নিজস্ব প্রতিবেদক:
এত কিছু জানার দরকার নেই, আপনি কত টাকার জন্য ফোন করেছেন সেটা বলেন। পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণ ও প্লট বিক্রিসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত রোহিঙ্গা বংশোদ্ভুত এবাদুল্লাহ নিজেকে সাংবাদিক দাবী করে এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার এত কিছু আপনার জানার দরকার নেই , আপনি কত টাকা জন্য ফোন করেছেন সেটা বলেন।
মো.এবাদুল্লাহ মালেয়শিয়া প্রবাসী রোহিঙ্গা হাশেম উল্লাহ’র বড় ছেলে। প্রাথমিকের গন্ডি না পেরোনো এবাদুল্লাহ নিজেকে পরিচয় দেন সাংবাদিক হিসেবে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে রয়েছে ধর্ষণ মামলা। এছাড়া ইয়াবা ছিনতাইয়ের অভিযোগের পাশপাশি পাহাড় কেটে প্লট বিক্রি ও ভবণ নির্মাণসহ রয়েছে নানা অভিযোগ। তবে এসব বিষয়ে কথা বলতে নারাজ এবাদুল্লাহ।
পুলিশ ও পাহাড়তলী সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১৫ বছর আগে ভাগ্য বদলাতে মিয়ানমারের মুংডুর মেরুংলোয়া থেকে অবৈধভাবে কক্সবাজারে আসেন হাশেম উল্লাহ ও নেছারু দম্পত্তি। তখন মৌলভীপাড়ার ভাড়া বাসায় ওঠে হাশেম। প্রথমদিকে সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু একসময় সাগর পথে মালেয়শিয়ায় পাড়ি জমায় হাশেম । সেই থেকে তিনি মালেয়শিয়াতেই আছেন। তার অবর্তমানে এবাদুল্লাহ পরিবারের হাল ধরেন। সংসার চালাতে গড়ে তোলে নিজস্ব বাহিনী। এলাকায় শুরু করেন ছিনতাই । দখল করতে থাকেন একের পর এক পাহাড় । নিজেদের বাড়ি করেন পাহাড় কেটে। আবার নিজের বাড়ির পাশে প্লট করে বিক্রিও করেছেন।
এবাদুল্লাহ’র এক আত্নীয় নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এবাদুল্লাহ’র দাদার নাম ওছিউল্লাহ। তিনি মিয়ামারের মুংডুর মেরুংলোয়ার থাকতেন। তার মা বাবা দুজনেই রোহিঙ্গা। তারা ৪ ভাইবোন।
এবাদুল্লাহ বিয়ে করেছন বাদশাঘোনার রোহিঙ্গা জাফরের মেয়ে হুমাইরাকে। এছাড়া এবাদুল্লাহ’র বিরুদ্ধে রয়েছে ধর্ষণ মামলা। যেটি ২০১৬ সালের ৯ এপ্রিল কক্সবাজার সদর থানায় লিপিবদ্ধ হয়েছে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এবাদুল্লাহ ও তার মা কৌশলে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছেন। তার ছোট বোন মাশানি;র বিয়ে হয়েছে এক রোহিঙ্গা ছেলের সাথে। প্রাথমিক স্কুলে গন্ডি না পেরানো এবাদুল্লাহ তার ফেসবুকে নিজেকে কক্সবাজার সিটি কলেজের ছাত্র দাবী করেছেন। পাশপাশি তিনি সেতু টিভি ডটকমের সাংবাদিক বলেও উল্লেখ করেছেন সেখানে।
পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এবাদুল্লাহর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা ছাড়া রয়েছে একাধিক ছিনতাইয়ের অভিযোগ। এছাড়া তার মা নেছারুর বিরুদ্ধে মানবপাচারের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া চলতি ২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় এবদুল্লাহ ও তার সহযোগিরা ২ হাজার ইয়াবা ও নগদ ৭৫ হাজার টাকা ছিনতাই করেছে বলে তথ্য রয়েছে।
এদিকে এলাকাবাসী জানায়, রোহিঙ্গা হাশেমের ছেলে পাহাড় কেটে শুধু নিজেদের বসত বাড়ি করেনি। বিক্রিও করেছেন বসত বাড়ির পাশে জনৈক ইব্রাহিমকে। করোনাকালে কলাতলীতে ছোট একটি পানের দোকান দিলেও লকডাওনে সেটি বন্ধ। এখন পাহাড় দখল, সাংবাদিক পরিচয়ে চাদাঁবাজী আর ইয়াবা ছিনতাই করেই চলে তাঁর দিন।
এবিষয়ে পাহাড়তলীর সমাজের এক সর্দার বলেন, এবাদুল্লাহ রোহিঙ্গা বংশোদ্ভুত । কিন্তু এখন তার নিজস্ব বাহিনী রয়েছে। যাদের দিয়ে তিনি ছিনতাই , পাহাড় দখল সহ নানা অপকর্ম করায়। এছাড়া নিজেকে এখন ঐলাকায় বড় সাংবাদিক বলে পরিচয় দেয়। এজন্য কেউ ভয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খুলে না।
কক্সবাজার শহর ফাড়ির পুলিশ পরিদর্শক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, কোন অপরাধীই আইনের হাত থেকে ছাড় পাবে না। তাঁর বিরুদ্ধে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলার উপ পরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা বলেন, পাহাড়ে কোন ধরণের বসতি থাকবে না। ধাপে ধাপে সকলকে উচ্ছেদ করা হবে। এজন্য জেলায় দুটি কমিটি গঠনের করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের তালিকা করা হচ্ছে। এজন্য দুটি কমিটি করা হয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নের কাজ চলছে। খুব দ্রুতই তাদেরকে উচ্ছেদ করা হবে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।