২১ মে, ২০২৪ | ৭ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ১২ জিলকদ, ১৪৪৫


শিরোনাম
  ●  এভারকেয়ার হসপিটালের শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. তাহেরা নাজরীন এখন কক্সবাজারে   ●  কালেক্টরেট চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী সমিতির সভাপতি আব্দুল হক, সম্পাদক নাজমুল   ●  ক্যাম্পের বাইরে সেমিনারে অংশ নিয়ে আটক ৩২ রোহিঙ্গা   ●  চেয়ারম্যান প্রার্থী সামসুল আলমের অভিযোগ;  ‘আমার কর্মীদের হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে’   ●  নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সবকিছু কঠোর থাকবে, অনিয়ম হলেই ৯৯৯ অভিযোগ করা যাবে   ●  উখিয়া -টেকনাফে শাসরুদ্ধকর অভিযানঃ  জি থ্রি রাইফেল, শুটারগান ও গুলিসহ গ্রেপ্তার ৫   ●  রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হেড মাঝিকে  তুলে নিয়ে   গুলি করে হত্যা   ●  যুগান্তর কক্সবাজার প্রতিনিধি জসিমের পিতৃবিয়োগ   ●  জোয়ারিয়ানালায় কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত রামু কলেজের অফিস সহায়ক   ●  রামুর বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে পুলিশের সহযোগিতায়  আসছে চোরাই গরু

ইয়াবা ঘিরে যত অপরাধ

অপ্রতিরোধ্য মরণঘাতী নেশা ইয়াবা এখন অপরাধের প্রধান নিয়ামক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ভয়াল মাদকাসক্তি তারুণ্য, মেধা, বিবেক, লেখাপড়া, মনুষ্যত্ব সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে। বিনষ্ট করে দিচ্ছে স্নেহ, মায়া, ভালোবাসা, পারিবারিক বন্ধন পর্যন্ত। ইয়াবায় আসক্ত সন্তানের হাতে অহরহ বাবা-মা, ঘনিষ্ঠ স্বজন নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছেন। নেশাখোর বাবা মাদক সংগ্রহে ব্যর্থ হওয়ার ক্রোধে নিজ সন্তানকে খুন করছেন অবলীলায়। নেশার টাকা না পেয়ে স্ত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে মারা, মাকে জবাই করা, আদরের সন্তানকে বিক্রি করে দেওয়ার মতো অমানবিক ঘটনাও ঘটেছে সম্প্রতি।

বাংলাদেশ প্রতিদিনের এক অনুসন্ধানে জানা যায়, গত এক যুগে নেশাখোর ছেলেদের হাতে অন্তত আড়াই শতাধিক বাবা-মা নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন। একই সময় মাদকসেবী স্বামীর হাতে প্রাণ গেছে প্রায় তিনশ নারীর। খোদ রাজধানীতেই মাদকসেবী মেয়ের হাতে পুলিশ অফিসার বাবা ও মা খুনের ঘটনা নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় হয়। অপ্রতিরোধ্য ইয়াবা সেবন, কেনাবেচা ও পাচার ঘিরেও প্রতিনিয়ত সংঘাত-সংঘর্ষ, বন্দুকযুদ্ধ, চাঁদাবাজি, ঘুষ লেনদেনের মতো অসংখ্য অপরাধ অপকর্ম ঘটে চলছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একশ্রেণির কর্মকর্তা ইয়াবাকে ব্যবহার করছে বহুমুখী অস্ত্র হিসেবে। বিভিন্ন অভিযানে জব্দ করা ইয়াবা নিজস্ব সোর্সদের মাধ্যমে বিক্রি করে যেমন লাখ লাখ টাকা পকেটস্থ করেছেন, তেমনি উদ্ধারের কল্পিত নাটক সাজিয়ে টার্গেট ব্যক্তিদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন চাহিদা মাফিক টাকা। রাতে টহল ডিউটিকালে বা চেকপোস্টে তল্লাশির নামে নিরীহ পথচারীর পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে সীমাহীন হয়রানি চালাতেও দ্বিধা করছেন না তারা।

পুলিশের একাধিক প্রতিবেদনেও ইয়াবার জের হিসেবে অপরাধ বৃদ্ধির ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। ইদানীং মাদকাসক্তির কারণেই চাঁদাবাজি, ছিনতাই-রাহাজানি, ডাকাতি ও খুন-খারাবির ঘটনা বেশি ঘটছে বলেও গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। পুলিশ, র‌্যাব, ডিবি ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর মাঝেমধ্যে অভিযান চালায় ঠিকই, তবে বেশির ভাগ অভিযানই চলে টু-পাইস কামানোর ধান্দায়। আবার অভিযানের মাধ্যমে যেসব মাদক উদ্ধার হয় এর সিংহ ভাগই পুলিশের হাত ঘুরে মাদক ব্যবসায়ীদের কাছেই চলে যায়। ফলে একাধারে অভিযানও যেমন চলে, তেমনি মাদকের কেনাবেচাও চলে পাল্লা দিয়ে। চারদিকেই মাদকের ছড়াছড়ি। স্কুলপড়ুয়ারাও এখন ইয়াবায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। টিফিনের টাকা একত্র করে সহপাঠীরা মিলেমিশে ইয়াবা সেবন করলেও টাকা না পেলেই তারা শুঁকছে জুতায় লাগানোর পেস্টিং। কি রাজধানী, কি শহর-বন্দর-গঞ্জ, হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় ইয়াবা। এখন উপজেলা পর্যায়েও একাধিক পয়েন্টে চলে মাদকের কেনাবেচা। নেশার সর্বগ্রাসী থাবা সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে মাধ্যমিক স্কুলের গণ্ডি পর্যায়েও মাদকের ভয়াল অভিশাপ নেমে এসেছে। সহজলভ্য, বেকারত্ব বৃদ্ধি, কালো টাকার আধিক্য, পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণ ইত্যাদি কারণে মাদকাসক্তের মিছিল দিন দিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে র‌্যাব-পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সদস্যরা অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার ও বেপারি পর্যায়ের মাদক সরবরাহকারীদের আটক করে থাকেন। টেকনাফ-কক্সবাজার, চট্টগ্রাম এলাকায় অভিযানে নামলেই মিলছে লাখ লাখ পিস ইয়াবা। এর পরও ইয়াবার নেশাকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এক পরিদর্শক জানান, ইয়াবা বাণিজ্যের সঙ্গে প্রভাবশালী লোকজন জড়িত। কেউ বেশিসংখ্যক ইয়াবা নিয়ে আটক হলেই ভিআইপি শ্রেণির প্রভাবশালীরা তাদের ছাড়িয়ে নিতে তদবির করেন। ইয়াবা বাণিজ্যে রাতারাতি ধনাঢ্য হওয়ার লোভে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও মাদক বেচাকেনার অপরাধে জড়িয়ে পড়েছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে তিন কৌশলে কতিপয় অসাধু পুলিশ ও সোর্সদের সমন্বিত সিন্ডিকেট ইয়াবা বাণিজ্যে যুক্ত হয়। এগুলো হচ্ছে—ইয়াবার মূল পয়েন্ট টেকনাফ থেকে সরাসরি এনে বিক্রি করা, ইয়াবা নিজ দায়িত্বে রেখে নিরাপদ স্থানে টাকার বিনিময়ে পৌঁছে দেওয়া এবং গ্রেফতার মাদক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে জব্দ করা ইয়াবা পাইকারি বিক্রি। ২০১৫ সালের ২০ জুন র‌্যাবের অভিযানে প্রাইভেট কার এবং ৬ লাখ ৮০ হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার হন ঢাকার স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) এএসআই মাহফুজুর রহমান। মাহফুজের নোটবুকে পাওয়া গেছে ২৮ কোটি ৪৪ লাখ ১৩ হাজার টাকার ইয়াবা বেচাকেনার হিসাব। এতে ইয়াবার ক্রেতা-বিক্রেতা হিসেবে যে ১৪ জনের নাম পাওয়া গেছে, এর অধিকাংশই পুলিশ সদস্য। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মাহফুজ বেশ কজন পুলিশ, আইনজীবী ও আদালতের মুহুরি ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত থাকার তথ্য দেন। কক্সবাজারের টেকনাফ-উখিয়া অঞ্চল পরিচিত হয়ে উঠেছে ইয়াবার রাজ্য হিসেবে। মিয়ানমার সীমান্তঘেঁষা এ দুটি উপজেলার অসংখ্য পয়েন্ট হয়ে স্রোতের মতো ঢুকছে ইয়াবা। কড়ইবনিয়া, ডেইলপাড়া, দরগাহ বিল, হাতিমোরা, আছারতলী, বালুখালী, কুতুপালং, কচুবনিয়া, ধামনখালী, ঘুমধুম, পালংখালী, আনজুমান পাড়া ও নাফ নদঘেঁষা সীমান্ত পয়েন্টগুলো ইয়াবা বাণিজ্যে রমরমা। শুধু ইয়াবা বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িয়ে এক-দেড় বছরের মধ্যেই টেকনাফ, উখিয়াসহ কক্সবাজারের অন্তত দুই শতাধিক ব্যক্তি কোটিপতি হয়ে উঠেছেন। এ ব্যবসা করে ছাগল হাটের দালাল, অটো গাড়ির হেলপার, ফুটপাথ হোটেলের টেবিলবয় থেকে শুরু করে ডিঙি নৌকার মাঝি পর্যন্ত কোটিপতির খাতায় নাম লিখিয়েছেন। চোরাচালান দমনে প্রশাসনের অব্যাহত চাপে গুটিকয় চুনোপুঁটি চোরাকারবারি ধরা পড়লেও রাঘব-বোয়ালরা বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়।

সোর্সদের ইয়াবা হাটে ছাত্রীদের সর্বনাশ : রাজধানীতে পুলিশের দুই সহস্রাধিক সোর্স ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। কোথাও তারা নিজেরা সরাসরি করছে, আবার কোথাও লোক দিয়ে ব্যবসা করাচ্ছে। পুলিশের সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় তারা কখনো গ্রেফতার হয় না। এ কারণেই বন্ধ হয় না ইয়াবা বাণিজ্য। অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর ৪৯ থানার অন্তত এক হাজার স্পটে ইয়াবা ব্যবসা চলছে। এ ছাড়া আছে মোবাইল সার্ভিসের ইয়াবা সরবরাহকারী গ্রুপ। এসব এলাকায় যারা ব্যবসা করছে তাদের অধিকাংশই পুলিশের সোর্স হিসেবে চিহ্নিত। এসব সোর্স প্রায়ই পুলিশের গাড়িতে চলাফেরা করায় তাদের বিরুদ্ধে মানুষ ভয়ে মুখ খোলে না। তাদের মাদক বাণিজ্য নিয়ে কেউ অভিযোগ তুললে উল্টো অভিযোগকারীকেই নানাভাবে হয়রানি পোহাতে হয়। দেশে ৭৬ লক্ষাধিক মাদকাসক্তের মধ্যে ইয়াবাসেবীর সংখ্যা ৪০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। মাদকাসক্ত চিকিৎসা কেন্দ্রের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোগীদের প্রায় ৭০ শতাংশই ইয়াবায় আসক্ত। কেউ কেউ অন্য মাদক গ্রহণ করলেও তারা সুযোগ পেলেই ইয়াবা সেবন করছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিলেও সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা বরাবরই নির্বিকার। এ বিষয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোহিত কামাল বলেন, ‘রাজনৈতিক বা অন্য যে কোনো সংকটের চেয়েও এটা ভয়াবহ। যারা সেবন করে তাদের অবস্থা খুব খারাপ থাকে। জাতির জন্য এটা বড় ধরনের হুমকি। তিনি বলেন, ইয়াবায় সবচেয়ে বেশি আসক্ত শিক্ষার্থীরা। ইয়াবার কারণে পারিবারিক অশান্তি বাড়ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির জন্যও ইয়াবাই দায়ী। ’ এক জরিপে দেখা যায়, ইংরেজি মাধ্যমের ছেলেমেয়েই ইয়াবার প্রতি বেশি আসক্ত। ভার্সিটির অনেক ছেলেমেয়ে তো অগ্রণী ভূমিকায় আছে। তরুণ প্রজন্মের অনেক ছেলেমেয়ের কাছে ইয়াবা হয়ে উঠেছে ফ্যাশনের স্টাইল। গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরাসহ অভিজাত এলাকায় বিশেষ কায়দায় গড়ে ওঠা হোটেল-রেস্টুরেন্টের ভিতরই ইয়াবা সেবনের নিরাপদ ব্যবস্থা রয়েছে। ক্লাসের ফাঁকে কিংবা স্কুল-কলেজ ছুটির পর সেসব হোটেল-রেস্টুরেন্টে ইয়াবাপ্রেমী শিক্ষার্থীদের ভিড় জমে। রাজধানীর বেশ কিছু আবাসিক হোটেলেও ইয়াবা সেবনের জন্য কক্ষ ভাড়া দেওয়া-নেওয়ার রেওয়াজ শুরু হয়েছে। হোটেলের নির্জন কক্ষে ইয়াবা সেবনের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা অনেক মেয়ে নিজের অজান্তেই নানা রকম সর্বনাশের শিকার হয়। গোপন ক্যামেরায় ছাত্রীদের নেশার দৃশ্য ভিডিও করাসহ তাদের সম্ভ্রম লুটে নেওয়ার ঘটনাও ঘটে। বারিধারা এলাকার ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের কয়েকজন ছাত্রীর ইয়াবা আমদানি ও সরবরাহের বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ারও খবর পাওয়া গেছে। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তারা এ ধরনের একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনার তদন্তে নেমে বহুসংখ্যক ছাত্রীর ইয়াবা বাণিজ্যে সক্রিয় সম্পৃক্ততার তথ্য পান। কিন্তু প্রভাবশালী মহলের চাপে সেসব ছাত্রীকে মামলা থেকে নিষ্কৃতি দিতে তারা বাধ্য হন বলে অভিযোগ উঠেছে।

মাদক ঘিরে প্রতারণা-বাণিজ্য : দেশে জনগোষ্ঠীর একটি বিরাট অংশ মাদকাসক্ত হওয়ায় তাদের ঘিরে সংঘবদ্ধ চক্র নানা রকম ধান্দায় মেতে উঠেছে। মাদক সরবরাহ, ভেজাল মাদক তৈরি, পুলিশের ধরা-ছাড়া বাণিজ্য, মাদকবিরোধী সামাজিক কর্মকাণ্ড চালানোসহ নানা নামে নানা কৌশলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। মাদকাসক্তি নিরাময়ের নামেও একটি চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। অথচ ওই সব কেন্দ্রের অধিকাংশের বৈধ কোনো অনুমোদন নেই, নেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও চিকিৎসা সরঞ্জাম। এসব স্থান থেকে চিকিৎসাসেবা নিয়ে সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে পারার নজিরও নেই। সেবামূলক প্রতিষ্ঠান আখ্যায়িত করে কেউ কেউ সমাজসেবা অধিদফতর, ঢাকা সিটি করপোরেশন বা মানবাধিকার সংগঠনগুলো থেকে অনুমোদন নিয়েই প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসেছে। রাজধানীসহ সারা দেশে মাদক নিরাময়ের নামে এমন ১২ শতাধিক প্রতিষ্ঠান অভিনব বাণিজ্য ফেঁদে বসেছে। ৪ ফুট বাই ১০ ফুট আয়তনের একেকটি বদ্ধ কক্ষে মাসের পর মাস আটক রেখে মাদকাসক্তের ওপর নানা রকম বর্বরতা চালানো হচ্ছে। এ অমানবিকতার বিল বাবদ একেকজনের পরিবার থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে ৪০-৫০ হাজার টাকা। প্রায়ই এসব কেন্দ্র থেকে হাত-পা বাঁধা, সারা দেহ থেঁতলানো অবস্থায় লাশ উদ্ধারের ঘটনাও ঘটছে। এদিকে মাদক আমদানি বাবদ প্রতিদিনই দেশ থেকে কোটি কোটি টাকা বিভিন্ন দেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বছর শুধু ভারত থেকেই অন্তত ১৫ হাজার কোটি টাকার মাদক আমদানি হয়ে থাকে। ফ্যামিলি হেলথ ইন্টারন্যাশনালের পরিসংখ্যানে বলা হয়, প্রতি বছর ভারত থেকে শুধু ফেনসিডিলই আসে তিন হাজার ৪৭ কোটি টাকার। দেশজুড়ে ইয়াবা আসক্তের সংখ্যা অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় এখন মাদক বাবদ সবচেয়ে বেশি টাকা পাচার হচ্ছে মিয়ানমারে। প্রতিদিন মিয়ানমার থেকে বিভিন্ন চোরাচালান পথে ৩০ লক্ষাধিক পিস ইয়াবা দেশে ঢুকছে বলে বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা গেছে। সে হিসেবে শুধু ইয়াবা বাবদই প্রতি বছর মিয়ানমারে ১৩ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে থাকে।

মাদক বাণিজ্যে রাজনৈতিক নেতারা : রাজনৈতিক নেতারাই নিয়ন্ত্রণ করছেন মাদক বাণিজ্য। কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে মহানগর, জেলা, উপজেলা, ওয়ার্ড, এমনকি ইউনিট পর্যায়ের অনেক নেতা-কর্মী-সমর্থক সরাসরি মাদক কেনাবেচা করছেন। ইউনিয়ন পর্যায়ের কাউন্সিলর থেকে শুরু করে ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান, কতিপয় জাতীয় সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধেও মাদক কেনাবেচাসহ সরবরাহ কাজে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে। সর্বনাশা নেশা ইয়াবার বাণিজ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পাওয়া টেকনাফের (কক্সবাজার) সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি গ্রেফতার বরণসহ জেলহাজতও ঘুরে এসেছেন। ইয়াবার কারবারে যুক্তদের তালিকায় বদিই শুধু নন, তার আপন দুই ভাই ও দুই সৎ ভাইয়ের নামও রয়েছে। ইয়াবা পাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত টেকনাফ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি ও আবদুর রহমান বদির এপিএস জাহেদ হোসেন জাকু ইতিমধ্যে ক্রসফায়ারে নিহত হয়। যশোরের সীমান্ত এলাকায়ও মাদক পাচারের সঙ্গে স্থানীয় এক এমপি এবং চৌগাছার এক শীর্ষস্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার নাম উঠে এসেছে। রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে হেরোইন কারবারে এগিয়ে আছে পৌর আওয়ামী লীগ নেতার ভাই-ভাতিজার গ্রুপ। খোদ রাজধানীতেও মাদক সরবরাহ ও বাণিজ্য পরিচালনার নেপথ্যে কোনো না কোনো রাজনৈতিক নেতার পৃষ্ঠপোষকতা থাকে। পরিবহন সেক্টরের মতো মাদক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও নগদ টাকার ছড়াছড়ি থাকায় সেখানে শীর্ষসন্ত্রাসী থেকে শুরু করে মহল্লা পর্যায়ের মাস্তান সন্ত্রাসীরও সক্রিয় অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা যায়।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।