ইনি আমার বাবা (মাস্টার আলী হোছাইন)। সততার মাঝে জীবন হাতড়ানোর আমার অনুপ্রেরণা। ভূ-সম্পদে ভরপুর পরিবারের ছোট ছেলে হিসেবে বিলাসী হওয়ারই কথাছিল তাঁর। কিন্তু না- সাদামাটায় যাপিত জীবনের দু’তৃতীয়াংশ মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে অতিবাহিত করেছেন। একান্নবর্তী পরিবারে অংশনামায় সম্পদ কমলেও তাঁর সততা কখনো কমেনি।
শিক্ষকতার স্বল্প বেতনে সংসারের ব্যয় নির্বাহ কষ্টকর হতো। তাই এলাকার সবার জমি এক করে জোটবদ্ধ হয়ে করা হতে ঘের। সেই ঘেরের যাবতীয় লেনদেন হিসাব থাকত ওনার কাছে।
ভরা কাটালে (জুঁ) লাখ লাখ টাকার বান্ডিল দেখতাম ওনার হিসাব ড্রয়ারে। চাইলে অন্যদের মতো বেহিসাবি অনেক টাকা সরাতে পারতেন-কিন্তু করতেন না। প্রয়োজনীয় টাকাটাও সবার হিসাব শেষ না হলে দিতেন না। বলতেন ‘দশজনের টাকা চুরি করলে পেট মোটা হয়, মনুষত্ব মোটা হয় না।’
শিশুকাল থেকে দেখেছি- ওনার কাছেরজনরা-ই ওনার ক্ষতি করেছেন বেশি। পাল্টা বদলা নিতে বললে বলতেন, রাস্তায় হাঁটতে গেলে কিছু কুকুর কামড়াবে- নিজেকে মানুষ ভাবলে কি কুকুরকে কামড়নো যায়..???
তাই বিত্তবান হতে পারেননি কিন্তু মানে বড় হয়েছেন। বৃহত্তর ঈদগাঁওর প্রায় তল্লাটে ওনার সেই সততার কারণে আমরা সম্মানিত হই।
বাবার দেখানো সেই পথেই হাটি- তাই টাকার পাহাড় গড়ার পথ চেনা থাকলেও সেপথে হাটতে পারি না। কামড়াতে পারি না, চলার পথে হাতে-পায়ে কামড় বসানো কুকুর গুলোকে!
আমি নিজে অসুস্হ বেশ কয়েকদিন। ডাক্তারের পরামর্শ থাকলেও হাসপাতালে ভর্তি হয়নি। এর মাঝে খবর পেলাম বাবা হাতে হাড়ের ব্যাথায় কাতরাচ্ছেন।
রবিবার এনে অর্থোপেডিক্স ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞকে দেখালাম। দেয়া হলো বেশ কয়েকটা পরীক্ষা। কিন্তু রিপোর্ট পেতে সন্ধ্যা হবে।
তাই বিকেলের হাওয়া খেতে প্রেসকিপশসহ বাবাকে নিয়ে ৬ বছর পরে পৃথিবীর দীর্ঘ তম সৈকতের বালিয়াড়িতে…
বাবা দোয়া কর তোমার শেখানো সৎ পথেই যেন অবিচল থাকি-আমিন।
সায়ীদ আলমগীর, সাংবাদিক, কক্সবাজার, তাঁর ফেইসবুকে বাবাকে নিয়ে লিখাটি পাঠকের জন্য অনলাইন নিউজ পোর্টাল কক্সবাজার সময় ডটকম এ তুলে ধরলাম।
প্রিয় পাঠক নিচে কমেন্ট বক্সে মতামত জানাতে পারেন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।