নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
মরহুম জালাল আহমদ চৌধুরী, যিনি ১৯৫৬ খ্রি. এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চট্টগ্রাম কলেজ হতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর তৎকালীন সময়ে বহু সরকারি বেসরকারি লোভনীয় চাকুরির সুযোগ থাকার পরও শুধুমাত্র এলাকায় শিক্ষা বিস্তারের মহান ব্রত নিয়ে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। প্রথম দিকে কিছুদিন এলাকার বাইরে শিক্ষকতা করলেও ১৯৬৭ খ্রি. এ তৎকালীন আর এক শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব বিশিষ্ট ঠিকাদার মরহুম অছিউর রহমান কনট্রাকটরের আর্থিক সহায়তায় ” জোয়ারিয়ানালা এইচ এম সাঁচি উচ্চ বিদ্যালয় “প্রতিষ্ঠা করেন। নিজে অবৈতনিক প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিয়ে ১৯৯৩ খ্রি. পর্যন্ত শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব শেষে অবসর নেন।শিক্ষাপাগল এ মানুষটি অবসর নিয়েও থেমে থাকেননি। ১৯৯৫ খ্রি. এ ব্যক্তিগতভাবে নিজে জমি দান করে এবং নিজ ভাইদের নিকট হতে ও নিজ ছাত্র শিক্ষানুরাগী মরহুম আলহাজ্ব সামশুল হক এর নিকট থেকে জমি সংগ্রহ করে জোয়ারিয়ানালায় নারী শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে এলাকাবাসীর সহযোগীতায় ” জোয়ারিয়ানালা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ” প্রতিষ্ঠা করেন। নিজে অবৈতনিক প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ বিদ্যালয়ে রুপ দেন। উনার হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান দুটি এখনো জোয়ারিয়ানালায় দ্বীপশিখার মতো শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে যাচ্ছে স্বমহিমায়। উক্ত বিদ্যালয় দুটির প্রাক্তন অনেক শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন জায়গায় স্ব-স্ব ক্ষেত্রে যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে জোয়ারিয়ানালার সুনাম বৃদ্ধি করে চলেছেন। যেটুকুন শুনেছি এবং দেখেছি বিদ্যালয় দুটির প্রতিষ্ঠার শুরুতে ও দুঃসময়ে ফেরিওয়ালার মত বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের সচেতন করে ছাত্র-ছাত্রী ভিক্ষে করে এনে বইপত্র কিনে দিয়ে বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো , বাড়ী বাড়ী গিয়ে ধান, চাল ও চাঁদা সংগ্রহ করে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনভাতা যোগানসহ বিদ্যালয় দুটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য আমৃত্যু নিজের মেধা, শ্রম ও সামর্থ্য দিয়ে চেষ্টা করে গেছেন। উনার একজন ছাত্র হিসেবে আমি প্রতিষ্ঠান দুটির উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করছি। নিজে ছাত্র অবস্থায় মায়ের তরফ হতে পাওয়া জমি দান করে ” ঘোনারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় “প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করে আমৃত্যু বিদ্যালয় পরিচালনায় সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি সেই সাথে অবিভক্ত জোয়ারিয়ানালার পঞ্চায়েত চেয়ারম্যান ও রিলিফ কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত ছিলেন।
তাঁর ছাত্র-ছাত্রীরা আজ দেশ-বিদেশে আলো ছড়াচ্ছেন। তাঁর সন্তানদের মধ্যে মোমিনুর রশিদ আমিন সদ্য অবসরপ্রাপ্ত সচিব, এডভোকেট ইকবালুর রশিদ আমিন কক্সবাজার আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, মামুনুর রশিদ আমিন সড়ক ও জনপদ বিভাগের সাবেক উর্ধতন কর্মকর্তা।
নির্লোভ, নিরহংকার শিক্ষাপাগল এ মানুষটি ২০ মে ২০০৮ খ্রি. আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেও তাঁর মহৎ কর্মকান্ডগুলো আমাদেরকে এখনও নিরন্তর অনুপ্রেরণা দেয় এবং উৎসাহ যোগায়।
মহান আল্লাহতাআ’লা ওনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুক। আমিন।##
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।