১০ মে, ২০২৪ | ২৭ বৈশাখ, ১৪৩১ | ১ জিলকদ, ১৪৪৫


শিরোনাম
  ●  রামুর বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে পুলিশের সহযোগিতায়  আসছে চোরাই গরু   ●  রামুতে ওসির আশকারায় এসআই আল আমিনের নেতৃত্বে ‘সিভিল টিম’   ●  ড. সজীবের সমর্থনে বারবাকিয়ায় পথসভা   ●  কক্সবাজারে শ্রেষ্ঠ ট্রাফিক সার্জেন্ট রোবায়েত    ●  উখিয়ায় রোহিঙ্গা যুবককে গলা কেটে হত্যা   ●  বাহারছরা পুলিশের অভিযানে হত্যা চেষ্টা মামলার তিন আসামি গ্রেফতার   ●  নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে কচ্ছপিয়ার নোমান চেয়ারম্যানের হুমকি   ●  কক্সবাজার জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সিরাজুল হক ডালিম’র ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী আজ   ●  নিরাপদ নুরুল আবছারকেই পছন্দ ভোটারদের   ●  আদালতে তিন মামলারই জবানবন্দি দিলেন অস্ত্র সহ গ্রেফতার সিরাজ

মাতামুহুরী নদীর ভাঙনে ছোট হচ্ছে লামা পৌর শহর


মাতামুহুরী নদীর অব্যাহত ভাঙনে ছোট হয়ে আসছে বান্দরবানের লামা পৌরসভা এলাকা। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া খালের ভাঙনেও লামা সদর, রুপসীপাড়া ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বিভিন্নস্থানের বিস্তীর্ণ এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

গত কয়েক বছরে পৌরসভা ও উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি, কবরস্থান, শশ্মান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ শতশত একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বর্তমানেও পৌর এলাকার শত কোটি টাকার স্থাপনা ও ফসলি জমি নদী ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।

২০০২ সালে ক্ষতিগ্রস্থ জনসাধারণ ও লামা পৌরসভার পক্ষে এক আবেদনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড মাতামুহুরী নদীর ভাঙন রোধ, বন্যার কবল থেকে লামা শহর রক্ষার জন্য একাধিকবার প্রকল্প গ্রহণ করে প্রাক্কলন তৈরি করে। সংশ্লিষ্টদের সাথে লবিং না থাকায় এর কোনোটি আজও বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে প্রতি বছর নদীভাঙনে ক্ষতির পরিমাণ বেড়েই চলেছে।

এ নদী ভাঙন প্রতিরোধ করা না গেলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে শুধু পুরো পৌরসভা এলাকা নয়, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মানচিত্র পাল্টে যেতে পারে বলে অভিজ্ঞমহল আশংকা করছেন। তাই নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষায় নদী সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন লামা উপজেলাবাসী।

জানা যায়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ভৌগলিক অবস্থান ও জনসংখ্যার গুরুত্ব বিবেচনায় বান্দরবান জেলা সদরের পরই লামা উপজেলাটির অবস্থান। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে খরস্রোতা মাতামুহুরী নদী ও খালের করাল গ্রাসে দুই কূল ভেঙে অধিবাসীদের সর্বশান্ত করে দেয়। নদীর ভাঙনের পাশপাশি পাহাড়ি ঢলে নিমজ্জিত হয় লামা শহরসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় কোটি টাকারও বেশি।

গত কয়েক বছরে অসংখ্য ঘরবাড়ি, সরকারি বেসরকারি স্থাপনা, রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, ক্যায়াং নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বহু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নদী ভাঙনের কবলে রয়েছে। এর মধ্যে সদ্যনির্মিত কোটি টাকা ব্যয়ে অংহ্লাপাড়া ও চাম্পাতলীস্থ ব্রিজও রয়েছে।

এছাড়া, লামা পৌর শহরের বাজারপাড়া, উপজাতিদের শশ্মান, শীলেরতুয়া মারমাপাড়া, লাইনঝিরি ফকিরপাড়া, হাজী পাড়া, কুড়ালিয়ারটেক, স’মিল পাড়া, নয়াপাড়া, লামামুখ, রুপসীপাড়া ইউনিয়নের অংহ্লাপাড়া, উত্তর দরদরী নয়াপাড়া, মাস্টার পাড়া, লামা সদর ইউনিয়নের মেরাখোলা, মিশনঘাট, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ইয়াংছা বাজার, বগাইছড়ি, বনপুর বাজার এলাকার অংশসহ বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা ইতিমধ্যে গ্রাস করে নিয়েছে প্রমত্তা মাতামুহুরী।

এসব এলাকায় আরো শত শত পরিবার নদী ভাঙন আতংকে দিন যাপন করছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে এসব ঘরবাড়ি-প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন যাবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। নদী ভাঙনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে লামা বাজার পাড়া, শীলেরতুয়া মারমাপাড়া, ফকির পাড়া, হাজী পাড়া, মেরাখোলা, বৈল্লারচর এলাকা। ইতিমধ্যে এসব গ্রামের অধিকাংশই বিলীন হয়ে গেছে।

লামা পৌরসভার শীলেরতুয়া মারমা পাড়ার বাসিন্দা মংপ্রু মারমা বলেন, পাড়ায় প্রায় ১০০টির মতো পরিবার ছিল। গত কয়েক বছরের অব্যাহত মাতামুহুরী নদীর ভাঙনে ১০টিরও বেশি ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে বাকি পরিবারসহ একটি বৌদ্ধ মন্দির বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে, লামা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন জানান, গত কয়েক বছরে মেরাখোলার একটি পাড়া সম্পূর্ণ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানেও অনেক ঘরবাড়ি ভাঙনের মুখে রয়েছে।

লামা বাজার স’মিল পাড়ার বাসিন্দা আলী আকবর, মোহাম্মদ শাহীন, গৃহবধূ হোসনে আরা জানান, এক সময় ঘর থেকে নদী ছিল অনেক দূরে। প্রতি বছর অব্যাহত ভাঙনে এখন বসতঘরের কাছাকাছি। মনে হচ্ছে, আগামী দু’এক বছরের মধ্যেই ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। তাই জরুরি ভিত্তিতে নদী ভাঙন রোধের ব্যবস্থা নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

সূত্রমতে, ১৯৯৩ সালে নদীর ভাঙন রোধে এলাকাবাসীর পক্ষে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগ থেকে সচিব পানি উন্নয়ন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দে্র। পানি উন্নয়ন বোর্ড ওই সময় একটি প্রকল্প গ্রহণ করে প্রাক্কলনও তৈরি করেছিল। কিন্তু দুই যুগ পেরিয়ে গেলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।

এছাড়া, ১৯৯৭ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বান্দরবান সফরে আসলে মাতামুহুরী নদীর ভাঙন রোধে ছয় কোটি টাকা বরাদ্দ ঘোষণা করেন। সেই টাকার বরাদ্দ কোথায় গেল তাও জানা যায়নি।

এলাকাবাসী জানায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড দেশের বিভিন্ন জেলায় নদী শাসন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে থাকে। অথচ বান্দরবান জেলাসহ জনবহুল লামা উপজেলার লাখ মানুষ সরকারের এ সেবা থেকে বঞ্চিত।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০২ সালের ১৯ নভেম্বর- লামা পৌরসভার স্বারক নং- লামা/পৌর/২০০২/৩৭০ মূলে বিস্তারিত উল্লেখ করে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরাবর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে লামা পৌর শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রীর নিকট একটি আবেদন জানানো হয়েছিল। সে সময় জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারের মন্ত্রী তার পত্র নং- পবম/প্রতিমন্ত্রী/ডি.ও(৪)২০০২/২৭৭ তারিখ ২১ নভেম্বর ২০০২ ইং মূলে লামা পৌরসভায় বাঁধ নির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ দিতে পানি সম্পদ মন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। এসবের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড লামা শহরকে নদী ভাঙন ও বন্যার কবল থেকে রক্ষার জন্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের প্রাক্কলন তৈরি করেছিলেন। কিন্তু স্থানীয়রা সেই প্রকল্পটির বাস্তব রূপ দেখেনি।

পাথরে ভরপুর লামা উপজেলা। এ উপজেলার পাথর দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে নদী ভাঙন ঠেকানোর কাজে ব্যবহার করা হয়। তাই উপজেলায় ভাঙন ঠেকাতে নদীর দু্ই পাশে পাথর ঢালাই দিলে নদী ভাঙন রোধ সম্ভব হবে বলে স্থানীয় অভিজ্ঞ মহল জানিয়েছেন।

মাতামুহুরী নদীর তীব্র ভাঙনের সত্যতা স্বীকার করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বান্দরবান উপ-প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, মাতামুহুরী নদী ভাঙনের বিষয়টি সরেজমিন তদন্তপূর্বক উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।