এ নিয়ে বিএনপি ও জোটে রয়েছে নানা মন্তব্য। কেউ বলছেন, অবরোধ চলছে। কেউ দাবি করছেন, আসন্ন তিন সিটি নির্বাচন নিয়ে প্রচারণা চালাতে হলে অবরোধ রাখা যাবে না। তবে অবরোধ উঠে গেছে- এমনটি কেউ দায়িত্ব নিয়ে বলতে চাইছেন না।

অবরোধকালীন খালেদা জিয়া তার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে বের হননি। ২৬ জানুয়ারি আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর বাংলাদেশে লাশ এলেও কার্যালয়ে থেকে ছোট ছেলেকে শেষ বিদায় জানিয়েছিলেন খালেদা। এরপর ৩১ জানুয়ারি কার্যালয়ের বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট ও ক্যাবল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও কার্যালয় ছাড়েননি তিনি। ২২ ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরে এলেও রবিবার পর্যন্ত ইন্টারনেট ও ক্যাবল সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল তার কার্যালয়ের।

এরপর একে-একে গ্রেফতারি পরোয়ানা, কার্যালয় তল্লাশির ওয়ারেন্ট এলেও বের হননি খালেদা জিয়া। ফেব্রুয়ারি থেকে অবরোধের পাশাপাশি লাগাতার দুই দিন, তিন দিন করে হরতাল আহ্বান করা হয়। সর্বশেষ রবিবার সকালে মামলার হাজিরা দিতে পুরান ঢাকার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অবস্থিত অস্থায়ী আদালতে গিয়ে জামিন পান। শুনানি শেষে দুপুর সোয়া বারোটার দিকে গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর রোডের ভাড়া বাসা ফিরোজায় ফিরে যান তিনি। দীর্ঘ তিন মাস পর তিনি নিজের বাসায় ফিরলেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে বলা হয়েছিল, অবরোধকালীন খালেদা জিয়া কার্যালয় থেকে বের হবেন না। এই যুক্তিতে, একুশে ফেব্রুয়ারি ও স্বাধীনতা দিবসে পুষ্পস্তবক অর্পণ থেকে বিরত ছিলেন তিনি।

রবিবার বাসভবনে ফিরে গেলে জনমনে প্রশ্ন ওঠে, অবরোধ আছে, কি নেই। অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই আলোচনা ছিল সরব।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী সাফওয়ান মাহমুদের সঙ্গে। তিনি বলেন, অবরোধকে কেন্দ্র করে দেশবাসী বিপদে ছিল। এখন নিশ্চয় খালেদা জিয়া অন্তত করুণা করবেন। অবরোধ তুলে দিয়ে আমাদের পাঠে মনোযোগী হতে সাহায্য করবেন।

প্রায় একইরকম মন্তব্য সৃজনশীল প্রতিষ্ঠান ‘গালা’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক চিত্রশিল্পী হামীম কেফায়েতের। তিনি বলেন, অবরোধের নামে গুলশান কার্যালয়ে নাশকতা পরিচালনা করেছেন খালেদা জিয়া। আসছে পহেলা বৈশাখ তিনি এবার বাঙালিকে পালন করতে দেবেন বলে আশা করি।

অবরোধ উঠে গেছে বলে মনে করেন ডা. আসাদুজ্জামান রকিব। তিনি বলেন, ম্যাডাম তো ঘরে ফিরলেন। মনে হচ্ছে অবরোধও ঘরে ফিরেছে।

এসব বিষয়ে কথা হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক সেনা প্রধান লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, সামনে তো তিন সিটি নির্বাচন। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া চলমান আন্দোলনের রেজাল্ট তো আসেনি। আন্দোলন চলবে, তবে অবরোধ না হয়ে হয়তো নতুন আঙ্গিকে আসবে। তিনি বলেন, আলোচনা চলছে। দুই একদিনের মধ্যে জানতে পারবেন।

বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান হারুন আল রশিদ বলেন, অবরোধ তো চলবে। ম্যাডাম তো এ কর্মসূচি বন্ধের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেননি। নির্বাচনের দাবিতে চলমান এ অবরোধ বন্ধ হলে তো রেজাল্ট আশা করা ভুল।

তবে ২০ দলীয় জোটের বিশ্বস্ত দুটি সূত্রমতে, মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে চলমান অবরোধ এখন ‘প্রেস রিলিজে’ চলবে। প্রেস রিলিজে অবরোধ পালনের নির্দেশনা থাকবে।

অন্য সূত্রটি মনে করে, অবরোধ থাকবে কৌশল হিসেবে। অবরোধ বন্ধ হলে আন্দোলন বন্ধ, এর রেজাল্ট নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। এ কারণে এখনই অবরোধ তুলবেন না খালেদা জিয়া। যদিও জোটের একটি শরিক দলের নেতার মন্তব্য, খালেদা জিয়া বাসায় ফিরেছেন, এবার মিলাদ দেবেন কবে।

এ ব্যাপারে জোটের শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এমএম আমিনুর রহমান বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের কারণে হরতাল-অবরোধ শিথিল থাকবে। তবে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন চলবে।

দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রের দাবি, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয়লাভের জোর চেষ্টা চালাবে বিএনপি। উদ্দেশ্যসাধনে খুব দ্রুত মাঠে নামবেন খালেদা জিয়া। রাজধানী চষে বেড়াবেন তিনি। ঢাকা দক্ষিণে দল-সমর্থিত প্রার্থী মির্জা আব্বাস ও উত্তরে আবদুল আউয়াল মিন্টু অথবা বিকল্পধারা-সমর্থিত প্রার্থী মাহী বি চৌধুরীকে মেয়র নির্বাচিত করতে তৎপর হবেন তিনি। এ কারণে আগে থেকে দুই সিটিতে হরতাল-অবরোধ শিথিল ঘোষিত রয়েছে।

এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, প্রয়োজনে মাঠে নামবেন খালেদা জিয়া। মেয়র নির্বাচনে দল-সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চাইতে রাজধানী চষে বেড়াতে পারেন। তবে সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি।

এদিকে রবিবার সারা দেশে হরতাল না থাকলেও বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল। এ কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি বিএনপি ও জোটের নেতাকর্মীদের। বিভিন্ন সময় এসব কর্মসূচি ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির ঝটিকা মিছিলের মাধ্যমেই পালন করে প্রেস রিলিজ দিয়ে জানান দিলেও রবিবার কোনও প্রেস রিলিজ পাঠায়নি তারা।

রবিবার ছাড়া অন্যান্য দিনে বিএনপির পক্ষে যুগ্ম-মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু ও জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি ডা. শফিকুর রহমানের বরাতে অবরোধ চালিয়ে যেতে বিবৃতি এলেও রবিবার তা আসেনি। বগুড়ার প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। পাশাপাশি জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমদও শোক প্রকাশ করেছেন একই বিষয়ে। এইচএসসি পরীক্ষার দিনে হরতাল না দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপি জোটের। এ কারণে আজ সোমবারও হরতাল নেই।