১৯ মে, ২০২৪ | ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ১০ জিলকদ, ১৪৪৫


শিরোনাম
  ●  কালেক্টরেট চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী সমিতির সভাপতি আব্দুল হক, সম্পাদক নাজমুল   ●  ক্যাম্পের বাইরে সেমিনারে অংশ নিয়ে আটক ৩২ রোহিঙ্গা   ●  চেয়ারম্যান প্রার্থী সামসুল আলমের অভিযোগ;  ‘আমার কর্মীদের হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে’   ●  নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সবকিছু কঠোর থাকবে, অনিয়ম হলেই ৯৯৯ অভিযোগ করা যাবে   ●  উখিয়া -টেকনাফে শাসরুদ্ধকর অভিযানঃ  জি থ্রি রাইফেল, শুটারগান ও গুলিসহ গ্রেপ্তার ৫   ●  রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হেড মাঝিকে  তুলে নিয়ে   গুলি করে হত্যা   ●  যুগান্তর কক্সবাজার প্রতিনিধি জসিমের পিতৃবিয়োগ   ●  জোয়ারিয়ানালায় কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত রামু কলেজের অফিস সহায়ক   ●  রামুর বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে পুলিশের সহযোগিতায়  আসছে চোরাই গরু   ●  রামুতে ওসির আশকারায় এসআই আল আমিনের নেতৃত্বে ‘সিভিল টিম’

‘পত্রিকায় লিখলে কি হবে ’ ওসি ‘আমার জাত ভাই’!

unnamed-33
দৈনিক সাগর দেশসহ কয়েকটি অনলাইন পত্রিকায় ‘ইয়াবা পাচার’ ‘‘কুমিল¬া সিন্ডিকেটে’র হোতা চকরিয়া থানার দারোগা শাহাদাতের দাপট’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে পুলিশের অভ্যান্তরে ব্যাপক তোলপাড় চলছে। তবে খোদ ওসির আস্কারা পেয়ে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বিতর্কিত উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহাদাত হোসেন। সংবাদ নিয়ে দারোগা শাহাদাত হোসে দম্ভোক্তি করে বলে বেড়াছে ‘পত্রিকায় লিখলে কি হবে ’ ওসি ‘আমার জাত ভাই! । তবে জাতিগত বেদাবেদ থাকলেও কাজের তার সাথে ওসির মিল রয়েছে বলে লোকজনকে বলে বেড়াচ্ছে।
ফেনীর লালপুর এলাকা সহকারি উপ-পরিদর্শক (এ এস আই) মাহফুজু রহমান প্রায় ৭লাখ ইয়াবাসহ আটক হলেও তার অন্যতম সহযোগি চকরিয়া থানার বিতর্কিত উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহাদাত হোসেনের দাপট এখনো কমেনি। প্রতিরাতে ও দিনের বেলায় ইয়াবা উদ্ধারের নামে কক্সবাজার-চট্রগ্রাম মহাসড়কে দূরপাল¬ার যানবাহন আটকিয়ে সাধারণ যাত্রীদেরকে হয়রানি করে আসছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খোদ চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রভাষ চন্দ্র ধরের আস্কারা পেয়ে দারোগা শাহাদাত হোসেন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে থানায় কর্মরত একাধিক পুলিশ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছে।
সুত্র মতে, ২৭ জুন শনিবার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালি এলাকায় ঢাকামুখী একটি যাত্রীবাহি থামিয়ে গণহারে তল¬াশীর নামে হয়রানির শুরু করে চকরিয়া থানার বহু বির্তকিত উপ-পরিদর্শক ( এসআই) শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ।
এইসময় ওই গাড়ির যাত্রী কক্সবাজার অনলাইন প্রেসক্লাবের কার্য্যকরী সদস্য ও বাংলাদেশ অনলাইন জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসলাম মাহমুদ প্রতিবাদ করলে তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উল্টো তাকে নাজেহাল করে এবং সাংবাদিক ইসলামের ব্যবহৃত ব্যাগে ইয়াবা ঢুকিয়ে দিয়ে মাদক মামলায় ফাসিয়ে দেয়ার হুমকিও দেয় বিতর্কিত দারোগা শাহাদাত।
গত এক বছরের অধিক সময় ধরে এই এসআই শাহাদাত চকরিয়া থানায় রয়েছে। যোগদানের পর থেকে ইয়াবা আটকের পর ‘ওসি’কে ভাগ দিয়ে ওসি প্রভাষের কাছের লোক বনে যান শাহাদাত। ওসিও নিয়মিত নানা সুবিধা পেয়ে শাহাদাতের লাগাম ছেড়ে দেন। এতে করে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠে দারোগা শাহাদাত হোসেন। ইয়াবা আটকের পর আত্মসাত, অস্ত্র দিয়ে নিরীহ লোকজনকে হয়রানী, হত্যা , ডাকাতি মামলা নিয়ে বাণিজ্য, মানবপাচারকারীদের সাথে আতাঁত সহ বিভিন্ন অপকর্ম ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে আসছিল। এমন কর্মকান্ডে থানার অন্য অনেক সিনিয়র দারোগারাও ক্ষুব্দ।
এছাড়া চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারী সীতাকুন্ড এলাকায় চকরিয়া থানার এক দারোগা বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ আটক হয়। ওই ইয়াবা গুলোর একটি অংশ দারোগা শাহাদাত হোসেনের ছিল বলে একটি সুত্রে জানা গেছে। বলতে গেলে দারোগা শাহাদাত যেন ইয়াবা গায়েব এর একজন পাকা কারিগর!
চলতি বছর ১৫ জানুয়ারী দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে প্রায় ৪ কোটি টাকার ইয়াবা নিয়ে ঢাকায় পাচার কালে সীতাকুন্ড হাইওয়ে পুলিশের হাতে আটক হন চকরিয়া থানার ওসি প্রভাষ চন্দ্র ধর, এসআই আকতার, কনস্টেবল বেলাল (ক্যাশিয়ার), গাড়ির মালিক আইয়ুব আলী, চালক মিন্টু, চকরিয়া থানা পুলিশের সোর্স ইয়াবা সম্রাট খ্যাত ওসমান গণি প্রকাশ দাদা ওসমান ও সোর্স কামাল উদ্দিন। এ ঘটনায় ওসি প্রভাষ চন্দ্র ধরও আটক হওয়ার কথা দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকায় ১৭ জানুয়ারী ২য় পৃষ্টায় ও বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশ পায় এবং সর্বত্র প্রচার হয়েছিল। পরে কৌশলে ওসি প্রভাষ ছাড়া পেয়ে যান। ইয়াবার বিক্রির অগ্রিম ১০ লাখ টাকা, একটি প্রাইভেট কার ও ইয়াবাসহ আটককৃতদের সীতাকুন্ড থানায় সোর্পদ করেন। এসব ইয়াবার ভাগ ছিলো এসআই শাহাদতেরও। শনিবার ১৭ জানুয়ারী আটককৃতদের চট্টগ্রাম ডিআইজি কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর পরবতী ব্যবস্থা নিতে কক্সবাজার জেলা পুলিশের কাছে সোর্পদ করা হয়। একই দিন বিকালে কক্সবাজার পুলিশ সুপার শ্যামল কান্তি নাথ চকরিয়া থানা পরিদর্শন ও এসআই আকতার ও কনস্টেবল বেলালকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ চালান। প্রাথমিক ভাবে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় রাত আট টার দিকে এক ফ্যাক্স বার্তায় এই দুই পুলিশকে চকরিয়া থানা হতে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনে নিয়ে যাওয়া হয়। ১লাখ ২০ হাজার ইয়াবাসহ ২৩ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১ টায় দিকে হাতে এক সহযোগীসহ ধরা পড়েন চকরিয়া থানার মাতামুহুরী ফাঁড়ির পুলিশ কনস্টেবল নাজমুল ইসলাম। এভাবেই একর পর এক পুলিশের ইয়াবা চালান আটক হন। এমনও অভিযোগ উঠেছে থানার দুই পদস্থ কর্মকর্তাও সরাসরি ইয়াবা ব্যবসায় জুনিয়র কর্মকর্তাদের উৎসাহ যোগাচ্ছেন।
তাছাড়া চলতি বছর চকরিয়া থানার এসআই শাহাদাত হোসেন লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন স্পর্শ কাতর মামলাগুলো নিয়ে বাণিজ্য ও চার্জশীট থেকে আসামী বাদ দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় মামলার বাদী ওই চার্জসীটের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজির দরখাস্ত দেয়।
এ ধরনের একটি মামলার বাদি এম শাহজাহান চৌধুরী জানান, ২১ ডিসেম্বর বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ফুলছড়ি এলাকায় মনজুর বাহিনীর হামলার শিকার হন দুই নারীসহ একই পরিবারের ৪ জন। এঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়। ২৫ জানুয়ারী চকরিয়া জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত আহতদের স্বচক্ষে দেখে মামলার প্রধান আসামী মনজুর আলমকে কারাগারে প্রেরণ করেছিলেন।
এ ঘটনায় আহতদের ভাই এম.শাহজাহান চৌধুরী বাদী হয়ে গত ২২ ডিসেম্বর চকরিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন ( মামলা নং ৫৩, জিআর ৬৪৯,তাং-২২/১২/২০১৪। মামলায় প্রধান আসামী করা হয় ইসলামপুর ধর্মেরছড়া গ্রামের আলী হোছনের ছেলে মনজুর আলমকে। যিনি মধ্যম নাপিতখালী গ্রামের ব্যবসায়ী সৈয়দ করিম লটকাইয়া হত্যা মামলা, বনকর্মীদের রাইফেল লুটসহ আরও ডজনাধিক মামলার আসামী। এ মামলায় আসামী করা হয় আরও ৭ জনকে। ২৫ জানুয়ারী রবিবার চকরিয়া জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে আত্মসর্মপন করেন এ মামলার অন্যতম আসামী মনজুর আলম। এসময় আহত ভিকটিমকেও আদালতে হাজির করা হয়। চিকিৎসা সনদ ও আহত করার বিষয়সহ আহত নারীর অবস্থা আদালতের বিচারক স্বচক্ষে দেখে প্রধান আসামী মনজুর আলমকে কারাগারে প্রেরণ করেন। এ মামলায় ৬ জন আসামী জামিনে থাকলেও ৩নং আসামী নুরুল আজিম ডাকাত পলাতক ছিল।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) এসআই শাহাদত হোসেন ২ লাখ টাকার বিনিময়ে স্পর্শকাতর এই মামলা হতে ৩২৬ ধারা বাদ দিয়ে অভিযুক্ত মুল আসামী মনজুর আলম ও নুরুল আজিম চার্জসীট হতে বাদ দিয়ে চকরিয়া থানার অভিযোগপত্র নং-১০৮ চকরিয়া ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে দাখিল করেন। চকরিয়া বহলতলি এলাকায় প্রতিপক্ষের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে এসআই শাহাদত নিরীহ ৪ ব্যক্তিকে অস্ত্র দিয়ে চিংড়ি ঘের থেকে আটক করে নিয়ে আসে। এই মামলা নিয়েও বিভিন্ন লোকজনকে হয়রানীর অভিযোগ রয়েছে। খুটাখালীতে যুবলীগ নেতা হত্যা মামলা নিয়েও ব্যাপক তান্ডবতা চালিয়েছিল এই শাতাদত। পরে অবশ্য আসামীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে চার্জসীট থেকে বাদ দিয়ে নিরীহ লোকজনের বিরুদ্ধে চার্জসীট দেয়া হয়। থানায় দায়েরকৃত এই এসআই শাহাদতের নামে হাওলা করা প্রতিটি মামলা নিয়েই বাণিজ্য করেছে। তার নামে হাওলা করা ৭০টির অধিক মামলার নারাজি দিয়েছে বাদি পক্ষ। এধরনের অভিযোহেগ শেষ নেই তার বিরুদ্ধে।
এদিকে প্রতিনিয়ত ইয়াবা উদ্ধার করে দারোগা শাহাদাত হোসেন কুমিল¬া সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বেচা-বিক্রি করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সূত্রটি জানিয়েছেন, দারোগা শাহাদাত হোসেনের গ্রামের বাড়ি চাদপুর হলেও তা কুমিল¬া’র সীমানায়। যার কারনে কুমিল¬া’র সিন্ডিকেটের সাথে তার রয়েছে গভীর সখ্যতা। অধিকাংশ সময় দারোগা শাহাদাত হোসেন উদ্ধারকৃত ইয়াবা ডিবি থেকে বদলিকৃত দারোগা বিল¬াল হোসেনের কাছে শহরের আমির আলী ম্যানশনে এসে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। আটককৃত মাহফুজের অন্যতম সহযোগি শাহাদত বলেও জনশ্র“তি রয়েছে।
তার সাথে শনিবার রাতে দায়িত্ব পালনকারি এক পুলিশ কনষ্টেবল নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শনিবার রাতেও বহু গাড়ি আটক করে তল¬াশী চালান দারোগা শাহাদাত। ওই সময় কিছু সংখ্যক ইয়াবা পেলেও তা তিনি বরাবরের মতো গায়েব করে পেলেছে।
ওই পুলিশ কনষ্টেবল দাবি করেন, কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খোলবে না! তার সাথে ডিউটি কারি সকল পুলিশ সদস্যদের টাকা দেয় দারোগা শাহাদাত হোসেন।
অভিযুক্ত দারোগা শাহাদাতের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুঠোফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।