২৫ এপ্রিল, ২০২৪ | ১২ বৈশাখ, ১৪৩১ | ১৫ শাওয়াল, ১৪৪৫


শিরোনাম
  ●  বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া সেনা ও বিজিপির ২৮৮ সদস্য ফিরল মিয়ানমারে   ●  কক্সবাজার পৌরবাসির কাছে মেয়রের শেষবারের মতো ৫ অনুরোধ   ●  কক্সবাজারে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ, শৃংখলা জোরদারের  লক্ষ্যে মোবাইল কোর্ট, জরিমানা   ●  রামুতে নিরাপদ পানি ও উন্নত স্যানিটেশন  সুবিধা পেয়েছে ৫০ হাজার মানুষ     ●  কক্সবাজারে ছাত্রলীগের ৫ লক্ষ গাছ লাগনোর উদ্যোগ   ●  মহেশখালীতে সাংসদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী পরিবেশ বিনষ্টের অভিযোগ    ●  জেএস‌আরের বিরুদ্ধে উঠা সকল অভিযোগ কে অপপ্রচার বলে দাবি সভাপতি জসিমের   ●  ‘দশ হাজার ইয়াবা গায়েব, আটক  সিএনজি জিডিমূলে জব্দ   ●  বাংলাদেশ ফরেস্ট রেঞ্জার’স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা   ●  কক্সবাজার পৌরসভায় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তারিকুলের বরণ ও উপ-সহকারি প্রকৌশলী মনতোষের বিদায় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত

বিকাশে প্রতারণার শিকার হাজার হাজার মানুষ- এএসআই নজরুল

সারাদেশ জুড়ে মোবাইল ব্যাংকিং অর্থ লেনদেনে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বিকাশ। মোবাইল ব্যাংক টাকা পাওয়ার দ্রুত অন্যতম একটি মাধ্যম, শুধু কি তাই প্রবাসীরাও এই সেবা গ্রহণ করছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু এই মাধ্যমটির ব্যবহার প্রতিনিয়ত প্রতারণার হার বাড়ছে। এতে নতুন করে যোগ হয়েছে অ্যাপ্সের মাধ্যমে প্রতারণা। কিন্তু বিকাশে প্রতারণার ঘটনা নতুন কোন বিষয় নয়, তারপরও কিছু শ্রেণী/পেশার মানুষ অসচেতনতা/লোভে পড়ে প্রতিনিয়ত এসব প্রতারণার ফাঁদে পা রাখছেন। এসব ঘটনায় প্রতারিত হয়ে অনেক মানুষ নিঃস্ব হয়ে গেছে। অাবার অনেকেই অপমান সহ্য করতে না পেরে বা পরিবার পরিজনের নিকট টাকার হিসাব দেওয়ার ভয়ে, ঘৃনায় আপমানে বিধায় বেচে নিচ্ছে অাত্মহত্যা।

প্রতারক চক্রের কিছু কৌশল/তথ্য তুলে ধরা হলঃ

“হ্যালো…”
আমি বিকাশ অফিস থেকে বলছি……

* বিকাশের সকল একাউন্ট আপডেট করা হচ্ছে,
* আপনার লেনদেন সন্তোষজনক হওয়ায় বিকাশ কর্তৃপক্ষ আপনার জন্য কিছু গিফট দিবে,
* আপনি আমাদের সেরা একজন গ্রাহক,
* আপনি সৌভাগ্যবান ব্যক্তি, আপনি বিকাশ লটারি পেয়েছেন,
* আপনার বিকাশে একজন গ্রাহক ভূলে পাঁচ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিয়েছে,
* আপনি আজকে দুই হাজার টাকা ক্যাশ আউট করেছেন,
* আপনি আজকে দুই হাজার টাকা ক্যাশ ইন করেছেন,
* আপনার বিকাশ একাউন্ট ত্রুটিজনিত কারণে সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে এখন সচল করা প্রয়োজন,
* আপনার বিকাশ একাউন্টে একটু সমস্যা আছে,
* আপনি কি পুরাতন এনআইডি কার্ড দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খুলেছেন?,
* স্মার্ট এনআইডি কার্ডের মাধ্যমে আপনার একাউন্ট আপডেট করতে হবে,
* সাময়িক ত্রুটির কারণে আপনার বিকাশ একাউন্ট তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে,
* আজ থেকে তিন মাস আপনার একাউন্ট স্থগিত রাখা হয়েছে, আপনি লেনদেন করতে পারবেন না, এতে কি আপনার কোন সমস্যা হবে?,
* আপনি কি আপনার বিকাশ একাউন্টটি সচল রাখতে চান?

আস্থা রাখুন আমাদের উপর, আপনাদের সেবায় আমরা সর্বময় নিয়োজিত। আপনাকে কিছু প্রশ্ন করা হবে যদি সঠিক তথ্য দিতে পারেন তবে আপনার বিকাশ একাউন্টটি সচল করে দেওয়া হবে।

প্রতারক চক্র বিকাশ একাউন্টধারীদের নিকট এভাবে ফোন করে প্রতারণার প্রথম পর্ব শুরু করে। প্রতারক চক্র গ্রাহকের সর্বশেষ লেনদেনের তথ্য জেনে গ্রাহককে জানায়। এতে ওই গ্রাহকের এক প্রকার বিশ্বাস জন্মায় যে, ফোনটি বিকাশ অফিস থেকেই করা হয়েছে। এরপর প্রতারকেরা গ্রাহকদেরকে বিকাশ সংক্রান্ত কিছু তথ্য প্রদান করে, সতর্ক করে, পুর্নাঙ্গ সেবা দেওয়ার আশ্বাস দেয়। এমনভাবেই কথা বলবে যেন আপনি মনোযোগ দিয়ে কথা শুনেন এবং সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত মানসিক চাপে থাকেন।

একটু পরেই বলবে আপনার নাম্বারে একটি ম্যাসেজ পাঠানো হয়েছে, এটি পড়ে শুনান, বা পিন নাম্বারটি বলুন। আপনি নাম্বারটি দেওয়া মাত্রই আপনার মোবাইলে আরেকটি ম্যাসেজ আসবে… টাকা ক্যাশ আউট। কল লাইন কেটে গেল। ডান, প্রতারক চক্র সাকসেস, যা করার তা এর মধ্যে করা শেষ।

গ্রাহককে দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে ফেলে এভাবেই তারা হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ, কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আর এজন্য তারা প্রথমেই বিকাশ এজন্টদের মাধ্যমে গ্রাহকদের বিকাশে জমাকৃত ব্যালেন্স ও অন্যান্য গোপনীয় তথ্য জেনে নেয়।

* আবার অনেক সময় কোন টাকা না পাঠিয়েই একধরণের ম্যাসেজ পাঠানো হয় গ্রাহকের মোবাইলে। যাতে একটি নিদির্ষ্টি পরিমাণ টাকা ক্যাশ ইন হওয়ার ম্যাসেজ থাকে। এরপর মোবাইলে ফোন করে বিকাশ এজেন্ট পরিচয়ে বলা হয় যে, ভুলক্রমে আপনার বিকাশ নম্বরে এই টাকাগুলো চলে গেছে। প্লিজ ভাইয়া, দয়া করে টাকাগুলো ফেরত দিলে অনেক উপকৃত হবো। কথার জালে ব্যালেন্স না দেখে টাকা সেন্ড করে দিলেই গ্রাহক প্রতারকের খপ্পরে পরে যাবে। এভাবেই নানা কৌশলে বিকাশ গ্রাহকদের নিকট থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র।

প্রতারক চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন অসাধু ও দুর্নীতিপরায়ণ মোবাইল সীম বিক্রেতার যোগসাজসে ভূয়া সীম কার্ড/ রেজিস্ট্রেশন করে থাকে। সেই সিমকার্ড ব্যবহার করে অসাধু ডিএসআর (বিকাশ এ্যাকাউন্ট খোলার জন্য বিকাশ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিয়োগকৃত এ্যজেন্ট) দের মাধ্যমে ভূয়া বিকাশ এ্যাকাউন্ট খোলে।

প্রতারক চক্রের সদস্যরা দুর্নীতিপরায়ণ ডিএসআর গণের নিকট থেকে অর্থের বিনিময়ে বিকাশ এজেন্টদের লেনদেনের তথ্য সংগ্রহ করে ওই সব ভূয়া রেজিস্ট্রেশনকৃত মোবাইল সিমকার্ড ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সহজ সরল সাধারণ জনগনের নিকট নিজেদেরকে বিকাশ হেড অফিসের কর্মকর্তা/এরিয়া ম্যানেজার পরিচয় দিয়ে ফোন করে কৌশলে তাদের বিকাশ পিন কোড জেনে নেয় এবং স্মার্ট ফোনে বিকাশ অ্যাপ্স ব্যবহার করে উক্ত সাধারণ লোকজনের বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রতারক চক্র, অনেক সময় পিন কোড সংগ্রহ ব্যতীতও বিকাশ একাউন্ট হ্যাক করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

প্রতারক চক্র ফেসবুক আইডি হ্যাক করেও কাছের/পরিচিত লোকজনদের ম্যাচেন্জারে নক করে বিভিন্ন সমস্যার কথা বলে এবং টাকা চায়। আপনভেবে সরল বিশ্বাসে টাকা দিয়ে প্রতারিত হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। যতই আপন লোক হোক না কেন, অনন্ত টাকা দেওয়ার আগে কল করে কথা বলে কনফার্ম হওয়া উচিত।

প্রতারক চক্র কর্তৃক ব্যবহৃত ভূয়া রেজিষ্ট্রেশনকৃত মোবাইল সেট ও সীম সংক্রান্ত তথ্য না পাওয়ার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সমস্যা মোকাবিলায় হিমসিম খাচ্ছেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে মোবাইল সেট ও সীম কেনা ও বেচার ক্ষেত্রে শতভাগ সঠিক তথ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা করতে হবে।

*** গভীর রাতে জ্বীনের বাদশা/দরবেশ বাবার কলঃ
””””””’””””””””’”””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””’
* গভীর রাতে হঠাৎ করে মোবাইলের কল বেজে উঠলে যে কোন ব্যক্তি অতীব গুরুত্বপূর্ণ কল হিসেবে ধরে নেন। প্রতারক চক্র গলার কন্ঠস্বর পরিবর্তন করে কল ধরার সাথে সাথে ধর্মীয় কিছু কথা শুরু করে। নিজেকে জ্বীনের বাদশা, দরবেশ বাবা বা পীর বুজুর্গ কোন ব্যক্তি হিসেবে পরিচয় উপস্থাপন করে। ধর্মীয় বিভিন্ন কথাবার্তা বলে সাধারণ মানুষের মন নরম করে তুলে এবং একাধিক সমস্যা আছে বলে জানান। অতঃপর সমস্যাগুলো সমাধান করতে হলে একটা তাবিজ লাগবে, হাদিয়া অর্থাৎ টাকা লাগবে বলে জানান বা শাহ জালাল মাজারের জন্য ১০০টি কোরআন শরীফ লাগবে বা কোন মাজারে ১০০ অনাথ লোক খাওয়াতে হবে। এগুলোর জন্য নিদিষ্ট কিছু টাকা লাগবে বলে জানায়। উনার কথা মোতাবেক কাজ না করলে, অর্থাৎ টাকা না দিলে অনেক বড় সমস্যা হয়ে যাবে বা অপূরনীয় ক্ষতি হবে বলে জানায়।

প্রতারক ভন্ড নামধারী জ্বীনের বাদশা, দরবেশ বাবা, পীর বুজুর্গর এই ধরনের কথার প্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষ সরল বিশ্বাসে সাথে সাথে মোবাইল বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে দিয়ে প্রতারিত হচ্ছে। অনেকেই সকাল হতে না হতে দ্রুত বিকাশের দোকানে গিয়ে জীনের বাদশার কাছে বিকাশে টাকা পাঠিয়ে দেয়। এভাবে প্রতারণার শিকার হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ।

* প্রতারক চক্রের সদস্যরা কিছু মানুষকে টার্গেট করে তাদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে। তারপর গলার কন্ঠস্বর পরিবর্তন করে সেসব নম্বরে ফোন করে ধর্ম সম্পর্কে বিভিন্ন কথা বলে দামি দামি জিনিসের লোভ দেখায়। সাধারণ মানুষ বিষয়টি বিশ্বাস করে এদের ফাঁদে পা দিলে দামি জিনিসপত্রের লোভ দেখিয়ে প্রথমে অল্প অর্থ দাবি করে যা বিকাশের মাধ্যমে প্রতারক চক্রের সদস্যরা হাতে পায়। পরে আরও মূল্যবান ধনরত্নের লোভ দেখিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার পর চক্রটি তাদের মোবাইল নম্বর বন্ধ ও কল করা নম্বরগুলো ব্লক করে রাখে।”

*** বিকাশ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি–
নিশ্চয়ই আপনারা (বিকাশ কোম্পানি) বাংলাদেশ সরকারের নিকট জনসেবা দেওয়া শতভাগ অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে এই ব্যবসা শুরু করেছেন। কিন্তু আপনাদের কিছু অসৎ ব্যক্তির যোগসাজসে প্রতারক চক্র কৌশলে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়ে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বিকাশ কর্তৃপক্ষ হিসেবে এগুলোর জন্য আপনি/আপনারা কি সরাসরি দায়ী নন?? চলমান সমস্যা গুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করে অপরাধীর শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতঃ সমস্যার দ্রুত সমাধান করুন। সাধারণ মানুষকে প্রতারণার শিকার হতে মুক্ত করুন।

***** সর্বসাধারণের উদ্দেশ্যে বলছি-
সাবধান!!
আপনার মোবাইলে অপরিচিত কোন ব্যক্তি কল করে কোন তথ্য জানতে চাইলে কোন তথ্য দিবেন না। বিকাশ একাউন্ট সংক্রান্ত কোন কথা বললে, আপনি কোন তথ্য না দিয়ে সাথে সাথে লাইন কেটে দিন। কারো প্ররোচনায়/লোভে বশবর্তী হয়ে হুটহাট করে কোন তথ্য দিবেন না, কোন লেনদেন করবেন না, টাকা পাঠাবেন না, কোন প্রতারক/অসাধু ব্যক্তির খপ্পরে পড়বেন না। প্রতারণার শিকার হবেন না। আপনার বিকাশ একাউন্টে কোন সমস্যা পরিলক্ষিত হলে নিকটস্থ বিকাশ এজেন্ট বা বিকাশ অফিসে সরাসরি যোগাযোগ করুন। সচেতন থাকুন। আপনার পরিবার পরিজন ও কাছের দূরের মানুষগুলোকে সচেতন করুন।

লেখকঃ

শেখ নজরুল ইসলাম
সহকারি উপ পরিদর্শক
বাংলাদেশ পুলিশ
পরশুরাম মডেল থানা, ফেনী।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।