২৫ অক্টোবর, ২০২৫ | ৯ কার্তিক, ১৪৩২ | ২ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭


শিরোনাম
  ●  ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীদের হুমকিতে নিরাপত্তাহীন পরিবার, চার সন্তান স্কুলে যাওয়া বন্ধ   ●  রামুতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা রিজনের নেতৃত্বে এক ব্যক্তির দোকান দখলের অভিযোগ, চাঁদাবাজি মামলায় জিটু কারাগারে   ●  গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়িতে ঢুকে হুমকি অভিযোগ ৪ এনসিপি নেতার বিরুদ্ধে   ●  কক্সবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে স্কিলস অ্যান্ড ইনোভেশন কম্পিটিশন অনুষ্ঠিত   ●  আলোচিত ইমরানের ২০ হাজার ইয়াবা নিয়ে লুটপাট, পরে রফাদফা!   ●  দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ   ●  কক্সবাজারে ভূমি নিবন্ধনে আকাশচুম্বী বর্ধিত উৎসেকর বাতিল, প্রসংশায় পঞ্চমুখ সালাহউদ্দিন আহমদ   ●  হলদিয়ায় ইমরানের ২০ হাজার ইয়াবা নিয়ে উধাও ৩ যুবক   ●  দুর্ধর্ষ প্রতারক দিদারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি   ●  ইয়াবাসহ পুলিশে সোপর্দ, চোর সন্দেহে চালান, এলাকায় ক্ষোভ

একটি ঘটনা, গণহারে আসামী!

ইমাম খাইর, কক্সবাজারঃ উখিয়ার জালিয়াপালং পশ্চিম সোনাইছড়িতে ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় দায়রেকৃত মামলার আসামী ধরাকে কেন্দ্র কেন্দ্র দ্বিতীয় দফার সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলাটিতে ২৮ জনকে এজাহারভুক্ত আসামী করা হয়েছে।

গত ৪ এপ্রিল উখিয়া থানায় মামলাটি করেন উত্তর সোনাইছড়ি এলাকার মৃত এজাহার মিয়ার ছেলে আলী হোছাইন। যার মামলা নং-৩/২০২০।
আসামিরা হলেন -ফরিদ আলম (৫০), নুরুল আলম (৫৫), আব্দুল কুদ্দুস (৫৫), রিয়াজুল ইসলাম (২৪), শামসুল আলম মেম্বার (৫০), মফিজ উদ্দিন (৩৩), শাহীন সরওয়ার (২৫), মোঃ রাসেল (২৫), ছলিম উল্লাহ (৩৫), ইউসুফ জালাল (৩৬), বাদশা মিয়া (৬০), মোবারক হোসেন (২৬), ইমরান হোসেন (২৭), মোশাররফ হোসেন (৩০), মাস্টার সৈয়দ আহমদ (৫২), মাস্টার এসএম সাইফ উদ্দিন (৩১), সুপারী ব্যবসায়ী সুলতান আহমদ (৫৮), আব্দুল আওয়াল সুজন (৩১), আবছার মিয়া (৩৫), দেলোয়ার হোসেন (২৯), ছিদ্দিক আহমদ (৩৮), সাবেক মেম্বার আবুল হোসেন (৪৫), আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাক আহমদ (৪৫), মাহমুদুল হক (৩০), মোঃ ইউনুস (৩৮), মোঃ আলম (৪২), মহিব উল্লাহ (৪০) ও রিদুয়ান হোসেন (৩১)।

এর আগে গত ২৯ মার্চ প্রথম দফায় সংঘর্ষে ৩ জন আহত হয়েছিলেন। তারা হলেন -সোনাইছড়ির ছৈয়দ আলমের ছেলে দেলোয়ার হোসেন (৩৪), মোবারক হোসেন (২৪) ও তারেক হোসেন (১৭)।
ছুরিকাহত দেলোয়ার হোসেন বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

এ ঘটনায় ৩১ মার্চ উখিয়া থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা করেন মোবারক হোসেন। যার মামলা নম্বর -৪৫। এ মামলায় ৩ জনকে আসামী করা হয়। তারা হলো- পশ্চিম সোনাইছড়ি এলাকার বাসিন্দা আলী হোছেন, দুই ছেলে নুরুল আবছার নান্নু ও আহমদ শরীফ।
৩ এপ্রিল বিকাল ৪ টার দিকে আসামী আহমদ শরীফকে গ্রেফতার করে ইনানী পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। যদিওবা পরের দিন তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছে, আহমদ শরীফকে গ্রেফতারের কারণেই মূলতঃ দ্বিতীয় বারের ঘটনাটি ঘটে। যাতে ইন্ধনদাতা হিসেবে কাজ করেছে – শামশুল আলম সোহাগ, সানা উল্লাহ, বার্মাইয়া মো. হোসেনসহ কয়েকজন। তারা সাধারণ মানুষকে জড়ো না করলে দ্বিতীয় দফায় ঘটনাটি ঘতো না। নিরীহ মানুষদের মামলার আসামী হয়ে ঘরছাড়া হতে হতো না।

৩ এপ্রিল পুলিশের সুন্দর ভূমিকা ও অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে যারা ন্যাক্কারজনক ঘটনার জন্ম দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা চায় সাধারণ মানুষ।
তবে, আলী হোছাইন এজাহারে করেছেন, তার ছেলে নুরুল আবছার নান্নু ২৭ মার্চ জুমার নামাজের পূর্বে করোনা ভাইরাস আক্রমণ সংক্রান্ত সর্তকতা হিসেবে কয়েকটি মসজিদে জীবাণুনাশক তরল স্প্রে এবং খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া নিয়ে বিতর্ক হয়।

ঘটনার রেশ ধরে গত ৩ এপ্রিল বিকেল ৪টার দিকে তার ছেলে নুরুল আবছার নান্নু ও আহমদ শরীফকে হত্যার উদ্দেশ্যে সোনাইছড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে আসামীরা একত্রিত হয়। তাদের খোঁজে গালমন্দ করে। এসময় তিনি নিজ বসতভিটার উত্তর দিকে কর্মরত ছিলেন বলে দাবি করেন।
ইত্যবসরে চিহ্নিত দুর্বৃত্তরা তার দুই ছেলের ওপর হামলে পড়ে। স্ত্রী নুর নাহার বেগমসহ দুই সন্তানকে ব্যাপক মারধর করে আসামিরা। ঘটনাস্থল থেকে ছেলে আহমদ শরীফকে উদ্ধার করে পুলিশ। স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। যা তিনি বাগানে লুকিয়ে প্রত্যক্ষ করেছেন এবং আসামিদের ব্যাপক মারধরের কারণে স্ত্রী নুর নাহার বেগমের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছেন মামলার বাদি আলী হোছাইন।
এদিকে ইনানী, সোনাইছড়ি এলাকার অনেকেই জানিয়েছে, নুরুল আবছার নান্নুর মা নুর নাহার বেগম খুব ভদ্র মহিলা। তাকে কেউ হামলা বা আঘাত করে নি। তার স্বাভাবিক মৃত্যুকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা মানে, মরা মানুষ নিয়ে খেলতামাশা করা। এমনটি কোনভাবেই প্রত্যাশিত নয়। ওই দিন কি ঘটেছিল, কারা ঘটনার ইন্ধনদাতা আর মূলতঃ কারা ঘটনায় সম্পৃক্ত তা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হোক।

একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে অসংখ্য শিক্ষিত, সম্মানি ও নিরীহ মানুষকে হয়রানী করা ‘অনুচিত ও অমানবিক’ মন্তব্য করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় বাসিন্দা ও মামলার আসামী মোঃ ইউনুস বলেন, ৩ এপ্রিল আসরের নামাজের পর আহমদ শরীফকে গ্রেফতার করে বাজারে আনে পুলিশ। দেখার পর আমি পুলিশ কর্মকর্তার নিকট জানতে চাইলাম, তাকে কেন গ্রেফতার করা হলো? উত্তর দিলেন- মামলার আসামী হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরবর্তীতে দুইপক্ষের মধ্যে সৃষ্ট ঘটনা, এরপর মামলায় আমাকে জড়ানো হয়েছে দেখে আমি বিস্মিত।
একটি ঘটনার জের ধরে পুরো এলাকা থেকে বেছে বেছে প্রতিপক্ষ ও নিরীহ লোকজনকে আসামী করা হয়েছে। যে কারণে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। করোনা ভাইরাসে আতংকের এই সময়ে মামলার ভয়ে অনেকে ঘরছাড়া। জীবন ঝুঁকি নিয়ে রাত যাপন করছে অন্য জায়গায়।

ভুক্তভোগিরা জানিয়েছে, ঘটনায় সম্পৃক্ত হওয়া তো দূরের কথা, ঘটনার সম্পর্কেও আবগত নয়- এমন অনেককে আসামী করা হয়েছে। এ কারণে এলাকার সম্প্রীতি নষ্ট হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উখিয়া থানার ওসি মর্জিনা আকতার মর্জু বলেন, দুইটি পক্ষের মধ্যে পূর্ব থেকে বিরোধ ছিল। বিরোধের সুত্র ধরে একটি মামলাও হয়েছে। সেই মামলার আসামীকে গ্রেফতার করতে গিয়ে ৩ এপ্রিল কি ঘটেছিল; তাতে পুলিশের ভূমিকা কি ছিল, সব এলাকাবাসী প্রত্যক্ষ করেছে। এজাহার নিয়েছি, সেটা ঠিক। নিরপেক্ষ তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।