১৭ অক্টোবর, ২০২৫ | ১ কার্তিক, ১৪৩২ | ২৪ রবিউস সানি, ১৪৪৭


শিরোনাম
  ●  ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীদের হুমকিতে নিরাপত্তাহীন পরিবার, চার সন্তান স্কুলে যাওয়া বন্ধ   ●  রামুতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা রিজনের নেতৃত্বে এক ব্যক্তির দোকান দখলের অভিযোগ, চাঁদাবাজি মামলায় জিটু কারাগারে   ●  গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়িতে ঢুকে হুমকি অভিযোগ ৪ এনসিপি নেতার বিরুদ্ধে   ●  কক্সবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে স্কিলস অ্যান্ড ইনোভেশন কম্পিটিশন অনুষ্ঠিত   ●  আলোচিত ইমরানের ২০ হাজার ইয়াবা নিয়ে লুটপাট, পরে রফাদফা!   ●  দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ   ●  কক্সবাজারে ভূমি নিবন্ধনে আকাশচুম্বী বর্ধিত উৎসেকর বাতিল, প্রসংশায় পঞ্চমুখ সালাহউদ্দিন আহমদ   ●  হলদিয়ায় ইমরানের ২০ হাজার ইয়াবা নিয়ে উধাও ৩ যুবক   ●  দুর্ধর্ষ প্রতারক দিদারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি   ●  ইয়াবাসহ পুলিশে সোপর্দ, চোর সন্দেহে চালান, এলাকায় ক্ষোভ

হিন্দু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জাঁকজমক দুর্গোৎসব

কক্সবাজারসময় ডেস্কঃ গত বছরের মতো এবারও কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং হিন্দু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরকারি সহযোগিতায় জাঁকজমকভাবে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পূজায় পরিধানের জন্য হিন্দু ১১৩ পরিবারের ৪৭০ জন সদস্যকে নতুন জামা-কাপড় সরবরাহ করেছে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা শাখা। পূজা উপলক্ষে দেয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যও। এ কারণে আশ্রিত জীবনেও মহানন্দে পূজার আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন হিন্দু রোহিঙ্গারা।

কুতুপালং হিন্দু রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মধুরাম পাল বলেন, মিয়ানমারে থাকাকালীন দুর্গাপূজা বা কোনো ধর্মীয় আচারের আনুষ্ঠানিকতা কখনো করা হয়নি। বাস্তুচ্যুত হয়ে পালিয়ে আসার পর বাংলাদেশ সরকার আশ্রয় দিয়েছে। জীবন বাঁচাতে সহযোগিতা দেয়ায় পুরো রোহিঙ্গা কমিউনিটি বাংলাদেশ সরকারের কাছে ঋণী। আমরা হিন্দু রোহিঙ্গারা দ্বিগুণ ঋণী হয়ে থাকলাম। নতুন কাপড়, পূজা-অর্চনার পণ্য সামগ্রী ও বিশাল প্রতিমা বসিয়ে সরকারি সহযোগিতায় জাঁকজমকপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা পালন করানো হচ্ছে। আশ্রয়ের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক এ বদান্যতা জীবন দিয়েও শোধ করার নয়।

রোহিঙ্গা আরতি পাল, কৃষ্ণারানী দে, বাপ্পী চৌধুরী ও সুমন আচার্য্য বলেন, প্রকাশ্যে মনের মাধুরী মিশিয়ে প্রতিমার সামনে দাঁড়িয়ে অর্চনা করার সুযোগ আশ্রিত জীবনেই পেয়েছি। এজন্য রোহিঙ্গা হিন্দু কমিউনিটি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি নত মস্তকে কৃতজ্ঞতা জানায়।

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ কক্সবাজার জেলার সাধারণ সম্পাদক ও হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট্রের ট্রাস্টি অধ্যাপক প্রিয়তোষ শর্মা চন্দন বলেন, জেলার ২৯৬টি মণ্ডপের মতো রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হিন্দু শরণার্থীদের জন্যও একটি পূজার মণ্ডপ তৈরি হয়েছে। শরণার্থীরা যেন মনের আনন্দে পূজা করতে পারেন এজন্য এখানকার মণ্ডপের জন্য ৫ টন জিআর চাউল বরাদ্দ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। জেলার সকল মণ্ডপের জন্য দেয়া হয়েছে ১৫০ মেট্রিক টন।

তিনি আরও জানান, আশ্রিত হিন্দু শরণার্থীদের মধ্যে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে নতুন বস্ত্র বিতরণ করেছে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা শাখা। ১১৩ পরিবারের ৪৭০ জন ছোট-বড় সদস্যকে পূজায় জন্য কাপড় দেয়া হয়। দেয়া হয়েছে ভোগ্যপণ্যও।

শরণার্থী ক্যাম্পের সীমান্ত রুদ্র ও শিশু শীল জানান, কল্পনাও করিনি আশ্রিত জীবনে এত ধুমধামের সঙ্গে শারদীয় দুর্গোৎসব করতে পারব। বাংলাদেশ সরকার জীবন ধারণের উপকরণের পাশাপাশি ধর্মীয় উৎসবের ব্যবস্থাও করে দিয়েছে। মিয়ানমারে থাকতে শুনতাম বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে এসে এর বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারলাম। মুসলমান ও ভিন্ন ধর্মালম্বীরাও এসে আমাদের আয়োজনে একাত্মতা ঘোষণা করছে। বাংলাদেশ সরকারের এ ঋণ জীবন দিয়েও শোধ হওয়ার নয়।

জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট রণজিত দাশ বলেন, জেলা-উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় দুর্গোৎসব শুরু হয়েছে।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান জানান, গত বছরের মতো এবারও হিন্দু রোহিঙ্গাদের জন্য সরকারি খরচে পূজা উদযাপনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্যাম্পের পূজার জন্য ৫ টন চাল বরাদ্দ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন। দেশীয় মণ্ডপের মতো কুতুপালং হিন্দু রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শারদীয় দুর্গোৎসবেও বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেন প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা। পূর্বে আরও প্রায় সাড়ে ৩ লাখ এসে রয়েছে। সব মিলিয়ে রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১২ লাখ। বাস্তুচ্যুত হয়ে পালিয়ে আসার সময় ১০১ পরিবারে ৪৫০ জন হিন্দু রোহিঙ্গা থাকলেও এখন ১১৩টি পরিবারের সদস্য দাঁড়িয়েছে ৪৭০ জনে। উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের কুতুপালং বনভূমির আশ্রিত স্থানেই দুর্গাপূজা উদযাপনের যাবতীয় ব্যবস্থা করা হয়েছে হিন্দু রোহিঙ্গাদের জন্য।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।