২০ অক্টোবর, ২০২৫ | ৪ কার্তিক, ১৪৩২ | ২৭ রবিউস সানি, ১৪৪৭


শিরোনাম
  ●  ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীদের হুমকিতে নিরাপত্তাহীন পরিবার, চার সন্তান স্কুলে যাওয়া বন্ধ   ●  রামুতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা রিজনের নেতৃত্বে এক ব্যক্তির দোকান দখলের অভিযোগ, চাঁদাবাজি মামলায় জিটু কারাগারে   ●  গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়িতে ঢুকে হুমকি অভিযোগ ৪ এনসিপি নেতার বিরুদ্ধে   ●  কক্সবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে স্কিলস অ্যান্ড ইনোভেশন কম্পিটিশন অনুষ্ঠিত   ●  আলোচিত ইমরানের ২০ হাজার ইয়াবা নিয়ে লুটপাট, পরে রফাদফা!   ●  দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ   ●  কক্সবাজারে ভূমি নিবন্ধনে আকাশচুম্বী বর্ধিত উৎসেকর বাতিল, প্রসংশায় পঞ্চমুখ সালাহউদ্দিন আহমদ   ●  হলদিয়ায় ইমরানের ২০ হাজার ইয়াবা নিয়ে উধাও ৩ যুবক   ●  দুর্ধর্ষ প্রতারক দিদারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি   ●  ইয়াবাসহ পুলিশে সোপর্দ, চোর সন্দেহে চালান, এলাকায় ক্ষোভ

ভার্চুয়াল সন্ত্রাসবাদে সামাজিক মাধ্যমের ভূমিকা

কক্সবাজার সময় ডেস্কঃ বর্তমান বিশ্বে সামাজিক মাধ্যম এমন এক অবস্থান তৈরি করেছে, এটিকে এখন বলা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত মঞ্চ। আপনি সারা পৃথিবীকে কিছু বলতে চান? আপনার সামাজিক মাধ্যমটি ব্যবহার করুন। সারা বিশ্ব সেটি দেখবে, শুনবে। ক্ষমতাহীনদের ক্ষমতাবান আর নিজেদের কথা বলার জন্য যাদের কোনো জায়গা নেই, তাদেরকে কথা বলার সুযোগ দিয়েছে এই সামাজিক মাধ্যম। বলা হয়ে থাকে, সামাজিক মাধ্যমে যেকোনো কিছু পোস্ট/শেয়ার করার পর তার কিছুই আর ব্যক্তিগত থাকে না। সামাজিক মাধ্যমে কোনো তথ্য, ছবি, ভিডিও শেয়ার নিয়ে অনেকেরই ভুল ধারণা আছে। তারা মনে করে তাদের পোস্টকৃত তথ্য শুধু নির্দিষ্ট কিছু মানুষই দেখতে পাচ্ছে(প্রাইভেসি সেটিংসের মাধ্যমে অডিয়েন্স সিলেক্ট করে দিয়ে) বা অনেক সময় সে নিজে ছাড়া অন্য কেউ জানতে পারছে না। এটি আসলে সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।

২০১০ সালে সাবেক গুগল কর্মী ও বর্তমানে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান এরিক স্মিড বলেছিলেন, মানব সভ্যতার শুরু থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত বিশ্বে যত পরিমাণ তথ্য উপাদন হয়েছিল, বর্তমানে (২০১০ সালের হিসেবে) মাত্র দুই দিনে সমপরিমান তথ্য উৎপাদন হয়।

২০১৪ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সেসময় প্রতিদিন বিশ্বে ২.৫ বিলিয়ন কুইন্টিলিয়ন (২.৫,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০) বাইটস ডাটা উৎপন্ন হয়।  অর্থাৎ তার আগের দুই বছরে বিশ্বে মোট যে পরিমাণ তথ্য উপদান হয়েছে, এটি তার ৯০ ভাগ!

২০১৬ সালে মাত্র ১০ মিনিটে বিশ্বে যে পরিমাণ তথ্য উৎপাদন হতো, তা মানুষের ১০ হাজার জেনারেশনের সমান।

এই বিশাল পরিমাণ তথ্য যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ করা কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তথ্য যত বেশি, তা নিয়ে ঝুঁকিও তত বেশি।

২০১১ সালে ফেসবুকের গ্রাহক যখন মাত্র ৫ কোটি, তখনই প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছিল তাদের ৬ লাখ একাউন্ট ভুয়া এবং প্রতিদিনই এটা বাড়ছে। প্রতিটি ভুয়া একাউন্টই মারাত্মক বিপজ্জনক। কারণ এগুলোর মাধ্যমে অন্য কারও পরিচয়, অপরাধের তথ্য, স্বাস্থ্য বীমার তথ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি হয়ে যেতে পারে। ২০১৪ সালের ফেসবুকের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, ১১ শতাংশ ফেসবুক অ্যাকাউন্টই ভুয়া, অর্থাৎ তখনই ১৪ কোটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ছিল ভুয়া। এতেই বোঝা যায় যে, সামাজিক মাধ্যমে আমাদের করা যেকোনো পোস্ট অপরাধী, সন্ত্রাসী বা অন্য যে কারও হাতে পড়ে যেতে পারে।

৪০ শতাংশ সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী কোনো না কোনোভাবে ম্যালওয়ার আক্রান্ত হন। ২০ শতাংশ ব্যবহারকারীর সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্ট একবারের জন্য হলেও তৃতীয় কারও হস্তগত হয়। এটা ভালোভাবে বোঝার জন্য একটা ছোট উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। ধরুন আপনি কোনো রেস্টুরেন্টে গিয়ে সেখানকার ফ্রি ওয়াফাই সুবিধা নিয়ে আপনার ফেসবুকে ঢুকলেন। একই ওয়াফাই কিন্তু আরও ৩০ জন মানুষও ব্যবহার করছে যাদের মধ্যে এমন একজন হ্যাকারও থাকতে পারে, যে ফায়ারশিপ প্লাগ ইনের মাধ্যমে খুব সহজেই আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ (সাইডজ্যাকিং নামে পরিচিত) নিয়ে নিতে পারে। এটা কিন্তু প্রায় সময়ই হয়।

সাইবার সন্ত্রাসীরা অপনাকে ভুয়া মেইল পাঠাবে, ভুয়া টেক্সট পাঠাবে অথবা অনলাইনে ভুয়া খবর ছড়াবে। আপনি এসবের কোনো একটিতে ক্লিক করলেই আপনার একাউন্টের নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে আরেকজনের হাতে। তখন তারা খুব সহজেই আপনার নাম, পূর্ণাঙ্গ পরিচয়, ঠিকানা, ফোন নম্বর পেয়ে যাবে।

অন্তত দুই তৃতীয়াংশ কলেজ শিক্ষার্থী (যুক্তরাষ্ট্রের) নিজেদের মধ্যে ‘সেক্সটিং’ (যৌন উত্তেজনাকর ছবি, তথ্য, মেসেজ আদান-প্রদান) করে থাকে। তাদের বেলায় এ সমস্যাটি আরও প্রকট হয়ে উঠতে পারে। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ফেসবুক ৫৪ হাজার অ্যাকাউন্ট সনাক্ত করেছিল যেগুলো ‘প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে যৌনতা ছড়িয়ে দেওয়ার’ ঝুঁকিতে ছিল। একই মাসে যৌন হয়রানির অভিযোগে ১৪ হাজার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয় ফেসবুক। এসব অ্যাকাউন্টগুলোর মধ্যে ৩৩টি আবার সরাসরি শিশু যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত।

এখন হ্যাকাররা বা দুর্বৃত্তরা আপনার সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্ট থেকে ছোট ছোট তথ্য নিয়ে আপনার সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা নিয়ে ফেলতে পারছে। আপনি আপনার ফোনের জিপিএস অন করে সামাজিক মাধ্যমে যেসব তথ্য, ছবি ও ভিডিও পোস্ট করছেন, সেখান থেকেও তথ্য পাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। এসব ছবি বিশ্লেষণ করে কবে কোথায় এ ছবি তোলা হয়েছে তা যেমন জানা সম্ভব, এমনকি যে ফোন ক্যামেরা দিয়ে আপনি ছবিটি তুলেছেন, সেটির সিরিয়াল নম্বরও বের করা সম্ভব। যিনি এটা জানেন যে, কীভাবে ছোট একটি প্লাগ-ইন ইন্সটল করে একজনের অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া সম্ভব, তার কাছে এসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তথ্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এখন তো জিপিএস অন রেখে ছবি তুললে গুগল ম্যাপই আপনাকে বলে দিবে জায়গাটা কোথায়!

কোন ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করা যাবে, কোনটা যাবে না, এসব বিষয়ে ব্যবহারকারীদেরকে সচেতন করতে সামাজিক মাধ্যমগুলোর কর্তৃপক্ষের আরও বেশি উদ্যোগ নেওয়া উচিত। নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়টিও ব্যবহারকারীদেরও আরও ভালোভাবে চিন্তা করা উচিত। কারণ কোন জিনিসটি প্রকাশ করা যাবে, কোনটি যাবে না কিংবা কোন লিংকে ক্লিক করা যাবে, আর কোনটিতে করা যাবে না এটি ব্যবহারকারীই শুধু নির্ধারণ করতে পারে।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।