামাবাদে রাজ্জাক, ইসলামপুরে দেলোয়ার, জালালাবাদে জনি ও পোকখালীতে রফিক বিজ়য়

নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজারের নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলার পাঁচ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ইসলামপুর, ঈদগাঁও, ইসলামাবাদ, পোকখালী ও জালালাবাদের  প্রথম ভোটগ্রহণ অবাধ ও সুষ্ঠু পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে।
রবিবার (২৮ এপ্রিল) সকাল ৮টা হতে উৎসবমুখর পরিবেশে ইতিহাসের অংশ হওয়া ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে শেষ হয় বিকাল চারটায়। এরপর গণনা শেষে রাত ১২টা নাগাদ বেসরকারি ফলাফল তৈরি সম্ভব হয় বলে জানিয়েছেন ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার হুমায়ুন কবীর।
এতে বেসরকারিভাবে ঈদগাঁও সদর ইউপিতে নির্বাচিত হয়েছেন আনারস প্রতীকের সোহেল জাহান চৌধুরী (প্রাপ্ত ভোট-৭৮৭০)। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সৈয়দ আলম (মোটর সাইকেল) পেয়েছেন ৭৫৫৭ ভোট।
ইসলামপুরে জয় পেয়েছেন আনারস প্রতীকের দেলোয়ার হোসেন (প্রাপ্ত ভোট-৪২১৫)। তিনি জামায়াত নেতা। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঘোড়া প্রতীকের মোহাম্মদ শরীফ পেয়েছেন ৩২১৫ ভোট।
জালালাবাদ ইউনিয়নে রজনীগন্ধা প্রতীকে জয় পেয়েছেন উপজেলা বিএনপির বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক আলমগীর তাজ জনি (প্রাপ্ত ভোট-৪৯৩১)। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী টেক্সী প্রতীকের ফখরু উদ্দীন পেয়েছেন ১৬৬৮ ভোট।
ইসলামাবাদ ইউনিয়নে আনারস প্রতীক নিয়ে জয় পেয়েছেন সাবেক মেম্বার আব্দুর রাজ্জাক (প্রাপ্ত ভোট-৪৭৪৯)। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঘোড়া প্রতীকের নুরুল হক পেয়েছেন ৩১৭২ ভোট।
পোকখালী ইউনিয়নে ঢোল প্রতীক নিয়ে জয় পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান রফিক আহমদ (প্রাপ্ত ভোট-৩২৪৪)। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী গিটার প্রতীকের সাইফ উদ্দিন পেয়েছেন ৩১৬৮ ভোট।
সবখানে ঝামেলাহীন ভোট গ্রহন ও গণনা সম্পন্ন হলেও পোকখালী ইউনিয়নে রফিক আহমদের বাড়ির পাশের মধ্যম পোকখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গণনা নিয়ে গন্ডগোল হয়। এতে রফিক আহমদ ও সাইফ উদ্দিনের সমর্থকদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তা প্রশমনে রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে শৃংখলা বাহিনী। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলেও প্রশাসন তড়িৎ ব্যবস্থা নেওয়ায় কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পরে সেই কেন্দ্রের ব্যালট বাক্স উপজেলা সদরে এনে গণনার পর ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
কক্সবাজারের নবম উপজেলা পরিষদ হিসেবে প্রতিষ্ঠার তিনবছরের মাথায় ঈদগাঁও’র পাঁচ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্রথম সাধারণ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।  এতে চারটি ইউনিয়নে তরুণ প্রার্থীরা পুরোনোদের পেছনে ফেলে জয় ছিনিয়ে নেন। একটিতে পুরোনো চেয়ারম্যান জয় পান। সেখানেও তার সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেছেন আরেক তরুণ।
ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ৮৮ হাজার ৭৫৮। যেখানে পুরুষ ভোটার ৪৮ হাজার ২৪৬ ও মহিলা ভোটার ৪০ হাজার ২১২ জন। এতে ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৪৭টি। আর ভোট কক্ষ ২৪৫টি। ২৬ এপ্রিল মধ্যরাতে সকল ধরনের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। ২৭ এপ্রিল সন্ধ্যার আগে ব্যালট পেপার ও নির্বাচনী মালামাল কেন্দ্রভিত্তিক বিভাজন করা হয়। নির্বাচন কমিশনের চাহিদা মতে রবিবার (ভোট গ্রহণের দিন) ঈদগাঁও উপজেলায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
অপরদিকে, পাঁচ ইউনিয়নের মাঝে বেশকিছু কেন্দ্রকে অতিগুরুত্বপূর্ণ (আগে বলা হতো ঝুঁকিপূর্ণ) হিসেবে চিহ্নিত করেছে প্রশাসন। অনেক প্রার্থীর পক্ষে এসব কেন্দ্রে সুষ্ঠু ভোট গ্রহণ নিয়ে শংকার অভিযোগের আবেদন পেয়ে এসব কেন্দ্রকে অতিগুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনায় নেয়া হয়।
নির্বাচন কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জানান, অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণার্থে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেয়া হয়। নির্বাচনে ৫৭ প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ২৬৫ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ৫৩২ জন পোলিং অফিসারসহ প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়।
দুইদিন আগে ২৬ এপ্রিল হতে দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পাঁচজন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলার নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্বপালন শুরু করেছেন। তারা ভোটের পরের দিনও দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবির ২ প্লাটুন সদস্য ছাড়াও প্রয়োজনীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে কাজ করছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এ লক্ষ্যে পরিপত্র জারি করা হয়।
ঈদগাঁও থানার ওসি শুভ রঞ্জন চাকমা জানান, সংঘাতহীন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এটি নিশ্চিতে পর্যাপ্ত পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। জেলা প্রশাসনের নিয়োগকৃত দুজন ম্যাজিস্ট্রেট আগেরদিন এবং ভোটেরদিন আরো পাঁচ জন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বে যুক্ত হন। আমাদের সবার নজর ছিল ইতিহাসের অংশ হওয়া নির্বাচনটি সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করা।
উল্লেখ্য, কক্সবাজার সদর উপজেলা থেকে পৃথক হয়ে পাঁচ ইউনিয়ন নিয়ে ঈদগাঁও উপজেলা গঠিত হয়। উপজেলা গঠন পরবর্তী উক্ত ইউনিয়নগুলোতে এ প্রথম কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উপজেলাবাসী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে আগ্রহের কমতি ছিল না। তবে, বিশেষ লক্ষণীয় হলো-২৮ এপ্রিল পাঁচ ইউপির নির্বাচন সম্পন্নের আমেজ শেষ না হতেই নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলার প্রথম উপজেলা নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২১ মে। ইতিমধ্যে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র জমা ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা প্রার্থীদের যাচাই বাছাই প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করেছেন। শিগগিরই আপিল নিষ্পত্তি ও প্রতীক বিতরণ করা হবে। মে মাসের শুরুর দিকে উপজেলা নির্বাচনের ভোট যুদ্ধও শুরু হয়ে যাবে। তাই ইউপি নির্বাচন শেষ না হতেই জনগণ উপজেলা নির্বাচনের ভোট যুদ্ধের স্বাদও পাবে।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।