১৯ মে, ২০২৪ | ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ১০ জিলকদ, ১৪৪৫


শিরোনাম
  ●  কালেক্টরেট চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী সমিতির সভাপতি আব্দুল হক, সম্পাদক নাজমুল   ●  ক্যাম্পের বাইরে সেমিনারে অংশ নিয়ে আটক ৩২ রোহিঙ্গা   ●  চেয়ারম্যান প্রার্থী সামসুল আলমের অভিযোগ;  ‘আমার কর্মীদের হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে’   ●  নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সবকিছু কঠোর থাকবে, অনিয়ম হলেই ৯৯৯ অভিযোগ করা যাবে   ●  উখিয়া -টেকনাফে শাসরুদ্ধকর অভিযানঃ  জি থ্রি রাইফেল, শুটারগান ও গুলিসহ গ্রেপ্তার ৫   ●  রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হেড মাঝিকে  তুলে নিয়ে   গুলি করে হত্যা   ●  যুগান্তর কক্সবাজার প্রতিনিধি জসিমের পিতৃবিয়োগ   ●  জোয়ারিয়ানালায় কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত রামু কলেজের অফিস সহায়ক   ●  রামুর বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে পুলিশের সহযোগিতায়  আসছে চোরাই গরু   ●  রামুতে ওসির আশকারায় এসআই আল আমিনের নেতৃত্বে ‘সিভিল টিম’

পুঁজিবাদী নীতি ও কৌশলগত হেরফেরে চাষীরা সঠিক মূল্য পাচ্ছেনা

TAMAK

বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম অর্থকারী ফসল তামাক। এই তামাক রোপনের সময় থেকে চাষীদের পরিশ্রমের কোন শেষ থাকে না। তারা দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে তামাক চাষ করে কিন্তু দামের বেলায় কিছুই নাই। এরই ধারাবাহিকতায় কক্সবাজার ও পার্বত্য বান্দরবানে চাষীদের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছে তামাক কোম্পানীগুলো। বিগত সময়ে প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘ ৬/৭মাস হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমে চাষ করানোর পর বর্তমানে তামাক ক্রয় কালীন সময়ে তামাকের ন্যায্য মূল্য পরিশোধে গাফেলতি, শ্রেণী বিন্যাস, ওজন পরিমাপে কারচুপি, মূল্য নির্ধারণে নানান অজুহাত সৃষ্টি করে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি, প্রতারণা ও হয়রানির কারণে সাধারণ কৃষকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। যার কারনে প্রতিদিন বিভিন্ন কোম্পানীর তামাক ক্রয় কেন্দ্র গুলোতে বাকবিতন্ডা, অপ্রীতিকর ঘটনাসহ তামাক পুড়ানোর মত ঘটনাও পরিলক্ষিত হয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় প্রকৃত তামাকের মূল্য না পেলে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে এলাকা থেকে শত শত কৃষক পালিয়ে যেতে বাধ্য হবে বলে মনে করছেন সাধারণ কৃষকরা। যদিওবা বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর নাইক্ষ্যংছড়িস্থ ডিপো ম্যানেজার হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন- কোম্পানী তথা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে চাষীদের পারিবারিক সম্পর্কের ন্যায় তারা ব্যবসা করেন। এ ক্ষেত্রে চাষীদের সাথে প্রতারণা করছেন না তারা। বর্তমানে বৃটিশ আমিরিকান টোব্যাকো সর্বোচ্চ ১৪৬ ও সর্বনি¤œ ৭৪ টাকা মূল্য দিচ্ছেন। এতে চাষীরা খুবই খুশি বলে তিনি দাবী করেন।
জানা গেছে, কক্সবাজার ও বান্দরবানে বৃটিশ আমেরিকা টোবাকো, ঢাকা টোবাকো ও আবুল খায়ের টোবাকো, আকিজ টোব্যাকো, নাছির টোব্যাকোসহ বিভিন্ন তামাক কোম্পানীর স্থানীয় কর্মকর্তাদের নানানমুখি লোভনীয় প্রস্তাবে অধিক লাভের আশায় কৃষকেরা ধান ও অন্যান্য ফসল না করে তামাক চাষ করে আসছে। সাধারনত চাষীরা বছরের অক্টোবর-নভেম্বর থেকে তামাক চাষ শুরু করে। প্রায় ৬-৭ মাস পরিবার পরিজন নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম শেষে মাঠ থেকে তামাক উত্তোলন করে এবং প্রক্রিয়াজাত করে এপ্রিল-মে মাসে বিক্রি শুরু করে। এ জন্য তামাক কোম্পানীগুলো জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ গ্রাম পর্যায়ে বিভিন্ন স্থানে ক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করে।
রামু উপজেলার তুলাতলীর তামাক চাষী শাহ নেওয়াজ, ক্যজরবিলের আবদুল গফুর, মাঝিরকাটা আবদুল হাসেম, তুলাতলী নুরুল আলম, মো: আমিনসহ অসংখ্য চাষী জানিয়েছেন, তামাক কোম্পানীগুলো চলতি মৌসুমে নানান ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়ে চাষীদেরকে ঠকাচ্ছে। প্রতি বেল তামাকে ব্যবহৃত চট বাবদ বিগত সময়ে এক কেজি হারে বাদ দেয়া হলেও চলতি মৌসুমে কোম্পানীর স্থানীয় কর্মকর্তারা মন গড়াভাবে ২ কেজি হারে বাদ দিচ্ছেন। প্রতিকেজি ১নং তামাক ১৪৬টাকা। এ হিসাবে একজন কৃষক এ খাতে ২শ’ টাকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া কোম্পানীর লোকজন তাদের নিজের ইচ্ছা মোতাবেক গ্রেডিং করছেন। এতে করে একজন কৃষক ১০ বেল তামাক ক্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসলে ২ বেল তামাক কোনভাবে ১নং গ্রেডে দিয়ে অন্য তামাক গুলো ইচ্ছা মাফিক গ্রেডিং করছেন। এর ফলে কৃষক মোটা অংকের ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন। জানা গেছে, প্রতি একর তামাক চাষে প্রায় ১২শ’ কেজি তামাক উৎপাদন হয়ে থাকে। এ পরিমান তামাক বেল আকারে ২০/২৫ বেল হয়। যার মধ্যে কমপক্ষে ৩ বেল হয় কালো তামাক। এ কালো তামাক বিক্রির বেলায় কৃষকরা কোম্পানীর স্থানীয় কর্মকর্তাদের হাতে বেশি প্রতারনার শিকার হচ্ছেন। তারা কৃষক কর্তৃক ক্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা কালো তামাক ক্রয় অযোগ্য বলে বাদ দিয়ে দেয়। এর ফলে কৃষক এক শ্রেনীর মধ্যস্বত্বভোগীদের নিকট নাম মাত্র মুল্যে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়। পরক্ষণে ওই তামাকই কোম্পানীর কর্মকর্তারা তাদের পছন্দের মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছ থেকে মান সম্পন্ন দামে ক্রয় করে নেন। কৃষকরা জানিয়েছেন, ঠিক দামে কালো তামাক বিক্রয় করতে না পারায় তাদের লভ্যাংশ কোম্পানীর কর্মকর্তাদের পছন্দের মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে যাচ্ছে। আর তারা সর্বশান্ত হচ্ছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা টোব্যাকো ও আবুল খায়ের টোব্যাকোর স্থানীয় অফিস কর্মকর্তার মোবাইল ফোনে একাধিক বার চেষ্টা করেও তাদের মোবাইলে সংযোগ পাওয়া যায়নি।
তথ্যনুসন্ধানে জানা গেছে, তামাক কোম্পানীগুলো সাধারণ অসহায় নিরীহ চাষীদের সার, বীজ, বিষসহ প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহ করে, এক দিকে চাষীদের বিষ বৃক্ষ তামাক চাষে উৎসাহিত করছে অন্যদিকে দাম না দিয়ে অসহায় চাষিদের শোষণ করে চলছে বিভিন্ন তামাক কম্পানী গুলো। কোম্পানী গুলো সার বিষ ইত্যাদি দেওয়ার সময় একর হিসাবে দিয়ে থাকে। কিন্তু তারা একরে প্রায় ৫০০ কেজি তামাক ক্রয় করে। বাড়তি উৎপাদিত তামাক নিয়ে কৃষকরা যেন দিশেহারা হয়ে পড়ে।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।