২৬ এপ্রিল, ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ, ১৪৩১ | ১৬ শাওয়াল, ১৪৪৫


শিরোনাম
  ●  মেয়র মাহাবুবের অর্থায়নে প্রতিবন্ধীদের মাঝে সহায়ক উপকরণ বিতরণ   ●  টেকনাফে ১০ কৃষক অপহরণ মামলার আসামি গ্রেপ্তার, আদালতে জবানবন্দি    ●  বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া সেনা ও বিজিপির ২৮৮ সদস্য ফিরল মিয়ানমারে   ●  কক্সবাজার পৌরবাসির কাছে মেয়রের শেষবারের মতো ৫ অনুরোধ   ●  কক্সবাজারে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ, শৃংখলা জোরদারের  লক্ষ্যে মোবাইল কোর্ট, জরিমানা   ●  রামুতে নিরাপদ পানি ও উন্নত স্যানিটেশন  সুবিধা পেয়েছে ৫০ হাজার মানুষ     ●  কক্সবাজারে ছাত্রলীগের ৫ লক্ষ গাছ লাগনোর উদ্যোগ   ●  মহেশখালীতে সাংসদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী পরিবেশ বিনষ্টের অভিযোগ    ●  জেএস‌আরের বিরুদ্ধে উঠা সকল অভিযোগ কে অপপ্রচার বলে দাবি সভাপতি জসিমের   ●  ‘দশ হাজার ইয়াবা গায়েব, আটক  সিএনজি জিডিমূলে জব্দ

আলোয় আলোয় ভরে উঠুক বাংলাদেশ

এইমাত্র ফেলে এলাম যে বছরটি, তার চেয়ে খারাপ বছর আমাদের জীবনে খুব কম এসেছে। সারা পৃথিবীর জন্যই ২০২০ সালের মতো প্রাণঘাতী বছর দেখা যায়নি। করোনাভাইরাস নামের এক অদৃশ্য শত্রু মানবসভ্যতার ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে। কত প্রিয়জন হারিয়েছে মানুষ, কত আতঙ্কে কাটিয়েছে দিন! ১৯৭১-এ আমরা পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলাম। ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীন করেছিলাম বাংলাদেশ। আমাদের মাথার ওপরে ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর নির্দেশে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলেছিল বাঙালিরা। মুক্তিযুদ্ধ রূপ নিয়েছিল জনযুদ্ধে। কিছু দেশদ্রোহী, রাজাকার, আলবদর, আলশামস ছাড়া বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ তখন মুক্তিযোদ্ধা। বঙ্গবন্ধুকে মাথার ওপরে রেখে, তাঁর ‘জয় বাংলা’ স্লোগান বুকে ধারণ করে দেশের মুক্তির জন্য যুদ্ধ করেছে বাঙালি। সেই যুদ্ধে আমরা জয়ী হয়েছি। বাঙালি লড়াই করা জাতি। লড়াই করে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠা করেছে। লড়াই করে স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন করেছে। সেই যুদ্ধের ৪৯ বছর পর ২০২০ সালে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মানুষের মতো বাঙালিকেও নামতে হলো আরেক যুদ্ধে। এবারের যুদ্ধ অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে।

পাকিস্তানিরা ছিল দৃশ্যমান শত্রু, করোনা অদৃশ্য শত্রু। যুদ্ধে বহু প্রাণ হারাতে হয়। করোনাযুদ্ধে আমরাও হারিয়েছি যোদ্ধা ডাক্তারদের, পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্যদের, স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের আর বহু সাধারণ মানুষের সঙ্গে আমাদের কিছু প্রিয়জন। সর্বজনশ্রদ্ধেয় আনিসুজ্জামান স্যার চলে গেলেন। চলে গেলেন জামিলুর রেজা চৌধুরী, কামাল লোহানী, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, সি আর দত্ত, অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, আল্লামা শফী। চলে গেলেন বেশ কয়েকজন বড় ব্যবসায়ী। আব্দুল মোনেম, লতিফুর রহমান, এম এ হাসেম, নুরুল ইসলাম বাবুল। এই সব মানুষ স্বাধীনতার পর থেকে তাঁদের কঠোর পরিশ্রমে বাংলাদেশকে নানা দিক থেকে সমৃদ্ধ করেছেন। শিল্পী মুর্তজা বশীর চলে গেলেন, চলে গেলেন আমাদের সবার প্রিয় কবি ও সম্পাদক আবুল হাসনাত। এই কৃতীজনদের অভাব আর পূরণ হবে না।

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। করোনাযুদ্ধে নেতৃত্ব দিলেন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথমত গভীর আশ্বাস ও সাহস দিলেন জাতিকে। তারপর সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রের মানুষের জন্য বিশেষ আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থা করলেন। দেশের একটি মানুষও যেন খাবারের অভাবে মারা না যায় সেদিকে ছিল তাঁর তীক্ষ দৃষ্টি। করোনার শুরুতে নানা ধরনের গুজব রটিয়েছে দুর্মুখেরা। লাখ লাখ মানুষ না খেয়ে মারা যাবে, এমন কথাও আমাদের কানে এসেছে। কিন্তু একজন মানুষকেও অনাহারে মরতে দেননি বঙ্গবন্ধুকন্যা। এদিকে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ, সেই আয়োজনও চলছিল। এ বছর বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তী। সেই উৎসব সামনে রেখে গৃহহীনদের গৃহ তৈরি করে দেওয়া, নিঃসহায় মানুষকে সহায়তা দান, এ রকম বহু বহু কাজ তিনি দেশের জন্য করছেন। অন্যদিকে অপ্রতিরোধ্য গতিতে চলছে দেশের উন্নয়নের কাজ। মেট্রো রেল আর একের পর এক ফ্লাইওভার। এককথায় দেশের যেদিকে চোখ যায় করোনাকালেও সেই সব দিকে দুর্বার গতিতে চলেছে উন্নয়নের কাজ। সারা পৃথিবী অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকেছে বাংলাদেশের দিকে। অর্থনীতির চাকা আগের তুলনায় বেশি সচল ছিল। জিডিপি ঘাটতি হয়নি। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুতে বসে গেছে শেষ স্প্যানটি। আশ্চর্য এক মন্ত্রবলে দেশটিকে দুহাতে শূন্যে তুলে ধরেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তাঁর শক্তি একটাই, অকল্পনীয় দেশপ্রেম আর দেশের মানুষের প্রতি গভীর গভীরতর ভালোবাসা। এই মন্ত্রেই তিনি বাংলাদেশকে অতি উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। বাঙালি জাতি যেমন চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে, তেমন কৃতজ্ঞ থাকবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার কাছে। পিতা বাংলাদেশের স্থপতি আর কন্যা আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি। পিতা দেশ দিয়েছেন, কন্যা সেই দেশ তৈরি করে দিচ্ছেন।

এই বছরের শুরুর কয়েক মাসের মধ্যেই হয়তো বা শেষ হবে করোনাকাল। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে পৃথিবী। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে বাংলাদেশ। অন্ধকার কেটে গিয়ে আলোয় ঝলমল করে উঠবে পৃথিবী। আলোয় আলোয় ভরে উঠবে বাংলাদেশ। পৃথিবীর বহু দেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয়েছে। বছরের শুরুর মাসেই আশা করছি আমাদের প্রিয় বাংলাদেশেও পৌঁছে যাবে ভ্যাকসিন। প্রয়োগ শুরু হবে। হেসে উঠবে প্রিয় মাতৃভূমি। যত দূর এগিয়েছে বাংলাদেশ, ২০২১-এ তার চেয়ে আরো অনেক দূর এগোবে। এক পদ্মা সেতুই বাংলাদেশকে অনেক উচ্চতায় নিয়ে গেছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, এত বড় দুঃসাহসিক কর্ম বঙ্গবন্ধুকন্যা ছাড়া কারো পক্ষেই সম্ভব ছিল না। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, দ্বিতীয় পদ্মা সেতুও হবে নিজস্ব অর্থায়নে। ভাবলেই গর্বে বুক ভরে যায়। অন্যদিকে বাংলাদেশ হয়ে উঠছে মধ্যম আয়ের দেশ। এই সব গৌরবের কৃতিত্ব একজনেরই। তিনি শেখ হাসিনা।

আমার বাড়ি পদ্মা সেতুর মাওয়ার দিককার টোল প্লাজা থেকে পাঁচ-সাতশো গজ পশ্চিমে। ওখানটায় ফলক উন্মোচন করতে গিয়েছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। পদ্মা সেতু ঘিরে অসামান্য একটি বক্তৃতা দিয়েছিলেন। আমি ছিলাম সেই অনুষ্ঠানে। পদ্মা সেতু নিয়ে কী ধরনের ষড়যন্ত্র হয়েছিল, কারা কী ধরনের ষড়যন্ত্র করেছিল সব বিস্তারিত বললেন। শুনে হতবাক হয়েছিল মানুষ। কিন্তু কোনো ষড়যন্ত্রই যে শেখ হাসিনাকে দমাতে পারেনি এ কথা শুনে আমাদের গ্রামের এক বৃদ্ধা বলেছিলেন, ‘শেখের বেটি শেখের মতোই হইছে। বিরাট কলিজা, বিরাট সাহস। একজন দেশ দিয়া গ্যাছে, আরেকজন দিল পদ্মা সেতু। শেখের বেটিরে আল্লায় বাঁচায়া রাখুক।’

আমাদের বসুন্ধরা গ্রুপের মাননীয় চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ‘মানুষের কল্যাণ মানেই দেশের কল্যাণ। মানুষের কল্যাণ হলে দেশের কল্যাণ হয়। মানুষ বড় হলে দেশ বড় হয়।’ আমরা বড় মানুষ তৈরি করতে চাই। বড় দেশ তৈরি করতে চাই। আমরা আমাদের দেশকে বহু বহু দূর নিয়ে যেতে চাই। বাংলাদেশ হবে আলোকিত বাংলাদেশ। এ দেশ থেকে দূর হবে দুর্নীতি, এ দেশ থেকে দূর হবে নারী ও শিশু নির্যাতন, এ দেশের পথগুলো হবে নিরাপদ, এ দেশের মানুষ কর্মমুখর হবে। হাসি আনন্দে নিরুদ্বেগ ও নিরাপদ জীবন কাটাবে দেশের মানুষ, বছরের শুরুর দিনে এই আমাদের স্বপ্ন, এই আমাদের আকাঙ্ক্ষা।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।