২৫ এপ্রিল, ২০২৪ | ১২ বৈশাখ, ১৪৩১ | ১৫ শাওয়াল, ১৪৪৫


শিরোনাম
  ●  বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া সেনা ও বিজিপির ২৮৮ সদস্য ফিরল মিয়ানমারে   ●  কক্সবাজার পৌরবাসির কাছে মেয়রের শেষবারের মতো ৫ অনুরোধ   ●  কক্সবাজারে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ, শৃংখলা জোরদারের  লক্ষ্যে মোবাইল কোর্ট, জরিমানা   ●  রামুতে নিরাপদ পানি ও উন্নত স্যানিটেশন  সুবিধা পেয়েছে ৫০ হাজার মানুষ     ●  কক্সবাজারে ছাত্রলীগের ৫ লক্ষ গাছ লাগনোর উদ্যোগ   ●  মহেশখালীতে সাংসদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী পরিবেশ বিনষ্টের অভিযোগ    ●  জেএস‌আরের বিরুদ্ধে উঠা সকল অভিযোগ কে অপপ্রচার বলে দাবি সভাপতি জসিমের   ●  ‘দশ হাজার ইয়াবা গায়েব, আটক  সিএনজি জিডিমূলে জব্দ   ●  বাংলাদেশ ফরেস্ট রেঞ্জার’স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা   ●  কক্সবাজার পৌরসভায় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তারিকুলের বরণ ও উপ-সহকারি প্রকৌশলী মনতোষের বিদায় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত

দেশীয় সংস্কৃতি বিলুপ্ত প্রায় : লোকজন এখন বিদেশী সংস্কৃতিমুখী!

shomoy
বিয়ে মানবজীবনের গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়। বর-কনে ছাড়াও দুই পক্ষের পরিবার-পরিজন ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজনের জন্য আনন্দ-উৎসবের অন্যতম এক অনুসঙ্গ এ বিয়ে। নানা দেশে বিয়ের আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসবের অনুসঙ্গ একেক রকম। কিন্তু এদেশে ছোট বেলা থেকেই আমরা দেখে আসছি যে, বিয়ের কথা-বার্তা ও দিন তারিখ ঠিক হওয়ার পর থেকেই উভয় পরিবারে শুরু হয় আনন্দ-উৎসবের প্রাথমিক পর্যায়। বরের বাড়িতে হঁলা সংগীত আর হরেক রকমের গানের আসর বসে বিয়ের অন্ততঃ পক্ষকাল পূর্ব থেকেই। বিয়ে বাড়ি ও আশপাশের দু’দশ ঘরের মহিলারা সাংসারিক কাজের অবসরে দল বেঁধে বসে রকমারি সূর-ছন্দে এ হঁলা সংগীতে অংশ নেন। বর-কনে ও দু পরিবারের বিভিন্ন দিক এবং বিষয় নিয়ে রচিত হয় হঁলা সংগীত। বিয়ের সপ্তাহ পূর্বে আবার এলাকার মাতব্বর-মুরব্বী-সমাজপতি-গণ্যমান্য ও স্থানীয়দের অংশগ্রহনে “পানছল্লা” বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পান খেতে খেতে পরামর্শ করা হয় বলে এর নাম গ্রাম্য ভাষায় “পানছল্লা”। এতে আসন্ন বিয়ের দিনের যাবতীয় আচার-প্রীতিভোজের অনুষ্ঠান সুচারুভাবে সম্পন্ন করার ছক আঁকা হয়। পানছল্লায় উপস্থিতির মাঝে বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব বন্টন করে দেয়া হয়। পরে বিয়ের দিন সেভাবেই সব কাজ সম্পন্ন করা হয়। বিয়ের আগের দিন কনে বাড়ির অন্দরমহলে মহিলারা সমবেত হয়ে মেহেদী পাতা বেটে কনেকে মেহেদী পরান। হাতে-পায়ে ও মুখে মেহেদীর নান্দনিক আল্পনা একে দেন ও নেন কনেসহ মহিলারা। অনেক সময় বরের বাড়ি থেকে আগত মহিলারাও অংশ নেন এ মেহেদী উৎসবে। এখানে কিন্তু একটা বিষয় লক্ষ্যনীয়, এ মেহেদী অনুষ্ঠানে পুরুষদের অংশগ্রহণ তথা প্রবেশ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ও নিয়ন্ত্রিত। এ সবই আমাদের সোনালী ঐতিহ্য । আবহমান বাংলার বিয়ে বাড়ির হাজারো বছরের লোকজ ঐতিহ্য সম্ভবতঃ এরকমই। কিন্তু দিন বদলের সনদ বাস্তবায়ন তথা ডিজিটাল যুগে অতি আধুনিকতার সাথে তাল মিলাতে গিয়ে উপরোক্ত সব সোনালী ঐতিহ্য ক্রমশঃ হারিয়ে যাচ্ছে দিন দিন। ঠিক তারই স্থলে ভিনদেশী সংস্কৃতি জাঁকিয়ে বসছে। বিয়ের আগের রাতে কনে বাড়িতে রীতিমত ধুমধাম করে মেহেদী অনুষ্ঠানের নামে এখন যা হচ্ছে সভ্য সমাজে তা কোনক্রমেই গ্রহনযোগ্য নয়। এসব মেহেদী অনুষ্ঠানে দেখা যায়, কনের বাড়ির আঙ্গিনায় অথবা কমিউনিটি ক্লাবে নানা স্টাইলে খোলা মঞ্চ তৈরি করে সেখানে সন্ধ্যার পরপরেই শুরু হয় তথাকথিত মেহেদী অনুষ্ঠান। কনে সাজ গোজ করে বিশাল আকারের চেয়ারে বসে উপস্থাপিত হয় খোলা সেই মঞ্চে। সেই মঞ্চে ফাঁকে ফাঁকে কনেকে বন্ধু-বান্ধবীসহ এক এক করে সব আত্মীয়স্বজন মিষ্টিমুখ করার পাশাপাশি এসব দৃশ্য চলচ্চিত্রাকারে একাধিক ভিডিও ক্যামেরায় স্মৃতি আকারে ধারন করে রাখা হয়। এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, এসব মেহেদী অনুষ্ঠানে কেবলমাত্র মেয়েদের দেখার জন্য আশপাশের দু-চার-দশ গ্রাম-মহল্লা থেকে আগত লোকজনের ঢল নামে। বিয়ের প্রাক্কালে মেহেদী অনুষ্ঠানের নামে কি হচ্ছে এসব? কোথায় চলেছি আমরা ও আমাদের আগামী প্রজন্ম? ভিনদেশী সংস্কৃতির এ মেহেদী আগ্রসন নিয়ে অনেক অভিভাবক অমত পোষন করলেও তারা অসহায়। কারন বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা নাছোড়বান্দা, তাই তাদেরই কথা মানতে হয়। এভাবেই হয়ত দিনদিন রসাতলে যাচ্ছে আমাদের সমাজের অবস্থা, পারিবারিক মূল্যবোধ, পারষ্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, মায়া-মমতা-সহমর্মিতা। আমরা কি সামাজিক অবক্ষয়ের সামনেই পড়তে যাচ্ছি? এর প্রতিকারের উপায় কি? চিন্তা করার এখনই সময়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেলে শত চিন্তা করেও সৎ পথে ফেরানোর মত হয়ত কোন ফল হবে না।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।