২৯ এপ্রিল, ২০২৪ | ১৬ বৈশাখ, ১৪৩১ | ১৯ শাওয়াল, ১৪৪৫


শিরোনাম
  ●  মুক্তিযোদ্ধা এম. আবদুল হাই’র ১০তম মৃত্যুবার্ষিকী ২৯ এপ্রিল   ●  হোয়াইক্ষ্যং হাইওয়ে পুলিশের অভিযানে গুলিসহ দু’জন গ্রেফতার   ●  তীব্র তাপদাহে মানুষের পাশে মেয়র মাহাবুব   ●  টেকনাফে অপহরণ চক্রের দুই সদস্য গ্রেফতার   ●  মেয়র মাহাবুবের অর্থায়নে প্রতিবন্ধীদের মাঝে সহায়ক উপকরণ বিতরণ   ●  টেকনাফে ১০ কৃষক অপহরণ মামলার আসামি গ্রেপ্তার, আদালতে জবানবন্দি    ●  বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া সেনা ও বিজিপির ২৮৮ সদস্য ফিরল মিয়ানমারে   ●  কক্সবাজার পৌরবাসির কাছে মেয়রের শেষবারের মতো ৫ অনুরোধ   ●  কক্সবাজারে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ, শৃংখলা জোরদারের  লক্ষ্যে মোবাইল কোর্ট, জরিমানা   ●  রামুতে নিরাপদ পানি ও উন্নত স্যানিটেশন  সুবিধা পেয়েছে ৫০ হাজার মানুষ  

পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করলেই সঙ্কটের অবসান হবে

পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করলেই সঙ্কটের অবসান হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া। অবরুদ্ধ ও কৌশলগত অবস্থানের মধ্যে ৫৩ দিন পর গতকাল গুলশানের নিজ রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, সরকারের অঙ্গীকারকে বিশ্বাস করে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর আন্দোলন থেকে সরে আসা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। এবার একটি যৌক্তিক পরিণতিতে না পৌঁছা পর্যন্ত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের শান্তিপূর্ণ এ আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এ সময় তিনি জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আন্দোলনে সাময়িক কষ্ট স্বীকারের জন্য দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ জানান। খালেদা জিয়া বলেন, আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত নাশকতার সঙ্গে কোনভাবেই বিএনপি বা ২০ দল জড়িত নয়। তিনি সরকারকে এ অন্তর্ঘাত ও নাশকতার জন্য অভিযুক্ত করেন। এসব ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত ও বিচারে পক্ষপাতহীন, বিশ্বাস ও গ্রহণযোগ্য আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানান। চলমান আন্দোলনকে সমঝোতার পথে নিতে তিনি সরকারের প্রতি ৩টি দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হচ্ছে- ক. গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, পুলিশি ও যৌথবাহিনীর হয়রানি বন্ধ, হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং সারা দেশে গ্রেপ্তারকৃত নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। বিচারবহির্ভূত প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে হবে। খ. সভা-সমাবেশ-মিছিলসহ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর আরোপিত সকল প্রকার বিধি-নিষেধ অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। গ. সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য সরকারের অধীনে সকলের অংশগ্রহণে অনতিবিলম্বে জাতীয় সংসদের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দ্রুত সংলাপের আয়োজন করতে হবে। খালেদা জিয়া বলেন, আমাদের বিশ্বাস, এই প্রক্রিয়াতেই সমস্যা সমাধানের পথে এগিয়ে যেতে পারবো। আন্দোলনকে দ্রুত নিয়ে আসতে পারবো শান্তিপূর্ণ সমঝোতার পথে। বলেন, তথাকথিত হলেও একটি সংসদের অধিবেশন চলছে। একতরফাভাবে যে বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী তারা পাস করেছে তা তারা একতরফাভাবে বাতিলও করে দিতে পারে। তাতে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পথ খুলবে। এই সংশোধনীর পর বর্তমান ক্ষমতাসীনরা পদত্যাগ করে নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা করলেই দেশে সংকটের অবসান ঘটবে। তিনি বলেন, সংকট নিরসনের জন্য ১৯৯৬ সালে আমরা নিয়ম রক্ষার নির্বাচন করে সংবিধান সংশোধনের পর পদত্যাগ করে আমাদের অঙ্গীকার পূরণ করেছিলাম। এখন শেখ হাসিনা অন্তত এবার যদি তার অঙ্গীকার পূরণ করেন তাহলেই দেশে শান্তি, স্বস্তি ও সমঝোতার পরিবেশ ফিরে আসবে। মানুষ মুক্তি পাবে। খালেদা জিয়া বলেন, ক্ষমতাসীনরা প্রতিনিয়ত আমাকে জেল-জুলুম ও ফাঁসির ভয় দেখাচ্ছে। নানাভাবে হেনস্তা করছে। আমাদের টার্গেট করে অশ্রাব্য ভাষায় অপপ্রচার চালাচ্ছে। এসবে কোন লাভ হবে না। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনরা যদি আলোচনা করতে না চায় তাহলে সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব এককভাবে তাদের ওপরেই বর্তাবে। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সামনে মহান স্বাধীনতার দিবস। জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। সেই স্বাধীনতাকে অর্থবহ, জনগণের স্বাধীনতা এবং মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হলে আমাদের জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই। আজকের সংকট সমাধানের চাবিকাঠি ক্ষমতাসীনদের হাতে। সংকট নিরসনের মাধ্যমে তারা সেই কাঙ্ক্ষিত জাতীয় ঐক্যের পথ খুলে দিতে পারে। তাহলেই আমরা সংকটমুক্ত হয়ে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে জাতির ৪৫তম স্বাধীনতা দিবস পালন করতে পারবো। আমি আশা করি, ক্ষমতাসীনদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। তারা সমঝোতার পথে ফিরে আসবে। আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যমান সংকট দ্রুত নিরসনের উদ্যাগ নেবে।
সংকটের মূল উৎস যেখানে
খালেদা জিয়া বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের অপরিমেয় ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত দেশ গভীর সংকটে। এ সংকট রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক। এর স্রষ্টা আওয়ামী লীগ এবং সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে শেখ হাসিনা। জনগণের সম্মতি ছাড়া কারসাজির মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়ে সেই ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার উদগ্র বাসনা পুরো জাতিকে এক চরম অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে। তিনি বলেন, অনেক বিবাদ-বিসম্বাদের পর বাংলাদেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দল নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে জাতীয় ঐকমত্য হয়েছিল। তারই আলোকে জাতীয় সংসদে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান আমরা প্রজাতন্ত্রের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেছিলাম। এই ব্যবস্থার অধীনে কয়েকটি নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়েছে। খালেদা জিয়া বলেন, ‘ট্রায়াল অ্যান্ড এরর’-এর মধ্য দিয়ে যে কোন পদ্ধতিই সংশোধিত ও পরিশোধিত হতে পারে। প্রয়োগের মধ্যদিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় পরিলক্ষিত ত্রুটি-বিচ্যুতিও ঐকমত্যের ভিত্তিতেই সংশোধনের সুযোগ ছিল। আওয়ামী লীগ একতরফা সিদ্ধান্তে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল ও সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ও স্বাভাবিক পন্থায় ক্ষমতা হস্তান্তরের সব পথই প্রায় রুদ্ধ করে দিয়েছে। সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোন সুযোগই রাখা হয়নি। সংকটের মূল উৎস সেখানেই। এই মহাবিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনীর আওতায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নামে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি এক নির্লজ্জ প্রহসনের মধ্য দিয়ে তারা গণতন্ত্রের নাম-নিশানাও মুছে দিয়েছে।
অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছেন শেখ হাসিনা
খালেদা জিয়া বলেন, ৫ই জানুয়ারির মহাকারসাজির নির্বাচনী প্রহসনের আগে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখার স্বার্থে এটি একটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। শেখ হাসিনা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে একটা সমঝোতা হলে সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচনের অঙ্গীকারও করেছিলেন। তিনি তার সেই অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছেন। তারা ১৯৮৬ সালে প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করে স্বৈরাচারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। ৫৭ বছর বয়সে রাজনীতি থেকে অবসর নেয়ার অঙ্গীকারও অবলীলায় ভঙ্গ করতে দেশবাসী দেখেছে। খালেদা জিয়া বলেন, তবুও তাদের প্রতিশ্রুতির কারণে ৫ই জানুয়ারির পর আন্দোলনের কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার কথা বিশ্বাস করে আমাদের সেই সিদ্ধান্ত নেয়া যে সঠিক ছিল না তা আমরা অচিরেই বুঝতে পারি। কর্মসূচি স্থগিত করার পর সারা দেশে যৌথবাহিনীর অভিযান ও বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের মাধ্যমে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। খালেদা জিয়া বলেন, রাজনীতি করার স্বাভাবিক অধিকারটুকুও কেড়ে নেয়া হয়। এত কিছু সত্ত্বেও আমরা দীর্ঘ এক বছর অপেক্ষা করেছি। বারবার আলোচনার আহ্বান জানিয়েছি। কারণ আমরা সমঝোতা ও শান্তিতে বিশ্বাসী। কিন্তু তারা বরাবরই সংঘাত ও সংঘর্ষের পথ বেছে নিয়েছে। এবারেও তারা অস্ত্রের ভাষায় আমাদের দমিয়ে রাখতে চেয়েছে। সচেতন ও বিবেকবান কোন নাগরিক সমঝোতার কথা বললেই তারা তাকে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করেছে। চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করে খালেদা জিয়া বলেন, আমরা আলোচনার ভিত্তি হিসেবে সাত দফা প্রস্তাব তুলে ধরলে তারা সঙ্গে সঙ্গে তা নাকচ করে দেয়। এই পরিস্থিতিতে সংকট নিরসন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং ভোটাধিকারসহ জনগণের সকল অধিকার ফিরিয়ে আনতে আন্দোলন ছাড়া আর কোন পথ আমাদের সামনে খোলা রাখা হয়নি। তাই আমরা বাধ্য হয়ে আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়েছি। ৫ই জানুয়ারি প্রহসনের নির্বাচনের বর্ষপূর্তির দিনটিকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে পালনের কর্মসূচি দিয়েছিলাম। কর্মসূচি বানচালের উদ্দেশ্যে ক্ষমতাসীনরা ৩রা জানুয়ারি থেকে অঘোষিতভাবে দেশ অবরুদ্ধ করে ফেলে। রাজধানীকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। আমাকে কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করা হয়।
আন্দোলনের মাধ্যমেই জাতীয় ঐক্য গড়ুন
চলমান আন্দোলনের মাধ্যমে দেশবাসীকে একটি জাতীয় ঐক্য গড়ার আহ্বান জানিয়ে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, জীবনের এই প্রান্তে ক্ষমতা আমার কাছে বড় কিছু নয়। দেশবাসীর ভালবাসায় সিক্ত হয়ে অতীতে কয়েকবার দেশ পরিচালনার সুযোগ পেয়েছি। দেশবাসীর ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতেই লড়াই করছি। এই আন্দোলন কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোন ব্যক্তির বা কোন দলের বিরুদ্ধে কোন দলের নয়। এ আন্দোলন আদর্শের, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার ও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সকলের। ক্ষমতা দখলের আন্দোলন নয়, গণতান্ত্রিক, শান্তিপূর্ণ ও আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়ে তোলার আন্দোলন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে যে সমতা, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের কথা বলা হয়েছে তার বাস্তবায়নের মাধ্যমেই একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। দেশের মালিকানা আমরা দেশের মানুষের কাছে ফিরিয়ে দিতে চাই। যাতে ভোটের অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারাই সিদ্ধান্ত দিতে পারে তাদের পক্ষে কারা দেশ পরিচালনা করবে। খালেদা জিয়া বলেন, আমি এ আন্দোলনে দল-মত-পেশা-শ্রেণী নির্বিশেষে সকল ব্যক্তি ও শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে শামিল হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। আমার আহ্বান, যারা এখনও নিষ্ক্রিয় আছেন তারা সক্রিয় হোন। নিজ নিজ অবস্থান ও এলাকায় আন্দোলন গড়ে তুলুন। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গড়ে তুলুন বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য।
আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াবো
খালেদা জিয়া বলেন, অবৈধ স্বৈরাচারী শাসকেরা হত্যা ও উৎপীড়ন চালিয়ে বহু মায়ের কোল খালি করে চলেছে। প্রতিটি জনপদে আজ স্বজনহারা মানুষের কান্নার রোল। এই কান্না অত্যাচারীদের কানে পৌঁছায় না। কে কখন গুম, খুন ও ক্রসফায়ারের শিকার হবে তা নিয়ে সকলে আতঙ্কিত। শ’ শ’ তরুণকে আটক করে গুলি ও নির্যাতনে পঙ্গু করে দেয়া হচ্ছে। যারা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন তাদের সাধুবাদ দিই। গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে সকল শ্রেণীর জনগণ, দল-জোটের নেতা-কর্মী, শুভানুধ্যায়ী, সমর্থক ও সাংবাদিকসহ সবাই যে নির্যাতন, জেল-জুলুম ও দুঃখ-কষ্ট সহ্য করেছেন তার জন্য প্রত্যেককে ধন্যবাদ জানাই। যারা নিহত, আহত ও গুম হয়েছেন বেদনাহত চিত্তে তাদের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সমবেদনা জানাই। দিন পরিবর্তন হলে আমরা অবশ্যই আপনাদের পাশে দাঁড়াবো। আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে যে সব বন্ধুরাষ্ট্র, আন্তর্জাতিক সংগঠন, গণমাধ্যম ও সিভিল সমাজের সদস্যরা উদ্বেগ প্রকাশ করে সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের কথা বলেছেন আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।
আওয়ামী লীগ অন্তর্ঘাত ও নাশকতার পথ বেছে নিয়েছে
খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ অন্তর্ঘাত ও নাশকতার পথ বেছে নিয়েছে। পূর্ণ নিরাপত্তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর প্রহরায় কিছু যানবাহন রাস্তায় নামায়। সেসব যানবাহনে পেট্রলবোমা মেরে নারী-শিশুসহ নিরপরাধ মানুষকে দগ্ধ করে শোচনীয় মৃত্যুর পথে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। আমরা এসব পৈশাচিক বর্বরতার নিন্দা জানিয়ে আসছি। সন্ত্রাসে জড়িতদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তিরও দাবি করে চলেছি। কিন্তু সরকার তাদের ষড়যন্ত্রের নীলনকশা বাস্তবায়নে এগিয়ে গেছে। নিরপরাধ মানুষের শোচনীয় মৃত্যুকে ঘৃণ্য রাজনীতির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে চলেছে। পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই- জনগণের জান-মালের নিরপত্তা দিতে ব্যর্থ এই শাসক মহলই সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিয়ে যানবাহনে তুলে পরিকল্পিতভাবে শোচনীয় মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এসব পরিকল্পিত বোমা হামলার সঙ্গে তারাই জড়িত বলে দেশের বেশির ভাগ মানুষ মনে করে। তিনি বলেন, দেশে যখন নিরপরাধ মানুষকে নির্বিচারে হত্যার মতো পৈশাচিক ঘটনা ঘটছে তখন বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত ও তথ্য প্রমাণের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের কোন উদ্যোগ নেই। তার বদলে চলছে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে একতরফা অপপ্রচার। খালেদা জিয়া বলেন, সরকারি দলের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বোমাসহ গ্রেপ্তারের খবর সংবাদ-মাধ্যমে প্রচারিত হলেও উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে তাদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। আওয়ামী নেতারা সার্টিফিকেট দিয়েও তাদের ছাড়িয়ে নিচ্ছে। তিনি বলেন, অপপ্রচারের মাধ্যমে বিরোধী দলকে নির্যাতনের মাধ্যমে হিটলারের শেষ রক্ষা হয়নি। তার অনুসারী বাংলাদেশী খুদে হিটলাররাও চূড়ান্ত বিবেচনায় পরাজিত হবে।
সরকার সংকটকে দীর্ঘায়িত করতে চায়
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, রাজনৈতিক সংকট সমাধানের কোন সদিচ্ছা এই সরকারের নেই। তারা সংকটকে দীর্ঘায়িত করতে চায়। সেই উদ্দেশ্যেই আন্দোলন চলাকালে তারা অন্তর্ঘাত ও নাশকতা চালিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে জঙ্গি তৎপরতা বলে দেশে-বিদেশে অপপ্রচার চালাচ্ছে। সকলেই জানে, তাদের শাসনামলেই এ দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ও বিস্তার ঘটেছিল। আমরা জঙ্গিবাদী নেতাদের গ্রেপ্তার ও বিচার করেছিলাম। তাদের নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণ ভেঙ্গে দেয়া সম্ভব হয়েছিল। আজ ক্ষমতাসীনদের সহায়তায় জঙ্গিদের আটকাবস্থা থেকে পালাবার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। জনগণের ন্যায্য দাবি অগ্রাহ্য করার উদ্দেশ্যেই তারা গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে জঙ্গি তৎপরতা হিসেবে অপপ্রচার করছে। এর ফল কখনও ভাল হতে পার না। এতে প্রকৃত জঙ্গিবাদীরাই সুবিধা পাবে; যা কারোরই কাম্য নয়। খালেদা জিয়া বলেন, আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, বিএনপি ও ২০ দল নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করার ভয়ঙ্কর রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। কাজেই পক্ষপাতহীন ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের মাধ্যমে এইসব জীবনসংহারী সন্ত্রাসের প্রকৃত হোতাদের শনাক্ত করে কঠিন শাস্তির দাবি আমি পুনর্ব্যক্ত করছি। এসব ঘটনায় জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তিবিধান কল্পে বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি। খালেদা জিয়া বলেন, আমরা জনগণের ভোটের অধিকারসহ সকল গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলন করছি। কাজেই জনগণ আমাদের সঙ্গে আছেন। আমরা তাদেরকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে পারি না। সাধারণ মানুষকে বোমা মেরে ও পুড়িয়ে হত্যা এবং এ নিয়ে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে প্রচারণা এবং নির্যাতন চালিয়ে ক্ষমাতাসীনরাই সুবিধা পাবে। কাজেই ক্ষমতাসীনেরা সুবিধা পায় এমন কোন অপকর্মে আমাদের কেউ জড়িত থাকার প্রশ্ন উঠে না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি বরাবরই সন্ত্রাস ও সহিংসতানির্ভর। অতীতে আন্দোলনের নামে তারা যে ভয়াবহ সন্ত্রাস চালিয়েছে তা সকলেরই জানা। মাসের পর মাস টানা হরতাল-অবরোধ-অসহযোগ কর্মসূচির নামে তারা নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছে। যাত্রীবাহী বাসে গান পাউডার দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে যাত্রাবাড়ীতে ১৮ জন এবং শেরাটন হোটেলের কাছে ১১ জনকে তারা জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছিল। ওই দুটি পৈশাচিক ঘটনায় দগ্ধ আরো ১২ জন পরে হাসপাতালে প্রাণ হারান। তাদের সন্ত্রাসের কারণে এসএসসি পরীক্ষা তিন মাস পর্যন্ত পেছাতে হয়েছে। পবিত্র রমজান মাসেও তারা হরতাল করেছে। যমুনা সেতুর নির্মাণ কাজ উদ্বোধনের দিনে হরতাল দিয়েছে। স্বল্পমেয়াদি ৬ষ্ঠ সংসদের নিয়ম রক্ষার নির্বাচন বর্জন করে সে নির্বাচন ঠেকাতে তারা ‘গণকার্ফু’ জারি করে দেশব্যাপী হত্যা ও ধ্বংসের তাণ্ডব চালিয়েছিল। জামায়াত ও জাতীয় পার্টিকে সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর অচল, রেল স্টেশন, যানবাহন, অফিস-আদালত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করেছে। অফিসগামী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রকাশ্য রাজপথে বিবস্ত্র করেছে। লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করে লাশের ওপর নৃত্য করেছে। এসব পৈশাচিক তাণ্ডবের প্রকাশ্য নির্দেশ শেখ হাসিনা নিজে দিয়েছেন এবং এসবের বহু দালিলিক প্রমাণও রয়ে গেছে। খালেদা জিয়া বলেন, রায় পছন্দ না হওয়ায় বিচারকদের বিরুদ্ধে লাঠি মিছিল, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বস্তি বসানো ও প্রধান বিচারপতির এজলাসে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে। ক্ষমতায় বসেই তারা নিজেদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো প্রত্যাহার করেছে। সাজাপ্রাপ্ত খুনের আসামিদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমায় মুক্ত করেছে।
পরিণতি শুভ হবে না
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আন্দোলন শুরুর পর থেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ছত্রছায়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বিরোধী দলের কর্মীদের হত্যা, গুম ও বন্দি অবস্থায় গুলি করে পঙ্গু করা শুরু করে। ২০ দলীয় জোটের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের প্রাণনাশের উদ্দেশে গুলি চালানো হয়। গুলিতে রিয়াজ রহমানের মতো সজ্জন ব্যক্তি গুরুতর আহত হন। প্রবীণ রাজনীতিক তরিকুল ইসলামসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতাদের বাড়িঘর, অফিস ও যানবাহনে গুলি, বোমা হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। আমাদের দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দসহ সারা দেশে প্রায় ১০ হাজার নেতা-কর্মীকে গত দু’মাসে তারা কারারুদ্ধ করেছে। লাখ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদকে একের পর এক মিথ্যা মামলায় প্রায় এক মাস ধরে দফায় দফায় রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন চালানো হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ সম্পর্কে আপনারা জানেন। তাকে গ্রেপ্তার করেও গত তিন দিনেও সরকার স্বীকার করেনি। এখন পর্যন্ত তার কোন হদিস নেই। নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্নার ব্যাপারেও সরকার প্রথম অস্বীকার করে পরে নাটক সাজিয়ে ২১ ঘণ্টা পর তাকে গ্রেপ্তার দেখায়। সম্প্রতি ক্ষমতাসীনেরা বিরোধী দলের বক্তব্য-বিবৃতি সংবাদ-মাধ্যমে প্রচার না করার নির্দেশ দেয়। তারপরও বিএনপি এবং ২০ দলের পক্ষে সালাহউদ্দিন আহমেদের দেয়া বক্তব্য-বিবৃতি প্রচারিত হতে থাকায় তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমি অবিলম্বে সালাহউদ্দিন আহমেদকে মুক্তি দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় এর পরিণতি শুভ হবে না। খালেদা জিয়া বলেন, বিভ্রান্তি ছড়াবার উদ্দেশে আওয়ামী লীগ অপপ্রচারণার নোংরা পথ বেছে নিয়েছে। কখনও তারা বলেছে, মুজিব হত্যার বিচার ঠেকাতে আবার কখনও বলেছে যুদ্ধপরাধীদের বিচাররোধে নাকি আমরা আন্দোলনে নেমেছি। তবে তাদের এসব অপপ্রচার জনগণকে বিভ্রান্ত করতে পারেনি। ফলে গণবিচ্ছিন্ন শাসকগোষ্ঠী জনগণের আন্দোলনে ভীত হয়ে হত্যা-উৎপীড়নের পাশাপাশি ষড়যন্ত্র, নাশকতা ও অপপ্রচারণায় মেতে উঠেছে। তারা এখন পুরোপুরি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ওপর নির্ভর করে টিকে থাকতে চাইছে। এসব বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের ভার কতিপয় দলবাজ কর্মকর্তার হাতে তুলে দিয়ে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও আনসার বাহিনীকে বিরোধী দল ও জনগণকে নিপীড়নের হাতিয়ারে পরিণত করছে। আমরা বারবার বলেছি, আবারও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহকে আইনসম্মতভাবে কর্তব্য পালনের আহ্বান জানাচ্ছি। হত্যা, বিচার বহির্ভূত হত্যা, গুম, অপহরণ, নির্যাতন, বন্দি অবস্থায় গুলি করে পঙ্গু করা, বাড়িঘরে হামলা, পাইকারি গ্রেপ্তার ও মিথ্যা মামলা দায়েরের বেআইনি প্রক্রিয়া থেকে দূরে থাকতে বলছি।
জনগণের ভোটের মূল্য দিচ্ছে না সরকার
খালেদা জিয়া বলেন, জনগণের বিপুল ভোটে নির্বাচিত বিরোধী দল সমর্থক মেয়রদের মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে দলীয় লোক বসানের জন্য তাদের বরখাস্ত করা হচ্ছে। বিনা ভোটে ক্ষমতায় আসা শাসকদের কাছে জনগণের ভোটের যে কোন মূল্য নেই। তা তারা হাতেনাতে প্রমাণ করছে। কিন্তু বিএনপির আমলে আওয়ামী লীগের নেতা হিসাবে ঢাকার মেয়র তথাকথিত ‘জনতার মঞ্চ’ গঠন করে রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন। একই দলের নেতা হিসাবে চট্টগ্রামের মেয়র সমুদ্র বন্দর অচল করায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আমরা তাদের বরখাস্ত করিনি। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদ, ঘোষক ও সংগঠকদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। সেই সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাপ্রিয় দেশবাসীর প্রতি মোবারকবাদ জানান। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল কাইয়ুম, প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান, বিশেষ সহকারি শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ও মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র-মানবজমিন

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।