কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য পরিচয়ে প্রভাব বিস্তার করে ভয়াবহ প্রতারণায় নেমেছেন বদরুল হাসান মিল্কি নামের এক ব্যক্তি। তিনি ইতিমধ্যেই এক আমেরিকা প্রবাসীর কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এখন ওই ব্যবসায়ীর প্রায় ৫ কোটি টাকা ঝুঁকিতে পড়েছে। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা পরিচয়ে স্থানীয় ও আইনশৃংখলা বাহিনীর বিভিন্ন দফতরে প্রভাব বিস্তার করে তিনি ওই প্রবাসী ব্যবসায়ীকে কক্সবাজার থেকে বিনিয়োগ ফেলে পালিয়ে যেতে বাধ্য করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যেই মিল্কি ওই আমেরিকা প্রবাসীর পাসর্পোট, নগদ টাকা, বিভিন্ন মূল্যবান কাগজপত্র লুটে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন শেহাব উল্লাহ নামের ওই আমেরিকা প্রবাসী।
অভিযোগে জানা গেছে, কক্সবাজার শহরের কলাতলীর সী-ওয়েলকাম রিসোর্টটি কোটি টাকা জামানত দিয়ে মাসিক আড়াই লাখ টাকায় তিন বছরের জন্য ভাড়া নেন আমেরিকা প্রবাসী ব্যবসায়ী শেহাব উল্লাহ। বদরুল হাসান মিল্কি তার মা রোকেয়া বেগমের নামে শেহাব উল্লাহর সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। জামানত দিয়ে ভাড়া নেওয়ার পর থেকেই নানা তালবাহানা শুরু করেন মিল্কি। তিনি চুক্তিমতো হোটেল কক্ষ, হোটেলের সরঞ্জামসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিতে গড়িমসি করতে থাকেন। হোটেলটি চুনকাম করার কথা থাকলেও তা করে দেয়া হয়নি। দোকান ভাড়াসহ অন্যান্য ভাড়া মিল্কি নিজেই নিয়ে আত্মসাৎ করতে থাকেন। এমনকি মিল্কির বাসা, অফিস, লিফটসহ অন্যান্য বিদ্যুৎ বিলও শেহাব উল্লাহকে বহন করতে হয়। এসব বিষয়ে মিল্কিকে অবহিত করলে তিনি শেহাব উল্লাহকে নানা ভাবে ভয়ভীতি দেখান, হোটেল থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেন ও হয়রাণী করতে থাকেন। এক সময় স্থানীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে শেহাব উল্লাহকে অপহরণ ও হত্যার হুমকি দেয়া হয়। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে অসহায় ওই প্রবাসী ব্যবসায়ী গত বছরের ২৮ নভেম্বর পুলিশ সুপার বরাবরে অভিযোগ এবং চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি কক্সবাজার সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরী দায়ের করেন। এসব অভিযোগ ও সাধারণ ডায়েরীতে বদরুল হাসান মিল্কি কর্তৃক হোটেল থেকে বের করে দেয়ার হুমকি, চুক্তিমতো কাজ না করা, হত্যার হুমকিসহ বিভিন্ন হয়রাণীর প্রতিকার চান আমেরিকা প্রবাসী ওই ব্যবসায়ী। কিন্তু আর্শ্চায্যজনক হলেও সত্য যে, ধুরন্ধর বদরুল হাসান মিল্কি হোটেল ভাড়া নেয়া ওই ব্যবসায়ীকে হোটেল ছাড়তে বাধ্য করতে পুলিশকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে হোটেলটিতে অভিযান চালান। মিথ্যা অভিযোগে পুলিশ সেখান থেকে তার মালয়েশিয়ান কম্পানির বেশ কিছু পণ্য জব্দ করে নিয়ে যায়। অথচ ওই ব্যবসায়ী মালয়েশিয়ান এসব পণ্য ‘কে-লিংক ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (প্রা:) লিঃ’ এর মাধ্যমে বৈধভাবে কক্সবাজারে বাজারজাত করছিলেন। রাজধানীর বনানীতে কম্পানিটির বাংলাদেশের প্রধান কার্যালয়। সেখানে দাতু গুনাহলম সুব্রমানিয়া নামের ভারতীয় বংশদ্ভোত মালয়েশিয়ান এক নাগরিক কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কম্পানিটির এসব পণ্য বাংলাদেশ সরকারের যাবতীয় আইন মেনেই বাজারজাত করা হচ্ছে বলে আমেরিকা প্রবাসী ব্যবসায়ী শেহাব উল্লাহ জানান। তিনি আরও জানান, মিল্কি আর কোন উপায় না দেখে একটি বৈধ কম্পানির কিছু পণ্য জব্দ দেখিয়ে প্রভাব বিস্তার করে আইনশৃংখলা বাহিনীকে ভুল তথ্য দিয়ে তাকে হয়রাণী করে হোটেল ছেড়ে কক্সবাজার ছাড়তে বাধ্য করছে। বর্তমানে হুমকির মুখে ওই আমেরিকা প্রবাসী কক্সবাজার যেতে পারছেন না। এছাড়া হোটেল ভাড়াসহ মালয়েশিয়ান কম্পানিটির পণ্যের কক্সবাজারের পরিবেশক হিসেবে হোটেলটিতে প্রায় ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন তিনি। আর এসব টাকায় এখন চরম ঝুঁকিতে পড়েছে। মিল্কি জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য পরিচয় দিয়ে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেন বলে অভিযোগ।
এদিকে সূত্র জানিয়েছে, ইতিপূর্বেও বদরুল হাসান মিল্কি সী-ওয়েলকাম রিসোর্ট ভাড়া দিয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। টাকা নিয়ে হোটেল ভাড়া দিয়ে চুক্তিমতো কাজ না করে নানাভাবে হয়রাণীর মাধ্যমে হোটেল ছাড়তে বাধ্য করেন মিল্কি। আর এভাবে ফাঁদ পেতে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। নানা প্রতারণার মাধ্যমে তিনি বহু সহায় সম্পদের মালিক হয়েছেন। টেকনাফে মিল্কি রিসোর্ট, কক্সবাজারে মিল্কি রিসোর্ট, সী-ওয়েলকাম রিসোর্ট, ২টি গাড়ি, বাজারঘাটায় হাসান ট্রেডার্স নামের দোকান, শাহপরীর দ্বীপসহ বিভিন্ন স্থানে অর্ধশত একর জমি রয়েছে। ছাত্রজীবনে শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও নানা কায়দা কৌশলে তিনি এখন জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বদরুল হাসান মিল্কি বলেন, শেহাব উল্লাহকে হোটেল ভাড়া দিয়েছি সত্য। কিন্তু সে হোটেলে অবৈধ ব্যবসা চালাচ্ছে। আমি পুলিশকে অভিযোগ করে অবৈধ ওষুধ জব্দ করিয়েছি। প্রভাব বিস্তারের কথা সত্য নয় বলেও দাবী করেন তিনি।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।