২০ জুন, ২০২৫ | ৬ আষাঢ়, ১৪৩২ | ২৩ জিলহজ, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  কক্সবাজারে ঝটিকা মিছিলে ঘুম ভাঙলো পুলিশের, গ্রেফতার ৫৫   ●  হাসিঘর ফাউন্ডেশন উখিয়া শাখার নবগঠিত কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠান সম্পন্ন   ●  উৎসবমুখর পরিবেশে সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজার’র নির্বাচন সম্পন্ন   ●  যুক্তরাষ্ট্রের জুরি বোর্ডের সদস্য হলেন চৌধুরী কন্যা স্বর্ণা   ●  ভিজিএফ চালের অনিয়ম’ নিয়ে সংবাদ – চার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা   ●  শিক্ষার ফেরিওয়ালা মরহুম জালাল আহমদ চৌধুরীর ১৭ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ   ●  বিয়ের তিন মাসেই সড়কে প্রাণ গেল হলদিয়ার জুনাইদের   ●  চুনোপুঁটি ধরলেও অধরা রাঘববোয়ালরা   ●  তরুণ সমাজসেবক ও রাজনীতিবিদ সোহরাব হোসেন ডলার: এক প্রতিশ্রুতিশীল পথচলা   ●  উখিয়ার প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী ফরিদ আহম্মদ চৌধুরীর ৬ষ্ট মৃত্যুবার্ষিকী আজ

শীর্ষ মানবপাচারকারি শামশু চট্রগ্রাম কারাগারে

thumbs

কক্সবাজারের শীর্ষ মানবপাচারকারি চট্রগ্রামে আটককৃত শামসুল আলম সোহাগকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। রোববার ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে কোতয়ালি থানা পুলিশ চট্রগ্রাম আদালতে হাজির করলে আদালত আজ সোমবার শুনানী দিন ধায্য করে কারাগারে প্রেরণ করেন। কোতয়ালি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন তাকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
প্রসঙ্গত: কক্সবাজারের শীর্ষ মানবপাচারকারি রেবি ম্যাডামের সেকেন্ড ইন কমান্ড যুবদল ক্যাডার শামসুল আলম সোহাগকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার ভোর রাত ৪ টার দিকে পুলিশের একটি টিম চট্রগ্রামের নিউ মার্কেট এলাকার হোটেল নিজাম থেকে তাকে আটক করে বলে পুলিশের দায়িত্বশীল সুত্রে জানা গেছে। বর্তমানে সোহাগ পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। আটক শামসুল আলম সোহাগ উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনাইছড়ি গ্রামের ইসলাম মিয়ার ছেলে।
আটককৃত সোহাগ কক্সবাজার-থাইল্যান্ড ভিত্তিক মালয়েশিয়ায় মানবপাচারের অন্যতম গডফাদার বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া কক্সবাজার, উখিয়া ও টেকনাফে অন্তত ৭০জন গডফাদার রয়েছে।
এর মধ্যে টেকনাফের মানবপাচারকারি ‘ধলু হোছন নামে এক গডফাদার পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। ওই তালিকার অন্যতম গডফাদার শামসুল আলম। ধলু নিহত হওয়ার পর থেকে গা ঢাকা দেয় শামসুল আলম সোহাগ।
সোহাগ মানবপাচার ছাড়াও ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত ছিল বলে স্থানীয় সুত্রে প্রকাশ।
ইতিমধ্যে জেলার বিভিন্ন থানায় দায়েরকৃত মানবপাচার মামলায় সোহাগ আসামি হলেও টাকার জোরে একাধিক মামলার চার্জসীট থেকে সে পার পেয়ে যায়।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক বছর পূর্বে ধৃত গডফাদার শামসুল আলমের পিতা ইসলাম মিয়া বিভিন্ন জনের বাড়ি-ঘরে দিনমুজুরের কাজ করে সংসার চালিয়েছেন। শামসুল আলম মালয়েশিয়াগামী ট্রলার থেকে চাঁদা আদায়সহ বিভিন্নভাবে আয় রোজগার করতো। ২০১০-১১সালে তার বাড়ির পার্শ্বে ঘাট দিয়ে অহরহ লোকজন ট্রলারে করে মালয়েশিয়া যাচ্ছে দেখে এ কাজে তারও লোভ পড়ে। উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের ছেপটখালী গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান সিকদারের ছেলে আরেক শীর্ষ গডফাদার ফয়েজ আহমদ ও শরীফ আহমদের ছেলে আবুল কালাম হাত ধরে এ কাছে সফলতা পেতে বেশী দিন দেরী হয়নি তার। কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা কামায় করতে থাকে দিনের পর দিন। অল্প দিনেই কোটিপতির খাতায় নাম উঠায় এ গডফাদার। ওই অবৈধ কাজে লাভজনক অবস্থা দেখে কয়েক মাসের ভিতর মালয়েশিয়াগামী যাত্রীদের নিজস্ব নৌযানে পৌছে দিতে নির্মাণ করে নেয় দুইটি ট্রলার। তার ছত্রছায়ায় গড়ে উঠে দেশের আলোচিত মানবপাচারের রাণী রেবি ম্যাডাম ও স্বামী নুরুল কবির। এছাড়াও অর্ধশতাধিক মালয়েশিয়ায় মানবপাচারের দালাল তার নিয়ন্ত্রণে কাজ করে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায়।
সম্প্রতি কুতুবদিয়া চ্যানেলে মালয়েশিয়াগামী যাত্রী বোঝাই ট্রলার ডুবে যাওয়ার ঘটনায় উদ্ধার হওয়া ট্রলারটি ওই শামসুল আলমের। এ ঘটনায় পরদিন সাগর থেকে ৯জনের লাশ উদ্ধার করেছিল কুতুবদিয়া ও মহেশখালী থানা পুলিশ। তবে কৌশলে শীর্ষ গডফাদার শামসুল ওই মামলার আসামীর তালিকা থেকে বাদ পড়েন।
উখিয়া থানা সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বর্তমানে কুতুবদিয়া থানার (ওসি) অংসা থোয়াই এর সঙ্গে সখ্য থাকায় মামলা থেকে শামসুল আলম সোহাগ তার নাম বাদ দেয়ার সুযোগ করে নিয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। মানবপাচারে জড়িত ২৪ পুলিশ কর্মকর্তার তালিকায় অংসা থোয়াই’র নাম রয়েছে।
কিছু দিন আগে সেন্টমার্টিন সাগর থেকে ভাসমান ১১৬জন অভিবাসিকে উদ্ধারের ঘটনায় যাত্রীরা তার নাম স্পষ্ট বললেও মামলায় তার নাম না দেখে স্থানীয়দের মনে নানা প্রশ্ন দেখা নেয়। এসব কিছুর পরও কোন আইনের প্রতি তোয়াক্কা না করে মানবপাচারের প্রায় অর্ধ কোটি টাকায় মাস খানেকের মধ্যে সোনারপাড়া ঘাটে নির্মাণ করেছে বিশাল ট্রলার। ওই ট্রলারটি এখনও সোনারপাড়া ঘাটে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়দের অনেকে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ইয়াবা ও মানবপাচার করে সেই দিনমুজুরের পুত্র শামসুলের ভাগ্য বদলে যায়। কক্সবাজারের বাহারছড়া এলাকায় বাসা ভাড়ায় স্ত্রী-পুত্রদের নিয়ে বসবাস শুরু করে। গত মে মাসের শুরু থেকে প্রশাসন মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে চিরুণি অভিযান শুরু করলে আত্ম গোপনে চলে যান শামসু।
পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, শামশুল আলম সোহাগের বিরুদ্ধে উখিয়ায় থানায় ৪টি, রামু থানায় ২টি, টেকনাফ থানায় ২টি ও চকরিয়া থানায় ১টি মামলা থাকলেও বেশিরভাগ মামলার চার্জসীট থেকে তার নাম বাদ পড়েছে অদৃশ্য কারনে। তার নিজ গ্রাম উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক হলেও তার ডানে-বায়ে কাজ করতো স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারা। মুলত: তাদের পিঠে ভর করেই এ গডফাদার আজ বিত্তবৈত্তের মালিক।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।