বার্তা পরিবেশক: মহিলাজনিত ফিস্টুলা এক দুর্বিসহ অসুখের নাম। কেবলমাত্র নারীরাই এই অসুখের শিকার। এই রোগে আক্রন্ত মহিলাদের সন্তান প্রসবের রাস্তা দিয়ে দিনে-রাতে সবসময় প্রসব অথবা পায়খানা ঝরতে থাকে। জীবন হয়ে ওঠে মৃত্যুর চেয়ে অধিক কষ্টকর।
কক্সবাজারের তারাকা মানের হোটেল সী-গ্যালের বোর্ড রুমে শুক্রবার (২২সেপ্টেম্বর) দুপুরে ফিস্টুলা পার্টনার্স ফোরাম কর্তৃক আয়োজিত মহিলাজনিত ফিস্টুলা বিষয়ে দুই দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বক্তরা এ কথা বলেন।
তারা বলেন, সাধারনত বাধাগ্রস্থ প্রসবের ফলে এই রোগের সৃষ্টি হয়। পৃথিবীর বহু দেশে মহিলাজনিত ফিস্টুলা বহু বছর আগেই নির্মুল হয়েছে। তবে অসম্ভব যন্ত্রনাদায়ক এই ব্যধি এখনও ঘাটি গেড়ে আছে আফ্রিকা ও দক্ষিন এশিয়ার কয়েকটি দেশে। বাংলাদেশ সেই দুর্ভাগা দেশ গুলোরই একটি যেখানে মহিলাজনিত ফিস্টুলা নির্মুলে এখনও সংগ্রাম করছেন চিকিৎসকরা।
দুই দিন ব্যাপী এ অনুষ্ঠানের সমাপনী দিবসে প্রধান অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শরফুদ্দিন আহমেদ।
বিশিষ্ট ফিস্টুলা সার্জন ও কুমুদিনী হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ দুলাল চন্দ্র পোদ্দারের সভাপতিত্বে অনান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের প্রতিনিধি মিসেস্ রন্ডি এন্ডারসন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে বিশ্বে ১০ থেকে ২০ লক্ষ মহিলা এই কষ্টকর রোগ নিয়ে বেঁচে আছেন। অনুমান করা হয় বাংলাদেশে এই রোগীর সংখ্যা প্রায় ৭০,০০০। আশার কথা- এই ভয়ংকর রোগটি খুব সহজেই প্রতিরোধ করা যায়। সব গর্ভবতী যদি হাসপাতালে সন্তান প্রসব করেন, বাধাগ্রস্থ প্রসবের ক্ষেত্রে দ্রুত রোগীকে হাসপাতালে নেন তাহলে প্রসবজনিত ফিস্টুলার সংখ্যা যেকোনো সমাজে অনেক কমে যাবে।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শরফুদ্দিন আহমেদ বলেন, কোনো স্বাধীন সভ্য সমাজে মহিলাজনিত ফিস্টুলা রোগের উপস্থিতি দীর্ঘ দিন যাবৎ মেনে নেওয়া যায় না। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও বাংলাদেশের মহিলারা যদি ফিস্টুলা আক্রান্ত হন সেটা হবে সবার জন্য একটি বড় ব্যর্থতা। তিনি বলেন সবার ঐকান্তিক চেষ্টায় বাংলাদেশ নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সহ¯্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষমাত্রা অর্জন করেছে। একই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়নের লক্ষমাত্রা অর্জন করবে। জাতিসংঘ ২০৩০ সালের মধ্যে প্রসবজনিত ফিস্টুলা নির্মুলের লক্ষ ঘোষনা করেছে। অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শরফুদ্দিন আহমেদ তার আগেই স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তীতে ২০২১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশকে মহিলাজনিত ফিস্টুলা মুক্ত করার জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান। সবাই সর্বশক্তি বিনিয়োগ করে কাজ করলে সেই লক্ষ অর্জন সম্ভব বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিভার্সিটি ফিস্টুলা সেন্টার সহ দেশের স্বীকৃত হাসপাতাল গুলোকে তিনি ধারাবাহিকভাবে ফিস্টুলা সেবা দানের আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এক্ষেত্রে অন্যদের প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করতে পারে বলেও তিনি মত প্রকাশ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে ডাঃ দুলাল চন্দ্র পোদ্দার বলেন, আজ থেকে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে যত কন্যা শিশুর জন্ম হবে তাদের কেউই যেন আর ফিস্টুলার শিকার না হয় সেই লক্ষে সবাইকে কাজ করতে হবে। সাথে সাথে সব ফিস্টুলা রোগীকে অপারেশনের মাধ্যমে নিরাময়ের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। একই সঙ্গে যে সকল অনিরাময়যোগ্য ফিস্টুলা রোগী রেয়েছে তাদেরকেও কমিউনিটি লিডারদের মাধ্যমে ধারাবাহিক সেবা দিতে হবে।
দুই দিনের এই অনুষ্ঠানের আয়োজনে ছিল এন্জেন্ডারহেলথ্ এর ফিস্টুলা কেয়ার প্লাস প্রকল্প। ইউএসএইডএর অর্থায়নে এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন দেশ-বিদেশের ৪০ জন ফিস্টুলা সার্জন, কর্মসূচী বিশেষজ্ঞ ও উন্নয়ন কর্মী।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।