১৭ মে, ২০২৪ | ৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ৮ জিলকদ, ১৪৪৫


শিরোনাম
  ●  নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সবকিছু কঠোর থাকবে, অনিয়ম হলেই ৯৯৯ অভিযোগ করা যাবে   ●  উখিয়া -টেকনাফে শাসরুদ্ধকর অভিযানঃ  জি থ্রি রাইফেল, শুটারগান ও গুলিসহ গ্রেপ্তার ৫   ●  রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হেড মাঝিকে  তুলে নিয়ে   গুলি করে হত্যা   ●  যুগান্তর কক্সবাজার প্রতিনিধি জসিমের পিতৃবিয়োগ   ●  জোয়ারিয়ানালায় কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত রামু কলেজের অফিস সহায়ক   ●  রামুর বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে পুলিশের সহযোগিতায়  আসছে চোরাই গরু   ●  রামুতে ওসির আশকারায় এসআই আল আমিনের নেতৃত্বে ‘সিভিল টিম’   ●  ড. সজীবের সমর্থনে বারবাকিয়ায় পথসভা   ●  কক্সবাজারে শ্রেষ্ঠ ট্রাফিক সার্জেন্ট রোবায়েত    ●  উখিয়ায় রোহিঙ্গা যুবককে গলা কেটে হত্যা

মুক্তিপন দিয়ে বাড়ি ফিরলো উখিয়ার তিন কিশোর

Ukhiya Pic-28-0

সাগরে ভাসতে ভাসতে দালালদের চরম নির্যাতনের শিকার হয়ে হাতে-পায়ে ধরে মুক্তিপন দিয়ে মানব পাচারকারীদের কবল থেকে অবশেষে ৩২ দিন পর কিশোর মোঃ ইউনুছ (১৮), হামিদুল হক (১৬) ও আব্দুল করিম (১৭) মুক্তি পায়। মানব পাচারকারীরা মিয়ানমারে তাদের রোহিঙ্গা দালালদের মাধ্যমে মাথা পিছু ৪০ হাজার টাকা হারে আদায় করে মাছ ধরার নৌকা করে বাংলাদেশ সীমান্তে পৌছিয়ে দেয়। তাদের ফুসলিয়ে নেওয়া দালাল আবুল হাশেম পালিয়ে থাকায় কিছু করা যাচ্ছে না বরং মুক্তি প্রাপ্তদের মাঝে দালাল চক্রের অজানা হুমকি তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মানবপাচারকারী চক্রের কবল থেকে মুক্তিপন দিয়ে ফিরে আসা কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের চোরাখোলা গ্রামের শামসুল আলমের ছেলে মোঃ ইউনুছ ও অপর দুই জন বলেন, স্থানীয় গৌজঘোনা গ্রামের দালাল মৃত হাছান আলীর ছেলে আবুল হাশেম উখিয়ার সমূদ্র উপকূলবর্তী সোনারপাড়ায় চিংড়ি পোনা হ্যাচারীতে ভাল বেতনের চাকুরী দেওয়ার নাম করে ১৯ মার্চ বিকেলে অটোরিক্সা যোগে নিয়ে যায়। চাকুরীতে যাওয়ার পূর্বে ঘরে অভিভাবকদের জানানো এবং কাপড়-ছোপড় নেওয়ার কথা বললে উক্ত দালাল জানায় কিছু নিতে হবে না। সব কিছু সেখানে দেওয়া হবে। তারা বলেন, আমরা এলাকার আসবাবপত্র ও গ্রীল ওয়ার্কসপে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। দালাল আবুল হাশেম আমাদেরকে মাঝে মধ্যে বলত এখানে এত কষ্ট করে কিছু করা যাবে না। বরং মালয়েশিয়া গিয়ে এক বছরের মধ্যে ভাল বেতনের চাকুরী করে দেশে অনেক কিছু করা যাবে। তোমরা গেলে বেশী টাকা দিতে হবে না মর্মে নানা ধরনের প্রলোভন দেখাত।
১৯ মার্চ সোনারপাড়ার চিংড়ি পোনা হ্যাচারীতে চাকুরী দেওয়ার কৌশল করে নিয়ে গিয়ে সোনারপাড়া বাজার পেরিয়ে গেলে আবুল হাশেম সটকে পড়ে এবং আমাদের অন্য লোকজন হাত চোখ বেধে নিয়ে যায়। রাত সাড়ে ১০ টার দিকে ডেইলপাড়া ঝাউ বাগান এলাকা দিয়ে আমাদের ফিশিং বোটে তোলা হয়। ঐ বোটে আমরা ছাড়াও আরো প্রায় ৪০ জনের মত ছিল। পরদিন ২০ মার্চ সকাল ১১ টার দিকে সাগরে অপেক্ষামান বড় জাহাজে আমাদের তুলে দেওয়া হয়। সেখানে প্রায় ১০ দিন থাকার পর আমাদের বহনকারী জাহাজটি থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্য ছাড়া হয়। মাঝি মাল¬া ছাড়া ঐ জাহাজে আমরা ৩১১ জনের মত ছিলাম। ঐ জাহাজে উখিয়া, টেকনাফ, মহেশখালী ছাড়াও দেশর বিভিন্ন স্থানের লোকজন ছাড়াও রোহিঙ্গা লোকজন ছিল। প্রায় ২৫ দিন জাহাজ চলার পর অবশেষে আমাদেরকে জাহাজটি ফিরিয়ে মায়ানমার উপকূলের কাছাকাছি সাগরে নিয়ে আসা হয়। থাইল্যান্ড বর্ডারে ঝামেলা চলছে এখন যাওয়া যাবে বলে দালালরা বলাবলি করতে শুনেছি বলে কিশোরা জানান।
জাহাজে খাদ্য ও জ্বালানী দেওয়ার জন্য মায়ানমার থেকে একটি ফিশিং বোট সাগরে যায় গত ১৩ মে। জাহাজের দালালদের হতে পায়ে ধরে কান্নাকাটি করে আমাদেরকে বার্মা হলেও পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য কাকুতি করি। তবে দালালরা বার্মা পাঠিয়ে দিলে জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকা দাবী করে। আমরা আমাদের অভিভাবকদের সাথে দালালের ফোনে যোগাযোগ করে জানালে আমাদের অভিভাবকরা অবশেষে টেকনাফ গিয়ে জন প্রতি ৪০ হাজার টকা হারে বিকাশে দালালদের নিকট দিলে আমাদেরকে মায়ানমারে আলী থেইন চা বা হাসসু রাতার চরে জ্বালানী তেল ও খাদ্য নেওয়া বোটে করে নামিয়ে দেয়। মায়ানমারের রোহিঙ্গা দালালরা মাছ ধরার নৌকা করে তিন জনের কাছ থেকে আরো ২০ হাজার টাকা আদায় করে গত ১৫ মে টেকনাফের জাদিমুরা এলাকার নাফ নদীর কুলে নামিয়ে দেয়। আর এসব কিছু করা হচ্ছে স্থানীয় দালাল আবুল হাশেমের মাধ্যমে।
বর্তমানে মানবপাচারকারী দালাল আবুল হাশেম পলাতক রয়েছে। এ তিন কিশোর কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, দেশে প্রয়োজনে ভিক্ষা করে চলব তারপরও দালালের খপ্পরে পা দেব না। সাগরে ভাসমান জাহাজে আমাদের উপর প্রায় প্রতিদিন টাকার জন্য শারীরিক নির্যাতন করা হত। প্রতিদিন এক বেলা এক বাটি ভাত দেওয়া হত। কোন দিন ভাতের সাথে আধাসিদ্ধ আলু অথবা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে শুকনো মরিচ দেওয়া হত। ঐ কিশোররা নিশ্চিত মৃত্যুর কাছ থেকে বেঁচে এসেছে বলে জানায়। তারা পুরনো দোকানে ফের কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাদের মতে ২১ মে মায়ানমার নৌবাহিনী যে ২০৮ জন বাংলাদেশীকে উদ্ধারের কথা শুনা যাচ্ছে হয়ত সেটি আমাদের বহনকারী জাহাজ হবে। তা যদি হয়ে থাকে সেই যাত্রীদের অর্ধকের মত রোহিঙ্গা রয়েছে বলে তাদের দাবী। তারা আরো জানায়, তারা যে শীপে ছিল সে শীপে মানবপাচারকারী একজনের নাম শুনেছে। সে হচ্ছে রোহিঙ্গা, যিনি বর্তমানে টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপের মোনাফ মাঝি। স্থানীয় পালখালী ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড সদস্য আব্দুস শুক্কুর ও ওয়ার্ড চৌকিদার রফিক উদ্দিন উক্ত তিন যুবক দালাল আবুল হাশেমের মাধ্যমে পাচার হয়ে যাওয়া ও মুক্তিপন দিয়ে ফিরে আসার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) হাবিবুর রহমান সাগরে মানব পাচাকারকারীদের ভাসমান ট্রলার থেকে মুক্তিপন দিয়ে মায়ানমার থেকে ফিরে আসার খবর জানেন না বলে জানান। এদিকে মুক্তিপন দিয়ে ফিরে আসার পরও উখিয়ার তিন কিশোর এসব ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে পরিণতি ভাল হবে না বলে দালাল চক্রের লোকজন নানা হুমকি ধমকি দিচ্ছে বলে জানা গেছে।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।