৩০ এপ্রিল, ২০২৪ | ১৭ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২০ শাওয়াল, ১৪৪৫


শিরোনাম
  ●  মরিচ্যা পালং উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে মনজুর মেম্বার প্যানেলের চমক   ●  সাংবাদিক মাহিকে কেন ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না, জানতে চেয়ে হাইকোর্টের রুল    ●  মোটর সাইকেল প্রতীকের প্রার্থী নুরুল আবছারের ব্যাপক গনসংযোগ   ●  কক্সবাজার পৌরসভার উদ্যোগে বিশুদ্ধ পানি বিতরণ অব্যাহত   ●  ঈদগাঁওতে সোহেল, ইসলামাবাদে রাজ্জাক, ইসলামপুরে দেলোয়ার, জালালাবাদে জনি ও পোকখালীতে রফিক বিজ়য়   ●  মুক্তিযোদ্ধা এম. আবদুল হাই’র ১০তম মৃত্যুবার্ষিকী ২৯ এপ্রিল   ●  হোয়াইক্ষ্যং হাইওয়ে পুলিশের অভিযানে গুলিসহ দু’জন গ্রেফতার   ●  তীব্র তাপদাহে মানুষের পাশে মেয়র মাহাবুব   ●  টেকনাফে অপহরণ চক্রের দুই সদস্য গ্রেফতার   ●  মেয়র মাহাবুবের অর্থায়নে প্রতিবন্ধীদের মাঝে সহায়ক উপকরণ বিতরণ

পাহাড়ে শান্তি ফেরাতে যৌথ অভিযান

#কেএনএফের কেন্দ্রীয় প্রধান সমন্বয়ক গ্রেফতার
#কুকি-চিন নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার মতো অবস্থা নেই-আইজিপি।
#দুটি অস্ত্র উদ্ধার, কয়েকজন সন্ত্রাসী আটক: সেনাপ্রধান
নিজস্ব প্রতিবেদক:
পাহাড়ে শান্তি ফেরাতে, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনে যৌথ অভিযান শুরু হয়েছে। বিভিন্ন বাহিনী সম্মিলিতভাবে এ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এরইমধ্যে দুটি অস্ত্র ও কয়েকজন সন্ত্রাসীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। অন্যদিকে র‌্যাব-১৫ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন জানান, কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) কেন্দ্রীয় কমিটির প্রধান সমন্বয়ক চেওসিম বমকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গতকাল রোববার হেলিকপ্টারে বান্দরবান পৌঁছে বান্দরবান ৬৯ সেনা রিজিয়নে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় করেন তিনি। এরপর দুপুর সাড়ে ১২টায় প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান তিনি।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কড়া নির্দেশে গতকাল রাত থেকে কেএনএফ সশস্ত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে কম্বাইন্ড অপারেশন শুরু হয়ে গেছে, এরই মধ্যে দুটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত যৌথ বাহিনীর অভিযান চলবে।
সেনাপ্রধান বলেন, শান্তি কমিটির সঙ্গে কেএনএফের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আলোচনা চলছিল। দুটি মুখোমুখি সংলাপও অনুষ্ঠিত হয়েছে, তৃতীয় বৈঠকের আগেই তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটালো।
তিনি বলেন, বমদের সানডে আয়োজনে ৩১ মার্চ রুমায় বেতেলপাড়াসহ সবগুলো গির্জায় সেনাবাহিনী কেক পাঠিয়েছে। কিন্তু ২ এপ্রিল তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটালো। তাদের মনের ভেতর কী আছে সেটিতো জানা মুশকিল। তবে সরকার তাদের বিশ্বাস করেছিল, কিন্তু কেএনএফ বিশ্বাস রাখেনি।
সেনাপ্রধান আরও বলেন, কম্বাইন্ড অপারেশন এবং গোয়েন্দা কার্যক্রমও চলছে। তাই অপারেশনের সবগুলো দৃশ্যমান নয়, কিছু কার্যক্রম অদৃশ্যে চলবে, যা সাধারণ মানুষ দেখবে না, কিন্তু সুফল ভোগ করবে।
র‌্যাব-১৫ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন জানান, বান্দরবান জেলার মধ্যে প্রথম কুকি-চিন ন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশান নামে একটি সংঘটন গঠন করা হয়েছিল। যেখান থেকে যাত্রা শুরু করে ধিরে ধিরে কেএনএফ বর্তমান অবস্থায় পৌঁছায়। সেই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সমন্বয়ক ছিলেন চেওসিম বম। তার বাড়িতে বসেই নাথান বম ও জঙ্গী নেতা শামীম মাহফুজের জঙ্গী প্রশিক্ষণের চুক্তি হয়। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে কেএনএফের জন্য সে টাকা সংগ্রহ করে আসছিল। আজ ভোরে সুয়ালক এলাকার একতলা একটি ভবনে অভিযান চালিয়ে ঘরের গোপন চৌকাট বক্স থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে দুটি এয়ার গান জব্দ করা হয়। আটক চেওসিম বম (৫৫) বান্দরবান সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নের ৬ নাম্বার ওয়ার্ড শারন পাড়া এলাকার মৃত রোয়াল খুব বমের ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন-র‌্যাব-১৫ উপ-অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ শরীফুল আহসান, কোম্পানি অধিনায়ক সিপিসি-৩ এর স্কোয়াড্রন লিডার তৌহিদুল মুবিন খান প্রমুখ।
# কুকি-চিন নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার মতো অবস্থা নেই, আইজিপি
থানচি ও রুমাতে ব্যাংক ডাকাতি ও অস্ত্র লুটের ঘটনার পর পাহাড়ি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। রোববার রাজধানীর সায়েদাবাদ জনপথ মোড়ে আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
আইজিপি বলেন, কুকি-চিন যে আক্রমণ করেছে আমরা সবাই মিলে তাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পনা করে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এরই মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কিছু কার্যক্রমের খবর আসছে, আগামীতে আরও ভালো খবর আসবে।
তিনি বলেন, আমরা সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই, কুকি-চিনের বিরুদ্ধে আমরা সবাই মিলে কাজ করছি। এখন আতঙ্কিত হওয়ার মতো অবস্থা নেই।
আইজিপি আরও বলেন, সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। জিরো টলারেন্স নীতির কারণে আমরা যেভাবে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণ করেছি, পাহাড়ে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীসহ সবাই একসঙ্গে কাজ করছি। পাহাড়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
যারা পাহাড়ে অপরাধ সংগঠিত করার সঙ্গে জড়িত রয়েছে তাদের তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ হবে বলেও উল্লেখ করেন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) ড. খ. মহিদ উদ্দীন, অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন) এ কে এম হাফিজ আক্তার, সিটিটিসি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান ও যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন) বিপ্লব কুমার সরকার প্রমুখ।
# রুমায় অভ্যন্তরীণ গাড়ি চলাচল বন্ধ
বান্দরবানের রুমায় ব্যাংক ডাকাতি, অস্ত্র লুট, মসজিদে হামলা ও অপহরণের ঘটনায় এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। রোববার সকাল থেকে রুমার অভ্যন্তরীণ সব যান চলাচল বন্ধ থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। রুমা বাজার ব্যবসায়ী ও বাস মালিক সমিতির লাইনম্যানের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া যায়। বাজারের ব্যবসায়ী আবু সিদ্দিক জানান, রুমায় ব্যাংক হামলার ঘটনায় আতঙ্কে বাজার এলাকায় অধিকাংশ দোকান বন্ধ। রুমা বাজার সমিতির কর্তব্যরত সদস্য জানান, বাজার এলাকায় জনগণের উপস্থিতি অনেকাংশে কম থাকায় অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ। এছাড়া সকাল থেকে রুমার অভ্যন্তরীণ সব যান চলাচলও বন্ধ। তবে সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কোথাও গুলির শব্দ শোনা যায়নি। মালিক সমিতির লাইনম্যান মো. জাকির জানান, সকাল থেকে বান্দরবান-রুমায় গণপরিবহন চলাচল করলেও উপজেলার অভ্যন্তরীণ সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহজাহান জানান, বাজার এলাকায় আংশিক দোকান বন্ধ থাকলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক থাকার কথা।
#কেএনএফ সদস্যদের প্রতি অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান শান্তি কমিটিরঃ
কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্যদের অস্ত্র সমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি। রবিবার (৭ এপ্রিল) বেলা ৩টায় শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব স্বাক্ষরিত এক লিখিত বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়।
বিবৃততে বলা হয়, কেএনএফের দাবি অনুযায়ী বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সমন্বয়ে এ পর্যন্ত বম জনগোষ্ঠীর জন্য রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলার মোট ৯৬৮টি বম পরিবারের মাঝে ১৩৪ মেট্রিকটন খাদ্য শস্য, নগদ অর্থ, শীতবস্ত্র, চিকিৎসা সহায়তা প্রদানসহ তাদের কারান্তরীণ দুইজন সদস্যকে জামিনে মুক্তি লাভে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। অবশিষ্ট কারান্তরীণ সদস্যদের মুক্তির ব্যাপারে আইনী প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত বম জনগোষ্ঠীদের সহায়তার জন্য এলাকায় খাদ্য-শস্য ইতোমধ্যে পৌঁছানো হয়েছে। তাদের উত্থাপিত দাবিসমূহ ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট গোচরিভূত করা হয়েছে। তবুও কেএনএফ সদস্যরা গত ২ এপ্রিল  রুমা উপজেলায়  অতর্কিতভাবে সশস্ত্র অবস্থায় বর্বরোচিত হামলা, সরকারি কর্মকর্তা ও পথচারীদের জিম্মি করে হামলা, অর্থ লুটের উদ্দেশে সোনালী ব্যাংকে হামলা, ব্যাংক ম্যানেজার  নেজাম উদ্দিনকে অপহরণ, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর ১৪টি অস্ত্র লুট করে। ৩ এপ্রিল থানচি উপজেলায় স্থানীয়বাসীদের জিম্মি করে এলোপাথাড়ি গুলিবর্ষণ ও দুইটি ব্যাংক লুট করার মতো জঘন্যতম ঘটনায় সমগ্র জাতি স্তম্ভিত ও মর্মাহত, যা  সম্পূর্ণভাবে সমঝোতা চুক্তির শর্তাবলী লঙ্ঘন।ইতোমধ্যে অপহরণের শিকার ব্যাংক কর্মকর্তা নেজাম উদ্দিনকে ৪ এপ্রিল উদ্ধার করা গেলেও পুলিশ এবং আনসার বাহিনীর লুট হওয়া মোট ১৪টি অস্ত্র এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার ও এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখা একান্ত প্রয়োজন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটিসহ আপামর জনগণ এ উদ্ভট পরিস্থিতি কোনভাবে কামনা করছে না। এমন অশান্ত পরিস্থিতি পরিহার এবং সম্পাদিত সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী কেএনএফের সকল সদস্য শান্তি বজায় রাখতে অস্ত্র সমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আহ্বান জানায় শান্তি প্রতিষ্টা কমিটি।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) সকালে কেএনএফের সঙ্গে শান্তি কমিটির আলোচনা স্থগিতের ঘোষণা দেন পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির আহ্বায়ক ক্য শৈ হ্লা। বৃহস্পতিবার সকালে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ সভা কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।