১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ | ৪ আশ্বিন, ১৪৩২ | ২৬ রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭


শিরোনাম
  ●  দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ   ●  কক্সবাজারে ভূমি নিবন্ধনে আকাশচুম্বী বর্ধিত উৎসেকর বাতিল, প্রসংশায় পঞ্চমুখ সালাহউদ্দিন আহমদ   ●  হলদিয়ায় ইমরানের ২০ হাজার ইয়াবা নিয়ে উধাও ৩ যুবক   ●  দুর্ধর্ষ প্রতারক দিদারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি   ●  ইয়াবাসহ পুলিশে সোপর্দ, চোর সন্দেহে চালান, এলাকায় ক্ষোভ   ●  শিক্ষার্থীদের ভালোবাসায় সিক্ত কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান   ●  “প্লাস্টিক উৎপাদন কমানো না গেলে এর ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনা সম্ভব নয়”   ●  নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে কক্সবাজারে তাঁতীদলের খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন   ●  বৃহত্তর হলদিয়া পালং বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল আজিজ মেম্বারের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ   ●  মরিচ্যা পালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা

চট্টগ্রামে চালের বাড়তি দামে নাভিশ্বাস সাধারণ মানুষের

চট্টগ্রামে চালের দাম আকাশছোঁয়া। বস্তা প্রতি বেড়েছে তিনশো থেকে সাড়ে তিনশ টাকা। পাইকারি বাজারে মোটা চালের দাম চার মাসের ব্যবধানে কেজিতে ১৮ টাকা পর্যন্ত  বেড়েছে। আর এ চালের মূল্যবৃদ্ধিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। চট্টগ্রামের  পাইকারি চালের আড়ৎ খাতুনগঞ্জ-চাক্তাই ও পাহাড়তলীতে চালের ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি শুল্ক কমানো না হলে চালের মূল্য আরও বাড়বে।

ব্যবসায়ীরা আরও বলছেন, একদিকে আমদানি না থাকা অন্যদিকে হাওরাঞ্চলে ফসলহানির কারণে মিল মালিক ও কৃষকরা চাল বেচাকেনা করছেন রেখে-ঢেকে। এ কারণে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হচ্ছে এবং বাড়ছে মূল্য। শুল্ক কমিয়ে এখনই আমদানির সুযোগ না দিলে চালের মূল্য আরও বাড়বে বলেও আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

এদিকে চালের বাড়তি দামে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে।জীবনপত্রার মানের সঙ্গে চালের বাড়তি দামে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তিনবেলা খাবার জোগাতে সংসারের কর্তা ব্যক্তিকে খেতে হচ্ছে হিমসিম।

দিনমজুরদের অবস্থা আরও করুন। রহিম নামে এক রিকশাচালক জানান, দিনে রিকসা চালিয়ে আয় হয় তিনশ’ থেকে চারশ’ টাকা। পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৬ জন। দিনে চাল কিনতেই চলে যায় প্রায় দেড়শো টাকা। গরিব মানুষের যা আয় রোজগার সব চাল কিনতেই শেষ হচ্ছে বলে জানান তিনি।

চাক্তাই চালপট্টি ও পাহাড়তলী বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর আউশ মৌসুমে পাইকারি বাজারে মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ২০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৫ টাকায়। একই চাল চলতি আউশ মৌসুমে পাইকারি বাজারেই বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪২ টাকা দরে। খুচরা বাজারে গিয়ে যা ৪৫ টাকা থেকে ৫৫ টাকায় ঠেকেছে। গত এক মাস আগে মোটা চাল ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকায়।

চাক্তাই চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও বৃহৎ চাল ব্যবসায়ী এনামুল হক জানান, আউশ মৌসুমে এমনিতেই অন্যান্য মৌসুমের চেয়ে ফলন অর্ধেক হয়। এবার তার ওপর হাওরাঞ্চলে বন্যার কারণে ব্যাপক ফসলহানি হয়েছে। এতে ৬-৭ লাখ টন ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে সরকারিভাবেই বলা হচ্ছে।

তাছাড়া উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যে চালের জোগান আসে সেখান থেকে বিক্রি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় চট্টগ্রামে এক মাস আগে থেকেই চালের দাম বাড়তে থাকে। সরকার যদি চালের ওপর শুল্ক কমিয়ে দিয়ে এখনই আমদানির সুযোগ না দেয়, তবে চালের দাম আরও বাড়বে। সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে চালের দাম। শুল্ক বেশি হওয়ায় আমদানিকারকরা চাল আমদানি করছেন না।

নগরীর রেয়াজুদ্দিনবাজার, কাজিরদেউড়ি বাজার, চকবাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি স্বর্ণা সিদ্ধ চাল ৪৫ টাকা, ভারতীয় বেতি ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেট (আতপ) এক নম্বর ৪৮ টাকা, জিরাশাইল (নবান্ন) ৫২ টাকা, আতপ বেতি এক নম্বর ৪৮ টাকা, দেশি পাইজাম ৪৭ টাকা, দিনাজপুরী পাইজাম ৫০ টাকা, কাটারিভোগ ৬০ টাকা, চিনিগুঁড়া ৯৫ টাকা, ২৯ বেতি ৪২ টাকা, পাইজাম চিকন ৪৬ টাকা, বেতি আতপ চিকন ৪৪ টাকা, সিদ্ধ জিরাশাইল চিকন ৪৮ টাকা, সিদ্ধ মিনিকেট চিকন ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সূত্রে জানা গেছে, দেশে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে উত্তরবঙ্গের মিল মালিক ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। বোরো ও আমন মৌসুমে কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে চাল কিনে গুদামজাত করেন তারা এবং সংকট সৃষ্টি করে বাজার অস্থির করে তোলেন তারা। নওগাঁ, দিনাজপুর, আশুগঞ্জ, ময়মনসিংহ, সান্তাহার (বগুড়া), রাজশাহী, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন জেলায় তিন শতাধিক মিল ব্যবসায়ী রয়েছেন। এদের মধ্যে প্রায় ৩০ জন বড় মিল মালিক। তারা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে ধান-চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন।

চট্টগ্রামের বড় পাইকারি বাজার পাহাড়তলী ও চাক্তাই ব্যবসায়ীরা জানান, নওগাঁ, মহাদেবপুর, আশুগঞ্জ, দিনাজপুর, পাবনা, ঈশ্বরদীর মোকামগুলো থেকে বেশির ভাগ চাল আসে চট্টগ্রামে। আশুগঞ্জ থেকে বেতি ও ইরি জাতের, দিনাজপুর থেকে মিনিকেট, পাইজাম, চিনিগুঁড়া, কাটারিভোগ জাতের আতপ এবং নওগাঁ, পাবনা, ঈশ্বরদী থেকে সিদ্ধ জাতের চাল আসে চট্টগ্রামে। গড়ে প্রতিদিন ৪৫০ থেকে ৫০০ টন চাল চাক্তাইয়ের আড়তগুলোতে আসে। ৫০ কেজি বস্তায় ১৬ থেকে ২১ টাকা কমিশন পান আড়তদাররা। আর পাহাড়তলী পাইকারি বাজারে আসে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৪৫০ টন চাল।

এ বিষয়ে পাহাড়তলী চাল বাজারের সহ-সভাপতি মো. জাফর আলম জানান, ইরি মৌসুম শুরুর  আগে চালের দাম উঠা-নামা করে। এবার আগে থেকেই বাড়তি রয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে (২০১৫-১৬) বেসরকারিভাবে ২৫৭ দশমিক ২৪ হাজার টন চাল আমদানি হয়। আর চলতি অর্থবছরের (২০১৬-১৭) ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত  আমদানি হয়েছে মাত্র ৪১ দশমিক ১৩ হাজার টন চাল।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।