১৭ মে, ২০২৫ | ৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ | ১৮ জিলকদ, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  চুনোপুঁটি ধরলেও অধরা রাঘববোয়ালরা   ●  তরুণ সমাজসেবক ও রাজনীতিবিদ সোহরাব হোসেন ডলার: এক প্রতিশ্রুতিশীল পথচলা   ●  উখিয়ার প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী ফরিদ আহম্মদ চৌধুরীর ৬ষ্ট মৃত্যুবার্ষিকী আজ   ●  কক্সবাজার জেলা বিএনপির সদস্য সিরাজুল হক ডালিম’র সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ   ●  শ্রমিক দিবসে সামাজিক সংগঠন “মানুষ” এর ভিন্নধর্মী উদ্যোগ   ●  বীর মুক্তিযোদ্ধা এম. আবদুল হাই এর ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী ২৯ এপ্রিল   ●  লুৎফুর রহমান কাজলের মা সাবেক এমপি সালেহা খানমের ইন্তেকাল করেছেন   ●  টেকনাফে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে ডাকাতদলের গোলাগুলি, গুলিবিদ্ধ ১   ●  সিবিআইইউ’তে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন হয়েছে।   ●  গভীর রাতে পাহাড়ের মাটিভর্তি একটি ড্রাম ট্রাক( ডাম্পার) জব্দ করেছে কক্সবাজার বনবিভাগ

নারীঘটিত কারণে চবি ছাত্রের হাত-পা বাঁধা লাশ নগরীর খালি বাসায়

নগরীর বায়েজিদ থানার শহীদ নগর এলাকার একটি বাসা থেকে বুধবার রাতে আলাউদ্দিন আলাওল (২৪) নামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আলাউদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের মাস্টার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র। ধারনা করা হচ্ছে নারীঘটিত বিষয়কে কেন্দ্র করে পরিকল্পিতভাবে আলাওলকে হত্যা করা হয়েছে।

বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন জানান, বুধবার রাত বারোটার সময় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় শহীদ নগরের একটি চারতলা বাসা থেকে এক যুবকের হাত পা বাধা লাশ উদ্ধার করা হয়। পরিচয় না পেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে নিহত যুবকের ছবি পোস্ট করি। আর এ ছবি দেখে তার পরিবারের লোকজন থানায় আসে। আলাওলের বাড়ি হাটহাজারীর ফতেপুর ইউনিয়নের মদনহাট হেলাল চৌধুরীর বাড়িতে। ধারনা করা হচ্ছে, পূর্বপরিকল্পিভাবে আলাওলকে হত্যা করা হয়েছে।
আলাওলের বন্ধু সাদেক হোসাইন বলেন, অনার্সে আমরা একসঙ্গে ভর্তি হয়েছিলাম। আমার রোল নম্বর ২৯, আলাওলের ছিল ৩০। দু’জনের বাবার নাম একই। সে ছিল আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়- মাঝে মাঝে আলাওল অক্সিজেন এলাকায় আসতেন। আলাওলের সঙ্গে এক তরুণীর সম্পর্ক ছিল। মদনহাটের ওই তরুণী বর্তমানে অক্সিজেন এলাকায় থাকেন। তিন-চার বছর আগে মেয়েটির সাথে তার সম্পর্ক গড়ে উঠে। বিয়ে হবার কিছুদিন পর স্বামীর সাথে মেয়েটির ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। পরবর্তীতে আরেকজনের সাথে বিয়ে হয়। ঘটনার পর থেকে মেয়েটির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে হত্যাকা-ের সাথে মেয়েটি জড়িত কি-না তা এখনো নিশ্চিত নয়। মেয়েটিকে পাওয়া গেলে হত্যার ক্লু পাওয়া যাবে এমনটি ধারনা পুলিশের।
পুলিশ জানায়, ফটিকছড়ির বাসিন্দা ওমান প্রবাসী আবু ছৈয়দের মালিকানাধীন শহীদনগর এলাকার চারতলা বাড়ির তিনতলার একট বাসা খালি ছিল। বিজ্ঞপ্তি দেখে গত মঙ্গলবার এক যুবক ও এক তরুণী বাসা ভাড়া নিতে আসেন। তবে বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক হাসিনা আক্তার না থাকায় ওইদিন তাদের বাসা দেখানো সম্ভব হয়নি।
বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে তিন যুবক ও এক তরুণী পুনরায় বাসা দেখতে আসেন। এসময় তারা এক বস্তা মালামাল নিয়ে আসেন। পরে বাসা খুলে দেওয়া হলে তারা বাসাটা পরিস্কারের জন্য তত্ত্বাবধায়কের কাছ থেকে একটি বালতি নেন। পরে তারা বাজার করার আর অন্যান্য মালামাল নিয়ে আসার কথা বলে বাসা থেকে বের হন।
রাত ১১টার দিকে বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক ওই বাসার সামনে দিয়ে হাঁটতে গিয়ে দেখেন বাসার দরজা খোলা। ভেতরে কারও আওয়াজ না শুনে তিনি সেখানে প্রবেশ করেন। বাসার টয়লেটের দরজা খোলে দেখেন এক যুবক হাত-পা বাধা অবস্থায় সেখানে পড়ে রয়েছেন। এরপর পুলিশকে খবর দিলে তারা এসে মরদেহ উদ্ধার করেন। পরে সিআইডি গিয়ে ঘটনাস্থলের আলামত সংগ্রহ করেন।
আলাওলের বাবা শাহ আলম বলেন, ‘বুধবার বিকেলে অক্সিজেনে থাকা তার এক বন্ধুর বাসায় যাবে বলে বের হয় আলাওল। রাত ৯টায়ও বাড়িতে না আসায় তার মুঠোফোনে ফোন করি। কিন্তু তার ব্যবহৃত নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। আধঘণ্টা পরও তার সাথে যোগাযোগ করতে না পারায় অক্সিজেনে থাকা তার বন্ধু সাদেকের সাথে যোগাযোগ করি। কিন্তু সে জানায় তার বাসায় আলাওল যায়নি।’ ‘তারপর পুরো রাত আমরা চিন্তায় ছিলাম। কারণ কোনোদিন সে না বলে কোথাও থাকে না। পরে সকালে বায়েজিদে তার লাশ পাওয়া গেছে বলে শুনতে পাই।’-বলেন আলাওলের বাবা।
আলাওলের খালাতো ভাই মো. রিয়াদ হোসেন বলেন, ‘আলাওল ভাই আমার প্রায় সমবয়সী ছিল। তাই সে সবকিছু আমার সাথে শেয়ার করত। কারও সাথে কোনো দ্বন্দ্ব আছে কি-না সে বিষয়ে কোনোদিন কিছু বলেনি। কোনো রাজনীতির সাথেও সে জড়িত ছিল না, এমনকি খারাপ অভ্যাসও তার মধ্যে ছিল না।’
আলাওলের সহপাঠী সাদেক বলেন, ‘ওইদিন সে আমার বাসায় আসেনি। রাত ১১টার পর তার বাবা আমাকে বিষয়টি জানানোর পরই আমি জানি। পরেরদিন (বৃহস্পতিবার) সকালে ফেসবুকের একটি গ্রুপে বন্ধু আলাওলকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে একটি পোস্ট দিই। এর ঠিক একঘণ্টা পর শুনি বায়েজিদ এলাকায় যে যুবকের মরদেহ পাওয়া গেছে সে-ই আমাদের আলাওল।’
হাটহাজারী থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, ছেলের মৃত্যুসংবাদ শোনার পর থেকে অজ্ঞান হয়ে যান বাবা শাহ আলম। দীর্ঘদিন সৌদিআরবে প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেড়বছর আগে দেশে ফিরেন। বাড়ির কাছে তাদের একটি মুদির দোকান রয়েছে। দুই ভাইয়ের মধ্যে আলাউদ্দিন বড়। সালাউদ্দিন নামে তার একটি ছোট ভাই রয়েছে। ময়না তদন্তের পর আলাউদ্দিনের লাশ গ্রামের বাড়িতে নেয়া হয়েছে।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।