৫ অক্টোবর, ২০২৫ | ২০ আশ্বিন, ১৪৩২ | ১২ রবিউস সানি, ১৪৪৭


শিরোনাম
  ●  কক্সবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে স্কিলস অ্যান্ড ইনোভেশন কম্পিটিশন অনুষ্ঠিত   ●  আলোচিত ইমরানের ২০ হাজার ইয়াবা নিয়ে লুটপাট, পরে রফাদফা!   ●  দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ   ●  কক্সবাজারে ভূমি নিবন্ধনে আকাশচুম্বী বর্ধিত উৎসেকর বাতিল, প্রসংশায় পঞ্চমুখ সালাহউদ্দিন আহমদ   ●  হলদিয়ায় ইমরানের ২০ হাজার ইয়াবা নিয়ে উধাও ৩ যুবক   ●  দুর্ধর্ষ প্রতারক দিদারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি   ●  ইয়াবাসহ পুলিশে সোপর্দ, চোর সন্দেহে চালান, এলাকায় ক্ষোভ   ●  শিক্ষার্থীদের ভালোবাসায় সিক্ত কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান   ●  “প্লাস্টিক উৎপাদন কমানো না গেলে এর ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনা সম্ভব নয়”   ●  নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে কক্সবাজারে তাঁতীদলের খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন

সেন্ট মার্টিনের অবৈধ ১০৬ আবাসিক হোটেল অপসারণের নির্দেশ

প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) সেন্ট মার্টিনদ্বীপে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ১০৬টি আবাসিকহোটেল ১০ মের মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেপরিবেশ অধিদপ্তর। গত শনিবার সংশ্লিষ্ট হোটেলকর্তৃপক্ষকে এ-সংক্রান্ত নোটিস দেয়া হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিদর্শকমো. মুবিনুল ইসলাম বলেন, ‘অবৈধভাবে স্থাপনানির্মাণের অভিযোগে পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশেচট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় থেকে সেন্ট মার্টিনের১০৬টি স্থাপনা হোটেল কর্তৃপক্ষকে নিজ দায়িত্বেসরিয়ে নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ-সংক্রান্তনোটিসের কপি সংশ্লিষ্টদের কাছে ২৯ এপ্রিল পৌঁছেদেয়া হয়েছে।’

জানা যায়, গত জানুয়ারিতে ইয়ুথ এনভায়রনমেন্টসোসাইটি (ইয়েস) নামে কক্সবাজারের স্থানীয় একটিপরিবেশবাদী সংগঠন সেন্ট মার্টিনের অবৈধ হোটেল-রিসোর্টের ওপর একটি জরিপ করে। এতেনির্মাণাধীনসহ ১০৬টি হোটেল-রিসোর্টের বিস্তারিততালিকা প্রকাশ করা হয়।

এর পর সংগঠনটি কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ওপরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে একটিআবেদন জমা দেয়। আবেদনে তারা জানায়,আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশ সত্ত্বেও সেন্টমার্টিনেরপ্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় প্রতিদিন হোটেল-মোটেলসহ নানা স্থাপনা গড়ে উঠছে। এ তালিকাপ্রকাশের পর পরই তত্পর হয় প্রশাসন।

এছাড়া সেন্ট মার্টিন দ্বীপে আদালতের নিষেধাজ্ঞাঅমান্য করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের বিষয়টিবাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)আদালতের নজরে আনে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১মার্চ হাইকোর্ট সেন্ট মার্টিন দ্বীপ থেকে পরিবেশগতছাড়পত্রবিহীন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও নতুনস্থাপনার নির্মাণ বন্ধে ব্যর্থতার জন্য চার সচিবসহ ১১জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারিকরেন। তারা হলেন পরিবেশ ও বন সচিব, বেসামরিকবিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব, মত্স্য ওপ্রাণীসম্পদ সচিব, নৌপরিবহন সচিব, পর্যটনকরপোরেশনের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরেরমহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলেরপরিচালক, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, পুলিশসুপার, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী ও সেন্ট মার্টিনইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।

এ ব্যাপারে বেলার আইনজীবী সাইদ আহমেদ কবিরবলেন, ‘২০০৭ সালে কোস্টাল অ্যান্ড ওয়েটল্যান্ডবায়োডাইভার্সিটি ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্টের একজরিপে দেখা যায়, সেন্ট মার্টিনে ৭৪টি অবৈধ স্থাপনারয়েছে। ওই জরিপের পরিপ্রেক্ষিতে এসব অবৈধস্থাপনা অপসারণের নির্দেশনা চেয়ে বেলার পক্ষথেকে ২০০৯ সালে হাইকোর্টে জনস্বার্থমূলক একটিরিট করা হয়। রিটের শুনানি শেষে ২০১১ সালের ২৪অক্টোবর পরিবেশগত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায়ছাড়পত্রবিহীন স্থাপনা অপসারণ করতে হবে বলেআদালত রায় দেন। একই সঙ্গে ছাড়পত্রবিহীন নতুনকোনো স্থাপনা নির্মাণ না করা ও বিরল প্রজাতিরপ্রাণী সংরক্ষণেরও নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। অথচআদালতের এ স্পষ্ট নির্দেশ সত্ত্বেও অবৈধ স্থাপনাউচ্ছেদ করা হয়নি। বরং দিন দিন তা বেড়েছে। একারণেই বেলার পক্ষ থেকে হাইকোর্টে আদালতঅবমাননার আবেদন করা হয়।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধাননির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আদালতেরসুস্পষ্ট নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও সেন্ট মার্টিনে প্রতিবেশসংকটাপন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে হোটেল,মোটেলসহ নানা স্থাপনা। আদালতের নির্দেশ প্রদানেরপাঁচ বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও নির্দেশঅনুযায়ী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যর্থতা দেশেরবিচার ব্যবস্থার প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম অবজ্ঞাও উদাসীনতার প্রমাণ। একই সঙ্গে তা আদালতঅবমাননাও।’

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সেন্ট মার্টিন দ্বীপকেপ্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করেসেখানে সব ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ, মাটিরপরিবর্তন, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস, বন্য প্রাণী শিকার,শামুক, ঝিনুক, প্রবাল, শৈবাল, পাথর আহরণ ওসরবরাহ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ আইনলঙ্ঘন করে শতাধিক হোটেল-মোটেল তৈরি করাহয়েছে।

এ প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয়কার্যালয়ের পরিচালক মো. মাসুদ করিম বলেন, ‘নিজদায়িত্বে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে সংশ্লিষ্টদের বলাহয়েছে। আগামী ১০ মের মধ্যে তারা এসব অবৈধস্থাপনা  অপসারণ না করলে আইনগত প্রক্রিয়াঅনুসরণ করে তা উচ্ছেদ করা হবে। দেশের একমাত্রপ্রবাল দ্বীপ রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এবিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশও রয়েছে, যা সবাইকেমেনে চলতে হবে।’

এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের এ নির্দেশেরপরিপ্রেক্ষিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে সেন্ট মার্টিনদ্বীপ রক্ষা ও উন্নয়ন পরিষদ নামের একটি সংগঠন।  গতকাল দুপুর ১২টায় কক্সবাজার শহরের হোটেলপ্রাসাদ প্যারাডাইজের সম্মেলন কক্ষে এ সংবাদসম্মেলনে অনুষ্ঠিত হয়।

সম্মেলনে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ রক্ষা ও উন্নয়ন পরিষদেরআহ্বায়ক শিবলুল আজম কোরাইশী বলেন, ‘সেন্টমার্টিনে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সরকারি একাধিকসংস্থা তাদের প্রয়োজনে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে।তেমনি বেসরকারি উদ্যোগে হোটেল-কটেজগুলোওমানুষের প্রয়োজনে নির্মাণ করা হয়েছে। তাই সবস্থাপনা না ভেঙে একটি নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসাপ্রয়োজন।’

প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় অনুমতি ছাড়াহোটেল নির্মাণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অনেকেইপরিবেশ ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তুএখনো কোনো ছাড়পত্র দেয়া হয়নি।’

জানা গেছে, শিবলুল আজম কোরাইশী সেন্ট মার্টিনদ্বীপে তিনতলাবিশিষ্ট হোটেল অবকাশের মালিক।যেটির কোনো পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। তাছাড়া,সংগঠনের নাম সেন্ট মার্টিন দ্বীপ রক্ষা ও উন্নয়নপরিষদ হলেও দ্বীপ রক্ষার বিষয়ে কোনো কথা বলাহয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন সেন্ট মার্টিনইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও কটেজমালিক নুরুল আমিন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগেরসভাপতি ও কটেজ মালিক মুজিবুল হক, সেন্ট মার্টিনবোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দআলম, কটেজ মালিক মৌলভী নুরুল হাকিম, সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুর রহমান ওসেন্ট মার্টিনে নির্মাণাধীন তারকা মানের হোটেলফ্যান্টাসির মালিক আবু জাফর প্রিন্স

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।