২৯ মার্চ, ২০২৪ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ | ১৮ রমজান, ১৪৪৫


শিরোনাম
  ●  উখিয়ায় পাহাড় চাপা পড়ে রোহিঙ্গা শ্রমিকের মৃত্যু   ●  স্বদেশ ফিরতে ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের সমাবেশ   ●  মহাসড়কে ফুটপাত দখলমুক্ত করার উদ্যোগ রামু ক্রসিং হাইওয়ে থানার   ●  কক্সবাজারে হাফেজ মুশফিকুর রহমানকে সংবর্ধনা দিল ছাত্রলীগ   ●  রামুতে এক ঘন্টার ব্যবধানে স্কুল ছাত্রসহ হতাহত চার   ●  সুগন্ধা পয়েন্টের লাল মিয়াসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা   ●  সাংবাদিক রাশেদুল মজিদের উপর পুলিশের হামলা, এক সদস্যের তদন্ত কমিটি   ●  কক্সবাজারে ট্রাফিক পুলিশের ‘আসকারায়’ যত্রতত্র পার্কিং, কোটি টাকার বাণিজ্য   ●  কক্সবাজারে ট্রাফিক পুলিশের অনিয়ম-দূর্নীতি ও প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি   ●  ড্রাইভিং পেশায় মহিলাদের সুযোগ দিলেন সেভ দ্য চিলড্রেন ও সিএনআরএস

চার কারণে সবার কাছে পৌঁছাচ্ছে না ‘ব্রডব্যান্ড’ ইন্টারনেট

অবকাঠামো গড়ে না ওঠা, টান্সমিশন খরচ বেশি হওয়া, ক্রয় ক্ষমতা কম এবং গ্রাহক তৈরি না হওয়ায় সারাদেশের মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না ব্রডব্যান্ড (উচ্চগতি) ইন্টারনেট। দেশের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট মূলত ঢাকা কেন্দ্রীক। ঢাকার বাইরে এ চার কারণ সক্রিয় হওয়ায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের বাইরেই থাকতে হচ্ছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের।

সরকার সক্রিয়ভাবে সারাদেশকে কানেক্টেড না করলে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে সারাদেশে ব্রডব্যান্ড খুব বেশি পৌঁছবে না। যেসব জায়গায় ব্রডব্যান্ড গেছে তার বেশিরভাগই লোকসানি প্রকল্প। এছাড়া ব্রডব্যান্ড নীতিমালা হালনাগাদ না করাও এর সম্প্রসারণের পেছনে বড় বাঁধা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও আরও দুই বছর আগে জাতীয় ব্রডব্যান্ড নীতিমালা-২০০৯-এর মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে। নীতিমালায় লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ২০১৫ সাল পর্যন্ত।

জানা গেছে, সরকারের আইসিটি বিভাগ সারাদেশে উপজেলায় পর্যন্ত ফাইবার অপটিক ক্যাবল সংযোগ দিয়েছে ইনফো সরকার প্রকল্প-২-এর মাধ্যমে। কিন্তু সেসব জায়গায় ব্রডব্যান্ড পৌঁছয়নি। ওই প্রকল্পের মাধ্যমেই সারাদেশের ১৮ হাজার সরকারি অফিসের মধ্যে কানেক্টিভিটি তৈরি করা হয়েছে।

আরও জানা গেছে, আইসিটি বিভাগ ইনফোর সরকার প্রকল্প-৩ প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশের ২ হাজার ৬০০টি ইউনিয়নে ফাইবার অপটিক ক্যাবল সংযোগ স্থাপন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। এসবের মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কবে পৌঁছাবে তা এখনও নির্দিষ্ট করা যায়নি।

প্রসঙ্গত, দেশে জাতীয় ব্রডব্যান্ড নীতিমালা প্রণয়ন করা হয় ২০০৯ সালে। ৭ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও নীতিমালা হালনাগাদ বা সংশোধন করা হয়নি। নীতিমালায় স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি তিনটি লক্ষ্য ছিল। সেসবেরও মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৫ সালে। তবে নীতিমালা হালনাগাদ না হলেও এরই মধ্যে ব্রডব্যান্ডের সংজ্ঞা বদলেছে তিনবার।

গত ৮ বছরে ব্রডব্যান্ডের গতি ১২৮ কেবিপিএস থেকে ৫ এমবিপিএস হলেও নীতিমালা হালনাগাদ না হওয়ায় এর লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং অর্জন নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ না হওয়ায় আগের অবস্থানেই রয়েছে জাতীয় ব্রডব্যান্ড নীতিমালা।

উন্নয়নের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি প্রকল্প ‘আমাদের গ্রাম’র প্রকল্প পরিচালক রেজা সেলিম বলেন, ‘ব্রডব্যান্ডের নীতিমালা হালনাগাদ না হলেও বারবার এর সংজ্ঞা বদলাচ্ছে। ফলে নীতিমালার মূলে হাত পড়ছে না। তাই ব্রডব্যান্ড নীতিমালায় স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদের লক্ষ্যমাত্রা খুব কমই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে।’ তিনি মনে করেন, তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক অবকাঠামো তৈরি হলে এগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।

বর্তমানে বাংলাদেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সর্বনিম্ন গতি ৫ এমবিপিএস। তবে ৫ এমবিপিএসের কম গতির ইন্টারনেট সংযোগকে ‘ন্যারোব্যান্ড’ বা ধীরগতির ইন্টারনেট হিসেবে বিবেচনা করে সরকার। বিটিআরসির পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে (গত জুন মাস পর্যন্ত) ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪৬ লাখ ২২ হাজার। আর তারবিহীন ওয়াইম্যাক্স তথা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গ্রাহক ৭৫ হাজার। তবে বিটিআরসির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর দাবির সঙ্গে একমত নয় ইন্টারনেট সেবাদানকারীদের সংগঠন আইএসপিএবি। সংগঠনটির দাবি দেশে বর্তমানে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮০ লাখ।

বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের (বিডিওএসএন) সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান বলেন, ‘অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের পাশাপাশি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট এখন বিশ্বজুড়ে মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি পাচ্ছে। কারণ এর রয়েছে বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক ও দিনবদলের শক্তি।’

তিনি জানান, যেসব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ব্রডব্যান্ডকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করছে তারা বলছে, অবকাঠামোগত সুবিধা তৈরি করে একটি জেলা বা উপজেলায় ব্রডব্যান্ড চালু করে সেটি বাণিজ্যকভাবে লাভজনক করার মতো পর্যাপ্ত গ্রাহক সেখানে নেই। গ্রাহক তৈরি হওয়ার পরেই সেখানে এই সেবা সম্প্রসারণ করা সম্ভব। অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে দেখা যায়, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের তরুণ-তরুণীরা ব্রডব্যান্ডের আশায় চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করছে।

দেশে ইন্টারনেট সেবাদানকারীদের সংগঠন আইএসপিএবির সভাপতি আমিনুল হাকিম উল্লেখিত চার কারণ তুলে ধরে বলেন, ‘কিভাবে ব্রডব্যান্ড সবার কাছে পৌঁছাবে? ৪টি কারণ সমাধান করা গেলে ব্রডব্যান্ড প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছানো সম্ভব। সবার আগে অবকাঠামো তৈরি এবং ট্রান্সমিশন খরচ কমানো গেলে আইএসপিগুলো আরও উদ্যোগী হয়ে সারা দেশে ব্রডব্যান্ড পৌঁছাবে।’

নিজের প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা মাস দুয়েক আগে খুলনায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা চালু করেছি। সেখানে আমাদের গ্রাহক মাত্র ৭০ জন। বিশাল অংকের বিনিয়োগ করে এখন আমরা প্রতি মাসে ২ লাখ টাকার বেশি লোকসান দিচ্ছি। একটাই আশা ভবিষ্যতে গ্রাহক সংখ্যা বাড়বে। অনেক আইএসপির অবস্থা এরকম।’

আমিনুল হাকিম জানান, যে গতির ইন্টারনেট আইএসপিগুলো ঢাকায় ১ হাজার টাকার মধ্যে গ্রাহকদের অফার করছে ঢাকার বাইরে তার জন্য কমপক্ষে আঠারো শ’ থেকে দুই হাজার টাকা অফার করতে হচ্ছে। ক্ষেত্র বিশেষে আরও বেশিও করতে হয়। এছাড়া আরও সমস্যা আছে। তার মতে ট্রান্সমিশন খরচ (ব্যান্ডউইথ পরিবহন খরচ) বেশি হওয়ায় ব্রডব্যান্ডের দাম বেশি পড়ছে। অবকাঠামো নির্মাণ করে ট্রান্সমিশন খরচ কমাতে পারলে ঢাকার বাইরে প্রায় ঢাকার দামেই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা দেওয়া সম্ভব।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।