১৭ মে, ২০২৪ | ৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ৮ জিলকদ, ১৪৪৫


শিরোনাম
  ●  নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সবকিছু কঠোর থাকবে, অনিয়ম হলেই ৯৯৯ অভিযোগ করা যাবে   ●  উখিয়া -টেকনাফে শাসরুদ্ধকর অভিযানঃ  জি থ্রি রাইফেল, শুটারগান ও গুলিসহ গ্রেপ্তার ৫   ●  রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হেড মাঝিকে  তুলে নিয়ে   গুলি করে হত্যা   ●  যুগান্তর কক্সবাজার প্রতিনিধি জসিমের পিতৃবিয়োগ   ●  জোয়ারিয়ানালায় কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত রামু কলেজের অফিস সহায়ক   ●  রামুর বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে পুলিশের সহযোগিতায়  আসছে চোরাই গরু   ●  রামুতে ওসির আশকারায় এসআই আল আমিনের নেতৃত্বে ‘সিভিল টিম’   ●  ড. সজীবের সমর্থনে বারবাকিয়ায় পথসভা   ●  কক্সবাজারে শ্রেষ্ঠ ট্রাফিক সার্জেন্ট রোবায়েত    ●  উখিয়ায় রোহিঙ্গা যুবককে গলা কেটে হত্যা

বাশঁখালীর মেডিটেশন সেন্টারে ভয়াবহ আগুন, শতাধিক বুদ্ধ মূর্তি পুড়ে ছাঁই

কক্সবাজারসময় ডেস্কঃ বাশঁখালী পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের উত্তর জলদী বড়ুয়া পাড়ায় অবস্থিত শ্মশানভূমি প্রজ্ঞাদর্শন মেডিটেশন সেন্টারে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে এক ভয়াবহ আগুনে দেশ বিদেশ থেকে আনা শতাধিক বুদ্ধ মুর্তি সহ ৪০ লক্ষাধিক টাকার মুল্যাবান ধর্মীয় জিনিস পত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

এ ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ ও আতংক বিরাজ করছে।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, বাশঁখালীর সর্ববৃহৎ বৌদ্ধ মন্দির হচ্ছে পৌরসভার উত্তর জলদী বড়ুয়া পাড়া। বিগত ৪ বছর যাবৎ এই সর্ববৃহৎ ধর্মরত্ন বিহারকে কেন্দ্র করে তাদের নিজের মধ্যে ফাটল দেখা দেয়। পরবর্তীতে এই ফাটলকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে একটা গ্রুপিং তৈরি image হলে প্রকাশ্য এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের বিপক্ষে নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ডিসি উপজেলা প্রসাশনে বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ দায়ের করে।এক পর্যায়ে আধা কিলোমিটারের ব্যবধানে বড়ুয়া পাড়ার মহাশ্মশানে ২০০৯ সাল থেকে বির্দশন সাধক জ্ঞানেন্দ্রিয় স্থবির শ্মশানভুমি প্রজ্ঞাদর্শন মেডিটেশন সেন্টার স্থাপন করে বির্দশন ভাবনা সহ ধর্মীয় কার্যাদি পরিচালনা করে।

বৃহস্পতিবার তিনি ধর্মীয় কাজে চন্দনাইশে অবস্থান করায় সেখানে ২জন ভিক্ষু ও ২জন সেবক ছিল। গভীর রাতে অনুমানিক রাত ২ টার দিকে বুদ্ধের প্রার্থনা হলে ও ষ্টোররুমে আগুন দেখে তারা শুর চিৎকার করে এবং মোবাইল ফোনে বিভিন্ন সেবকদের জানালে পরবর্তীতে স্থানীয়রা শত শত লোক জুড়ো হয়ে দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও আগুনে থাইল্যান্ড, বুদ্ধগয়া, বার্মা থেকে আনীত শ্বেতপাথর ও কষ্টিপাথরের বুদ্ধমুর্তি সহ প্রায় ছোটবড় শতাধিক বুদ্ধমুর্তি পুড়ে যায়। পুড়ে যাওয়ার পর বড় বুদ্ধ মুর্তি ও সীবলী মুর্তিটি অর্ধপুড়া অবস্থায় পড়ে আছে। রাতে যখন আগুন লাগে তখন কোথাও বিদ্যুৎ না থাকলেও কিভাবে আগুন আসে তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা। প্রার্থনা ও বুদ্ধের রুমের পাশে অবস্থিত ষ্টোর রুমে রক্ষিত ভিক্ষাগ্রহণ পাত্র ছাবাইক ৫০টি, প্রায় একশটি কম্বল, সোলার প্যানেল, ষ্টোকচার, স্পীকার, ফ্লাক্স, গামলা ৬০টি, প্রায় ১শ’টি থালা, ৫০টি জগ, দেশী বিদেশী রং কাপড়সহ আরো প্রয়োজনীয় জিনিস পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

শ্মশানভুমি প্রজ্ঞাদর্শন মেডিটেশন সেন্টারের পক্ষ থেকে উপজেলা প্রশাসনকে দেওয়া তথ্য মতে ক্ষয়ক্ষতি প্রায় ৪০ লক্ষাধিক বলা হলেও পুড়ে যাওয়া বুদ্ধ মুর্তি গুলো সংগ্রহ করা অনেক দুঃসাধ্য বলে জানান শ্মশানভুমি প্রজ্ঞাদর্শন মেডিটেশন সেন্টারের পরিচালক জ্ঞানেন্দ্রিয় স্থবির ।

এ বিষয়ে বাঁশখালী পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তপন বড়ুয়া জানান, আমরা যুগ যুগ ধরে জলদী বড়ুয়া ধর্মরত্ন বিহারের বিভিন্ন প্রর্থনা করতাম। কিন্তু বিগত ৪ বছর যাবৎ জলদী বড়ুয়া ধর্মরত্ন বিহারের অধ্যক্ষকে নিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে আধা কিলোমিটারের ব্যবধানে আরো একটি শ্মশানভূমি প্রজ্ঞাদর্শন মেডিটেশন সেন্টার নির্মিত করে আমরা ধর্মীয় প্রার্থনা করি। শ্মশানভূমি প্রজ্ঞাদর্শন সেন্টারের প্রধান ভিক্ষু জ্ঞানেন্দ্রিয় স্থবির স্থানীয়দের কাছে দিন দিন জনপ্রিয়তা হয়ে উঠলে একটি কু-চক্রী মহল তার জনপ্রিয়তাকে হেউ প্রতিপন্ন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় এবং ওনার জনপ্রিয়তাকে নষ্ট করার জন্য ইতিপূর্বে বেশ কয়েকবার বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ (ফেইসবুক) প্রকাশ্যে বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি দেয়। আমাদের বড়ুয়া পড়ার সাথে কোন মুসলিম সম্প্রদায়ের সাথে কখন ও কোন দ্বন্ধ ছিল না। এটা আমাদের নিজেদের আন্তঃকোন্দলের কারণে এই অগ্নিকাণ্ড। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই ও প্রসাশনের নিকট তদন্ত পূর্বক সুষ্ট বিচারের দাবী জানাচ্ছি।

বাশঁখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার ও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: কামাল হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শনপূর্বক জড়িতদের কঠোর শাস্তি প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে ।

কমিটির সদস্যরা হলেন সহকারী কমিশনার (ভুমি) সুজন চন্দ্র রায়, থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত)কামাল উদ্দিন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবুল কালাম মিয়াজী, বাশঁখালী ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন মাষ্টার লিটব বৈঞ্চব ও পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম নাইমুল হাসান।

এ ব্যাপারে বাশঁখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: কামাল হোসেন বলেন, এ ঘটনায় আমাদের পক্ষ থেকে সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকেও ডায়েরি করা হয়েছে। এটাকে অধিক গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হচ্ছে এবং ৫ সদস্যর তদন্ত কমিটি তদন্ত করে প্রতিবেদন পেশ করবেন বলে তিনি জানান ।

বাশঁখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, ঘটনার খবর পাওয়ার সাথে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিস্তারিত অবগত হই। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবহিত করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা নেওয়া হয়েছে। যতটুকু সম্ভব প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে এবং যারা এ ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট তাদের দুষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে বলে।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।