১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ | ২৭ ভাদ্র, ১৪৩২ | ১৮ রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭


শিরোনাম
  ●  ইয়াবাসহ পুলিশে সোপর্দ, চোর সন্দেহে চালান, এলাকায় ক্ষোভ   ●  শিক্ষার্থীদের ভালোবাসায় সিক্ত কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান   ●  “প্লাস্টিক উৎপাদন কমানো না গেলে এর ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনা সম্ভব নয়”   ●  নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে কক্সবাজারে তাঁতীদলের খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন   ●  বৃহত্তর হলদিয়া পালং বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল আজিজ মেম্বারের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ   ●  মরিচ্যা পালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা   ●  রামুতে বনবিভাগের নির্মাধীন স্থাপনা উচ্ছেদ নিয়ে প্রশাসন ও বনকর্মীদের মাঝে প্রকাশ্যে বাকবিতন্ডা   ●  সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ নুরের মৃত্যুতে জেলা বিএনপির শোক   ●  চুরি করতে গিয়ে পুলিশ কনস্টেবলের স্ত্রী ধর্ষণ   ●  আজ রিমান্ডে পেকুয়া নেওয়া হচ্ছে জাফর আলমকে, নিরাপত্তার শঙ্কা!

অর্জনের ৬৯ বছর

১৯৪৭ সাল। দেশ ভাগের বেদনায় তখনও ভারি আকাশ-বাতাস। ওই বছর কলকাতায় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার ক্ষত তখনও দগদগে। দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে জন্ম নেয়া ভারত-পাকিস্তানের রাজনীতি তখন বিশেষ দিকে মোড় নিয়েছে। রাজনীতির এমন উষা লগ্নে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন বাঙালির জাতির মুক্তির দূত শেখ মুজিবুর রহমান।

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরেই ছাত্রদের মনে আশার আলো জাগিয়ে তোলেন তরুণ নেতা শেখ মুজিব। অধিকার আন্দোলনের দীপ্ত চেতনা নিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ছাত্রলীগ। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বধানকারী মূল দল আওয়ামী লীগের জন্মের এক বছর আগেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল গৌরব ও ঐতিহ্যের এ ছাত্র সংগঠন।

১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। তার নেতৃত্বেই ওই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে এ সংগঠনটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠন বাঙালির মুক্তির আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে থাকে।

গত ৬৯ বছরে ছাত্রলীগের ইতিহাস হচ্ছে বাঙালির ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা, মুক্তির স্বপ্ন বাস্তবায়ন, স্বাধীনতা অর্জন, গণতন্ত্র ও প্রগতির সংগ্রামকে বাস্তবে রূপদানের। শুরু থেকেই প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল সংগ্রামে ছাত্রলীগ নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। চরম আত্মত্যাগের মধ্যদিয়ে বিজয় নিশানা উড়িয়েছে স্বনামধন্য ছাত্রলীগ।

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন তৎকালীন পাকিস্তানের প্রথম বিরোধীদল হিসাবে ‘আওয়ামী মুসলিম লীগে’র আত্মপ্রকাশ ঘটে। যা পরে আওয়ামী লীগ নাম ধারণ করে এ দেশের স্বাধিকার ও স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়। এ প্রেক্ষাপটে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা বাঙালি জাতির ইতিহাসে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

৫২ ভাষা আন্দোলনে ছাত্রলীগ নেতৃত্বে দেয়। ভাষার অধিকারে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠা পায়। ৫৪’র সাধারণ নির্বাচনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ পরিশ্রমে যুক্তফ্রন্টের বিজয়, ৫৮’র আইয়ুব-বিরোধী আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলনে ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা, ৬৬’র ৬ দফা নিয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া, ৬ দফাকে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে পাক শাসককে পদত্যাগে বাধ্য এবং বন্দীদশা থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করা, ৭০’র নির্বাচনে ছাত্রলীগের অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখসমরে ছাত্রলীগের অংশগ্রহণ ছিল ঈর্ষণীয়।

স্বাধীনতার পরেও সংগ্রাম-আন্দেলনে ছাত্রলীগ তার স্বমহিমায় ভূমিকা রাখতে থাকে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগ অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের ছাত্রলীগ-বিরোধী অবস্থানে এর সাংগঠনিক কাঠামো অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ে। তবে আরেক সামরিক শাসক হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ-বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগ সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়। ছাত্রলীগের গড়ে তোলা দুর্বার আন্দেলনের কারণে স্বৈরাচার এরশাদের পতন তরান্বিত হয়।

দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে ছাত্রলীগ ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে ১/১১-এর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধেও। ওই সময় সামরিক চাদরে ঢাকা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাইনাস-টু ফর্মুলা বাস্তবায়নে প্রতিবদ্ধকতা সৃষ্টি করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। রাজনীতি বিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে ছাত্রলীগ গোটা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে মহাজোট সরকারের বিজয়েও ছাত্রলীগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

তবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নানা নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। খুন, হল দখল, সাংগঠনিক কোন্দল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, প্রশ্নপত্র ফাঁস, শিক্ষক লাঞ্ছনা, যৌন হয়রানিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ায় তীব্র সমালোচনায় পড়তে হয় ছাত্রলীগকে।

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিরোধীজোটের হরতাল চলাকালে বিশ্বজিৎ নামের এক দর্জি দোকানিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করায় নিন্দা আর ধিক্কার পায় এ সংগঠনটি। ছাত্রলীগের এমন কর্মকাণ্ডে সাংগঠনিক পদ থেকে পদত্যাগ করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

এদিকে আজ বুধবার (৪ জানুয়ারি) সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীসহ সারাদেশে শোভাযাত্রা বের করবে ছাত্রলীগ। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষ্যে আলোচনা সভারও আয়োজন করেছে ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনটি।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।