পবিত্র রমজানের একদিন পূর্বেই জেলার সবকটি হাট বাজারে ভোগ্যপন্যের দাম বেড়েছে। মাছ সবজিসহ প্রায় প্রতিটি পন্যের দাম এখন রীতিমত আগুন। ফলে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ। বর্তমানে সবজি কিনে খাওয়াও যেন সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। হঠাৎ সবজির মূল্য বৃদ্ধিকে ব্যবসায়ীদের কারসাজি বলছেন ক্রেতারা। প্রথম রমজানে সেহরীতে একটু ভালো ভোজন করার উদ্দেশ্যে ক্রেতারা বাজার মুখী হলেও গতকাল বাজারে ঢুকে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। রমজান মাসে যেসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে সেসব পণ্যের দাম হয়েছে আকাশচুম্বি। বিশেষ করে ছোলা, মসুর ডাল, বুট, বেসন, খেসারির ডাল, বেগুন, পেঁয়াজ, কাচা মরিচ, আলু, টমেটো, বেগুনসহ বিভিন্ন মাছের মূল্য বেশ ঊর্ধ্বমুখি। চাহিদার তুলনায় বাজারে পণ্য সরবারহ পর্যাপ্ত থাকার পরও দর বাড়ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। ক্রেতাদের অভিযোগ সরবরাহ বেশি থাকা সত্বেও বেশি দামে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার কয়েকটি বাজারে গিয়ে দেখা যায় ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির চিত্র। অথচ মূল্যবৃদ্ধি না করার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি প্রশাসনের নিষেধও রয়েছে।
খোজ নিয়ে জানা যায়, রামু উপজেলা বৃহত্তর গর্জনিয়া বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকা দরে। তিন-চারদিন আগে এর দাম ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা। ভারতীয় পেঁয়াজের দামও বেড়েছে কেজিতে ২ থেকে ৫ টাকা। এদিকে রমজানের অন্যতম প্রয়োজনীয় উপকরণ ছোলা আগের সপ্তাহের চেয়ে তিন থেকে ছয় টাকা বেশি দামে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। প্রতি কেজি ছোলার দাম প্রকারভেদে ৫৮ থেকে ৭০ টাকা, খেসারির ডাল প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৫২ টাকা, মুগ ডাল ৭০ টাকা, দেশি মুগ ডাল ১১০ টাকা, চিনি বিক্রি হচ্ছে ৩৭ থেকে ৪০ টাকা দরে।
কাঁচা মরিচ ৬০ থেকে ৮০ টাকা, বেগুন ৪০ থেকে ৫০ টাকা, করলা ৩০ থেকে ৪০ টাকা, শশা ২৬/২৮ টাকা, টমেটো ৬০ থেকে ৮০ টাকা। রমজানের আগেই অস্বাভাবিক হারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রমজানে দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তারা প্রশাসনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
কাঁচা বাজারে পণ্যের দাম সম্পর্কে শহরের বড় বাজারের তরকারী ব্যবসায়ী মোস্তফিজ সও, শামসুল আলম সও:, আলী হোসেন সও:, ইউছুপ সও:, জাকের সও:, আলীজাহান বাজার ব্যবসায়ী হাবিবুল্লাহ, জসিম উদ্দিনসহ একাধিক ব্যবসায়ী জানান, বাজারে সব পণ্যের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। তবে কাচা তরিতরকারীর ক্ষেত্রে কিছুটা মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি তারা অস্বীকার করেননি। এজন্য বিক্রেতারা দায়ী করেছেন পাইকারি ব্যবসায়ীদের। আগামী দু’একদিন পণ্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বমুখী ভাব অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানান খুচরা ব্যবসায়ীরা। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, রমজানকে পুঁজি করে কোনো কারণ ছাড়াই ব্যবসায়ীরা ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
শহরের আলীজাহান বাজারের শাহাব উদ্দিন, বড় বাজার এলাকার শাহ আলম, ইরফান, গর্জনিয়া বাজারের ক্রেতা জাহাঙ্গীর আলম, আবু শাহমা সহ একাধিক ক্রেতা বলেন, প্রতি বছর রমজান এলেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়া একটি রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। কোনো কারণ ছাড়াই ব্যবসায়ীরা এ সময়টাতে পণ্যমূল্য বাড়িয়ে দেন। এতে আমাদের মতো সীমিত আয়ের মানুষদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, পন্যমূল্য বৃদ্ধির এ প্রবণতা জেলার রামু বাজার, ঈদগাও, ঈদগড়, উখিয়া, টেকনাফ, মহেশখালীসহ প্রতিটি বাজারেই বিরাজ করছে। মাত্র ১/২ দিনের ব্যবধানে বাজারে প্রত্যেক পন্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব বাজারের ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পন্য মূল্য আদায় করছেন বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো: আলী হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে জরুরী মিটিংয়ের ব্যস্থতা থাকায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে জেলা প্রশাসন সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, রমজানে যেন বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ভেজালমুক্ত হয় তার জন্য তদারকিতে মনিটরিং জোরদার থাকবে। তিনি রমজানে ক্রেতাদের সুবিধার্থে ব্যবসায়ীদের সংযত হয়ে ব্যবসা করার আহ্বান করেন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।