‘বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র সৈকতের নগরী কক্সবাজার অনেক আগেই আরো বদলে যাওয়া দরকার ছিলো। তা হয়নি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সে বিষয়টিতে গুরুত্ব দিলেন। তাইতো তিনি কক্সবাজারের উন্নয়নে নানাভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এই প্রচেষ্টার পূর্ণাঙ্গ উদ্যোগ হলো ‘কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ (কউক) গঠন। কউক’র মাধ্যমেই তিনি কক্সবাজারকে একটি আধুনিক মানের নগরী হিসাবে গড়ে তোলার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবেন।’ এক আলাপচারিতায় কথাগুলো বললেন ‘কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ (কউক) চেয়ারম্যান কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমেদ।
তিনি বলেন, পর্যটন শিল্পকে সামনে রেখে কক্সবাজারকে সাজানো হবে। পর্যটন দিয়ে বিশ্বের পর্যটনপ্রেমী মানুষদের টানতে কক্সবাজারের অবকাঠামো সেভাবে গড়ে তোলা হবে।
তিনি জানান, ঢাকা ও চট্টগ্রামে যেভাবে অপরিকল্পিতভাবে ভবন গড়ে উঠছে কক্সবাজারে তা হতে দেয়া হবে না। যেহেতু এই শহরে বর্তমানে মাত্র ৩০ শতাংশ ভবন গড়ে উঠেছে তাই বাকি জায়গাগুলো যাতে পরিকল্পিতভাবে ভবন গড়ে উঠে সেজন্য মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হবে। সেই মাস্টারপ্ল্যানের আলোকে তৈরি করা হবে ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ)। কক্সবাজারের প্রাণ সমুদ্র সৈকতকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে সাজানো হবে। সৈকতে সব ধরণের অবকাঠামো ও সাজসজ্জা করা হবে। সৈকতের পরিবেশ রক্ষার্থে ৩০০ ফুটের ভেতরে কোনো স্থাপনা থাকতে দেয়া হবে না। যেহেতু শহরটি গড়ে উঠার সময়ে ‘কউক’ সৃষ্টি করা হয়েছে তাই এটিকে একটি মডেল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ হিসেবে গতে তোলার সুযোগ রয়েছে।
কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমেদ বলেন, পর্যটনকে কেন্দ্র করেই কক্সবাজার। ইতিমধ্যে টেকনাফের নাফ নদী ও সাবরাং এলাকায় বেজা (বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি) পর্যটন ও অর্থনীতিকে কেন্দ্র করে কিছু প্রকল্প নিয়েছে। অবশ্যই কক্সবাজারের উন্নয়নে পর্যটনকে প্রাধান্য দিয়ে পরিকল্পনা করা হবে। এর মধ্যে প্রথমে কলাতলী থেকে হলিডে মোড় পর্যন্ত সাগরের তীরে একটি ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। পুরুষ ও নারীদের জন্য পৃথক দুটি ওয়াকওয়ে নির্মাণের জন্য সড়ক ও জনপথের সাথে কথা হয়েছে। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের একটি টিম এই কাজ করবে। সেখানে থাকবে সাগর থেকে গোসল করে আসা পর্যটকদের পোশাক পরিবর্তনের জন্য চেঞ্জ রুম, হাত-পা ধোয়ার জন্য ওয়াশ রুমসহ নানা সুবিধা। এছাড়া যত্রতত্র যাতে হোটেল বা মার্কেট গড়ে উঠতে না পারে সেজন্য ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পর্যটন সংশ্লিষ্ট হোটেল গড়ে উঠবে নির্ধারিত স্থানে।
ফোরকান আহমেদ জানান, আমরা কউকের পক্ষ থেকে পুরো কক্সবাজার শহরের বিদ্যমান ভবনগুলো সার্ভের কাজ শুরু করে দিয়েছি। সেই টিম কক্সবাজারের ভবনগুলো ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী রয়েছে কি-না তা যাচাই করবে। যাচাই করার পর কউকের পক্ষ থেকে নতুন করে অনুমোদন দেয়া হবে। যাদের ভবন নীতিমালা অনুযায়ী থাকবে না তাদেরকে নীতিমালা অনুযায়ী সংশোধন করতে বলা হবে। অপরদিকে নতুন যেসব ভবন নির্মিত হবে সেগুলোকে অবশ্যই নীতিমালা মেনে নির্মাণ করতে হবে। অন্যদিকে নিজেদের অভ্যন্তরীণ তহবিল গঠনের জন্য অবশ্যই কিছু প্রকল্প নেওয়া হবে। এর মধ্যে আবাসন প্রকল্পের পাশাপাশি বাণিজ্যিক কিছু প্রকল্প নেয়া হবে। কোথায় আবাসন প্রকল্প করলে ভাল হবে সেই অনুযায়ী জায়গা খোঁজার কাজ চলছে।
তিনি আরো জানান, শহরের ভেতরে লালদীঘি, বাজারঘাটা ও ফুলদীঘি নামে তিনটি উল্লেখযোগ্য দীঘির অবয়বে নান্দনিকতার ছোঁয়া এনে প্রকল্প নেয়া হবে। শিগগিরই এসব প্রকল্প নেয়া হবে। যাতে মানুষ বুঝতে পারে কউক কাজ করতে শুরু করেছে।
কউক চেয়ারম্যান বলেন, এতোদিন পৌরসভা এবং জেলা প্রশাসন কক্সবাজারকে দেখভাল করেছে। এখন যেহেতু সরকার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সৃষ্টি করেছে তাই বিধি অনুযায়ী এসব সংস্থাগুলোকে নিয়ে আমি কাজ করবো। কারণ এসব সংস্থার সহায়তা ছাড়া কখনো পরিকল্পিত উন্নয়ন নিশ্চিত করা যাবে না। সকল সংস্থার সাথে কথা বলে একটি সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা নেয়া হবে। সমগ্র কক্সবাজার জেলা কউক এর আওতাধীন এলাকার মধ্যে রয়েছে। পুরো এলাকা পরিকল্পিতভাবে উন্নয়নের জন্য কাজ করবে কউক।
তিনি জানান, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের জনবল কাঠামো এখনো অনুমোদন হয়নি। জনবল কাঠামো পাঠানো হয়েছে তা অনুমোদনের পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র পেলে লোক নিয়োগ দেয়ার কার্যক্রম শুরু হবে। এসব কাজ সম্পাদন করতে হয়তো আরও দুই থেকে তিন মাস সময় লাগতে পারে। পুরোপুরি কাজ শুরুর স্বল্প সময়ের মধ্যে দৃশ্যমান কাজ দেখতে পাবেন কক্সবাজারের মানুষ। এক কথায় বলা যায়, কক্সবাজারকে বদলে দিতে কাজ করবে কউক।
তিনি বলেন, ‘সর্বোপরি বলতে চাই, আমি কক্সবাজারের সন্তান। আমি চাই কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ একটি দুর্নীতিমুক্ত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ হিসেবে গড়ে উঠবে। এই শহরে থাকবে না কোনো বিলবোর্ড। বিলবোর্ডমুক্ত শহর হবে কক্সবাজার। ভূমির পরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাই।
উল্লেখ্য, পর্যটন ও অর্থনীতির হাব হিসেবে বেড়ে উঠতে যাওয়া বৃহত্তর কক্সবাজারকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে গত বছর কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়। তবে নকশা অনুমোদনে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করেন গত ২৩ জানুয়ারি।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।