২৫ এপ্রিল, ২০২৪ | ১২ বৈশাখ, ১৪৩১ | ১৫ শাওয়াল, ১৪৪৫


শিরোনাম
  ●  কক্সবাজারে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ, শৃংখলা জোরদারের  লক্ষ্যে মোবাইল কোর্ট, জরিমানা   ●  রামুতে নিরাপদ পানি ও উন্নত স্যানিটেশন  সুবিধা পেয়েছে ৫০ হাজার মানুষ     ●  কক্সবাজারে ছাত্রলীগের ৫ লক্ষ গাছ লাগনোর উদ্যোগ   ●  মহেশখালীতে সাংসদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী পরিবেশ বিনষ্টের অভিযোগ    ●  জেএস‌আরের বিরুদ্ধে উঠা সকল অভিযোগ কে অপপ্রচার বলে দাবি সভাপতি জসিমের   ●  ‘দশ হাজার ইয়াবা গায়েব, আটক  সিএনজি জিডিমূলে জব্দ   ●  বাংলাদেশ ফরেস্ট রেঞ্জার’স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা   ●  কক্সবাজার পৌরসভায় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তারিকুলের বরণ ও উপ-সহকারি প্রকৌশলী মনতোষের বিদায় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত   ●  জলকেলি উৎসবের বিভিন্ন প্যান্ডেল পরিদর্শনে মেয়র মাহাবুব   ●  উখিয়া সার্কেল অফিস পরিদর্শন করলেন ডিআইজি নুরেআলম মিনা

উখিয়ায় ফের মানবপাচার বৃদ্ধি

index
অর্থনৈতিক লোভ কোন ভাবে সামলাতে পারছেন না উখিয়ার মানবপাচারকারী সিন্ডিকেট। প্রশাসন ও জনগণের সম্মিলিত প্রতিরোধ সার্বক্ষণিক তৎপর থাকায় উপজেলার সবকটি মানবপাচার রুটে কিছুটা হ্রাস পেলেও নতুন কৌশলে মানবপাচারকারীরা আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে জানা গেছে। মানবপাচারের তালিকা ভূক্ত ক’জন আসামীরা কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর পূর্বের সূত্র ধরে মানবপাচার ব্যবসা চলমান রেখে বিত্তবান হওয়ার চ্যালেঞ্জে অনঢ় রয়েছে। এমনটি অভিযোগ উপকুলীয় এলাকায় অধিকাংশ মানুষের। মানবপাচারের পুরাতন রুট সোনার পাড়া রেজুর মোহনা, সোনাইছড়ী, ইনানী, পাটোওয়ার টেক, মাদারবনিয়া, মনখালী, পেচারদ্বীপে, ভিন্ন কৌশলে মানব পাচার অব্যাহত রেখেছে পুরাতন ও নতুন একটি সিন্ডিকেট। তাদের কৌশল হিসেবে যা লক্ষণীয়,  প্রথমত দূর হতে কোন লোক নিয়ে আসার পর খুব গোপনীয় ভাবে তাদের ছোট ছোট ডিঙি নৌকা দিয়ে, বড় নৌকা বা জাহাজে তুলে দিয়ে আসে। তাদের টার্গেট পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত। অবস্থানরত জাহাজ সমুদ্র উপকূলবর্তী স্থানে নোঙ্গর করে অবস্থান নেয়। এমন প্রত্যক্ষদর্শী একটি ঘটনার বর্ণনা দিলেন- সোনার পাড়া গ্রামের ছৈয়দ আলমের ছেলে ছৈয়দ নুর ও মৃত আবুল হাসেমের ছেলে নুরুন্নবী এবং তাদের দুই বন্ধু আবুল ফজল ও করিম উল্লাহ। তারা বলেন, দশ দিন আগে কালা ছৈয়দের নৌকা নিয়ে সমুদ্রে মাছ ধরতে গেলে, নৌকার মালিক কালা ছৈয়দ মানবপাচারের দালালদের সাথে যোগাযোগ করে আরেক দালালকে তাদের বিক্রি করে দেয়। তাদের চার জনের মূল্য ধরেছে আশি হাজার টাকা। সমুদ্রে মাছ ধরা অবস্থাতে তাদের ক্রয়কারী দালাল এসে তাদের ধরে নিয়ে পাঁচ দিন নৌকার কল রুমে বন্ধী করে রাখেন। ষষ্ঠ দিনে কৌশলে তারা একই নৌকা নিয়ে রেজুর মোহনায় চলে আসলে তাদেরকে ডাকাত বলে থানায় সোপর্দ করার চেষ্টা করেন। কালা ছৈয়দ ও তার সহযোগী সোনাইছড়ির হোছন এর নেতৃত্বে একদল আদম পাচারকারী সিন্ডিকেট। কিন্তু কৌশলী চার যুুবক রেজু নদীতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতার কেটে কূলে চলে আসলে প্রাণে রক্ষা পায়। এছাড়া দু’বছর আগে যারা সাগর পথে মালেশিয়া গিয়েছিল তারা এখন বড় দালালে রূপান্তরিত। তাদের কৌশল থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়ার বড় বড় মানবপাচারের গড ফাদারদের সাথে দহরম -মহরম সম্পর্ক তৈরি করা। তারা মাঝে মাঝে বড় বড় জাহাজ নিয়ে সমুদ্র হয়ে এলাকায় আসে। প্রতিবারই একটি জাহাজ পূর্ণ না হলে রওয়ানা দিবে না। তারা এলাকায় ছদ্মনাম ব্যবহার করে চলে এবং চলার গতিবিধি লক্ষ করলে মনে হয় কোন মন্ত্রীর ছেলে। কোন সময় এফ. জেট, বাইক, নূহা গাড়ী, এলিয়ন কার গাড়ী নিয়ে চলাফেরা। আবার দশ দিন পর উধাও। লোকে মূখে বলে, রুবেল তো মালেশিয়া গিয়ে অনেক টাকার মালিক। এ রকম সবকটি মালেশিয়ার মানবপাচারে উপকূলীয় এয়ারপোর্ট গুলো থেমে থেমে মানবপাচার অব্যাহত রেখেছে। সরজমিনে দেখা যায়, সোনার পাড়া গ্রামের কালা জমির, নুরুল কবির, রুবি ম্যাডাম, মানবপাচারের মামলায় কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে পূনরায় আগের ব্যবসা সচল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পুুলিশের তালিকা ভূক্ত মানবপাচারকারীরা আদালত থেকে অব্যাহতি পেলেও বাকীরা মানবপাচার অব্যাহত রেখেছে বলে জানা যায়। স্থানীয় এক ইউপি মেম্বার বলেন, মানবপাচার তো দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ লোকজন মনে করছে এটি হ্রাস পেয়েছে। বাস্তবে কি রকম বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতো বলাই মুশকিল। তিনি বলেন, কি নীরবে! প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মানবপাচারের সক্রিয় সিন্ডিকেট ধরা খুব কঠিন। এ বছরের গেল ফেব্রুয়ারী ২৫ তারিখের দিকে পাচার হওয়া সোনার পাড়া গ্রামের একজন সিএনজি চালিত ড্রাইভার মালয়েশিয়ার উপকূলে মারা গেলেও এখনও পর্যন্ত তার লাশের কোন সন্ধান মিলেনি। আরেক মানবপাচারের শিকার পেচারদ্বীপের সাধারণ এক জেলে মারা যায় মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে থাইল্যান্ডে বর্ডারের পাশে। যাকে স্থানীয় মানবপাচারকারীরা পাচার করে দেয়। যার পাঁচ জন শিশু সন্তান ও এক স্ত্রী রয়েছে। এখন তার পরিবারে দেখভালের কেউ নেই। তাদের পরিবারে গিয়ে দেখা যায়, সবার চোখে কান্নার লোণাজল। বাকরুদ্ধ হয়ে তার স্ত্রী বলেন, আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর আমার শাশুড়ী এলাকায় কাজ কর্ম করে কিছু টাকা উপার্জন করে, তা দিয়ে আমরা চলি। তিনি আরো বলেন, আমার বাড়িটি পেচারদ্বীপ অঞ্চলে পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় হওয়াতে আশে পাশের লোকজন থেকে তেমন কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না। আল্লাহর উপর ভরসা করে এই পাঁচ সন্তান নিয়ে চলতেছি। এই বিষয়ে সোনার পাড়ার রেজুর ব্রীজের পাশে স্থাপিত বিজিবি চেক পোষ্টের দায়িত্বে থাকা সুবেদার নুরুল ইসলাম বলেন, আমাদের ক্যাম্প স্থাপন হওয়ার পর থেকে মানবপাচার অনেক কমে গেছে। এরপর কোথাও বিশেষ কোন অভিযোগ আসলে সাথে সাথে আমাদের সদস্যদের নিয়ে অভিযান পরিচালনা করি। তিনি আরো বলেন, এলাকার লোক জনদের সহযোগিতা পেলে সম্মিলিত ভাবে মানবপাচার বন্ধ করা সহজ হবে।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।