৮ নভেম্বর, ২০২৫ | ২৩ কার্তিক, ১৪৩২ | ১৬ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭


শিরোনাম
  ●  চিকিৎসা বিজ্ঞানে উখিয়ার সন্তান ডাঃ আব্দুচ ছালামের উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন   ●  ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীদের হুমকিতে নিরাপত্তাহীন পরিবার, চার সন্তান স্কুলে যাওয়া বন্ধ   ●  রামুতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা রিজনের নেতৃত্বে এক ব্যক্তির দোকান দখলের অভিযোগ, চাঁদাবাজি মামলায় জিটু কারাগারে   ●  গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়িতে ঢুকে হুমকি অভিযোগ ৪ এনসিপি নেতার বিরুদ্ধে   ●  কক্সবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে স্কিলস অ্যান্ড ইনোভেশন কম্পিটিশন অনুষ্ঠিত   ●  আলোচিত ইমরানের ২০ হাজার ইয়াবা নিয়ে লুটপাট, পরে রফাদফা!   ●  দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ   ●  কক্সবাজারে ভূমি নিবন্ধনে আকাশচুম্বী বর্ধিত উৎসেকর বাতিল, প্রসংশায় পঞ্চমুখ সালাহউদ্দিন আহমদ   ●  হলদিয়ায় ইমরানের ২০ হাজার ইয়াবা নিয়ে উধাও ৩ যুবক   ●  দুর্ধর্ষ প্রতারক দিদারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি

মানববন্ধনে বক্তারা-

বন কর্মকর্তা সাজ্জাদ পাহাড় খেকোদের পরিকল্পিত হত্যার শিকার

 

বিশেষ প্রতিবেদক:

‌’শিক্ষক দম্পতির সন্তান হিসেবে চাকরির শুরু হতেই নৈতিকতায় দ্বায়িত্বপালন করতো বন কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান সজল। প্রবিসন পিরিয়ড চলাকালীন একাগ্রচিত্তে কাজ শিখেছে সেভাবেই কর্মজীবন চালাচ্ছিলেন। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাত-বিরাতে অভিযান চালাতে পিছপা হতেন না তিনি। উখিয়ায় মাত্র কয়েকমাসের পোস্টিংয়ে কয়েক ডজন মাটিভর্তি ডাম্পার জব্দ করে পাহাড়খেকোদের আতংবে পরিণত হন সজল। মারা যাবার দুদিন আগেও সংরক্ষিত বনের মাটিভর্তি একটি ডাম্পার জব্দ করে মামলা দিয়েছেন। হয়ত এরপরই তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে পাহাড় খেকো চক্র। যার ফলশ্রুতিতে অভিযানে পেয়েই পরিকল্পনা মতো তাকে পিশে মারা হয়েছে।’

কক্সবাজারের উখিয়ায় সংরক্ষিত বনে রাতে পাহাড় কাটার খবরে অভিযানে গিয়ে ড্রাম্প ট্রাক চাপায় বন বিট কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান সজলকে হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় এসব কথা বলেছেন বক্তারা।

মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) দুপুরে বিভাগীয় বন কার্যালয়ের সামনে বন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পরিবেশ সহযোগী সংগঠনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে প্রথমে ঘটনার বিবরণ দেন উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলম। পরে, মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনায় এক মিনিট নিরবতা পালন ও দোয়া পড়া হয়।

সহমর্মিতা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন, হিমছড়ি সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির (সিএমসি) সহ-সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মাবুদ, ইনানী সিএমসি সভাপতি শহীদুল্লাহ কায়সার, উখিয়া অঞ্চলের সহকারি বনসংরক্ষক (এসিএফ) আনিছুর রহমান, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সভাপতি নাজিম উদ্দিন, কক্সবাজার চেম্বার সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা, কক্সবাজার প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল ইসলাম, বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদ সভাপতি দীপক শর্মা, সজলের শিক্ষা ও চাকরি জীবনের কাছের বন্ধু হিমছড়ি বন বিট কর্মকর্তা কামরুজ্জামান শোভন, নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট (নেকম) আঞ্চলিক পরিচালক ড. শফিকুর রহমান, কক্সবাজার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও-উত্তর) মো. আনোয়ার হোসেন সরকার ও ডিএফও-দক্ষিণ সরোয়ার আলম।

এতে জানানো হয়, রোববার ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা এলাকায় পাহাড় কেটে মাটি পাচার করছিল একদল পাহাড়খেকো। খবর পেয়ে বনবিভাগের দোছড়ি বিটের কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদুজ্জামান সজল (৩০) সহ কয়েকজন বনকর্মি ঘটনাস্থলে যান। এসময় তিনিসহ মোটর সাইকেল আরোহী দুইজনকে পাচারকারিদের মাটিভর্তি ডাম্পট্রাক চাপা দেয়। এতে সাজ্জাদুজ্জামান ঘটনাস্থলে মারা যান এবং মোহাম্মদ আলী নামের এক বনরক্ষী আহত হন।

নিহত সজল মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার মোহাম্মদ শাহজাহানের ছেলে। আর ঘটনায় আহত বনরক্ষী মোহাম্মদ আলী (২৭) টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের ঝিমংখালী এলাকার আবুল মজ্ঞুরের ছেলে।

এ ঘটনায় ১০ জনের নাম উল্লেখ করে ১৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলম- এমনটি জানিয়েছেন উখিয়া থানার ওসি মো. শামীম হোসেন।

আসামিরা হলেন, উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের পশ্চিম হরিণমারা এলাকার মোহাম্মদ কাশেমের ছেলে ও ডাম্পার ট্রাকটির চালক মো. বাপ্পী (২৩), একই এলাকার সুলতান আহম্মদের ছেলে ছৈয়দ আলম ওরফে কানা ছৈয়দ (৪০) ও তার ছেলে মো. তারেক (২০), রাজাপালং ইউনিয়নের তুতুরবিল এলাকার নুরুল আলম মাইজ্জার ছেলে হেলাল উদ্দিন (২৭), হরিণমারা এলাকার মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে ছৈয়দ করিম (৩৫), একই এলাকার আব্দুল আজিজের ছেলে আনোয়ার ইসলাম (৩৫), আব্দুর রহিমের ছেলে শাহ আলম (৩৫), হিজলিয়া এলাকার ঠান্ডা মিয়ার ছেলে মো. বাবুল (৫০), একই এলাকার ফরিদ আলম ওরফে ফরিদ ড্রাইভারের ছেলে মো. রুবেল (২৪) এবং হরিণমারা এলাকার শাহ আলমের ছেলে কামাল উদ্দিন ড্রাইভার (৩৯)। মামলায় অজ্ঞাতনামা আর ৫/৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে, এজাহারভূক্ত ৫ নম্বর আসামি ছৈয়দ করিম (৩৫)।

মামলায় অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার দাবিতে মানববন্ধনের আয়োজন করেছে বনকর্মী-কর্মকর্তারা এবং সহযোগীগণ।

উখিয়া থানার ওসি শামীম হোসেন বলেন, পুলিশ হত্যা মামলাটি নথিভূক্ত করে ঘটনার পর থেকে পুলিশ জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করেছে। ইতোমধ্যে রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারায় অভিযান চালিয়ে এজাহারভূক্ত ৫ নম্বর আসামি ছৈয়দ করিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। অপর আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে উল্লেখ করেন ওসি।

উল্লেখ্য, রবিবার দুপুরে বিভাগীয় বন কার্যালয়ে প্রথম জানাজা শেষে নিহত সজলকে নিজ বাড়ি মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পৌঁছে এশার নামাজের পর দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।