২০ এপ্রিল, ২০২৪ | ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ | ১০ শাওয়াল, ১৪৪৫


শিরোনাম
  ●  কক্সবাজার পৌরসভায় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তারিকুলের বরণ ও উপ-সহকারি প্রকৌশলী মনতোষের বিদায় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত   ●  জলকেলি উৎসবের বিভিন্ন প্যান্ডেল পরিদর্শনে মেয়র মাহাবুব   ●  উখিয়া সার্কেল অফিস পরিদর্শন করলেন ডিআইজি নুরেআলম মিনা   ●  ‘বনকর্মীদের শোকের মাঝেও স্বস্তি, হত্যার ‘পরিকল্পনাকারি কামালসহ গ্রেপ্তার আরও ২   ●  উখিয়া নাগরিক পরিষদ এর ঈদ পুনর্মিলনী ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত   ●  আদালতে ফরেস্টার সাজ্জাদ হত্যার দায়স্বীকার সেই ডাম্পার চালক বাপ্পির   ●  ‘অভিযানে ক্ষুব্ধ, ফরেস্টার সাজ্জাদকে পূর্বপরিকল্পনায় হত্যা করা হয়’   ●  ফাঁসিয়াখালীতে পৃথক অভিযানে জবর দখল উচ্ছেদ, বালিবাহী ডাম্পার জব্দ   ●  অসহায়দের পাশে ‘রাবেয়া আলী ফাউন্ডেশন’   ●  ফরেস্টার সাজ্জাদ হত্যার মূল ঘাতক সেই বাপ্পী পুলিশের জালে

নিরাপদে বসবাস, অবৈধ পাসপোর্ট গ্রহণ পূর্বক বিদেশ গমন

index
নিরাপদে বাংলাদেশে বসবাসের সুযোগ, অবৈধ পাসপোর্ট গ্রহণ পূর্বক বিদেশ গমন, যত্রতত্র বিচরণের সুযোগ থাকায় সীমান্তের দায়িত্বে নিয়োজিত বিজিবি’র চোখ ফাঁকি দিয়ে একশ্রেণির দালালদের হাতধরে দিন দিন এদেশে প্রবেশ করছে অসংখ্য রোহিঙ্গা নাগরিক। এনিয়ে স্থানীয় গ্রামবাসীর মধ্যে  বিরাজ করছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা। পাশাপাশি কতিপয় এনজিও সংস্থা কর্তৃক উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা বস্তিতে ঢালাও ভাবে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের মাধ্যমে অবৈধ রোহিঙ্গাদের সাহায্য সহযোগীতার হাত সম্প্রসারিত হওয়ায় সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটছে বলে স্থানীয় সীমান্তবাসীর অভিযোগ। চলতি মাসের এ পর্যন্ত প্রায় ৭শ’ শতাধিক অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাকে বিজিবি মিয়ানমারে ফেরত পাঠালেও অধিকাংশ রোহিঙ্গা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে বলে মনে করছেন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দরা। গত শুক্রবার ১০৮ জন রোহিঙ্গা আটকের ঘটনার জের ধরে স্থানীয় দালাল ও বিজিবি’র মধ্যে সংঘর্ষে বিজিবি’র সুবেদারসহ ৪ জন আহত হয়। এ ঘটনায় বিজিবি’র হাবিলদার জাকির হোসেন বাদী হয়ে জ্ঞাত ও অজ্ঞাত ৮১ জনকে আসামী করে উখিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার নং-০২, তারিখ- ০৬/০৩/২০১৫ইং।
জানা গেছে,  ২০১০ সালে তুমব্রু, ঘুমধুম, বালুখালী ও পালংখালী সীমান্তের নাফনদী অতিক্রম করে প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের পার্শ্বে বিশাল বনভূমির জায়গা দখল করে আশ্রয় নেয়। কক্সবাজারের তৎকালীন জেলা প্রশাসকের নিদের্শে স্থানীয় বনবিভাগ, পুলিশ-বিজিবি দফায় দফায় অভিযান চালিয়ে এসব রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে পারেনি। এসময় জেলা প্রশাসক অনুপ্রবেশকারী এসব রোহিঙ্গাদের অবৈধ ঘোষণা করে তাদেরকে কোন প্রকার সাহায্য সহযোগীতা না করার নিদের্শ প্রদান করেন। তথাপিও কতিপয় দালালদের সহায়তায় নিরাপদে এদেশে প্রবেশ করার সুযোগ থাকা ও  এনজিও সংস্থা কর্তৃক এসব অবৈধ রোহিঙ্গাদের বস্তিতে বেপরোয়া ত্রাণ সামগ্রী গ্রহণ করার কারণে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ থামছে না। এসব রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের অভিযোগে তৎকালীন জেলা প্রশাসক জয়নুল বারী এনজিও সংস্থা মুসলিম এইড, এমএসএফ হল্যান্ড ও এসিএফ’র রোহিঙ্গা ভিত্তিক সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ করে দিলেও কিন্তু তা মানছে না ওইসব এনজিও সংস্থাগুলো।
সম্প্রতি আইএমও, মুক্তি, এমএসএফ হল্যান্ড, এসিএফ, মুসলিম এইড ও শেড সহ বিভিন্ন এনজিও সংস্থা রোহিঙ্গা বস্তিতে ত্রাণ সামগ্রীসহ বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজ করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এনজিও সংস্থা আইএমওকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করার জন্য সরকারি ভাবে নিদের্শ দেওয়ার কথা জেলা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কর্মকর্তা ফরিদ আহমদ ভূইঁয়া স্বীকার করলেও অন্যান্য এনজিও সংস্থাগুলোর ভূমিকা নিয়ে স্থানীয় গ্রামবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। রোহিঙ্গা বস্তি ম্যানেজমেন্ট কমিটির সেক্রেটারী রাকিব উল্লাহ এঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে রোহিঙ্গারা পাড়ি জমার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। এছাড়াও বির্তকিত মুক্তি নামের একটি এনজিও সংস্থা রোহিঙ্গা বস্তিতে লেট্রিন, টিউবওয়েল, ঔষুধ সামগ্রী, সাবান, খাবার স্যালাইন সহ মহিলাদের বিভিন্ন প্রকার ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের খবরে রোহিঙ্গা নাগরিকেরা বস্তিতে ঢুকে পড়ছে। এনজিও সংস্থা মুক্তির ফিল্ড কোর্ডিনেটর মোহাম্মদ জাবের জানান, তারা আইএমও’র প্রতিনিধিত্ব করছেন। স্থানীয় আ’লীগ নেতা মোহাম্মদ নুরুল হক জানান, এসব অবৈধ রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সামগ্রীসহ সাহায্য সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার ফলে বস্তিতে বসবাসরত অবৈধ রোহিঙ্গারা উৎসাহিত হওয়ার প্রেক্ষিতে মিয়ানমারে বসবাসরত রোহিঙ্গারা সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে এদেশে অনুপ্রবেশ করছে। এদের কিছু কিছু বিজিবি’র হাতে ধরা পড়লেও বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে রোহিঙ্গা বস্তিসহ দেশের আনাচে কানাছে আশ্রয় নিতে সক্ষম হচ্ছে। তিনি অবিলম্বে বস্তি এলাকায় এনজিও সংস্থার কার্যক্রম বন্ধ করার দাবী জানান। বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার ১০৮ রোহিঙ্গাসহ ফেব্রুয়ারী মাসে প্রায় ৮ শ’ শতাধিক অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে, কক্সবাজার ১৭ বিজিবি’র অধিনায়ক লে.কর্ণেল খন্দকার সাইফুল আলম জানান, সীমান্তে বসবাসরত একশ্রেণির দালাল চক্রের কারণে রোহিঙ্গারা এখানে অনুপ্রবেশ করতে সক্ষম হচ্ছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানান, কতিপয় এনজিও সংস্থা এসব রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তাদের আখের গোছানোর জন্য দায়ভার বহন করতে হচ্ছে এদেশের মানুষকে। তাই এসব এনজিও সংস্থাগুলোর রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করা না হলে সরকারি গৃহীত পদক্ষেপ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া কোন দিনও সফলতা লাভ করবে না। উপরোন্তু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ আরো বৃদ্ধি পেয়ে উখিয়া-টেকনাফের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সার্বিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হওয়ার আশংকা রয়েছে।
উল্লেখ্য যে, ঢালাও ভাবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকালে বালুখালী বিজিবি’র সদস্যরা গত শুক্রবার সীমান্তের পানবাজার কাকড়া ব্রীজ এলাকা থেকে ১০৮ জন রোহিঙ্গা সহ ২টি চাঁদের গাড়ী জব্দ করে। গাড়ী তল্লাসীর সময় চালক ও হেলপার বাঁধা প্রদান করলে বিজিবি তাদেরকে চড় থাপ্পর মারে। পরে পরিবহন শ্রমিক ও রোহিঙ্গা পাচারকারী দালালেরা উক্ত ঘটনায় ক্ষুদ্ধ হয়ে কক্সবাজার টেকনাফ সড়ক অবরোধ ও বিজিবি’র উপর ইট, পাটকেল নিক্ষেপ ও পরে গুলি বর্ষণ করে। এসময় বিজিবি’র সুবেদার ফজলুল হক গুলিবিদ্ধ হয়। বিজিবি’র দায়ের করার মামলায় গতকাল শনিবার পর্যন্ত ৩ জন কে আটক করেছে। আটককৃতরা হলেন, শাহ আলমগীর (৩৫), মোঃ ফয়সাল(৩০) ও শাহাব উদ্দিন (৩৫)। বর্তমানে বালুখালী এলাকা এখন পুরুষ শূণ্য হয়ে পড়েছে বলে ইউপি সদস্য ফজলুল কাদের চৌধুরী ভুট্টো সাংবাদিকদের জানান।

 

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।