১৭ মে, ২০২৪ | ৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ৮ জিলকদ, ১৪৪৫


শিরোনাম
  ●  নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সবকিছু কঠোর থাকবে, অনিয়ম হলেই ৯৯৯ অভিযোগ করা যাবে   ●  উখিয়া -টেকনাফে শাসরুদ্ধকর অভিযানঃ  জি থ্রি রাইফেল, শুটারগান ও গুলিসহ গ্রেপ্তার ৫   ●  রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হেড মাঝিকে  তুলে নিয়ে   গুলি করে হত্যা   ●  যুগান্তর কক্সবাজার প্রতিনিধি জসিমের পিতৃবিয়োগ   ●  জোয়ারিয়ানালায় কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত রামু কলেজের অফিস সহায়ক   ●  রামুর বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে পুলিশের সহযোগিতায়  আসছে চোরাই গরু   ●  রামুতে ওসির আশকারায় এসআই আল আমিনের নেতৃত্বে ‘সিভিল টিম’   ●  ড. সজীবের সমর্থনে বারবাকিয়ায় পথসভা   ●  কক্সবাজারে শ্রেষ্ঠ ট্রাফিক সার্জেন্ট রোবায়েত    ●  উখিয়ায় রোহিঙ্গা যুবককে গলা কেটে হত্যা

যেখানে কেটেছে আমার পিছু ডাকা শৈশব

ছবি- মঈন উদ্দিন

ঢং-ঢং-ঢং-ঢং ঘন্টা ভেজে ওঠলো, স্যারও বের হয়ে পড়লো ক্লাস থেকে। কি উদ্ভুত ভাবেই না দৌড়ে বের হয়ে যেতাম- কার আগে কে যাবে বাড়িতে। কাঁঁধে ভারী ব্যাগ নিয়ে ক্লান্ত শরীরে ঘরে ফেরার মুহুর্তগুলো অনেক মজার ছিলো। ভোর সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙতো, টিফিন নিয়ে স্কুলের পথে যাত্রা। মা- আসতো গলির মুখে, গাড়িতে ওঠার পরেই মা ঘরে ঢুকতো। কতো দুশ্চিন্তায় না থাকতো বাবা-মা দুজনই। সেদিনগুলো আজ বড্ড বেশি মনে পড়ে।

সবই স্মৃতি, কখনো ফিরে আসবে না। তবে স্বর্ণালী স্মৃতিগুলো আকড়ে ধরেই জীবনের বাকিটা সময় বেঁচে থাকতে হয়। যখন নিজের শৈশবের স্কুল বা অন্য কোন স্কুলের অনুষ্ঠানে যায় কিংবা নিজের স্কুলের পূর্ণমিলনী হয় তখনি মনে পড়ে দূরন্ত শৈশবের এসব স্মৃতি।

কতোই না মজার ছিলো দিনগুলো- নি:স্বার্থ বন্ধুত্ব, অপরিসীম ভালোবাসা। বন্ধু-বান্ধুবীদের দূরত্বহীন ছুটে-চলা। এসব মনে পড়লে ভেতরটা মুছড় দিয়ে ওঠে, আবার যদি ফিরে পেতাম স্বর্ণালী শৈশব।

মনে পড়ে সেই দিনগুলো- হঠাৎ আকাশটা মেঘাচ্ছন্ন। ঝুম ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে- আজকে ভিজবোই ভিজবো! রাস্তা ভর্তি মানুষ ছাতা মাথায় হেঁটে যেতে যেতে অবাক হয়ে দেখতো, কিছু ছন্নছাড়া স্কুলফেরত বালক রাস্তার উপর দিয়ে বৃষ্টিতে চুপচুপ হয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে যাচ্ছে!

দুইপাশে পানি জমে গেছে, আমরা তার মাঝ দিয়ে ভেজা জুতো পায়ে হেঁটে যাচ্ছি! জুতোর মধ্য পানি ঢুকে চপাশ চপাশ শব্দ! কেমন জানি পাগল করা এক একটা অনুভূতি।

প্রতিটি মানুষকেই তার শৈশব জীবনের স্মৃতি কঠিন ভাবে নাড়া দেয়। শৈশবের বন্ধু-বান্ধব, খেলার সামগ্রী, কলম, পেনসিল, খাতা, ড্রেস, জুতা, স্কুল-ব্যাগ সবকিছুই কেমন যেন চোখ বন্ধ করলে ভেসে ওঠে মনের আয়নায়। মনে হয়- এইতো সেদিন! এতোদিন পরে এসেও স্কুল জীবনটাকে খুব বেশি মনে পড়ে।

বলাই বাহুল্য, সেই সময়টায় মনে হতো কবে বড় হবো, আর সবার মতো যা খুশি তা করতে পারবো। কিন্তু এখন- এই এতগুলো দিন পেরিয়ে এসে মনে হয়, বড় ভালো ছিলাম তখন কেন জানি ভীষণ ধরণের মনে পড়ে স্কুলটাকে, শত নিয়মের বেড়াজালে পড়লেও কখনও কখনও শিক্ষকদের স্নেহ মাখানো সেই শাসনগুলো খুব বেশি মনে পড়ে।

অসাধারণ কিছু মানুষ, যারা আমাদের শিখিয়েছিলেন মানুষ হতে, কখনো বলতেন না বড় হয়ে কী হবি, বলতেন যাই হস বড় হয়ে, ভালো মানুষ হতে হবে।

কেউ কখনো বলে দেয়নি, তবে বুঝতে পারি কিছু একটা রেখে এসেছি সেই স্কুলের ক্লাসরুমে। ডেস্কের সেই ছোট ছোট খোপ গুলোয় অসংখ্য স্মৃতি কেউ বলে দেয়নি। তবু বুঝি- ফেলে রেখে এসেছি অসাধারণ কিছু মুহুর্ত।

জীবন এত সুন্দর হয় মধুময় হয় পৃথিবী কতটা সুন্দর তা শুধু শৈশবে বুঝা যায়। এখন হয়ত বড় হয়ে গেছি তাই বলে কি শৈশবের কথা কখনো ভুলা যায়।

আমার মতো অনেকেরই রয়েছে স্কুল জীবনের স্মৃতি। হাসি-কান্নার শৈশবের স্মৃতিগুলো আমরা অনেকেই আঁকড়ে ধরতে জানি না। অনেকেই ভুলে যায় স্কুলবন্ধু কিংবা স্কুলের পরিবেশটুকু। অনেকে মনেই রাখি না শিক্ষকদের সাথে কাটানো স্মৃতিগুলো। কিন্তু আমার শৈশব আর স্কুল জীবনের স্মৃতিগুলো নিয়েই আমাকে বেঁচে থাকতে হবে। স্কুল জীবনে বাবা-মার সাথে কাটানো স্মৃতিগুলোই আমার কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক থেকে যখন মাধ্যমিকে যায় তখনই আমি কক্সবাজার বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমীতে ভর্তি হয়। বাবা-মার ইচ্ছেতে হোস্টেলেই আমি থাকা শুরু করি।

এখন প্রত্যেকদিন অনেকবারই হোস্টেল বা স্কুলের আশপাশে আমি আসাযাওয়া করি। ভাবতেই অবাক লাগে নিজ বাড়ি থেকে এতোটা কাছে হওয়ার পরও আমি এখানে হোস্টেলে থাকতাম। সত্যি বলতে কি- আমি অনেক দুষ্টু ছিলাম। বাসায় পড়ালেখা কম করতাম আর সারাদিন বন্ধুদের নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম। এসব থেকে দূরে সরে- যাতে পড়ালেখা বেশি করি সেজন্যই আমাকে হোস্টেলে পাঠিয়েছিলো বাবা-মা।

হোস্টেলে থাকাকালীন বাবা-মার সাথে আমার স্মৃতিগুলো মনে পড়লেই কান্নায় চোখ ভিজে যায়। ভেতরটা মোছড় দিয়ে ওঠে আর ভাবতেই অবাক লাগে স্কুলের পর আর কোন স্মৃতি নেই বাবা-মার সাথে। স্কুল জীবনে বড্ড বেশি জ¦ালিয়েছি বাবা-মাকে। স্কুলটা পেরিয়ে কলেজে যেতেই মা- চলে গেলো না ফেরার দেশে। পরে বিশ^বিদ্যালয়ে যাত্রা শুরু করতেই বাবা চলে গেলো মায়ের কাছে। যে কারণে আমার স্কুল জীবনের স্মৃতিগুলো আগলে রেখেই বাঁচতে হবে আমাকে।

বড় হওয়ার পর আমরা শৈশবের অনেক স্মৃতিই হারিয়ে ফেলি। জন্মের পরের মুহূর্তগুলো- প্রথম মাটিতে পা ফেলা, প্রথম কথা শেখা বা প্রথম শক্ত খাবার গ্রহণের স্মৃতিগুলো মনে রাখতে পারাটা দুষ্কর যদি কেও মনে রাখতে পারে তা হবে অমূল্য। যদিও জীবনের প্রথম কয়েকটি বছরের এই সব সময়ের কথা আমরা মনে করতে চাইলেও পারি না।

তবে আমাদের স্কুল জীবন, শৈশবের বেড়ে উঠা এসব চাইলেই আমরা মনে রাখতে পারি। তাহলে কেনো নিজের স্মৃতিটুকুকে মুছে ফেলবে হৃদয়ের খাতা থেকে…

লেখক:

মঈন উদ্দিন,

উপ-দপ্তর সম্পাদক, কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ ও সভাপতি, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ছাত্রলীগ।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।