৮ মে, ২০২৪ | ২৫ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৮ শাওয়াল, ১৪৪৫


শিরোনাম
  ●  কক্সবাজারে শ্রেষ্ঠ ট্রাফিক সার্জেন্ট রোবায়েত    ●  উখিয়ায় রোহিঙ্গা যুবককে গলা কেটে হত্যা   ●  বাহারছরা পুলিশের অভিযানে হত্যা চেষ্টা মামলার তিন আসামি গ্রেফতার   ●  নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে কচ্ছপিয়ার নোমান চেয়ারম্যানের হুমকি   ●  কক্সবাজার জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সিরাজুল হক ডালিম’র ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী আজ   ●  নিরাপদ নুরুল আবছারকেই পছন্দ ভোটারদের   ●  আদালতে তিন মামলারই জবানবন্দি দিলেন অস্ত্র সহ গ্রেফতার সিরাজ   ●  টেকনাফে অপহরণ চক্রের সদস্য অস্ত্রসহ গ্রেফতার   ●  উপজেলা চেয়ারম্যান শফিউল্লাহর প্রার্থীতা বাতিলে হাইকোর্টে রিট   ●  প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর ৩০ বছরের পথচলা ও সাফল্য উদযাপন

নিউএইজের বিশেষ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন : সালাহ উদ্দিনকে র‍্যাবেই তুলে নিয়ে যায়  

bnp news_79199

বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদকে গত ১০ মার্চ উত্তরার একটি ফ্ল্যাট থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রায় ৪৮ ঘন্টা আগে গুলশানে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় এবং একই এলাকার একটি বাসায় র্যাবের অভিযানের তথ্য পাওয়া গেছে। অভিযান সংক্রান্ত প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্য বলছে, বিএনপির এই মুখপাত্রের নিখোঁজে আইনশৃংখলা বাহিনী জড়িত। নিউ এইজের কাছে এসব তথ্য রয়েছে।

নিউ এইজের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের একজন ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টরের উত্তরার ওই বাড়ি থেকে ১০ মার্চ সালাহ উদ্দিনকে উঠিয়ে নেয়া এবং ৮ মার্চ ভোর রাতে গুলশানে ব্যাংক সংশ্লিষ্ট দুটি স্থানে অভিযানের মধ্যে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়টি যে ভবনে সেটির মালিক সালাহ উদ্দিন আহমেদ। র্যাব জানতে পারে যে, সালাহ উদ্দিন ওই ভবনের ৭ম তলায় ব্যাংকের বোর্ডরুমে অবস্থান করছেন (অবশ্য তথ্যটি পরে ভুল বলে প্রমাণিত হয়)।
এই তথ্যের ভিত্তিতে ৮ মার্চ রোববার ভোর রাত ২টা ৩০ মিনিটের দিকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালায় আইনশংখলা বাহিনীর সদস্যরা। তাতে অংশ নেন মোট দশ ব্যক্তি। এদের মধ্যে কয়েকজনের গায়ে র্যাবের কালো পোশাক এবং মাথায় কালো কাপড় প্যাচানো ছিল। বাকিরা ছিলেন সাদাপোশাকে।
এদিকে ব্যাংক কার্যালয়ে সালাহ উদ্দিনকে না পেয়ে কিছুক্ষণ পরে গুলশানের ১৩৬ নং রোডের একটি বাড়ি অভিযান চালায় তারা। বাড়িটির মালিক শহীদুল ইসলাম হচ্ছেন ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের একজন পরিচালক এবং একই ব্যাংকের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের ভাই। তাদের গ্রামের বাড়ি এবং সালাহ উদ্দিনের গ্রামের বাড়ি একই এলাকায় (চট্টগ্রাম) হওয়াতে পরস্পরের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে। গুলশানে শহীদুল ইসলামের বাড়িতে সালাহ উদ্দিন অভিযানের মুহুর্তে না থাকলেও ৫ জানুয়ারির পর থেকে অবস্থান করছিলেন। অভিযানের কয়েকদিন আগে তিনি সেখান থেকে উত্তরার সেই বাড়িটিতে আশ্রয় নেন। গুলশানেরই ওই বাড়িতে থেকে বিএনপি নেতাকে আশ্রয় দেয়ার অভিযোগে র্যাব সদস্যরা আব্দুর রহীম নামে ৭০ বছর বয়সী একজন বাবুর্চীকে আটক করে, যিনি এখন জেলে আছেন। আটকের পর থেকে দুইবার তার জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে গেছে।
সালাহ উদ্দিনের এসব জায়গায় অবস্থানের তথ্য আইনশৃংখলা বাহিনী মূলত জেনেছে তারই তিনজন কর্মচারির কাছ থেকে। দুইজন ড্রাইভার এবং একজন হচ্ছেন সালাহ উদ্দিনের ব্যক্তিগত সহকারী, যিনি আবার ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত সালাহ উদ্দিনের মালিকানাধীন ভবনের তত্ত্বাবধায়কও। এদের সবাইকে ৮ মার্চ সকালে অভিযানের আগে তাদের বাড়ি থেকে আটক করা হয়। বর্তমানে জেলে অবস্থান করা এই তিনজন সালাহ উদ্দিন এবং তার স্ত্রীর অবস্থান সম্পর্কে জানতেন।
বিএনপির নেতারা মনে করেন, ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান, তার ভাই পরিচালক এবং ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে সালাহ উদ্দিনের অবস্থান সম্পর্কে তথ্য দিতে বাধ্য করেছে র্যাব। ১০ মার্চ নিখোঁজ হওয়ার ছয় সপ্তাহ আগে এই নেতা বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। নিখোঁজের পর উত্তরার ওই বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ ‘ডিবি’র লোকজন সালাহ উদ্দিনকে পিছমোড়া করে বেধে বাড়ির দ্বিতীয় তলা থেকে উঠিয়ে একটি গাড়িতে করে নিয়ে গেছে। স্থানীয় অন্যান্য বাড়ির দারোয়ান এবং নিরাপত্তারক্ষীরাও বলেছেন, ওই বাড়ির সামনে ১০ মার্চ গভীর রাতে র্যাবের কয়েকটি গাড়ি অবস্থান করছিল।
তবে র্যাব এবং ডিবি এ ধরনের দাবি অস্বীকার করে আসছে। র্যাবের কমান্ডিং অফিসার লেফটেনেন্ট কর্নেল তুহিন মাহমুদ মাসুদ নিউ এইজকে বলেন, তিনি গুলশানে ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে তার বাহিনী কোনো অভিযান চালিয়েছিল কিনা তা তিনি স্বরণ করতে পারছে না। বাহিনীটির মিডিয়া উইংয়ের কমান্ডার মুফতি মাসুদ খানও এ ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘৮ মার্চের ঘটনা তো অনেক আগের। তাই কী ঘটেছিল বলতে পারছি না। আপনি বরং ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞেস করুন।’
এর আগে র্যাব কর্মকর্তারা নিউ এইজের কাছে এটা স্বীকার করেছিলেন যে, তারা ১০ মার্চের আগে সালাহ উদ্দিন আহমেদকে খুঁজছিলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রত্যক্ষদর্শী এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের কর্মচারি বলেন, রাত আড়াইটার দিকে আসা আইনশৃংখলা বাহিনীর ১০ জনের মধ্যে কয়েকজন র্যাবের পোশাকে এবং বাকিরা সাদা পোশাকে ছিল। তাদের মধ্যে কালো পোশাকে একজন নারীও ছিলেন। সাধা পোশাকধারী একজনকে টিমটির নেতা মনে হয়েছে।’
ব্যাংকের বোর্ডরুম খোলার জন্য একজন কর্মকর্তাতে আনা হয়, কিন্তু কাউকে সেখানে পাওয়া যায়নি। অন্য এক কর্মচারি বলেন, আমি শুনেছি তারা কক্ষটি সার্চ করেছেন কিন্তু কাউকে পাননি। শুধু একজন ডিরেক্টরের চেয়ারে একটি জ্যাকেট ঝুলানো ছিল।’
সকাল ৭টায় র্যাব কর্মকর্তারা ব্যাংক ত্যাগ করেন। তবে কয়েক ঘন্টা পর একজন কর্মকর্তা এসে ব্যাংকের ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডার এবং সিসিটিভির সাথে সংযুক্ত সিপিউটি নিয়ে যান। কয়েকদিন পরে সেগুলে ফিরিয়ে দেয়া হলেও এটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি যে, ব্যাংক ভবনে সালাহ উদ্দিনের অবস্থানের তথ্য জানতে নাকি র্যাবের অভিযানের তথ্য রেকর্ড থেকে মুছে ফেলতে সেগুলো নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। ব্যাংকের মার্কেটিং, ডেভেলপমেন্ট এন্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান আজম খানকে জিজ্ঞাসা করা হলে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
এদিকে উত্তরার যে বাড়ি থেকে সালাহ উদ্দিনকে উঠিয়ে নেয়া হয় সেটির মালিক হাবিব হাসনাত ফার্স্ট সিকিউরিটির ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং তার বাড়িও চট্টগ্রামে। তার সাথেও সালাহ উদ্দিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সময়ও সালাহ উদ্দিনকে তিনি উত্তরা পাঁজ নম্বর সেক্টরে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলেন। ১০ মার্চ রাতে নিখোঁজর পর হাসনাতের কাছ থেকেই প্রথম খবর পান সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। হাসনাত পরদিন ১১ মার্চ দেশ ছেড়ে দুবাই চলে যান। ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকে তার বসার কার্যালয়টি এখন বন্ধ রয়েছে। হাসনাত বর্তমানে নিউ ইয়র্কে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।