১৬ মে, ২০২৪ | ২ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ৭ জিলকদ, ১৪৪৫


শিরোনাম
  ●  রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হেড মাঝিকে  তুলে নিয়ে   গুলি করে হত্যা   ●  যুগান্তর কক্সবাজার প্রতিনিধি জসিমের পিতৃবিয়োগ   ●  জোয়ারিয়ানালায় কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত রামু কলেজের অফিস সহায়ক   ●  রামুর বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে পুলিশের সহযোগিতায়  আসছে চোরাই গরু   ●  রামুতে ওসির আশকারায় এসআই আল আমিনের নেতৃত্বে ‘সিভিল টিম’   ●  ড. সজীবের সমর্থনে বারবাকিয়ায় পথসভা   ●  কক্সবাজারে শ্রেষ্ঠ ট্রাফিক সার্জেন্ট রোবায়েত    ●  উখিয়ায় রোহিঙ্গা যুবককে গলা কেটে হত্যা   ●  বাহারছরা পুলিশের অভিযানে হত্যা চেষ্টা মামলার তিন আসামি গ্রেফতার   ●  নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে কচ্ছপিয়ার নোমান চেয়ারম্যানের হুমকি

ভাষা বিভ্রাটে কেরামত আলী

 

 

প্রতি বছর একুশ আসে-যায়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস মহান একুশে ফেব্রুয়ারীর প্রতিটি অনুষ্ঠানে অংশ নেয় কেরামত আলী। ফি বছরের মত গৎবাঁধা নিয়মে একুশ পালন করার চেয়ে এ বছর একটু ব্যতিক্রমভাবে দিবসটা পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সে। তাই একুশে ফেব্রুয়ারীর আগের রাতে ঘুমানোর সময় মনে মনে একটা পরিকল্পনা খাড়া করেছিল কেরামত আলী। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বছরের অন্ততঃ একটা দিনে বিদেশী শব্দ পরিহার করে যথার্থ মাতৃভাষা চর্চা করবে সে।
একুশের ভোরে ঘুম থেকে উঠে “বিছানা চা” দিতে বলে রীতিমত বউয়ের ধমক খেল বেচারা। বিছানা চা কি জিনিস বেচারী আসলে বুঝতে পারেনি, পরে বেড টি বলার পর চা এল। চা খাওয়ার পর ফোনের রিংটোন শুনে বড় ছেলেকে ডেকে “ভ্রাম্যমান দুরকথন যন্ত্র” আনতে বললে ছেলে বলল এটা আবার কি জিনিস বাবা? বুঝাতে না পেরে অবশেষে মোবাইল বলতে হল তাকে। মোবাইলে কিছুক্ষন কথা বলে মেজ ছেলেকে জিজ্ঞেস করল, “গত কয়েকদিন আগে দ্বি চক্রযানে চড়ে মহাবিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় পাশের বাসার ছকিনাকে কি বলেছিলি ? ছেলে অবাক হয়ে বলল, দ্বি চক্রযান, মহাবিদ্যালয় এসব আবার কি? অবশেষে সাইকেল ও কলেজ বলে ছেলেকে বুঝাতে বুঝাতে তার অফিসের কলিগ মতলব আলী উঠানে এসে ডাক দিলে ছকিনা প্রসঙ্গ আপাতঃ সেখানেই শেষ।
কেরামত বউকে বলল, একটা কেদারা ও চৌপায়া নিয়ে আস। কিছুক্ষন পর কেরামতের বউকে আস্ত একটা কোদাল ও চাপাতি নিয়ে আসতে দেখে ভীতু মতলব আলী পৈত্রিক প্রাণ নিয়ে দৌঁড়ে পালাল। হতভম্ব কেরামত কটমটিয়ে বউয়ের দিকে তাকাতে বউ বলল, তুমি না বললে কোদাল ও চাপাতি নিয়ে আসতে? কেরামত বলল, আরে তোমাকে বলছি কেদারা মানে চেয়ার ও চৌপায়া মানে টেবিল আনতে, মতলব আলীর সাথে পাওনা টাকার হিসাবটা করার জন্য বসব বলে।
দীর্ঘদিনের পাওনা টাকাটা হাতছাড়া হওয়ায় মন খারাপ করে কেরামত বাসায় ঢুকল। ছোট ছেলেকে বলল, “দুরদর্শন যন্ত্র” ছাড়, খবর দেখি। ছেলে হা করে তাকিয়ে রইল। পরে টেলিভিশন বলাতে ছেলে বুঝল। এভাবে আরও অনেক বিপত্তির শিকার হয়ে বেচারা কেরামতের অবস্হা কেরোসিন।
দুপুরের পর খেয়েদেয়ে বাসার বৈঠকখানায় বসে এসব চিন্তা করতে করতে নিজকেই নিজে প্রশ্ন করল, দায়ী কে ?
এমন সময় বউ-ছেলেরা এসে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোরাজুরি করতে লাগল। সুস্হ মানুষ কেরামত আলী ডাক্তারের কাছে কেন যাবে জিজ্ঞেস করলে তারা বলল, সেই ডাক্তার না মানসিক ডাক্তারের কাছে !! এমন সময় শশুর বাড়ী থেকে ফোন এলে বউ কেঁদে কেঁদে বলল “হ্যালো বাবা, তোমরা তাড়াতাড়ি আস, তোমাদের জামাই পাগল হয়ে গেছে, সারাদিন শুধু আবোল তাবোল কথা বলছে”!!!
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে যথার্থ মাতৃভাষা বাংলা চর্চা করতে গিয়ে কেরামতের অবস্হা পাতলা ডাইলের মত । আব্বা-আম্মা না বলে ড্যাডি-মাম্মি, চাচা-চাচী, মামা-মামী না বলে আংকেল আন্টি বলতে অভ্যস্হ হাল জামানার ছেলেমেয়েরা। আমরা এখনো বাজারে না গিয়ে মার্কেটে যাই। কথায় কথায় ইংরেজী অপভ্রংশ যোগ করা ও বিকৃত উচ্চারণে বাংলা বলা এখন যেন ফ্যাশন। এসব চিন্তা করতে করতে আনমনা হয় কেরামত আলী।
“রেডিও জকি” নামক বদমাইশগুলো প্রতিনিয়ত বিকৃত উচ্চারণে বাংলিশ বললেও এদের শ্রোতার সংখ্যা বিশাল। কোন রেডিও জকিকে বাগে পেলে আচ্ছামত জুতাপেটা করার ইচ্ছা বহুদিন ধরে লালন করে আসছে কেরামত। আমাদের রয়েছে হাজার বছরের বাঙ্গালী সংস্কৃতি। আবহমান বাংলার সোনালী ঐতিহ্যের ধারক-বাহক লোকজ সংস্কৃতি পরিহার করে আমদানী করা বিজাতীয় কালচারে কেন ঝুঁকছে উঠতি প্রজন্ম ? জনপ্রিয় একটা গান মনে পড়ল তার
” আউল-বাউল লালনের দেশে মাইকেল জ্যাকসন অাইলোরে
সবার মাথা খাইলোরে
আমার সাধের একতারা কান্দেরে
আমার সাধের দোতারা কান্দেরে”।
সাংস্কৃতিক অবক্ষয়ের প্রতিবাদে কুমার বিশ্বজিতের গাওয়া শ্রোতাপ্রিয় একটা গানও মনে পড়ল তার
“তোমরা একতারা বাজাইওনা, দোতারা বাজাইওনা,
গীটার আর বঙ্গো বাজাওরে,
একতারা বাজাইলে মনে পইড়া যায়,
একদিন বাঙ্গাল ছিলামরে”…..
এসব চিন্তা করে নষ্টালজিক হয় কেরামত। মাতৃভাষার জন্য বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দেয়ার গৌরবোজ্জল ইতিহাস পৃথিবীতে শুধু একটা দেশ ও জাতিরই আছে। ৫২ সালে একুশের এ দিনে মাতৃভাষা রক্ষায় গর্জে উঠেছিলেন এ দেশের সূর্য সন্তানরা। সরকারী উর্দিপরা ঘাতকের তপ্ত বুলেট সেদিন দমাতে পারেনি তাদের। শহীদ সালাম, বরকত, রফিক ও জব্বারসসহ আরো অনেকের বুকের রক্তে সবার অগোচরে সেদিনই সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিল। এর মাত্র ১৯ বছরের মাথায় ৭১ সালে দীর্ঘ নয়মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যূদয় হয়েছিল স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের।
সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করা ও আমদানী করা বিজাতীয় সংস্কৃতি বর্জনই হোক আজ একুশে ফেব্রুয়ারী ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অঙ্গীকার।
কেরামত আলী স্বপ্ন দেখে। তার দুহাত মুষ্টিবদ্ধ হয়, চেয়াল দৃঢ় হয়।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।