২০ এপ্রিল, ২০২৪ | ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ | ১০ শাওয়াল, ১৪৪৫


শিরোনাম
  ●  কক্সবাজার পৌরসভায় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তারিকুলের বরণ ও উপ-সহকারি প্রকৌশলী মনতোষের বিদায় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত   ●  জলকেলি উৎসবের বিভিন্ন প্যান্ডেল পরিদর্শনে মেয়র মাহাবুব   ●  উখিয়া সার্কেল অফিস পরিদর্শন করলেন ডিআইজি নুরেআলম মিনা   ●  ‘বনকর্মীদের শোকের মাঝেও স্বস্তি, হত্যার ‘পরিকল্পনাকারি কামালসহ গ্রেপ্তার আরও ২   ●  উখিয়া নাগরিক পরিষদ এর ঈদ পুনর্মিলনী ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত   ●  আদালতে ফরেস্টার সাজ্জাদ হত্যার দায়স্বীকার সেই ডাম্পার চালক বাপ্পির   ●  ‘অভিযানে ক্ষুব্ধ, ফরেস্টার সাজ্জাদকে পূর্বপরিকল্পনায় হত্যা করা হয়’   ●  ফাঁসিয়াখালীতে পৃথক অভিযানে জবর দখল উচ্ছেদ, বালিবাহী ডাম্পার জব্দ   ●  অসহায়দের পাশে ‘রাবেয়া আলী ফাউন্ডেশন’   ●  ফরেস্টার সাজ্জাদ হত্যার মূল ঘাতক সেই বাপ্পী পুলিশের জালে

নাইক্ষ্যংছড়ির গহীন অরণ্যে উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল, নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ

UKHIYA PIC 13.03.2015(1)
নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের চাইল্যাতলী ঘুমধুম পুলিশ ফাঁড়ি থেকে আনুমানিক এক থেকে দেড় কিলোমিটার ভিতরে সংরক্ষিত বন এলাকায় ও বাইশারী  ইউনিয়নের দূর্গম এলাকা কাগজীখোলায় ইট তৈরি ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ উপেক্ষা করে চলছে অবৈধ ইট ভাটা, ব্যবহৃত হচ্ছে পরিবেশের ক্ষতিকারক ড্রাম চিমনি।  গড়ে তুলা ওই ইট ভাটা ৩ টিতেই সরকারি কোন অনুমোদন নেই। সেখানে প্রকাশ্যে সংক্ষরিত বনের কাঠ পুড়িয়ে ও পাহাড় নিধন করে তৈরি করা হচ্ছে ইট। ইট ভাটার আশে-পাশের বন জঙ্গঁল লুটপাট ও নির্বিচারে পাহাড় কেটে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করলেও প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করছে। এ নিয়ে পরিবেশবাদীদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ইট ভাটার বিষাক্ত কালো ধোয়াঁয় দিন দিন পরিবেশ বিপর্যস্ত হলেও বহাল তবিয়তে অবৈধ ইট ভাটার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে  মালিকপক্ষ। স্থানিয়রা জানিয়েছেন, প্রভাবশালী চক্রের হাতে উপজেলা প্রশাসন ও বনবিভাগের দুর্নীতি পরায়ন কর্তাব্যাক্তিরা ম্যানেজ হওয়ার কারণে অবৈধ ইট ভাটার কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছেনা।  সরকারী স্কুল, পুলিশ ফাঁিড়, জনবসতি ও বনায়ন এলাকার সন্নিকটে এ ইট ভাটা গুলোর কার্যক্রম চালিয়ে আসছে তিন বছর ধরে। ইতিপূর্বে এ ইট ভাটায় ব্যবসায়িক কাযক্রর্ম নাইক্ষ্যংছড়িস্থ তৎকালীন বিজিবি জনস্বার্থে বন্ধ করে দিলেও স্থায়ী ভাবে এই অবৈধ ইট ভাটা বন্ধ করা হয়নি। ফলে চলতি বছর আবারো ইট ভাটা কার্যক্রম চলছে। ইট ভাটা পরিচালনার কোন নীয়মনীতি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়াই প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট করে জ্বালানি কাঠ হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে কাঠ। সেই সাথে বাড়ছে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকাও।
সরজমিনে দেখা যায়, ঘুমধুম গহীন অরণ্যের চাইল্যাতলী ঘুমধুম পুলিশ ফাঁড়ি থেকে আনুমানিক এক থেকে দেড় কিলোমিটার ভিতরে সংরক্ষিত এলাকায় গড়ে তুলা ইট ভাটা দু’টোতে সরকারি কোন অনুমোদন নেই। অবৈধ এই ইট ভাটায় ব্যবহার করা হচ্ছে পরিবেশের জন্য মারাত্মক তৈলের ড্রাম চিমনি। পুড়ানো হচ্ছে সংরক্ষিত সরকারি বনের মূল্যবান কাঠ।এছাড়া ইট তৈরির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে পাহাড় কেটে আনা হচ্ছে মাটি। রেজু আমতলী এলাকায় অবস্থিত ইট ভাটার ম্যানেজার আমান উল্লাহ বলেন, কক্সবাজারের উখিয়ার আলী আহম্মদ কোস্পানী থেকে বালুখালী গ্রামের আলী হোসেন মেম্বারের ছেলে নুরুল হক কোম্পানি এ ইট ভাটাটি চলতি মৌসুমের জন্য ৮ লাখ টাকায় ইজারা নিয়েছেন।তিনিই বর্তমানে ভাটা পরিচালনা করছেন। সরকারি অনুমোদন আছে কিনা জানতে চাইলে সে কোন উত্তর না দিয়ে কথা এড়িয়ে যান। অন্যদিকে ঘুমধুম পুলিশ ফাড়িঁর বিপরীতে গহীন বন এলাকায় পাহাড় নিধন করে পাচঁ বন্ধু মিলে তৈরি করেছে ফাইভ স্টার নামের আরেক অবৈধ ইট ভাটা। সেখানে ইট পোড়াতে প্রকাশ্যেই ব্যবহার করছে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বিপুল পরিমাণ কাঠ। ওই ইট ভাটায় শিশুরাও কাজ করছে। এসময় ইট ভাটার ম্যানেজার মোঃ আনোয়ার প্রতিবেদককে উদ্দেশ্য করে বলেন, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ইউএনও, পরিবেশ । অধিদপ্তরের লোকজন ও আপনাদের মত অনেক সাংবাদিকগণ ইট ভাটা থেকে ঘুরে গেছে। মালিকের (লক্ষিকান্ত বড়–য়া) সাথে মুঠো ফোনে সরকারি অনুমোদন আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি অকপটেই স্বীকার করে বলেন, অনুমোদন নেই। তবে সবার সাথে সমন্বয় রেখেই ভাটা পরিচালনা করছি।
স্থানিয়রা জানিয়েছেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কর্তৃপক্ষের চাপের মুখে গত বছর নাইক্ষ্যংছড়ির ইট ভাটাগুলো সাময়িক বন্ধ থাকার পর চলতি বছর থেকে আবার চালু হয়েছে। তারা বলেন লক্ষিকান্ত বড়–য়া, শামশুল আলম ও দুলাল র্শ্মমাসহ পাচঁ বন্ধু মিলে ঘুমধুমের ফাইভ স্টার নামে অবৈধ ইট ভাটাটি চালাচ্ছেন। আর এদিকে উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের ১নং কাগজিখোলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ ক্যাম্পের নিচে বিগত তিন বছরের ন্যায় আবারো কাচাঁ চিমনী হিসেবে পরিচিত কাটা ড্রাম চুল্লি দিয়ে তৈরী ইট ভাটায় বনের মূল্যবান কাঠ পুড়ানো হচ্ছে। এখানে প্রায় শতাধিক শ্রমিক কাজ করছিল। উপজেলা সদর থেকে যাতায়ত সড়ক দূর্গম হওয়ায় প্রশাসন কিংবা ইউনিয়নের অনেকে জানেনা এ অবৈধ কার্যক্রমের বিষয়ে। আনুমানিক ১৫ ফুটের মত লম্বা কাচাঁ চিমনী দিয়ে তৈরী ড্রাম চুল্লির এ ইট ভাটায় জ্বালানী হিসেবে বনের মূল্যবান চারা গাছ পুড়াঁনোর ফলে কালো ধুয়া চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে। কয়েক জন শ্রমিকের সাথে কথা হলে, পাহাড়ী মাটি ও লাকড়ী দিয়ে ইট পুড়ানোর কথা এ প্রতিবেদকের নিকট স্বীকার করেন। তবে উক্ত ইট ভাটা অবৈধ হলেও চুক্তির ভিত্তিতে তারা কাজ করেন বলে এ প্রতিবেদককে জানান। এছাড়াও এ ইট ভাটায় কাচাঁ মাল হিসেবে পার্শ্ববর্তী পাহাড় ও জমির টপ সয়েল কেটে মাটি এনে স্তপ করার দৃশ্য দেখা গেছে। আর এদিকে উপজেলার বাইশারীর খাগোজিখোলা এলাকায় সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সীমান্তবর্তী উপজেলার ঘেষা কাগজিখোলা নামক এলাকায় প্রশাসনের অগোচরে এ ইটভাটায় অবৈধ ভাবে কাজ চলছে। এর আগে স্থানীয় পরিবেশবিদ ও স্থানিয় সাংবাদ কর্মীদের অভিযোগ মতে নাইক্ষ্যংছড়িস্থ তৎকালীন বিজিবি জনস্বার্থে উক্ত ইট ভাটার অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করে দিলেও বর্তমানে পুনরায় কাজ শুরু করেছে পার্শ্ববর্তী চকরিয়া উপজেলার খুটাখালীর জনৈক তিন ব্যবসায়ী পার্টনার নাজমুল হক পিয়ারো, শামসুদ্দিন আহামেদ ও কামাল উদ্দিন মেম্বার।     অবৈধ ইট ভাটার বিষয়ে জানতে ভাটার মালিক শামসুদ্দিন আহামেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইট ভাটার একজন ব্যবসায়ীক পার্টনার হিসেবে পরিচয় দেন। ইট ভাটার বৈধতার বিষয়ে তিনি কিছু জানেনা। প্রশাসনিক বিষয় গুলো অপর পার্টনার নাজমুল হক পিয়ারো দেখা শুনা করায় এ প্রতিবেদককে তার সাথে যোগাযোগের অনুরোধ করেন। নাজমুল হক পিয়ারু’র বলেন- হাইকোর্টের রিটের কপি নিয়ে আপাতত ড্রাম চুল্লি দিয়ে ইট ভাটায় কাজ চলছে। জেলা প্রশাসনের কোন অনুমোদন নেই বলে তিনিও এক বাক্যে স্বীকার করেন। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আবু সাফায়াত মুহাম্মদ শাহেদুল ইসলাম এর নিকট যোগাযোগ করা হলে, পাহাড়ের ভিতর ইট ভাটা তৈরীর বিষয়টি তিনি এখনও জানেন না। তবে এ বিষয়ে তিনি খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা সাংবাদিকরদের জানান। অপরদিকে লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম চৌধুরীর দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে, তারা ঢাল তলোয়ার বিহীন একটি প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করছেন। ইচ্ছে করলে কিংবা আইন প্রয়োগের জন্য অনেক কিছু করা সম্ভব হয়না। তবে জেলা কিংবা উপজেলা প্রশাসন তাদের সহযোগিতা চাইলেই ঘটনাস্থলে অভিযান চালাতে পারেন বলে জানান।
জানতে চাইলে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সরদার সাইফুল ইসলাম জানান, নাইক্ষ্যংছড়ির কোন ইট ভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই এবং নতুন আইন অনুযায়ী পার্বত্য এলাকায় এ ইট ভাটার ছাড়পত্র পাওয়ার সম্ভাবনাও নেই বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান।  কৃষি ও পরিবেশবিদগণের মতে, পাহাড়ের মাটি ও জমির টপ সয়েল কেটে ইট ভাটায় নেওয়ার ফলে এলাকায় কৃষি বিপ্লবে মারাত্মক ব্যাঘাত হচ্ছে। এছাড়াও জনবসতিপূর্ণ এলাকায় এসব ইট ভাটার কালো ধোঁয়ায় পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হলেও সংল্লিষ্টদের কাছে যেন এসবের কোন মাথা ব্যাথা নেই। উল্লেখ্য, সংরক্ষিত এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করলে পাঁচ বছরের কারাদন্ড এবং পাঁচ লাখ টাকা অর্ধদন্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে পাশ হওয়া ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রন) বিল-২০১৩’ আইনে ইটভাটায় জ্বালানী হিসেবে কাঠ ব্যবহার নিষিদ্ধ রয়েছে। আর অনুমোদন না নিয়ে ইটভাটা খুললে এক বছরের কারাদন্ড এবং এক লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু এ আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় প্রশাসনের দায়িত্ব নিয়ে স্থানীয়রা প্রশ্ন তোলেন।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।