গত বছর বাংলাদেশ-চীন-ইন্ডিয়া-মিয়ানমার ফোরাম ফর রিজওনাল শীর্ষক এই আঞ্চলিক সংগঠনের অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ১০০ টাকার স্ট্যাম্পে এ চুক্তি সই হয়। স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরিত এ চুক্তিটি সম্পর্কে অনেকে মন্তব্য করেছেন, মনে হচ্ছে এটি একটি সম্পত্তি বেচা কেনার দলিল।

সমঝোতা স্মারকে বলা হয়েছে- ‘জরুরি ভিত্তিতে চাইনিজ সরকারের অর্থায়নে বিসিআইএম অর্থনৈতিক করিডোর নির্মাণের জন্য এ সমঝোতা স্মারক বাস্তবায়িত হবে।’

দু’পক্ষ একমত যে চাইনিজ কোম্পানি বিসিআইএম অর্থনৈতিক করিডোরের বাংলাদেশ অংশের প্রকল্প অঞ্চল পরিদর্শনের জন্য টিম পাঠাতে পারবে। এর সম্ভাব্যতা ও বাণিজ্যিক বাস্তবতা স্টাডি করবে। একই সঙ্গে এ করিডোর নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়ন কোথা থেকে করা যায় সেটি খতিয়ে দেখবে।

‘মনে হচ্ছে তারা যেনও কোনও সম্পত্তি ক্রয় করছে। যে কোনও চুক্তি বা সমঝোতা স্বারক, যেখানে সরকার একটি পক্ষ, সেটি সাদা কাগজে সই  হয়।’

এক্ষেত্রে সড়ক ও জনপদ বিভাগ চাইনিজ প্রতিষ্ঠানকে সব ধরনের সহায়তা দেবে বলে সমঝোতা স্মারকে আরও উল্লেখ করা হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, বিসিআইএম এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রাই শুরু করেনি। বরং এটি তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।’

তিনি জানান, বিসিআইএম এর প্রথম যৌথ স্টাডি গ্রুপের সভা কুনমিং এ অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় বৈঠক হয় কক্সবাজারে এবং তৃতীয় বৈঠক এবছরের দ্বিতীয়ার্ধে ভারতে হবে।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘তৃতীয় বৈঠকের পর যৌথ গ্রুপ বিসিআইএম প্রতিষ্ঠার অনুমোদনের জন্য নিজ নিজ সরকারকে রিপোর্ট দেবে।’

তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘কোনও আন্তর্জাতিক সংগঠন আনুষ্ঠানিকভাবে গঠনের আগে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান কীভাবে একটি চাইনিজ কোম্পানির সঙ্গে এ বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করে?’

১০০ টাকার স্ট্যাম্পের ওপর সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে তারা যেনও কোনও সম্পত্তি ক্রয় করছে। যে কোনও চুক্তি বা সমঝোতা স্বারক, যেখানে সরকার একটি পক্ষ, সেটি সাদা কাগজে সই  হয়।’

এধরনের উদ্যোগ অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে সন্দেহ তৈরি করতে পারে বলে মনে করেন আরেকজন সরকারি কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘যে সংগঠনে চীন ও ভারত দু’দেশই সদস্য সেখানে যে কোনও উদ্যোগ খুব সাবধানে নেওয়া উচিত।’

‘এটি কোনও পক্ষের জন্য বাধ্যতামূলক চুক্তি নয়। যদি চাইনিজ কোম্পানি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য অর্থ যোগাড় করতে পারে তবে এটি বাস্তবায়িত হবে।’

অর্থনৈতিক উপাদান ভারতকে বিসিআইএম-এ যোগদানের জন্য উৎসাহিত করছে আবার নিরাপত্তার বিষয়টি তাকে পেছনে টেনে ধরছে। এমন পরিস্থিতিতে চাইনিজ কোনও উদ্যোগের কারণে ভারত উদ্বিগ্ন হয়- এমন কিছু করা ঠিক হবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সড়ক ও জনপদ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী বিপুল চন্দ্র সাহা, যিনি এ সমঝোতা স্মারক সাক্ষর করেছেন। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনও উদ্যোগ নাই। ‘এটি কোনও পক্ষের জন্য বাধ্যতামূলক চুক্তি নয়। যদি চাইনিজ কোম্পানি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য অর্থ যোগাড় করতে পারে তবে এটি বাস্তবায়িত হবে।’

১৯৯৯ সালে ট্রাক টু কূটনীতির মাধ্যমে এই ধারণার আলোচনা শুরু হয়। ২০১৩ সালে এ উদ্যোগ সম্পর্কে চীন এবং ভারতের দুই প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর সরকারি পর্যায়ে এর আলোচনা শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় গত বছর ডিসেম্বরে কুনমিং-এ প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।  কুনমিং বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় প্রতিটি দেশ তাদের নিজস্ব জাতীয় পরিকল্পনা প্রস্তুত করে দ্বিতীয় বৈঠকে আলোচনা করবে।

দ্বিতীয় বৈঠকে কক্সবাজারে চীন থেকে ৩৯ জন প্রতিনিধি, ভারত থেকে আট জন, মিয়ানমার থেকে পাচঁজন এবং বাংলাদেশ থেকে ১৭জন অংশ গ্রহণ করেছেন।

আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নতির জন্য বিসিআইএম-এর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় যার মাধ্যমে কুনমিং এর সঙ্গে কলকাতার সংযোগ স্থাপিত হবে মিয়ানমার এবং বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে।

কলকাতায় অনুষ্ঠিত তৃতীয় বৈঠকে চারটি পরিকল্পনার সব বিষয়গুলো বিবেচনা করে একটি সামগ্রিক পরিকল্পনা তৈরি করা হবে।