নয় মাস আগে বাড়ী ছেড়ে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার ছায়ানীড়ের জঙ্গী আস্তানায় নিহত কামাল ও তার স্ত্রী জোবাইরা ইয়াসমিনের গ্রামের বাড়ী পরিদর্শন করেছেন বান্দরবান জেলা পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়। রবিবার (১৯ মার্চ) বেলা ১২টায় তিনি বাইশারী ইউনিয়নের যৌথখামার পাড়ায় সরেজমিনে নিহতের বসতবাড়ি পরিদর্শণ শেষে দুপুর ২টায় স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে জরুরী সভায় মিলিত হন।
এ সময় বান্দরবান জেলা পুলিশ সুপার বাইশারী ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে নিখোজ ব্যক্তিদের তালিকা তৈরী, রাবার বাগান শ্রমিকদের ছবি সংগ্রহ ও স্কুল-মাদরাসায় পড়–য়া শিক্ষার্থীদের ৩ মাসের অধিক অনুপস্থিতিতির তালিকা তৈরীর জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানান। জঙ্গীবাদ নির্মূলে এলাকাবাসীকে এগিয়ে আসার আআহ্বানের পাশাপাশি সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিটি জামে মসজিদে ইমামদের সঠিক খুতবা দেওয়ার অনুরোধ জানান।
পরে উপস্থিত জেলা-উপজেলার বিভিন্ন ইলেক্সট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। সাংবাদিকদের পুলিশ সুপার বলেন- নিহত জোবাইরার ও কামালের পিতাকে লাশ গ্রহন ও সনাক্তকরণের জন্য চট্টগ্রাম পুলিশের কাছে পাঠানো হয়েছে এবং বাইশারীতে যেন এ ধরনের জঙ্গি সম্পৃক্ততার সাথে কেউ জড়িত হতে না পারে সেজন্য পুলিশকে সহায়তার করতে হবে এলাকাবাসীকে।
২০১৬ সালের চার মাসের ব্যবধানে দুই হত্যাকান্ড ও স্থানীয় বাজারে পুলিশের উপর বোমা বিস্ফোরনের সাথে এসব জঙ্গীর সম্পৃক্ততা ছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান পুলিশ সুপার।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- বাইশারীকে জঙ্গি কারখানা হিসেবে ব্যবহার করতে দেওয়া হবেনা। যারা মোটিভেশন দেয় তাদের চিহ্নত করার জন্য চেয়ারম্যান-মেম্বার ও সর্বস্থরের সামাজিক মানুষকে নিয়ে নিখোঁজের তালিকা করা হবে। কোন ধরনের জঙ্গি যাতে এলাকায় অবস্থান নিতে না পারে তার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, পাশাপাশি চালানো হবে অভিযান। এসময় নাইক্ষ্যংছড়ি থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এএইচএম তৌহিদ কবির, বাইশারী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ এসআই আবু মুসা, বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো: আলম, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বাহাদুর উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য ২০১৬ সনের ৩ফেব্রুয়ারী বাইশারী বাজারে পুলিশের উপস্থিতির দেখে বোমা বিষ্ফোরণ, ১ মে বৌদ্ধ ভান্তে হত্যা ও ৩০ জুন এক আওয়ামীলীগ নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করে দুষ্কৃতিকারীরা। সিতাকুন্ডে জঙ্গি আস্তায় বাইশারীর দুইজন মৃত্যুর খবরের পর বাইশারীর হত্যাকান্ডে তাদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে এলাকায় গুঞ্জণ ছড়িয়ে পড়েছে। যদিওয়া নিহত কামালের পরিবার পাশর্^বর্তী রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা ও জোবাইরা ইয়াসমিনের পরিবার মহেশখালী থেকে এসে ১০ বছর পূর্বে যৌথখামার এলাকায় আশ্রয় নিয়েছিল।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার সীতাকুন্ডে ৪ ঘন্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযানে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ এবং গুলিতে ওই দম্পতি সহ চার জঙ্গির পাশাপাশি এক শিশু প্রাণ হারায়। ওই দম্পতি নিহত হওয়ার ঘটনা গনমাধ্যমে পাশাপাশি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে বেরিয়ে আসে আরো তথ্য। এলাকা থেকে ইতিমধ্যে জহিরুল হক, তার স্ত্রী রাজিয়া বেগম ও মনিজয়ারা বেগম নিখোজ রয়েছে বলে জানিয়েছেন জঙ্গী আস্তানায় নিহত জোবাইরা ইয়াসমিনের বড় ভাই জিয়াবুল হক। তারা কোথায় আছেন সেই খবরও তিনি জানেন না। নিখোজ জহিরুল (২৪) ও মনজিয়ারা (১৬) নিহত জোবাইরা ইয়াসমিনের আপন ভাই ও বোন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।