১৭ নভেম্বর, ২০২৫ | ২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ | ২৫ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭


শিরোনাম
  ●  উখিয়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাক্তার আবুল কাশেমের ইন্তেকাল   ●  উখিয়ায় নিখোঁজের ৪দিনেও সন্ধান মেলেনি শিশু নুরশেদের   ●  উখিয়ায় প্রায় ৫ কোটি টাকার ইয়াবাসহ বাহক আটক, অধরা মাদক সম্রাট ছোটন ও মামুন   ●  ১৩ নভেম্বরকে ঘিরে কক্সবাজারে সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী   ●  কক্সবাজার ৪আসনঃ প্রার্থী চুড়ান্ত, তবুও মনোনয়ন বঞ্চিত আবদুল্লাহর সমর্থকদের বিক্ষোভ   ●  চিকিৎসা বিজ্ঞানে উখিয়ার সন্তান ডাঃ আব্দুচ ছালামের উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন   ●  ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীদের হুমকিতে নিরাপত্তাহীন পরিবার, চার সন্তান স্কুলে যাওয়া বন্ধ   ●  রামুতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা রিজনের নেতৃত্বে এক ব্যক্তির দোকান দখলের অভিযোগ, চাঁদাবাজি মামলায় জিটু কারাগারে   ●  গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়িতে ঢুকে হুমকি অভিযোগ ৪ এনসিপি নেতার বিরুদ্ধে   ●  কক্সবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে স্কিলস অ্যান্ড ইনোভেশন কম্পিটিশন অনুষ্ঠিত

অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে জেলার নিম্ন আয়ের মানুষের

শাহীন মাহমুদ রাসেলঃ কক্সবাজারে করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে দিন দিন কর্মহীন হয়ে পড়ছে জেলার হতদরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষজন। ভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে একে একে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে নির্মাণ কাজসহ দিনমজুরের কাজ। কিন্তু যে মানুষগুলো দিন আনে দিন খায় তাদের পরিবারগুলো অর্ধাহারে-অনাহারে পড়ার শঙ্কায় পড়েছেন। তারা চরম ভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যাচ্ছেনা কেউ।

তাদের দাবী পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হওয়ার আগেই তাদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে সরকার যেন অন্তত দুবেলা খাবারের ব্যবস্থা করেন। তা না হলে নাখেয়ে দিনযাপন করতে হবে তাদের।

সরকারি নির্দেশনায় কক্সবাজারের ৮ উপজেলায় করোনা ভাইরাস বিস্তার রোধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে পৌর শহরসহ ও গ্রামাঞ্চলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। শুধু কাঁচাবাজার, ওষধের দোকান ও নিত্যপণের দোকান খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু এসব দোকানও সন্ধ্যা ৭টার পর বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আবার গণপরিবহন বন্ধ থাকায় জনশূন্য হয়ে পড়েছে রাস্তা-ঘাট। শহর ও গ্রামের রাস্তায় দু’একটি করে রিকশা, অটোরিকশা দেখা গেলেও ভাড়া পাচ্ছেন না চালকরা। এ অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবীরা।

এদিকে জেলা-উপজেলায় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও মাইকিং করে দোকানপাট, যান চলাচল বন্ধ রাখাসহ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা অব্যাহত রেখেছে স্থানীয় প্রশাসন। আর এ নির্দেশনা কার্যকর করতে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি কাজ করছে পুলিশ বাহিনী। তবে নিম্ন আয়ের মানুষ কর্মহীন হয়ে বিপাকে পড়েছে।

এদিকে করোনা আতঙ্ক পন্য পরিবহনে তেমন না পড়লেও দূরপাল্লার বাসসহ সবকিছু লক ডাউন করে দেওয়া হয়েছে। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম সড়কের বাস চালক ফরিদুল আলম জানান, করোনার প্রভাব পন্যপরিবহনে না পড়লেও যাত্রী পরিবহনগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের আয়ের পথ বন্ধ হয়েগেছে। তিনি কর্মহীন হয়ে পড়া পরিবহণ শ্রমিকদের এই আপতকালীন সময়ে সহযোগিতা প্রদানের কথা জানান।

করোনার প্রভাব কি রুপ নিতে যাচ্ছে এর উত্তর মিলছে না কারো কাছেই। সবাই সবার অবস্থান থেকে সতর্ক থাকার চেষ্টা করছেন এবং সেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো সাধারণ মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছেন। সেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বপ্নজালের সভাপতি সাকির জানান, তারা তাদের সাধ্যমত সাধারণ মানুষদের সচেতন করার চেষ্টা অব্যহত রাখেছেন।

শহরের কলাতলীর মেরিন ড্রাইভ সড়কে একটি বিল্ডিংয়ে নির্মাণ কাজ চলছে। সেখানে আব্দুল্লাহ, আলতাস, ছৈয়দ আলমসহ প্রায় ৮/১০ জন নির্মাণ শ্রমিক বেশ কিছুদিনধরেকাজ করছে। কিন্তু ঠিকাদার ও ইন্জিনিয়ার বলেছে দুই একদিনের মধ্যে করোনা সংক্রমের ভয়ে কাজ বন্ধের ঘোষনা দিয়েছেন। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আব্দুল্লাহরা।

সদর উপজেলার খরুলিয়া গ্রামের মিস্ত্রি ছুরুত আলম জানান, তার এলাকার অনেকেই এখন কাজ না পেয়ে কর্মহীন হয়ে বিপাকে পড়েছে। তিনি বলেন, সরকার যদি আমাদের কথা না ভাবে তাহলে না খেয়ে থাকতে হবে। শুধু ছুরুত আলম নয়, কৃষি শ্রমিক, রিকশা চালকের মত যারা একদিন কাজ না করলে পেটে ভাত যায় না তারা অর্ধাহারে অনাহারে থাকার আশঙ্কায় রয়েছেন।

রিকশা চালক ফকির মিয়া ও আলী হোসেন বলেন, আমরা গরিব মানুষ। প্রতিদিন রিকশা চালিয়ে চাল-ডাল কিনে খাই। গাড়ি চালানো নিষেধ থাকলেও উপায় নেই। সব বিধি নিষেধ উপেক্ষা করেই রিকশা নিয়ে ঘুরছি। কিন্তু কোনো যাত্রী নেই, রাস্তা ফাঁকা। এ অবস্থা চলতে থাকলে পরিবার নিয়ে অনাহারেই থাকতে হবে।

করোনার প্রভাব পড়েছে বাজারে। নিত্যপন্যের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মাস্ক, হ্যান্ড সেনিটাইজারসহ সুরক্ষার উপকরণসমূহ অধিকমূল্যে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। অনেক সময় তারা স্টকে রেখেই কৃত্রিম সংকটের সৃষ্টি করেছে দাবী ভোক্তাদের।

হতদরিদ্র মানুষগুলো এখন তাই সরকারের দিকে তাকিয়ে। তাদের দাবী দরিদ্র কর্মহীন মানুষগুলোর তালিকা করে সরকার যেন খাদ্যের বিশেষ ব্যবস্থা করে।

এ অবস্থায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন। তিনি বলেন, আপাততঃ প্রতি পরিবারে ২০ কেজি করে চাল দিচ্ছি। এ প্রক্রিয়া শুরু মাত্র। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পার্শ্ববর্তী কোন অসহায় দরিদ্র মানুষ কষ্টে আছে কিনা খোঁজ নিতে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের অনুরোধ করেন জেলা প্রশাসক।

তিনি আরোও বলেন, কোভিড-১৯ এর প্রভাবে সারাবিশ্ব আজ বিপর্যস্ত। এ দুর্যোগ মোকাবিলা করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়, প্রয়োজন সবার সহযোগিতা। আপনাদের একটি ছোট উদ্যোগ বাঁচাতে পারে অনেক প্রাণ।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।