১৯ মে, ২০২৪ | ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ১০ জিলকদ, ১৪৪৫


শিরোনাম
  ●  কালেক্টরেট চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী সমিতির সভাপতি আব্দুল হক, সম্পাদক নাজমুল   ●  ক্যাম্পের বাইরে সেমিনারে অংশ নিয়ে আটক ৩২ রোহিঙ্গা   ●  চেয়ারম্যান প্রার্থী সামসুল আলমের অভিযোগ;  ‘আমার কর্মীদের হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে’   ●  নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সবকিছু কঠোর থাকবে, অনিয়ম হলেই ৯৯৯ অভিযোগ করা যাবে   ●  উখিয়া -টেকনাফে শাসরুদ্ধকর অভিযানঃ  জি থ্রি রাইফেল, শুটারগান ও গুলিসহ গ্রেপ্তার ৫   ●  রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হেড মাঝিকে  তুলে নিয়ে   গুলি করে হত্যা   ●  যুগান্তর কক্সবাজার প্রতিনিধি জসিমের পিতৃবিয়োগ   ●  জোয়ারিয়ানালায় কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত রামু কলেজের অফিস সহায়ক   ●  রামুর বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে পুলিশের সহযোগিতায়  আসছে চোরাই গরু   ●  রামুতে ওসির আশকারায় এসআই আল আমিনের নেতৃত্বে ‘সিভিল টিম’

ইয়াবার আগ্রাসন থামাতে ব্যর্থ প্রশাসন

1412143361-300x224থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার থেকে টেকনাফ হয়ে সড়ক ও নদী পথে চট্টগ্রামে স্রোতের মতো আসছে মরণ নেশা ইয়াবা ট্যাবলেট। নিষিদ্ধ হওয়ার পরও চট্টগ্রাম হয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে এই ট্যাবলেট। প্রান্তিক অঞ্চলেও নেশাদ্রব্যটি সহজলভ্য হচ্ছে। সহজলভ্য ও বহন করা সহজ তাই হেরোইন-ফেনসিডিলের বদলে ইয়াবা সেবিদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। পালের গোঁদারা ধরাছোয়ার বাইরে থাকায় শত চেষ্টার পরেও এই ঘাতক নেশার আগ্রাসন থামাতে প্রশাসন ব্যর্থ হচ্ছে।

পুলিশ, র‌্যাব, কোস্ট গার্ড ও বিজিবি কোথাও না কোথাও প্রতিদিন প্রতিনিয়ত ইয়াবার চালান আটক করে যাচ্ছে। তারপরও ইয়াবার বিকিকিনি রোধ করতে পারছে না আইনশৃংখলা বাহিনী।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৪ সালে র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৭ লক্ষ ২৪ হাজার, ৩২ পিস ইয়াবা জব্দ করে। ওই বছর প্রশাসন ১২৫ জন ব্যবসায়িকে আটক করলেও মূল হোতাতের ধরা সম্ভব হয়নি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কোস্ট গার্ড পূর্বাঞ্চলের আঞ্চলিক কমান্ডার ক্যাপ্টেন শহিদুল ইসলাম বলেন, নৌপথে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা ট্রলারে অনেক শক্তিশালী  ইঞ্জিন ব্যবহার করে। সেদিক দিয়ে আমাদের স্পিড বোডের ইঞ্জিনের শক্তি অনেক কম। এছাড়া আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে লোকবল নেই। মাত্র ৫০০ জন লোকবল দিয়ে ১৮০ কিলোমিটার সীমানায় আমাদের ১২টি স্টেশন পরিচালনা করতে হয়। নানান সীমাবদ্ধতার পরও কোষ্টগার্ডের সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌপথে অভিযান পরিচালনা করে আসছে।

কক্সবাজার বিজিবি সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল খালেকুজ্জমান এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ২০১৪ সালে মোট ২৪ লক্ষ ৭০ হাজার ২৮১ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করা হয়েছে। এর বাজার মূল্য প্রায় ৮০ কোটি ২৫ লক্ষ ৯০হাজার ৩৮ টাকা। এছাড়া ২০১৫ সালের জানুয়ারী থেকে  ২১ মার্চ পর্যন্ত জব্দ করা হয়েছে প্রায় ১২ লক্ষ ৬৮ হাজার ৩২৮ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট। এর বাজার মূল্য প্রায় ৩৪ কোটি ৬১ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকা।

তিনি আরও বলেন, সীমান্ত এলাকার যে সব স্থানগুলো দিয়ে ইয়াবা অনুপ্রবেশ করে সেই সব এলাকায় আমাদের সর্বাত্মক নজরদারী রয়েছে। আমাদের অভিযানে চালান ধরা পড়লেও, চালানের সাথে যাদের আটক করা হচ্ছে তারা মূল হোতা নয়। প্রমাণ না থাকায় পালের গোদারা সব সময়ই ধরাছোয়ার বাইরে থাকছে।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, ইয়াবার চালান চট্টগ্রাম হয়ে সারাদেশে পৌঁছে দিতে বেশ কয়েকজন রাঘব বোয়াল কাজ করে যাচ্ছে। এর মধ্যে টেকনাফের ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য চোখে পড়ার মত। বর্তমানে এ ব্যবসায় খাতুনগঞ্জের স্বনামধন্য ব্যবসায়ীরাও যোগ দিয়েছে। ২০১৩ সালে র‌্যাব-১ ও র‌্যাব-৭ -এর যৌথ অভিযানে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ এলাকার একটি বড়ই-এর আড়ত থেকে ইয়াবার বড় চালান ধরা পড়ে। এ ঘটনায় ২ লাখ ৭০ হাজার পিস ইয়াবাসহ খাতুনগঞ্জের চারজন ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১ ও র‌্যাব-৭। গ্রেফতারকৃত ব্যবসায়ীরা হলেন, আবদুর রশিদ (খুলু), আতাউর, সাব্বির ও ইসমাইল।

অধিক লাভের আশায় এই মরণনেশার ব্যবসায় জড়াচ্ছেন অনেকে। তাই আইন প্রয়োগের কঠোরতাও প্রভাব ফেলছে না।
ইয়াবার আগ্রাসন থামাতে প্রশাসন কেন ব্যর্থ হচ্ছে জানতে চাইলে নগর পুলিশ কমিশনার আব্দুল জলিল মন্ডল সিটিজিনিউজকে  বলেন, ইয়াবা ব্যবসা নির্মূলে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু বর্তমানে এই মাদকে ব্যবসায় সম্ভান্ত্র ব্যবসায়ীরাও যোগ দিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, শুধুমাত্র আইনশৃংখলাবাহিনীর ইয়াবার আগ্রাসন ঠেকানো সম্ভব নয়। এই মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে গণসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। আমরা চাই এব্যাপারে গণ মাধ্যম অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে।

চলতি বছর ইয়াবার সব চাইতে বড় চালান ধরা পড়ে বঙ্গোপসাগরের ছেড়াদ্বীপে। এই সময় তিন লক্ষ পিস ইয়াবাসহ ১২জন ইয়াবা ব্যবসায়িকে আটক করা হয়। কিন্তু আইনশৃংখলা বাহিনী ধারণা করছে এসব ব্যবসায়ীরা তৃণমূলের। কেন্দ্রের পরিচালকরা ধরা না পড়লে এই নেশার আগ্রাসন থামানো সম্ভব হবেনা।

জানতে চাইলে র‌্যাব-৭ অধিনায়ক মিফতা উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা আইনশৃংখলাবাহিনীর কাজই হচ্ছে অপরাধ ঠেকানো।  ইয়াবা চালান পরিবহন ও ব্যবসার সাথে যারা জড়িত তাদের আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে আমরা নিরলস কাজ করছি।

বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, মাঝে মধ্যে যে সব ইয়াবা আইনশৃংখলাবাহিনীর হাতে ধরা পড়ছে তা কিঞ্চিত পরিমাণ।

আইনশৃংখলাবাহিনীর নজড়দাড়িকে ফাঁকি দিয়ে সড়ক ও নৌপথ দিয়ে নিয়ে আসছে ইয়াবার বিশাল বিশাল চালান। এদেশের মুষ্টিমেয় মাদক সম্রটরাই মূলত এ মরণ নেশা মাদকটি বিস্তার করছে।

তাছাড়া রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় রমরমা ব্যবসা চালাচ্ছে ব্যবসায়ীরা।এ কারণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এড়াতে দেখেও না দেখার ভান করে থাকেন। প্রশাসনের দৃষ্টিকে ফাঁকি দিয়ে চট্টগ্রামের হালিশহর ও খুলশীর বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেলে ও অভিজাত ফ্ল্যাটে ইয়াবার রমরমা ব্যবসা চলছে। বিউটি পার্লারের আড়ালে এবং ম্যাসেজ পার্লারের আড়ালে এখানে চলছে ঘাতক মরণ নেশা ইয়াবার জমজমাট বিক্রয় ও সেবন। এসব জায়গায় দিনে রাতে সমান তালে চলে ইয়াবার বিকিকিনি। এছাড়া, চট্টগ্রাম নগরীর মাদক আস্তানাগুলোতে গাঁজা ও ফেনসিডিল এর পাশাপাশি চলছে ইয়াবা ব্যবসাও। তবে গাঁজা ও ফেনসিডিল আস্তানার চেয়ে ইয়াবার আস্তানা ছড়িয়ে পড়ছে পুরো শহরজুড়ে।

র‌্যাব-৭-এর এএসপি সোহেল মাহমুদ। তিনি বলেন, সন্তানদের প্রতি নজরদারি  ও যত্নবান হতে না পারলে সমাজ থেকে মাদক আগ্রাসন নির্মূল করা সম্ভব হবে না।

নির্ভর যোগ্য সুত্র মতে, শত শত অভিভাবকের প্রশ্ন, এটি রোধ করা যাচ্ছে না কেন? সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা একটু সহানুভূতি ও উদার হলে তো মরণ নেশা ইয়াবার আগমন রোধ করা অসম্ভব নয়। বিজ্ঞ মহল মনে করেন, সীমান্ত বাহিনী ও বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আন্তরিক হলেই ইয়াবার আগমন ও বিকিকিনি রোধ করা সম্ভব এবং ধরা পড়বে মূল হোতারাও।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।