১ মে, ২০২৫ | ১৮ বৈশাখ, ১৪৩২ | ২ জিলকদ, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  বীর মুক্তিযোদ্ধা এম. আবদুল হাই এর ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী ২৯ এপ্রিল   ●  লুৎফুর রহমান কাজলের মা সাবেক এমপি সালেহা খানমের ইন্তেকাল করেছেন   ●  টেকনাফে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে ডাকাতদলের গোলাগুলি, গুলিবিদ্ধ ১   ●  সিবিআইইউ’তে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন হয়েছে।   ●  গভীর রাতে পাহাড়ের মাটিভর্তি একটি ড্রাম ট্রাক( ডাম্পার) জব্দ করেছে কক্সবাজার বনবিভাগ   ●  অস্ত্র উদ্ধার ও ওয়ারেন্ট তামিলে জেলার শ্রেষ্ঠ হলেন এসআই খোকন কান্তি রুদ্র   ●  উখিয়ায় সাংবাদিক জসিম আজাদের জমি ও বসতবাড়ি দখলের চেষ্টায় হামলা   ●  কৃষকদল নেতা পরিচয়ে জমি দখল গুলি বর্ষণ আটক ১   ●  উখিয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনারের ৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল পরিদর্শন   ●  প্রথম ধাপে এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে রাজি মিয়ানমার

উখিয়ায় পাচারকারীদের বিলাস বহুল বাড়ী-গাড়ি : অসহায় মানুষ নিঃস্ব

Ukhiya Pic-16-05-2015

কক্সবাজারের উখিয়ার উপকূলীয় জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনারপাড়া বাজারের একটি ছোট পানের দোকান করে কোন রকমে সংসার চালাত। আথির্ক দৈন্যতায় ঘরের চালা বেয়ে বর্ষাকালে ঘরে বৃষ্টির পানি পড়ত। এখন আয় কুঁড়ে বা কাঁচা ঘরে থাকতে হয় না ওই মানবপাচারকারীদের। তিন বছরের ব্যবধানে ছেইয়্যা অগাধ টাকার মালিক বনে যায়। প্রায় ১০ লক্ষ টাকা দিয়ে জমি ক্রয় করে তার উপর কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করছে ৪ তলা ভিতের উপর ১ তলা পাকা বাড়ী। ছৈইয়্যার এত টাকার পিছনের রহস্য সমূদ্র পথে মালয়েশিয়া মানবপাচার। আবুল ফয়েজ (৪০) কয়েক বছরে মানব পাচার করে উখিয়া উপকুলের ছেপটখালী থেকে উখিয়া সদরে এসে ২০ লাখ টাকায় জমি কিনে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে সুরম্য বাড়ী করে রাজার হালে জীবন কাটাচ্ছে। একই এলাকার আবুল কালাম ও একই ভাবে উখিয়া সদরের সিকদার বিলে পাকা ভবন করে বসবাস করছে। অথচ উল্লেখিত ব্যক্তিদের ৫ বছর পূর্বেও নুন আনতে পান্তা কুরাত। অথচ বর্তমানে তাদের ভাত কে খায় অবস্থা। এরা সকলে সমূদ্র পথে মানবপাচারকারী গডফাদার।
রোস্তম আলী প্রকাশ রোস্তম মাঝি। মাছ ধরার সামান্য নৌকার মাঝি। অন্যজনের ইঞ্জিন চালিত নৌকায় দিন মজুর মাঝি হিসাবে কষ্ট করে সংসার চালাত। তার ঘর থেকে উখিয়া উপকূল দিয়ে সমূদ্র পথে মালয়েশিয়া মানব পাচারের কথিত এয়ারপোর্ট কয়েক শত গজ দুরে। গত প্রায় দুই বছর ধরে রোস্তম মাঝি আলাদীনের চেরাগের খোঁজ পেয়ে কথিত এয়ারপোর্ট দিয়ে মালয়েশিয়াগামী অভিবাসীদের সংগ্রহ, মজুদ, পরিবহন ও পাচার করা শুরু করে। কথিত এয়ারপোর্ট থেকে রেজু নদী হয়ে প্রায় ১ কি.মি. দুরে বঙ্গোপসাগরের মোহনা। রোস্তম আলী ও তার ছেলে রুবেলের কপাল খুলে যায়। দিবারাত্রি শত শত লোককে ফিশিং বোটে করে গভীর সমূদ্র অপেক্ষামান পাচার কাজে নিয়োজিত বড় বড় ট্রলার ও জাহাজে তুলে দিত। এখন রোস্তম মাঝির সংসারে আর অভাব নেই। খাটতে হয় না অন্যের নৌকায়। কুঁেড় ঘরের চালা বেয়ে বর্ষাকালে নাড়ার ছাউনি দিয়ে বৃষ্টির পানি ও কেচো পড়ে না। বর্তমানে রোস্তমের কুঁড়ের ঘরের ভিটেতে গড়ে উঠেছে পাকা দোতলা সুরম্য আধুনিক ফিটিংস ও বিদেশী মৌজাইক পাথর, টাইলস এর কারুকার্য সমৃদ্ধ ভবন। পানের দোকানী আবু ছৈয়দ প্রকাশ ছৈইয়্যা (৩৮)।
সমূদ্র পথে অভিবাসীমূখীদের জিম্মি করে বাংলাদেশে মুক্তিপনের অংশ নিয়ে গভীর সমূদ্রে অন্য পাচারকারী সিন্ডিকেটের হাতে তুলে দিত তারা। সেখানে পাচারকারী সিন্ডিকেট থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার পাচারকারী সিন্ডিকেটের কাছে অভিবাসীদের তুলে দিত। ঐ দুই দেশের জঙ্গলে এসব পাচার হওয়া অভিবাসীদের জিম্মি করে জনপ্রতি ১ লাখ ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করত। আর যারা মুক্তিপনের টাকা দিতে অক্ষম তাদের অভুক্ত রেখে নির্যাতন চালিয়ে মেরে পেলে গণকবর দিত। এসবের গডফাদার ও টাকার লেনদেন করত উখিয়ার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে পাচারকারীরা। তম্মধ্যে রোস্তম মাঝি, ছৈইয়্যা, আবুল কালাম, ফয়েজ আহমদ, রুবেল, শামশুল আলম সোহাগ, মফিজ, আব্দুল্লাহ আল মামুন, লাল বেলাল, মোজাম্মেল, বেলাল মেম্বার, জুম্মাপাড়ার ছানা উল্লাহ, রেবি আক্তার, জালাল সহ অর্ধশত গডফাদার। পুলিশের প্রণীত তালিকায় অবশ্য কয়েকজনের নাম থাকলে ও অধিকাংশের নাম নেই। তবে এসব গডফাদার দালালদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। বর্তমানে এরা গ্রেপ্তার আতংকে পালিয়ে বেড়ালেও মাসখানেক পূর্বেও উখিয়া থানার অসাধু একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও কতিপয় গোয়েন্দা পরিচয়দানকারীদের হাতে দহরম মহরম সম্পর্ক ছিল বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন। এভাবে গত কয়েক বছর ধরে স্থানীয় সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, রজনৈতিক ও সামাজিক নেতাদের জ্ঞাতসারে বেপরোয়া ভাবে মানবপাচার চলে আসছিল।
অভিযোগ রয়েছে এসবের পিছনে উল্লেখিতদের ইন্দন, সহযোগিতা ছিল এবং অনেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে নিরব ছিল। জালিয়াপালং ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোছাইন চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মানবপাচারের বিরুদ্ধে কথা বলতে বলতে উখিয়া থানা পুলিশ বিভিন্ন সময় আমার বিরুদ্ধে একাধিক জিডি করেছে। মানবপাচারকারীদের সাথে তাদের কি ধরণের সম্পর্ক রয়েছে তা সকলের জানা থাকলেও ভাসুরের নাম মুখে নেওয়া যায় না বলে তিনি জানান। উখিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক তহিদুল আলম তহিদ বলেন, বছরের পর বছর প্রকাশ্যে দিবালোকে সর্ব নিকৃষ্টতম কাজ মানবপাচার চলে থাকলেও আজকে যারা এসবের ব্যাপারে দরদী সাজসে তাদের অনেকে ওই সময় নানা সুবিধা নিয়েছিল। যে কোন মূল্যে সমুদ্র পথে ও অন্য যে কোন উপায়ে মানবপাচার কাজ বন্ধ হওয়া জরুরী বলে তিনি দাবী করেন। উখিয়া আওয়ামীলীগের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, স্থানীয় ভাবে কয়েক বছর ধরে মানবপাচার সংক্রান্ত নানা শালিস বিচার করেও নানা ভাবে লোকজনদের বলা শর্তেও কোন কাজ হয়নি। উখিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগ পর্যায়ের কোন নেতা মানবপাচারের সাথে সংশ্লিষ্ট নেই। যদি প্রমান সাপেক্ষে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থেকে থাকে তাকেও আইনের আওতায় আনার দাবী জানান তিনি। উখিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন মজুমদার বলেন, মানবপাচার প্রতিরোধে ও নির্মূলে পুলিশ জিরো ট্রলারেন্সে কাজ করছে। মানবপাচার সংক্রান্ত ব্যাপারে অভিযুক্ত যে হোক না কেন কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।