
ছোটখাট একটা শহরই বলা চলে একে। আয়তনটা নেহাত কম নয়- সাড়ে চার একর। যেন ভাসমান এক মার্কিন নগরী। এখানকার বাসিন্দা চার হাজার আটশো। বুকের মধ্যে পঞ্চাশোর্ধ বিমান নিয়ে ঘন্টায় ৩০ কিলোমিটার গতিতে সাগরের বুক চিড়ে এগিয়ে যাচ্ছে। সেখান থেকে এফ-এ এইটিন সি হর্নেট, এফ-এ এইটিন এফ সুপার হর্নেট কিংবা ইএ-এইটিন জি গ্রোলার-এর মতো ২৪-২৫টা বোমারু  রোজ কমপক্ষে পাঁচশো কিলোমিটার পথ উড়ে গিয়ে বোমা ফেলে আসছে ইরাক কিংবা সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের (আইএস) কোন ঘাঁটিতে।
সামরিক পরিভাষায় নাম এয়ারক্র্যাফট সুপার ক্যারিয়ার। গায়ে গতরে আসল নাম কার্ল ভিনসন । মার্কিন সাবেক ডেমোক্র্যাট নেতার অনুসারেই এর নাম। এর প্রতিটি পরতে আমেরিকার শক্তি ও পরাক্রমের প্রবল প্রকাশ।
১৯৭৪ সালে এটি নির্মানের আদেশ দেয়া হয়। আর এর কমিশন হয় ১৯৮২ সালে। পারমাণবিক বিদ্যুতে চালিত (দু’টি পরমাণু চুল্লি আছে) এই বিমানবাহী জাহাজের ওজন ১ লাখ ১৩ হাজার টন। কার্ল ভিনসনে এক সঙ্গে থাকে ৬৩টি বিমান, যার মধ্যে ৪৪টি বোমারু। এদের ওড়া ও নামার জায়গা বা রানওয়ের নাম ফ্লাইট ডেক। এর মেঝে রবারের, বিমানের চাকা যাতে পিছলে না যায়। ১৮ তলা কার্ল ভিনসনের ফ্লাইট ডেক সাত তলায়। জাহাজের ১৩ থেকে ১৮— এই সাত তলা রয়েছে সমুদ্রের নীচে। ১২ তলায় রয়েছে পাঁচ-পাঁচটি ক্যান্টিন। তবে ক্যান্টিন না বলে পুরোদস্তুর পাঁচতারা রেস্তোরাঁ বলাই ভাল। লাঞ্চ ও ডিনারে প্রতি বারই ৫০ রকম পদ। সালাদ বার থেকে বিফ স্টেক, তাজা হরেক রকম ফল থেকে চিজ কেক, বেক্ড ফিশ থেকে সিদ্ধ সব্জি— কী নেই! প্রতিটি টেবিলে সস-ই ১৫ রকমের। যে যত খুশি খাও। পদমর্যাদার ভিত্তিতে খাবারে ভেদ নেই। তবে ক্যাপ্টেন তথা কম্যান্ডিং অফিসার ব্যতিক্রম। তাঁর জন্য নিযুক্ত আলাদা রাঁধুনিকে দিয়ে তিনি নিজের মতো পদ রান্না করাতে পারেন।

জাহাজের অফিসার-কর্মীরা যাতে শারীরিকভাবে নিজেদের সুস্থ-সবল ও চাঙ্গা রাখতে পারেন, সে জন্য রয়েছে ‘জিম’। তাতে ট্রেডমিল, সাইকেলসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম রয়েছে। ছোটখাটো অপারেশন থিয়েটার, এক্স-রে, রক্ত পরীক্ষার গবেষণাগার, এমনকী রয়েছে দাঁতের চিকিৎসার আলাদা শাখা।
ভাসমান এই ছোটখাটো শহরটায় জীবনধারণের যাবতীয় উপকরণ থাকলেও ক্রুজ বা প্রমোদতরণীর মতো বিলাসিতার সুযোগ নেই, আছে কৃচ্ছ্রসাধন। আঠারো তলা জাহাজের এক তলা থেকে অন্য তলায় যাওয়ার লিফ্ট নেই, শুধু সিঁড়ি। স্টিলের খাড়াই মই বললেই হয়তো যথার্থ হবে। অসতর্ক হলে নিশ্চিত পা ভাঙবে, আরও বড় কিছুও হতে পারে। এমন খাড়াই মই বেয়ে বার বার ওঠানামার মতো পরিশ্রমসাধ্য কাজ করতে হয় বলে এখানে কর্মরত প্রায় ছয় হাজার অফিসার ও কর্মীর জন্য বরাদ্দ রোজ অন্তত চার হাজার ক্যালোরির খাবার। কারও চোট লাগলে বা কেউ আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়লে বিশেষ এলিভেটরে তাঁকে চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।
এলিভেটর বাধ্যতামূলকভাবে ব্যবহার হয় পাঁচ তলার অস্ত্রাগার থেকে বোমা ও রকেট বারো তলার ফ্লাইট ডেকে ওঠাতে। ওই এলিভেটর প্রতিবারে ১০ হাজার ৫০০ পাউন্ড ওজনের বোমা ওঠাতে পারে।
আফগান যুদ্ধে কার্ল ভিনসন যখন অংশ নিয়েছিল তখন পরিচালিত অপারেশনের নাম ছিল ‘অপারেশন এনডিওরিং ফ্রিডম’, ইরাক যুদ্ধের নাম ছিল ‘অপারেশন ইরাকি ফ্রিডম’। আইএসের বিরুদ্ধে গত জুনে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন জোটের সামরিক অভিযানের নাম পেন্টাগন দিয়েছে ‘অপারেশন ইনহেরেন্ট রিজ়লভ’। সেই অভিযানে শুধু কার্ল ভিনসন থেকেই হয়েছে হাজারের বেশি বিমানহানা।
 
			


 
									
			 ২০২১ ফেব্রুয়ারি ০৮  ০৮:৩১:১১
					 ২০২১ ফেব্রুয়ারি ০৮  ০৮:৩১:১১ 
					 ২০২০ জুলাই ২৮  ০৬:০২:৪৫
					 ২০২০ জুলাই ২৮  ০৬:০২:৪৫ 
					 ২০২০ জুন ২৭  ১১:১৮:৫৪
					 ২০২০ জুন ২৭  ১১:১৮:৫৪ 
					 ২০২০ জুন ২২  ১২:৫৩:২৯
					 ২০২০ জুন ২২  ১২:৫৩:২৯ 
					 ২০২০ মে ২৯  ০৫:৫৩:৩৫
					 ২০২০ মে ২৯  ০৫:৫৩:৩৫ 
					 ২০২০ মে ০৯  ০১:০৫:২৩
					 ২০২০ মে ০৯  ০১:০৫:২৩ 
					 ২০২০ মে ০৭  ০৫:০৩:৩০
					 ২০২০ মে ০৭  ০৫:০৩:৩০ 
					 ২০২০ মে ০৫  ১১:৫৩:৩৯
					 ২০২০ মে ০৫  ১১:৫৩:৩৯ 
					
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।