বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্য তালিকা নেই। তাই দোকানীরা প্রতিযোগিতামূলকভাবে নিত্যপণ্যের দাম বাড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। আর রমজান আসলে-তো কথায় নেই। সারা বৎসরের আয় রমজান মাসেই করে নিবে এমন ভাব তাদের। পবিত্র রমজান মাস সামনে আসলেই ব্যবসায়ীদের নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে এরকম তালবাহানা সত্যিই দুঃখজনক। কক্সবাজার পৌর শহরে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার রয়েছে। এরমধ্যে পাইকারী এবং খুচরা ব্যবসায়ীদের জন্য বড়বাজার অন্যতম। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে এসব পাইকারী ও খুচরা ব্যবসার দোকানীদের অধিকাংশ দোকানে নেই কোন ধরণের নিত্যপণ্যের মূল্য তালিকা। আর সেজন্যই যেভাবে পারছে দোকানীরা নিচ্ছে নিত্যপণ্যের বাড়তি মূল্য। এসব কথা কক্সবাজার বড় বাজার এলাকার সংশ্লিষ্ট ক্রেতাদের।
ভুক্তভোগীগের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করার নিয়ম থাকলেও তদারকি না থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা রমজান মাস আসলেই রক্তচোষা হয়ে যায়। বিভিন্ন অজুহাতে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে দেয় এসব সুবিধাবাদী অসাধু ব্যবসায়ীরা।
শহরের বড় বাজার এলাকার আশরাফুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা জানান, শহরের গুরুত্বপূর্ণ একটি বাজার বড়বাজার এলাকা। অথচ এখানকার অধিকাংশ দোকানে নিত্যপণ্যের মূল্য তালিকা নেই। আমার জানা মতে জেলা প্রশাসক কর্তৃক মূল্য তালিকা টাঙানোর নির্দেশনা পূর্ব থেকে থাকলেও তা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী তুলনামূলক লক্ষ্যনীয় নয়। দোকানীদের এসব বিষয়ে বললে এগুলো তাদের কাছে ঠাট্টা-মশকরার সামিল। সাধারণ ক্রেতারা কারও কাছে অভিযোগ করার সুযোগও পায় না। তাই দ্রুত নিত্যপণ্যের মূল্য তালিকা টাঙানো সহ অভিযোগ বক্স বসানো খুবই দরকার।
কালুর দোকান এলাকার মাস্টার মফিজুর রহমান জানান, পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীদের ভোক্তা অধিকার আইন সম্পর্কে কোন সচেতনতা নেই। ক্রেতাদের সাধারণ মূল্যবোধ সম্পর্কে তাদের ধারণা নেই। শহরের শুধু কালুর দোকান বাজার নয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ বাজারে দোকানীদের মুল্য তালিকা নেই। তারা যেমন ইচ্ছা তেমনভাবে মূল্য নিচ্ছে সাধারণ ভোক্তাদের কাছ থেকে। সংশ্লিষ্ট ভোক্তা অধিকার আইনে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট মহাপরিচালকের ক্ষমতা থাকলে এসব বিষয়ে কোন ধরণের তদারকি না থাকায় সাধারণ ক্রেতাদের উপর নিত্যপণের বাড়তি মূল্য আদায়ের নির্যাতন দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে খাদ্যদ্রব্যসহ বিভিন্ন পণ্যের দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখার লক্ষ্যে গত ১৬ মে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধ ও নিরাপত্তা বিষয়ক সভা হয়। জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম মজুমদার সভাপতিত্ব করেন এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিতভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং করার কার্যক্রম চালু রয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, পবিত্র রমজান মাস আসলে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অজুহাতে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। প্রকাশ্যে মূল্য তালিকা টাঙ্গানোর বিষয়ে ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন নির্দেশনা দিয়েছেন। নিয়মিত তা মনিটরিং করা হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য ক্রয়ে সাধারণ ক্রেতারা যাতে বৈষম্যের শিকার না হয় সেই লক্ষ্যে জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করলে দ্রব্যমূল নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন। এসময় সহকারি কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট রুবাইয়া আফরোজ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, ক্যাব, দোকান মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতি, বিভিন্ন বাজার কমিটির নেতৃবৃন্দসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। এতে খাদ্যের বিশুদ্ধতা, ঝুঁকিহীন ও নিরাপদ খাদ্যমান ব্যবস্থাপনা, খাদ্য সংক্রান্ত আইনসমূহের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিতকরণসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ের গুরুত্ব¡ারোপ করা হয়।
এদিকে বাজার নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং বিষয়ক সভা হয় গতকাল বুধবার। জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতির বক্তব্যের জেলা প্রশাসক মো: আলী হোসেন বলেন, পবিত্র রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে প্রকাশ্যে মূল্য তালিকা টাঙ্গানোর নির্দেশনা ইতিমধ্যে দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার কার্যক্রম চালু রয়েছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।