১৬ মে, ২০২৪ | ২ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ৭ জিলকদ, ১৪৪৫


শিরোনাম
  ●  রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হেড মাঝিকে  তুলে নিয়ে   গুলি করে হত্যা   ●  যুগান্তর কক্সবাজার প্রতিনিধি জসিমের পিতৃবিয়োগ   ●  জোয়ারিয়ানালায় কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত রামু কলেজের অফিস সহায়ক   ●  রামুর বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে পুলিশের সহযোগিতায়  আসছে চোরাই গরু   ●  রামুতে ওসির আশকারায় এসআই আল আমিনের নেতৃত্বে ‘সিভিল টিম’   ●  ড. সজীবের সমর্থনে বারবাকিয়ায় পথসভা   ●  কক্সবাজারে শ্রেষ্ঠ ট্রাফিক সার্জেন্ট রোবায়েত    ●  উখিয়ায় রোহিঙ্গা যুবককে গলা কেটে হত্যা   ●  বাহারছরা পুলিশের অভিযানে হত্যা চেষ্টা মামলার তিন আসামি গ্রেফতার   ●  নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে কচ্ছপিয়ার নোমান চেয়ারম্যানের হুমকি

ভালোবাসা বনাম ভাল বাসা

 

প্রতিদিনের মত বউয়ের ঘ্যানঘ্যানানিতে ভোরে ঘুম ভাঙ্গল কেরামত আলীর। বাসার চালের ভাঙ্গা টিনের ফাঁক দিয়ে ভোরের আবছা আলো ঘরে ঢুকছে। বাপের আমলে তৈরী করা ঘরটা তেমন শক্ত নেই। স্হানে স্হানে বেড়া পঁচে গেছে। রান্নাঘরের অবস্হা সবচেয়ে করুন। গতকালও রান্নাঘরের ভাঙ্গা বেড়া গলে কুকুর ঢুকে ভাত তরকারী খেয়ে গেছে। রাতে বাসায় এসে ভাত না পেয়ে বউয়ের সাথে ঝগড়া হয়েছে খুব একচোট। পরে আবার নতুন করে রান্না চড়িয়ে অনেক রাতে ভাত খেতে দিয়েছে তার বউ। বাসাটা মেরামত করার জন্য বউয়ের প্যানপ্যানানি শুনতে হয় প্রতিদিন। কিন্তু সীমিত আয় দিয়ে প্রতিদিনের ডালভাত যোগাড় করতেই অবস্হা টাইট, বাসা মেরামতের টাকা পাবে কোত্থেকে? গত বর্ষায়ও জীর্ণ টিন গলে বাসায় পানি পড়েছে, তিন চার মাস অনেক কষ্ট পেয়েছে তারা। প্রাইমারী স্কুল পড়ুয়া ছেলে মেয়ে দুটির ভাল একটা কাপড় নেই। গত ঈদের আগের ঈদে বউকে একটা শাড়ী কিনে দিয়েছিল, সেটাও এখন পুরনো হয়ে গেছে। তার নিজেরও ভাল শার্ট-লুঙ্গী নেই। এতগুলো অভাবকে সামাল দিয়ে কোনরকমে বাসাটা মেরামত করার কম চেষ্টা করেনি সীমিত আয়ের কেরামত। কিন্তু সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় ঘটাতে না পারায় ভাঙ্গা বাসাতেই কোনরকমে মাথা গুজে দিনপার করছে সে। এ নিয়ে প্রতিদিন বউয়ের খোঁটা শুনতে হয়।

বেলা বাড়লে উঠে তাড়াডাড়ি মুখহাত ধুয়ে বাজার করতে বের হল সে। বাজারে যাওয়ার সময় দেখে ফুলের দোকানগুলোতে উপচে পড়া ভীড়। তরুণ তরুণীরাই লাইন ধরে ফুল কিনছে বেশী। ভীড় সামলাতে কয়েকটি ফুলের দোকান নাকি টিকেট ও প্রি-পেইড সিষ্টেম চালু করেছে। বৃদ্ধ ও মধ্যবয়সী কয়েটা দম্পতিকেও ফুল কিনতে দেখা গেল। পাশ দিয়ে চলে যাওয়া কয়েকটা রিক্সায় ঘনিষ্ট হয়ে বসা যুগলদের হাতেও ফুলের বিশাল তোড়া দেখে আশ্চর্য হল কেরামত আলী। চলন্ত রিক্সার হুুড তুলে দিয়ে হাতে ফুল নিয়ে গুজুর গুজুর- ফিসফাস করা জুটি আজ বেশী দেখা যাচ্ছে। আজ সবার হাতে ফুল কেন?
আজ আবার নতুন একটা জিনিস দেখা গেল। চলন্ত পিক-আপ ও মিনিট্রাকের উপর আলমিরা সাইজের ঢাউস সাউন্ড বক্সে লারেলাপ্পা গান টাইপ বাজছে। গানের কোন কথা বুঝা না গেলেও মনে হল, গায়ককে যেন পাঁচ-সাতজনে ধরে বেধড়ক পেটাচ্ছে, আর মার সইতে না পেরে বেচারা বিকট স্বরে চেঁচামেচি করছে। আর কানফাটানো বিকট শব্দের সে গানের তালে তালে উদোম গায়ে একদঙ্গল যুবক ধেই ধেই করে বেশরম নাচানাচি ও লাফালাফি করছে। এরকম কয়েকটি গাড়ীকে সৈকতের দিকে যেতে দেখা গেল।
পাড়ার গলির মুখে দেখল, বীচের চটপটি ও ফুচকাওয়ালা হসমত আলী ইয়াবড় গামলাভর্তি করে চটপটি নিয়ে ব্যস্তভাবে সৈকতের দিকে ছুটছে। এতদিনের বিক্রি না হওয়া বাসি চটপটি বিক্রির আজ নাকি মহা সুযোগ।
সবাই এত ব্যস্ত কেন ? মাথামোটা কেরামত হিসাব মিলাতে না পেরে হিমশিম খায়।
বাজার করে বাসায় ফিরার সময় পাশের বাসার ইচড়ে পাকা আফজালের সাথে দেখা।
আফজাল বলল, আজ ১৪ ফেব্রুয়ারী, আজ নাকি “বিশ্ব ভালোবাসা দিবস”।
ফুল ছাড়া তো আর ভালবাসা প্রকাশ করা যায়না, তাই সবাই ফুল কিনছে। আজ বিকালে সমুদ্র সৈকতে নাকি পা ফেলাই দায় হবে। ভালবাসার খুচরা-পাইকারী হাট বসবে, সবাই ভালোবাসা বিনিময় করবে, ফুল দেবে- নেবে, অবাক কান্ড!
বছরের অন্যান্য দিনও ভালোবাসা প্রকাশ করা যায়, তবে আজ নাকি ভালোবাসার তেজ বেশী, বৈশাখ মাসের প্রখর রোদের মত। তাই পথেঘাটে এমনকি নালা নর্দমায় পর্যন্ত ভালোবাসা বিক্রির হাট বসছে!! এ যেন এলাহি কান্ড!!!
তথাকথিত এ ভালবাসা দিবস কোন দুঃখে আমদানী করা হল ভেবে পায়না সহজ-সরল কেরামত আলী। পাশ্চাত্য সমাজ ব্যবস্হায় বৃদ্ধ মাতা-পিতাকে আপদ মনে করে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসা হয়। ওখানে ভাই-বোন, আত্নীয়-স্বজন, স্বামী স্ত্রী, ছেলে মেয়েদের সাথে মাতা পিতার যোগাযোগ ও পারস্পরিক স্নেহ-ভালবাসার বন্ধন নেই বললেই চলে। সন্তান সন্ততি রেখে বাবা মা আরেকজনের সাথে পালায়, পরিবারের সবাই একটেবিলে বসে মদ খায়, তাদের ভালবাসার বড়ই অভাব, তাই তারা কেবলমাত্র বছরের এক একটা দিনকে তথাকথিত ভালোবাসা দিবস, মা দিবস, বাবা দিবস, বন্ধু দিবস ইত্যাদি দিবস পালন করে।
কিন্তু আমাদের সমাজ ব্যবস্হা ভিন্ন। মা বাবা, ছেলে মেয়ে, স্বামী স্ত্রী, আত্নীয় স্বজন সবার মধ্যে পারস্পরিক স্নেহ-মমতা ও শ্রদ্ধাবোধ আমাদের চিরায়ত ঐতিহ্য, আমাদের পুরো জীবনটাই ভালবাসায় পূর্ণ। তাই আমদানী করা পাশ্চাত্য বিজাতীয় সংস্কৃতির তথাকথিত ভালবাসা দিবস এখানে অচল। আমরা এসব পালন করব কোন দুঃখে ?
এসব চিন্তা করে মনটাই খারাপ হয়ে গেল কেরামত আলীর।
অভাবের তাড়নায় নিজের “ভাঙ্গা বাসা” টা মেরামত করে “ভাল বাসা”য় পরিণত করতে পারছেনা সে। আর এরা ভালোবাসার নামে এত কান্ড করছে!
ভাল একটা বাসা না থাকায় তার মত অনেকে ভাঙ্গা বাসায় দিন কাটাচ্ছে, বর্ষায় ভিজছে, শীতে কাঁপছে। ভালোবাসার চেয়ে তার কাছে “ভালবাসা” অর্থাৎ ভাল একটা বাসা বেশী দরকার। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস পালন না করে “ভালবাসা” দিবস পালন করলে কি এমন ক্ষতি হত? ভালোবাসা দিবসের পরিবর্তে “ভাল বাসা” অর্থাৎ ভাল বাসস্হান দিবস, এটাই তাদের জন্য ভাল হত, উপলদ্ধি করে কেরামত আলী।
অন্ন-বস্ত্র-বাসস্হান, মানুষের এ তিন মৌলিক অধিকারের অন্যতম ভাল একটা বাসা অর্থাৎ “ভাল বাসা”। তাই ভালোবাসা দিবসের পরিবর্তে বিশ্ব ভাল বাসা দিবসের কখন প্রচলন হবে এ প্রহর গুনছে কেরামত আলী, যে দিনটা তার মত সবাই পালন করতে পারবে।
“আশায় বসতি”র মতই প্রহর গুনে কেরামত আলী।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।