২৯ মার্চ, ২০২৪ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ | ১৮ রমজান, ১৪৪৫


শিরোনাম
  ●  উখিয়ায় পাহাড় চাপা পড়ে রোহিঙ্গা শ্রমিকের মৃত্যু   ●  স্বদেশ ফিরতে ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের সমাবেশ   ●  মহাসড়কে ফুটপাত দখলমুক্ত করার উদ্যোগ রামু ক্রসিং হাইওয়ে থানার   ●  কক্সবাজারে হাফেজ মুশফিকুর রহমানকে সংবর্ধনা দিল ছাত্রলীগ   ●  রামুতে এক ঘন্টার ব্যবধানে স্কুল ছাত্রসহ হতাহত চার   ●  সুগন্ধা পয়েন্টের লাল মিয়াসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা   ●  সাংবাদিক রাশেদুল মজিদের উপর পুলিশের হামলা, এক সদস্যের তদন্ত কমিটি   ●  কক্সবাজারে ট্রাফিক পুলিশের ‘আসকারায়’ যত্রতত্র পার্কিং, কোটি টাকার বাণিজ্য   ●  কক্সবাজারে ট্রাফিক পুলিশের অনিয়ম-দূর্নীতি ও প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি   ●  ড্রাইভিং পেশায় মহিলাদের সুযোগ দিলেন সেভ দ্য চিলড্রেন ও সিএনআরএস

‘মানির মান আল্লাহ রাখে’

10987417_948308428526945_2697645799380956398_n
বনভোজনের ইংরেজি- পিকনিক। বাংলাতেও আমরা অনেকেই এখন পিকনিক বলি। পিকনিক মানেই হচ্ছে, ঘরের বাইরে কোনো সুন্দর জায়গায় গিয়ে সুস্বাদু খাবার খাওয়া। এমন ঘটা করে ঘরের বাইরে গিয়ে খাবারের আয়োজন শুরু হয় মধ্যযুগে। ইংল্যান্ড থেকে। আসলে বনভোজনের শুরুটা হয়েছে সেই আদিমকাল থেকেই। তখন ছিল মানুষের শিকারের যুগ। কোনো একটা পশু শিকার করে এনে সবাই মিলে ভাগ করে খেত। আর সেটাই ছিল তখনকার বনভোজন। আমাদের এবারের সেই বনভোজনের আয়োজক কক্সবাজারের উন্নয়ন সাংবাদিকতার প্রতিক দৈনিক হিমছড়ি পত্রিকা। এ পত্রিকার ব্যানারে সর্বদা কর্মব্যস্ত সাংবাদিকরা বঙ্গপসাগরের তীরে ৬মার্চ ২০১৫ইং সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত আড্ডা, ঘোরাঘুরি, উচ্ছ্বাস ও আনন্দমুখর পরিবেশে এ বনভোজন সম্পন্ন করা হয়।
কক্সবাজারের সাগর তীরে ইসলামিয়া মহিলা কামিল মাদরাসা পয়েন্টে একুশে পদকপ্রাপ্ত জাতিসত্তার কবি নুরুল হুদা‘র নামে স্থাপিত ‘হুদা কবিতা মঞ্চ’ চত্বরে ঝাউবীতির মনোরম পরিবেশে ব্যাপক আনন্দ ও উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে এ বনভোজন অনুষ্টিত হয়। এতে যোগদেন অন্তত ২৫জন সাংবাদিক-কর্মচারী ও অতিথি।
তাৎক্ষনিক এ বনভোজনের আয়োজন করা হলেও দুই দিন পূর্ব থেকেই পত্রিকার সার্কুলেশন ইনচার্জ কাইছারুল ইসলাম মোবাইল ফোনে জানিয়ে দেন ৬মার্চ সবাই একত্রিত হচ্ছি বনভোজনে। তাই সেদিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে তেমন দেরি হয়নি। অন্যন্য দিন আমাকে কতবার ডাকা হতো ঘুম থেকে উঠতে। অথচ আজ নিজ থেকেই উঠে বসলাম। এদিকে সম্ভবত বনভোজন খাওয়ার আশায় আমাদের বাইশারী প্রতিনিধি মুফিজুর রহমানের চোখে ঘুম আসেনি। সকালে মোবাইল খুলতেই তার কল দেখে নিশ্চিত হলাম। বনভোজন খাওয়ার আশায় সে সম্ভবত সকালে ভাত না খেয়েই বাইশারীর ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল নিয়ে আমার সাথে যোগ দেন। এবার দুই জনের উদ্দেশ্য কক্সবাজার বদর মোকাম এলাকাস্থ দৈনিক হিমছড়ির কার্যালয়ে পৌছার। রম্যভূমি রামুর বুক চিরে যাওয়ার পথে এবার মোবাইলের রিং টোন দ্বিতীয় বারের মত বেজে উঠল ঈদগড় প্রতিনিধি সদা হাস্যজ্জল জাফর ইকবালের ফোন। তাঁর প্রশ্ন আমাদের অবস্থান কোথায়? কিন্তু আমার পাল্টা উত্তরে নিজে থেকে বুঝে নিলাম তিনিও মুফিজের চেয়েও ক্ষুদার্থ। সম্ভবত বনভোজনের আগের রাতেও তিনি ভাত খাননি। তাই আমাদের অনেক আগেই গন্তব্যস্থলে পৌছে গেছেন তিনি। তাই আমাদের আর দেরি কেন? আমরাও পৌছে গেলাম হুদা কবিতা মঞ্চ চত্তরে। সেখানে উপস্থিত সকলের সাথে হাই- হ্যালো হয়ে গেছে।
কিন্তু এদিক সেদিক পায়চারী করছিল সার্কুলেশন ইনচার্জ কায়ছারুল ইসলাম। উদ্দেশ্য একটাই আগের দিন যারা রেজিস্ট্রেশন করেনি তাদের নাম অর্ন্তভুক্ত এবং র‌্যাফেল ড্র সবার হাতে পৌছে দেয়া। কিন্তু ভাগ্যক্রমে আমাদের সম্মানিত ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক প্রিয় হাসানুর রশিদ এগিয়ে এসে র‌্যাফেল ড্র এর ফি পরিশোধ কালীন আমার ও বাইশারী প্রতিনিধির ফি পরিশোধ করলেন। তখন কি জানতাম? ১ম পুরষ্টারটি তাঁর হাতেই পৌছার জন্য টাকা দিয়ে দোয়া কিনে নিলেন!

11008405_962773907080397_1694388750489335860_n
এবার বনভোজনের মূল পর্ব শুরু করেন হিমছড়ির যুগ্ম বার্তা সম্পাদক হুমায়ুন সিকদার। মোহাম্মদ হোসাইন এর পবিত্র কোরআন তেলোয়াত এর মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হাসানুর রশিদ উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে স্বাগত বক্তব্য দেন। এর পর দৈনিক হিমছড়ির যুগ্ম বার্তা সম্পাদক হুমায়ুন সিকদার, বিশেষ প্রতিবেদক এএইচ সেলিম উল্লাহ, ষ্টাফ রিপোর্টার মাহবুবুর রহমান, মো. আবুল বাশার নয়ন, ওবাইদুল হক নোমান, শহিদুল ইসলাম, জাফর ইকবাল ও মুফিজুর রহমান নিজেদের মতামত ব্যাক্ত করে বক্তব্য প্রদান শেষে জুমার নামাজ আদায়ের জন্য প্রথম পর্বের অনুষ্ঠানের বিরতী দেওয়া হয়। কিন্তু বেচারা ইমন বড়–য়া ঢাল-তলোয়ার না থাকা স্বত্বেও একমাত্র সঙ্গী মোবাইল ফোন হাতে অনুষ্ঠানস্থলে চৌকস ভূমিকা পালন করেছে।
নামাজ শেষে অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি ছবি তোলার সেশনটা বাদ যায়নি। কবি নুরুল হুদার গ্রন্থের ‘ঝাউদরিয়ার ডানা’ আকড়ে বিভিন্ন ভঙ্গিমায় নিজেদের ছবি ধারণ করেন। কিন্তু অনুষ্টানে রোমান্টিক মনের মানুষ হিসেবে পরিচিত যিনি একাধিক বার অতিথি নিয়ে ভ্রমণ কালীন সময়ে আমাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও সার্কুলেশন ইনচার্জের দৃষ্টিবন্ধি হয়েছিলে ঈদগাও প্রতিনিধি এইচএন আলম অন্তত একশ গজ দূর থেকে শ্যলক ওবাইদুলের ছবি ধারণ করার সুযোগটি বাদ দেয়নি। আর আবু সুফিয়ান নিজের সেলফি থেকে শুরু করে গ্রুপ ছবি ধারণ করতে ভুলেনি। কিন্তু বনভোজনে তার পেছনের চুলের মুটি প্রদর্শন দেখতে পেলাম না এবার। ততক্ষণে বনভোজনস্থল ঝাউ বাগানের মাঝখানে বুনা মাংশের সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।
এবার খাওয়ার পালা; যে যার মত খাবার প্যাকেট সংগ্রহ করে কবিতা মঞ্চের উপর বসে পড়লাম। কিন্তু আমার নজর ছিল বিশাল দেহের অধিকারী প্রিয় বন্ধু সেলিম ভাইয়ের দিকে। ধারণা করেছিলাম অন্তত দুটি প্যাকেট ভূরিভোজ করবেন তিনি। কিন্তু আমার ধারনা ভুল হয়। ভোজন রসিকরা গল্প আর আড্ডার সঙ্গে তাদের খাবার শেষ করে। কিন্তু আজ কবির মন খারাপ নাকি? শাহেদ ইমরান মিজান মঞ্চের পশ্চিম কর্ণারে বুনা মাংসের স্বাদ নিচ্ছেন তিনজন মিলে। এদিকে ততক্ষণে আমাদের সাথে যোগদেন সাংবাদিক দীপন বিশ্বাস ও উখিয়া প্রেসক্লাব সভাপতি আবদুর রহিম। কিন্তু বরাবরের মত উখিয়া প্রতিনিধি নুরুল হক, আলমগীর ও শাহীন মুছকি হাসির মাধ্যমেই তাদের আনন্দ সীমাবদ্ধ রাখেন।
খাবার শেষে ফস্বল সাংবাদিকতার কলাকৌশল নিয়ে প্রতিনিধিদের মাঝে বিভিন্ন পরামর্শ দেন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হাসানুর রশিদ। এ আলোচনার মাঝখানে সবার চাহিদা মোতাবেক ফ্রুৃট বিতরণ করতে ভুলেননি কর্তৃপক্ষ। এ পর্বে স্টাফ রির্পোটার মাহাবুবুর রহমান দাবী তুলেন গান গাইতে হবে সকলকে। তাঁর দাবীর প্রেক্ষিতে আমার মুখ যেন কালী লেপন হয়ে পড়ে। কখন তাঁর দাবীর তীঁর আমার দিকে এসে পড়ে! কিন্তু গান শুনানোর দাবীটি উপস্থিত সকলের কন্ঠভোট মামাবুব ভাইয়ের দিকেই ছড়িয়ে পড়ে। যদিওবা শেষ পর্যন্ত গান শুনানোর বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে। এর পর বহু কাঙ্কিত র‌্যাফেল ড্রতে একে একে কূপন তোলেন উখিয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি এডভোকেট আবদুর রহিম ও উখিয়া প্রতিনিধি নুরুল হক। সেই… তিন জনের কূপন ফি দিয়ে প্রথম পুরষ্কার আদায় করে নেন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হাসানুর রশিদ। কথায় আছে মানির মান আল্লাহ রাখে। এজন্য করতালির কমতি ছিলনা উৎসুক প্রতিনিধিদের।
সবিশেষে জাতিসত্তার কবি নুরুল হুদার স্বরচিত কবিতা ‘মানুষেরা ভুলে গেছে, মানুষের ভাষা/ মানুষ নকল করে নেকড়ের স্বর/…। এ কথা গুলোর সঠিক বাস্তবায়নে নাগরিকের মনের প্রকৃত ভাষা, আশা-আকাঙ্খা ফুটে উঠুক দৈনিক হিমছড়ির পাতায়।
উল্লেখ্য, ইংরেজি ভাষায় সবচেয়ে পুরনো পিকনিক শব্দের খোঁজ মিলেছে ১৭৪৮ সালের অক্সফোর্ডের ইংরেজি অভিধানে। শব্দটা ফ্রান্স, জার্মানি আর সুইডেনেও পরিচিত ছিল ইংরেজদের কারণে। তবে উইকিপিডিয়া অনুসারে পিকনিক শব্দটা ফরাসিতে পাওয়া গেছে আরো আগে, ষোড়শ শতকে।

লেখকঃ মোঃ আবুল বাশার নয়ন,নিজস্ব প্রতিনিধি, দৈনিক হিমছড়ি, ০১৮১৩-২২৬৭৫২।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।