১ অক্টোবর, ২০২৫ | ১৬ আশ্বিন, ১৪৩২ | ৮ রবিউস সানি, ১৪৪৭


শিরোনাম
  ●  কক্সবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে স্কিলস অ্যান্ড ইনোভেশন কম্পিটিশন অনুষ্ঠিত   ●  আলোচিত ইমরানের ২০ হাজার ইয়াবা নিয়ে লুটপাট, পরে রফাদফা!   ●  দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ   ●  কক্সবাজারে ভূমি নিবন্ধনে আকাশচুম্বী বর্ধিত উৎসেকর বাতিল, প্রসংশায় পঞ্চমুখ সালাহউদ্দিন আহমদ   ●  হলদিয়ায় ইমরানের ২০ হাজার ইয়াবা নিয়ে উধাও ৩ যুবক   ●  দুর্ধর্ষ প্রতারক দিদারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি   ●  ইয়াবাসহ পুলিশে সোপর্দ, চোর সন্দেহে চালান, এলাকায় ক্ষোভ   ●  শিক্ষার্থীদের ভালোবাসায় সিক্ত কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান   ●  “প্লাস্টিক উৎপাদন কমানো না গেলে এর ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনা সম্ভব নয়”   ●  নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে কক্সবাজারে তাঁতীদলের খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন

হুমকির মুখে কক্সবাজারের পোল্ট্রি শিল্প


হুমকির মুখে পড়েছে কক্সবাজারের পোল্ট্রি শিল্প। বারবার বন্যা এবং বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে খামারের মুরগি মারা যাওয়া, মুরগির খাদ্যসহ সব কিছুর দাম বৃদ্ধি, বাজারে কম দাম পাওয়ায় পূজি হারিয়েছে অনেকে। সাধারণ খামারীদের দাবী সরকার কাগজে কলমে পোল্ট্রিকে শিল্প হিসাবে ঘোষনা করলেও শিল্পর কোন সুযোগ সুবিধা পায়নি এর সাথে জড়িতরা।
সংশ্লিষ্ঠরা বলছেন, সরকার যদি পোল্ট্রি খামারীদের কিছু প্রনোদনা দিত বা মুরগির খাদ্যর দাম এবং বাচ্চার দাম নির্ধারন করে দিলে সাধারণ ব্যবসায়ি বা খামারীদের উপকার হতো। বর্তমান অবস্থা অব্যাহত থাকলে হুমকির মুখে পড়বে কক্সবাজারের পোল্ট্রি শিল্প।
প্রানী সম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, পোল্ট্রি খামারে মাংস এব ডিমে স্বয়ংসম্পূর্ন কক্সবাজার। তবে ব্রয়লারে একটু ঘাটতি আছে।
কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের পাতলী গ্রামের পোল্ট্রি খামারী রফিক বলেন, আমি বেশ কয়েক বছর ধরে ব্রয়লার খামার করে আসছি। এর মধ্যে বর্তমানে পূজি হারিয়ে নি:স্ব হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ধার দেনা করে নতুন করে মুরগি তুলেছি। তবে এবার ২/৩ দফা বন্যায় খামারের অবস্থা খুবই শোচনীয়। এর মধ্যে কয়েক শত মুরগির বাচ্চা মারা গেছে বাকিগুলোরও অবস্থা খুবই খারাপ। তিনি বলেন, সরকারিভাবে আমাদের কোন দিন খবর নেয়নি। এছাড়া আমাদের পাশে আরো অনেক খামারী আছে যারা বর্তমানে নানান কারনে পূজী হারিয়ে নিস্ব হয়ে গেছে।
রামু উপজেলার কাওয়ারখোপ ইউনিয়নের লেয়ার মুরগি খামারী আবু ইউচুফ বলেন, আমার খামারের অবস্থা খুবই শোচনীয় এখন বলতে গেলে আমি একেবারে পূজিশুন্য। অথচ কিছু দিনআগেও আমার খামারে দেড় হাজার মুরগির কলকাকলিতে মুখরিত থাকতো। আমি ভালই ব্যবসা করতে পারতাম। কয়েক দফা পানিতে আমি খুবই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। এর মধ্যে মুরগির নাক দিয়ে পানি পড়া এবং খাবার থেতে না চাইলে আমি স্থানীয় প্রাণী সম্পদ অফিসে যোগাযোগ করলেও তারা কোন ধরনের সহযোগিতা করেনি। বলেছে পানি বাহিত কিছু রোগ বালাই হতে পারে সেটা। আপাতত করার কিছুই নেই। তাছাড়া বর্তমানে ডিমের দাম কম হওয়ায় আমাদের খরচ এবং আয় পোষাচ্ছে না। তাই খামার আপাতত বন্ধ করে রেখেছি। আর পূজিও নেই। কারো কাছ থেকে চড়া সুধে হলেও টাকা পেলে আবারো মুরগি তুলবো।
কক্সবাজারের সাব মেরিন ক্যাবল স্টেশনের পেছনের এলাকার বাসিন্দা মোস্তাক আহাম্মদ বলেন, আমি ১৯৯৭ সাল থেকে খামার করে আসছি। আমার খামারে বর্তমানে এক হাজার ডিম পাড়া মুরগি আছে যেটা থেকে ডিম নিয়ে বিক্রি করে আমি কোন মতে খামার টিকিয়ে রেখেছি। তবে বর্তমানে ডিমের দাম কম। আমাদের কাছ থেকে ১০০ পিচ ডিম ৫৭০ অনেক সময় ৬০০ টাকায় কিনে নিয়ে যায়। সেক্ষেত্রে আমাদের খরচ পড়ে অনেক বেশি। এখন প্রতি কেজি খাবার কিনতে হয় ৩৭ টাকা কেজি সেই খামার আগে কিনতাম ২০ টাকা কেজি। একটি মুরগি দৈনিক ১২০ গ্রাম খাবার খায় সে হিসাবে দৈনিক ১ টনের বেশি খাবার লাগে অর্থাৎ ৩ হাজার ৭০০ টাকার খাবার । আর বাচ্চা কিনতে হয়েছে প্রায় ১০০ টাকা দিয়ে। যদিও বর্তমানে বাচ্চার দাম কিছুটা কমেছে। তবে খামারের দাম অনেক বেশি। আর ২০ সপ্তাহ পরে মুরগি ডিম দেয়। তাহলে হিসাব করলে দেখা যাবে খরচ আর লাভ প্রায় সমান আর যদি কোন রুগে মুরগি মারা যায় তাহলেতো আর কথায় নেই একেবারে নি:স্ব। তবুও কোন মতে টিকে আছি। তিনি দাবী করেন, কাগজে কলমে দেখি সরকার পোল্ট্রি ব্যবসাকে শিল্প হিসাবে দেখছে। কিন্তু শিল্পর কোন লক্ষন নেই। একজন কৃষক যেমন ধান উৎপাদন করে দেশের খাদ্য ঘাটতি পূরন করছে তেমনি আমরাও ডিম মাংস উৎপাদন করে দেশের খাদ্য ঘাটতি পূরন করছি। কৃষক যদি তাদের পণ্য উৎপাদনে সরকার থেকে প্রনোদনা হিসাবে সার বীজ বা নগদ টাকা পায় তাহলে আমরা কেন পাব না ? সেটা বিবেচনা করা দরকার।
একই ভাবে পাশ্ববর্তী শামসুল আলম বলেন, বর্তমানে পোল্ট্রি শিল্প অনেকটা হুমকির মুখে। যারা কোন মতে টিকে আছে তারা বিকল্প কোন আয়ের পথ খুজে পেলেই এই ব্যবসা থেকে সরে যাচ্ছে। কারন এখানে বেশি ঝুঁকি। আমার সহ পার্শবর্তি মোস্তাক এর কয়েক বছর আগে সোয়াইনফ্লু রোগে মুরগি মরে গিয়ে খামার শুন্য হয়ে গিয়েছিল। আমদের ক্ষতি কেউ পূষিয়ে দেওয়া তো দূরের কথা খোঁজ খবরও নেয়নি। এক টাকাও ক্ষতি পূরণ পাইনি। তাহলে মানুষ কিভাবে পোল্ট্রি খামার করবে। আর বর্তমান দিন দিন বাচ্চা এবং খাদ্যের দাম এত বেশি বাড়ছে, আমাদের পক্ষে খামার করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই আমার জানা মতে, অনেক মুরগির খামার বন্ধ হয়ে গেছে আরো অনেক বন্ধ হওয়ার পথে।
সদর উপজেলার প্রাণী সম্পদ সহকারী মিজবাহ উদ্দিন কুতুবী বলেন, আমরা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে খামারী দের পরামর্শ বা অন্যান্য সহযোগিতা দিয়ে থাকি। তবে অনেক সময় তারা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলে আমাদের তেমন কিছু করার থাকে না।
এ ব্যপারে সদর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ নন্দন কুমার চন্দ বলেন, ‘কক্সবাজার সদর উপজেলায় মুরগির খামার আছে লেয়ার ৫৬ টি,ব্রয়লার ৭৬ টি,দুগ্ধ খামার ৯৮ টি, মহিষ খামার ৫ টি, ছাগল খামার ২৪ টি, ভেড়া খামার ৩৫ টি, হাঁস খামার ২ টি, কবুতর খামার ৩ টি। এতে আমরা সার্বক্ষনিক যতটুকু পারি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি। এছাড়া উপজেলা দপ্তরের সাধারণ মানুষ যখনি কোন সমস্যা নিয়ে আসে তাৎক্ষনিক সেবা দিতে সচেষ্ট থাকি।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, জেলা মোট দুগ্ধ খামারের সংখ্যা ৪৫৯ টি, মহিষ খামার ১৬৩, ছাগল খামার ৩৩৮, ভেড়া খামার ২৫৯, মুরগি লেয়ার ৩১৬ টি এবং ব্রয়লার মুরগির খামারের সংখ্যা ৭৫৬ টি। তিনি বলেন, পোল্ট্রি কাগজে কলমে শিল্প হলেও এখনো শিল্পের মর্যাদা পায়নি। একজন কৃষক যেমন নানান ভাবে সরকারের কাছ থেকে সহযোগিতা পায় তেমনি যদি একজন পোল্ট্রি খামারী সহযোগিতা পেলে দেশে পোল্ট্রি শিল্পের বিকাশ হতো, বেকারত্ব কমতো, মানুষের আয় বাড়তো। এছাড়া দেশের মানুষে খাদ্য পুষ্টি সহ কিছুতে অবদান রাখতে পারতো। নানান কারনে পোল্ট্রি খামারীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয় কিন্তু আমরা তাদের কোন সহায়তা করতে পারিনা।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।