১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ | ৩০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ | ২৩ জমাদিউস সানি, ১৪৪৭


শিরোনাম
  ●  কক্সবাজার শত্রুমুক্ত দিবস ১২ ডিসেম্বর   ●  বৌদ্ধ সমিতি কক্সবাজার জেলা কমিটি গঠন সভাপতি অনিল, সম্পাদক সুজন   ●  সভাপতি পদে এগিয়ে ছাতা প্রতিকের প্রার্থী জয়নাল আবেদিন কনট্রাক্টর   ●  প্রকাশিত সংবাদ প্রসঙ্গে উখিয়ার নুরুল হকের প্রতিবাদ ও ব্যাখ্যা   ●  ইয়াবার কথোপকথন ভাইরাল হওয়া ডালিম এখনো অধরা   ●  বৃত্তি পরীক্ষায় বিশেষ গ্রেড পেল খরুলিয়ার রোহান   ●  মরিচ্যা চেকপোস্টে ৪০ হাজার ইয়াবাসহ ভুয়া নৌবাহিনী সদস্য আটক   ●  উখিয়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাক্তার আবুল কাশেমের ইন্তেকাল   ●  উখিয়ায় নিখোঁজের ৪দিনেও সন্ধান মেলেনি শিশু নুরশেদের   ●  উখিয়ায় প্রায় ৫ কোটি টাকার ইয়াবাসহ বাহক আটক, অধরা মাদক সম্রাট ছোটন ও মামুন

৬৫ বছর বয়সে সমাপনী পরীক্ষা

psc-examinee-bashiron-2-sm20161111125200
বয়স ৬৫ বছর। বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে দেহ। তবুও লেখাপড়ার অদম্য বাসনা নিয়ে প্রতিদিনই বিদ্যালয়ে ছুটছেন মেহেরপুরের গাংনীর বাসিরন নেছা। বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে মেঠোপথ পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে যেতে হয় তাকে। তারপরও ক্লান্তিবোধ নেই।

বয়স যে লেখাপড়ার জন্য কোনো বাধা নয়, তারই প্রমাণ করছেন মেহেরপুর গাংনী উপজেলার হোগলবাড়িয়া গ্রামের ৬৫ বছরের বাসিরন নেছা। বয়স বাধ সাধাতে পারেনি তাকে। ছোটকাল থেকেই লেখাপড়ার প্রতি ঝোঁক হয় তার। কিন্তু সংসারের কাজ ফেলে সময় করে উঠতে পারেননি। পরে নাতিদের বিদ্যালয়ে পৌঁছে দিতেন। নাতিদের সঙ্গে মাঝে-মধ্যে পড়ালেখাও শিখতেন।

এক পর্যায়ে যোগাযোগ করেন হোগলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে। তাদের পরামর্শে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হন তিনি। এবার তিনি প্রাথমিক সমাপনী (পিএসসি) পরীক্ষায় অংশ নেবেন। সকাল হলেই বই হাতে প্রতিদিন ছুটে যান বাড়ি থেকে ৭০০ গজ দূরে ১২ বছরের মেয়ে জুলেখার বাড়িতে। সহপাঠীর কাছেই পড়েন তিনি। সেখানে কয়েক ঘণ্টা পড়ালেখা করে ফিরে আসেন বাড়িতে। বাড়ির কাজকর্ম শেষ করে সহপাঠীর সঙ্গেই রওনা দেন বিদ্যালয়ে। সেখানে ক্লাস শেষে বাড়ি ফিরে আসেন।

অনেকেই তাকে দেখে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করলেও তাতে কর্ণপাত করেননি তিনি। আবার অনেকের উৎসাহে অনুপ্রাণিত হন। পিএসসি পাস করলে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে এসএসসি পাস করার ইচ্ছা আছে বাসিরন নেছার।

বাসিরন নেছার ছেলে আকবর আলী ও মহির উদ্দিন জাগো নিউজকে জানান, অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ার কারণে স্কুলে যেতে পারেননি মা। কিন্তু লেখাপড়ার প্রবল ইচ্ছা ছিলো তার। এ বয়সে বিদ্যালয়ে গেলে অনেকেই নানা কথা বলে। নিষেধ করলে তাতে কর্ণপাত করেন না। এক পর্যায়ে এসে আর বাধা দেননি।

পরীক্ষার ফিসহ সব ধরনের সহযোগিতা করেন বসিরন নেসার ছেলেরা। এখন মাকে নিয়ে গর্ববোধ করেন তারা।

বাসিরন নেছার সহপাঠী সিয়াম ও আঁখি জাগো নিউজকে জানায়, বাসিরনের সঙ্গে আনন্দে ক্লাস করে তারা। লেখাপাড়ায় সহযোগিতা করার পাশপাশি একসঙ্গে খেলাধুলায় মত্ত থাকেন।

বাসিরন নেছার প্রতিবেশী কাকলি ও ববিতা খাতুন জাগো নিউজকে জানান, শুধু লেখাপড়ায় নয়। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের খোঁজ-খবর নেন বাসিরন নেছা। এ কারেণ অনেক ঝরে পড়া শিক্ষার্থী বিদালয়মুখী হয়েছে।

মেহেরপুর গাংনী উপজেলার হোগলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হেলাল উদ্দীন জাগো নিউজকে জানান, নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে পড়ালেখায়ই গভীর রয়েছে মনোযোগ তার। বিদ্যালয়টি সব সমই প্রাণবন্ত করে রাখেন বাসিরন।

অদম্য ইচ্ছাশক্তির অধিকারী এ নারী বাসিরন নেছা জাগো নিউজকে জানান, ছোট বেলা থেকে ইচ্ছা ছিলো পড়ালেখার। কিন্তু অভাব-অনটন আর ছোটবেলায় বিয়ে হয়ে যাওয়ার কারণে সংসারের হাল ধরতে হয়। ফলে পড়ালেখার সুযোগ হয়নি। কিন্তু তখন থেকেই ঠিক করেছিলেন সুযোগ পেলেই লেখাপড়া করবো।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।