৫ মে, ২০২৫ | ২২ বৈশাখ, ১৪৩২ | ৬ জিলকদ, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  কক্সবাজার জেলা বিএনপির সদস্য সিরাজুল হক ডালিম’র সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ   ●  শ্রমিক দিবসে সামাজিক সংগঠন “মানুষ” এর ভিন্নধর্মী উদ্যোগ   ●  বীর মুক্তিযোদ্ধা এম. আবদুল হাই এর ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী ২৯ এপ্রিল   ●  লুৎফুর রহমান কাজলের মা সাবেক এমপি সালেহা খানমের ইন্তেকাল করেছেন   ●  টেকনাফে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে ডাকাতদলের গোলাগুলি, গুলিবিদ্ধ ১   ●  সিবিআইইউ’তে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন হয়েছে।   ●  গভীর রাতে পাহাড়ের মাটিভর্তি একটি ড্রাম ট্রাক( ডাম্পার) জব্দ করেছে কক্সবাজার বনবিভাগ   ●  অস্ত্র উদ্ধার ও ওয়ারেন্ট তামিলে জেলার শ্রেষ্ঠ হলেন এসআই খোকন কান্তি রুদ্র   ●  উখিয়ায় সাংবাদিক জসিম আজাদের জমি ও বসতবাড়ি দখলের চেষ্টায় হামলা   ●  কৃষকদল নেতা পরিচয়ে জমি দখল গুলি বর্ষণ আটক ১

তামাকের আগুনে জ্বলছে বনের কাঠ

Kat pic-2.psd
ট্যোবাকো (তামাক) স্প্যানিশ শব্দ। তামাক গাছের আদি নিবাস উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায়। স্পেনীয়রা ১৫৫৮ খ্রিস্টাব্দে মেক্সিকো থেকে তাদের দেশে তামাক নিয়ে আসে। আর বাংলাদেশে প্রথম ১৯৭৫ সালে দৌলতপুর উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের দর্গা গ্রামের কালু বিশ্বাসকে দিয়ে বিএটিসি প্রথম তামাক চাষের সূচনা করে। এরপর ১৯৮০ সালের দিকেই তা ছড়িয়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী উপজেলাসহ সারাদেশে। আর পার্বত্য এলাকায় শুরুতে ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মানুষ পাহাড়ে মশা জাতীয় রক্তচোষা বিষাক্ত কীটের হাত থেকে সুরক্ষার জন্য বসতির আশপাশে তামাক চাষ করত। বর্তমানে কক্সবাজার ও পার্শ্ববর্তী পার্বত্য বান্দরবান জেলায় এ তামাক চাষ সীমাহীন হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। মৌসুমের শেষের দিকে তামাক পুড়ানোর বিষাক্ত নিকোটিং বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে। এতে তামাকের ক্ষতিকারক ধেয়ে আসা নিকোটিনের প্রভাবে শিশু কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষের মাঝে শ্বাসকষ্ট দেখা দিচ্ছে।     দুই জেলার জনবসতিপূর্ণ অধিকাংশ গ্রামেই তামাক পুড়ানোর জন্য অন্তত চার হাজারের অধিক তামাক তন্দুল নির্মাণ করা হয়েছে। এ দুই জেলায় তামাক প্রক্রিয়াজাত করতে ধ্বংস হচ্ছে বনজসম্পদ। এক তথ্যানুযায়ী, প্রতি কিলোগ্রাম তামাক পোড়াতে প্রয়োজন হয় ৫ কেজি জ্বালানির। প্রতি মৌসুমে একরপ্রতি তামাক পুড়ানোর জন্য লাগে ৫ টন জ্বালানি। এসব জ্বালানির জোগান আসছে কক্সবাজার উত্তর ও দক্ষিণ বনবিভাগের বনায়নসহ পার্শ্ববর্তী পার্বত্য জেলার আম, কাঁঠাল, সেগুন, গর্জন, জাম, কড়ই প্রভৃতি বনজ ও ফলদ বৃক্ষ থেকে।
রামুর কচ্ছপিয়া ও ঈদগড় ইউনিয়নে সরেজমিনে দেখা যায়, এসব তামাক তন্দুল গুলোতে বয়ষ্ক শ্রমিকদের পাশাপাশি কাজ করছে নারী ও শিশুরা। বিভিন্ন এলাকায় তামাক কোম্পানির স্থানীয় অফিসগুলোর তামাক মজুদ নিদিষ্ট কোন জায়গা না থাকায় মানুষের বাড়ীর সামনে, স্কুল-মাদরাসা প্রাঙ্গনে তামাক মজুদ এবং গাড়ীতে তামাক ওঠা-নামা করা হয়। যার কারনে পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষ বাড়িতে বসবাস অযোগ্য হয়ে পড়ছে। কক্সবাজারের রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের কলেজ পড়–য়া ছাত্র সাগর সিকদার জানান, তামাক তন্দুলের পাশে কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকলে কারো ধুমপান করার প্রয়োজন নেই, তারা এমনিতে ধুমপানে আসক্ত হয়ে যাবে। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা হাজী এম এ কালাম ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক শাহ আলম জানান, তামাক মানব দেহে ক্ষতিকর হলেও বর্তমানে তা প্রকাশ্যে সব ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, কক্সবাজারের রামু, কাউয়ারখোপ, কচ্ছপিয়া-গর্জনিয়া, ঈদগড়, ঈদগাও, চকরিয়া, উখিয়া এবং বান্দরবান জেলা সদর, নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা, আলীকদম, থানচি উপজেলায় বৃটিশ আমিরিকান টোব্যাকো, ঢাকা টোব্যাকো, আবুল খায়ের টোব্যাকো, নাসির টোব্যাকো, আজিজ টোব্যাকোর তত্বাবধানে চলতি বছর চাষীদের মাধ্যমে তামাক তন্দুল বা চুল্লি¬ গড়ে তোলা হয়েছে প্রায় ৪ হাজারের অধিক। তন্দুল গুলোতে কাঠের যোগান দিতে প্রতিদিন বিভিন্ন ভ্যান ও যানবাহনে করে পথে পথে উৎকোচ প্রদানের মাধ্যমে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে পার্শ্ববর্তী বনাঞ্চলের কাঠ। বিপুল কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে বন বিভাগের আওতাধীন বনায়ন বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়ার পাশাপাশি ব্যাক্তি মালিকানাধীন জনপদে ফলফলাদির গাছও সাবাড় হচ্ছে। এ কাজে পুলিশ ও বন-কর্মীদের ম্যানেজ করাও অভিযোগ রয়েছে।

kat- pic-1.psd

এসব তামাক তন্দুলের আগুনের তাপে তামাক শুকানোর সময় ধোঁয়া বাতাসের সাথে নিকোটিন মিশে এলাকায় পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটছে।
তামাক চাষ ক্ষতিকর তারপরও লোকজন কেন চাষ করেন এমন প্রশ্নের উত্তরে চাষীরা জানান, বিভিন্ন কোম্পানীর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় চাষীদেরকে প্রয়োজনীয় সার, বীজ, কীটনাশক, জমি অনুপাতে আগাম ঋনের সুবিধা থাকায় চাষীরা আগ্রহী হয়। এদিকে তামাক কোম্পানী সূত্রমতে, পার্বত্য জেলাগুলোর আবহাওয়া ও মাটি তামাক চাষের জন্য বেশ উপযোগী। অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে চাষ বেশি গুনে ও মানে উন্নত। এছাড়া প্রশাসন ও পরিবেশবাদী সংগঠনের তেমন তৎপরতা নেই যার কারনে দেশি বিদেশি তামাক কোম্পানীগুলো পার্বত্যাঞ্চলে ভীড় করে বলে সংশি¬ষ্ট একটি সূত্র দাবী করেছেন।
জনবসতিপূর্ণ গ্রামে তামাক পুড়ানোর বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কক্সবাজারের রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: মাসুদ হোসেন জানান, তামাক উৎপাদন কিংবা পুড়ানো রাষ্ট্রীয় বিষয় এখানে বাধাঁ দেওয়ার মত আমার কোন ক্ষমতা নেই। তবে সরকারী জমিতে কেউ চাষ কিংবা তামাক পুড়ালে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। তবে বন বিভাগ চাইলে বিষয়টি যাচাই করে দেখতে পারেন বলে তিনি জানান।
রামু উপজেলার বাকঁখালী বন কর্মকর্তা বলেন- বাকঁখালী রেঞ্জ আওতাধীন এলাকায় সরকারী কোন বনায়ন নেই। তামাক তন্দুলে যেসব জ্বালানী কাঠ পুড়ানো হচ্ছে তা ব্যাক্তিমালিকানাধীন বাগানে। তবে তামাক তন্দুল কিংবা কাঠ পুড়ানোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সরকারী কোন নির্দেশনা নেই বলে দাবী করেন।
অপরদিকে পার্বত্য বান্দরবানের লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, তামাক তন্দুল গুলোতে ফরেষ্টের জ্বালানী কাঠ ব্যবহার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সম্প্রতি লামা ও আলীকদম উপজেলায় অভিযান চালানো হয়েছে এবং নাইক্ষ্যংছড়ি বন বিভাগকেও তামাক তন্দুলে কাঠ পুড়ানো বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
যদিওবা বহুল প্রত্যাশিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের ১২ ধারায় তামাকজাত দ্রব্য উৎপাদন ও ব্যবহার ক্রমাগত নিরুৎসাহিত করার জন্য উদ্বুদ্ধ, এবং তামাকজাত সামগ্রীর শিল্প স্থাপন, তামাক জাতীয় ফসল উৎপাদন ও চাষ নিরুৎসাহিত, করার ক্ষমতা রেখে বিধিমালা পাশ করা হয়েছে।
এছাড়াও এই আইনের ১৫ (১) উপধারার অধীন কোন অপরাধ সংঘটনকারী ব্যক্তি যদি কোম্পানী হয়, তা হলে উক্ত কোম্পানীর মালিক, পরিচালক, ম্যানেজার, সচিব বা অন্য কোন কর্মকর্তা বা এজেন্ট উক্তরূপ অপরাধ সংঘটন করেছে বলে গণ্য হবে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তামাকের নিকোটিন মেশানো বাতাসে শ্বাস-প্রশ্বাসে ক্ষতির সম্মুখীন হন অধূমপায়ীরাও। নিকোটিনের বিষক্রিয়া প্রথমে ফুসফুস ও পরে রক্তের সঙ্গে মিশে শরীরের সর্বত্র ছড়িয়ে যায়। ফলে দেখা দেয় যক্ষ্মা, ব্রংকাইটিস, ক্ষুধামান্দ্য, গ্যাস্টিক, আলসার, হৃদরোগ, মাথাঘোরা এমনকি মৃত্যুদূত ক্যানসার। চোখের দৃষ্টি পর্যন্ত নষ্ট হতে পারে। এ ছাড়া হৃতপিণ্ডে রক্ত সঞ্চালনেও বাধা সৃষ্টি করে থাকে। জনবসতি গ্রামের ভিতর থেকে তামাক কোম্পানির তন্দুল সরিয়ে নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানান পরিবেশবাদী মহল।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।