১ মে, ২০২৫ | ১৮ বৈশাখ, ১৪৩২ | ২ জিলকদ, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  বীর মুক্তিযোদ্ধা এম. আবদুল হাই এর ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী ২৯ এপ্রিল   ●  লুৎফুর রহমান কাজলের মা সাবেক এমপি সালেহা খানমের ইন্তেকাল করেছেন   ●  টেকনাফে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে ডাকাতদলের গোলাগুলি, গুলিবিদ্ধ ১   ●  সিবিআইইউ’তে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন হয়েছে।   ●  গভীর রাতে পাহাড়ের মাটিভর্তি একটি ড্রাম ট্রাক( ডাম্পার) জব্দ করেছে কক্সবাজার বনবিভাগ   ●  অস্ত্র উদ্ধার ও ওয়ারেন্ট তামিলে জেলার শ্রেষ্ঠ হলেন এসআই খোকন কান্তি রুদ্র   ●  উখিয়ায় সাংবাদিক জসিম আজাদের জমি ও বসতবাড়ি দখলের চেষ্টায় হামলা   ●  কৃষকদল নেতা পরিচয়ে জমি দখল গুলি বর্ষণ আটক ১   ●  উখিয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনারের ৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল পরিদর্শন   ●  প্রথম ধাপে এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে রাজি মিয়ানমার

নাফ নদের জালিয়ার দ্বীপ হয়ে উঠতে পারে আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র

কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের নাফ নদের বুকে জেগে ওঠা নৈসর্গিক সৌন্দর্যমণ্ডিত একটি ভূখণ্ড জালিয়ার দ্বীপ। যেন এক টুকরা বাংলাদেশ। যা ধারণ করছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার সম্ভার। চারপাশ সবুজ বিস্তৃত, ডিম্বাকৃতির মনোহর ছোট্ট এই দ্বীপ। হাতছানি দিচ্ছে পর্যটনের নতুন এক দিগন্তের। পর্যটন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একপাশে মিয়ানমার, অন্যপাশে বাংলাদেশের বিশাল নেটং পাহাড়-দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করবে ছোট্ট এই ভূখণ্ডে। অদূর ভবিষ্যতে এই জালিয়ার দ্বীপটি হয়ে উঠতে পারে আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র।

দেশের সর্ব দক্ষিণ সীমান্ত শহর টেকনাফে আছে সমুদ্র, নদী, পাহাড়, বন, ম্যানগ্রোভ বন, বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্য, প্রবাল দ্বীপ সবকিছুর সম্মিলন। নীলাভ পানি শান্ত নাফ নদে পালতোলা নৌকা আর জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য, অসাধারণ। বড় বড় পাহাড়ের টেক, আর পাহাড়ের গা ঘেঁষা নদের নাম ‘নাফ’— এই দুইয়ে মিলে টেকনাফ।

টেকনাফ শহরে ঢোকার মুখে উঁচু নেটং পাহাড়ের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথেই চোখে পড়ে দ্বীপটি। ২৭১ দশমিক ৯৩ একর জায়গা জুড়ে পাহাড় আর নদীঘেরা নয়নাভিরাম এই দ্বীপ পর্যটনের জন্য হাতছানি দিচ্ছে। পর্যটন শিল্প গড়ে তোলা হলে টেকনাফ ও আশপাশ এলাকায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়বে। ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের বাণিজ্যেও।

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের নেটং পাহাড়ের কাছে নাফ নদীর মাঝখানে অবস্থিত দ্বীপটিতে এখন পর্যন্ত কোনো জনবসতি গড়ে ওঠেনি। টেকনাফের কিছু বাসিন্দা সেখানে অবৈধভাবে চিংড়ি ও লবণ চাষ করে দীর্ঘদিন ধরে। ছোট ডিঙি নৌকা নিয়ে ওই দ্বীপে যাতায়াত করে লোকজন।

জানা গেছে, অনন্য সুন্দর এই দ্বীপ ঘিরে সম্প্র্রতি উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। দ্বীপের ২৭১ দশমিক ৯৩ একর জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা হচ্ছে ‘নাফ ট্যুরিজম পার্ক’। পর্যটনের আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধাই যুক্ত হবে এখানে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জালিয়ার দ্বীপে যাতায়াতের জন্য কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়ক সংলগ্ন স্থলবন্দরের পাশ দিয়ে একটি আকর্ষণীয় ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ করা হবে। নদীর ওপর ও খোলা আকাশের নিচে ঝুলে থাকা সেতুটি হেঁটে পার হয়ে পর্যটকরা প্রকৃতির নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করতে করতে পৌঁছে যাবে জালিয়ার দ্বীপে।
এ ছাড়াও দ্বীপে গড়ে তোলা হবে রিসোর্ট, ক্যাবল কার, ওশনেরিয়াম, ভাসমান রেস্টুরেন্ট, কনভেনশন সেন্টার, সুইমিংপুল, ফান লেক, অ্যাকুয়া পার্ক, ফিশিং জেটি, অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, শিশুপার্ক, ওয়াটার স্পোর্টস, ক্রুজ লাইন প্রভৃতি। ইতিমধ্যে এই দ্বীপের উন্নয়নযজ্ঞ বাস্তবায়নের জন্য ডেভেলপার নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

সূত্র জানায়, সেন্টমার্টিন যাওয়ার সময় যে ঘাট থেকে জাহাজে ওঠা হয়, সেই ঘাটের বিপরীত পাশে নদের মধ্যে থাকা দ্বীপটিতে গড়ে তোলা হবে পর্যটনের নতুন সম্ভাবনার এই দুয়ার। টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া এলাকার এই স্পটে ডিজাইন বিল্ড ফিন্যান্স অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফার (ডিবিএফওটি) পদ্ধতিতে ৫০ বছর মেয়াদে অনন্য একটি পর্যটন স্পট গড়ে তোলা হচ্ছে। ইতিমধ্যে জার্মানির একটি প্রতিষ্ঠান দিয়ে দ্বীপটিতে সম্ভাব্যতা জরিপ চালানো হয়েছে। সেই অনুযায়ী পর্যটনের জন্য একটি গাইডলাইন ঠিক করা হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে দুই তিন বছরের মধ্যে তা চালু করা যেতে পারে।

সূত্র জানায়, ‘কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন পর্যটন স্পটের মধ্যখানের এলাকা টেকনাফে নাফ নদের মধ্যখানের এই দ্বীপটিতে যাওয়ার জন্য নদীর তীর থেকে দ্বীপ পর্যন্ত একটি ঝুলন্ত সেতু করা হবে। আর দ্বীপের নির্ধারিত জায়গায় গাড়ির পার্কিং চত্বর নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া দ্বীপটিতে কিছু মাটি ভরাটের কাজও করা হবে। পরবর্তীতে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান পুরো দ্বীপটিকে নিয়ে একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করবে। মহাপরিকল্পনার আলোকে একটি আধুনিক পর্যটন শিল্পের জন্য যা যা প্রয়োজন সবকিছুই থাকবে এই স্পটে।

’ বেজা সূত্রে জানা যায়, ঝুলন্ত সেতু, রিসোর্ট, ক্যাবল কার, ওশনেরিয়াম, ভাসমান রেস্টুরেন্ট, ইকো কটেজ, কনভেনশন সেন্টার, সুইমিং পুল, ফান লেক, অ্যাকুয়া পার্ক, ফিশিং জেটি, এমিউজমেন্ট পার্ক, শিশু পার্ক, ওয়াটার স্পোর্টস ও ক্রুজ লাইন সুবিধা থাকছে এই পর্যটন স্পটে।

এই দ্বীপটিতে আগে লবণ ও চিংড়ি ঘেরের চাষ হতো জানিয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘সরকার পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে দ্বীপটিতে ট্যুরিজম ডেভেলপ করতে চায়। এ জন্য বেজাকে পুরো দ্বীপটি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তারা জেটিসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শুরু করেছে। ’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নাফ নদে প্রাকৃতিকভাবে অনন্য সুন্দর একটি নদী। আর সেই নদীর দ্বীপে পর্যটন স্পট করায় দেশি-বিদেশি অনেক পর্যটক আসবে এবং এলাকার অর্থনৈতিক উন্নতি হবে।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।